উচ্চ রক্তচাপ ( High blood Pressure) অনেকের কাছে হাইপারটেনশন নামেও পরিচিত। আমাদের শরীরের রক্তনালীর মাঝে থাকা রক্তের চাপ যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় তখন সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরের জণ্য অনেক ক্ষতিকর। হৃদরোগ, স্ট্রোক সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ার অন্যতম কারন হলো এই উচ্চ রক্তচাপ।
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের খাদ্যতালিকাতে সতর্ক থাকা খুবই গুরুত্বপুর্ন। স্বাস্থ্যকর খাবার ও সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। তাই আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের খাবার এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখার কিছু বিশেষ টিপস।
উচ্চ রক্তচাপ রোগিদের খাবার
যেকোনো বয়সি মানুষের মাঝেই এই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমরা অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ কে তেমন একটা গুরুত্ব দেই না। অথচ এই রোগটিকে বলা হয় নিরব ঘাতক। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে না রাখলে হার্ট স্ট্রোক সহ একজন রোগীর মৃতর আশংকা ও থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের জণ্য আপনার খাদ্যভাসে অবশ্যই পরিবর্তন আনা জরুরি।
সবুজ শাকসবজি ও ফলমুল
সবুজ শাকসবজি আমাদের শরীরের জণ্য অনেক উপকারি। বিশেষ করে পালং শাক, পুঁইশাক, পাট শাক , ফুলকপি ইত্যাদি আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। এছাচড়া গাজর ও বিটরুট ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে বেশ উপকারি। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকা তে সবুজ শাকবজি ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফলমুল যেমন কলা, আপেল, পেঁপে, কমলা, ডালিম, নাশপাতি, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন প্লেট যতো রঙ্গিন পুষ্টিগুন ততো বেশি।
সম্পূর্ন শস্য
রক্তচাপ কমাতে গোটা শস্য দানা অনেক উপকারি। বিশেষ করে লাল চাল, ওটস , লাল আটা ইত্যাদি হলো রক্তচাপের রোগীদের জন্য সেরা খাবার।
টক জাতীয় ফল
টক ফলে রয়েছে ভিটামিন সি এবং খনিজ উপাদান। তাই প্রেসার বেশী মনে হলে কিছুটা টক ফল খেয়ে নিন।
ধনিয়াপাতা
শীতকাল মানেই ধনিয়া পাতায় তৈরি তরকারি। ধনে পাতার ব্যবহারে খাবারের স্বাদ ও ঘ্রান বেড়ে যায় দ্বিগুন। তবে এই জনপ্রিয় ধনিয়া পাতা আপনার প্রেশার নিয়ন্ত্রনেও সাহায্য করে থাকে।
লো ফ্যাট দুব্ধজাত খাবার
দুধ, দঈ বা পনিরে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম । এই খাবার গুলো আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে। বিশেষ করে দই খেলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি খাবার হজমেও সাহায্য করে থাকে।
পানীয় জাতীয় খাবার
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করুন। সেই সাথে বিভিন্ন ফলের রস ও খেতে পারেন। বিশেষ করে ডাবের পানি রক্তচাপের রোগীদের জন্য অনেক উপকারি। ডাবের পানিতে রয়েছে পটাশিয়াম। এছাড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রোজ গ্রীন টি খেতে পারেন। গ্রিন টি তে থাকা অ্যান্টিওক্সিডেন্ট আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য্য রক্ষার কাজেও অনেক উপকারি।
নিম্ন রক্তচাপের রোগীর খাবার, এবং নিয়ন্ত্রনে রাখার টিপস
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের জন্য স্বাস্থ্যকর প্রোটিন খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ন। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ গুলো অনেক উপকারি। যেমন টুনা, স্যামন, সারডিন ইত্যাদি। এই মাছগুলোতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড যা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। এছাড়াও নিয়মিত বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার খেতে পারেন। কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ, কুমড়ার বীজ ইত্যাদি আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে ।
যে খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে
লবন
লবন হলো উচ্চ রক্তচাপের রোগিদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।লবনে রয়েছে সোডিয়াম। অতিরিক্ত লবন খাওয়ার ফলে এটি আমাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। তাই যারা হাই প্রেশারের রুগী তারা যতটা সম্ভব কম লবন খাবেন। রান্নার ক্ষেত্রেও তরকারিতে লবনের ব্যবহার কমিয়ে ফেলবেন। সেই সাথে কাচা লবন খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটি এখুনি ত্যাগ করুন।
চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার
অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে এটি রক্তচাপ বাড়ার কারন হতে পারে। এজন্য উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের চিনি খাওয়া যতোটা সম্ভব কমাতে হবে। সেই সাথে কেক, পেস্ট্রি, আইসক্রিম, মিষ্টি ইত্যাদি খাবার ও কম পরিমানে খেতে হবে।
ক্যাফেইন
অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহনের ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। তাই চা-কফি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
অ্যালকোহল , ধুমপান ও প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার
অ্যাহকোহল আমাদের রক্তচাপ বাড়ায়, সেই সাথে ধুমপানের কারন ও প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার গ্রহনের কারনেও আমাদের রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। তাই আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই অ্যালকোহল ও ধুমপান এড়িয়ে চলুন।
উচ্চ ফ্যাট যুক্ত খাবার
ফ্যাট আমাদের শরীরের রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়ার অন্যতম কারন। তাই হাইপ্রেশারের রোগিদের জন্য উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার গ্রহনের সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। অতিরিক্ত তেল মশলা মিশ্রিত খাবার, ভাজাপোড়া, মাখন, ঘি, অতিরিক্ত গরুর কিংবা খাসির মাংস ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
উচ্চ রক্তচাপের কিছু সাধারন লক্ষন
উচ্চ রক্তচাপ কে বলা হয় নিরব ঘাতক। অনেক সময় রোগি নিজেও বুঝতে পারে না যে তার রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু সমস্যা টা এখানেই। দীর্ঘমেয়াদি এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে না আসলে বিপদে সম্ভাবনা অনেক বেশী। কিছু সাধারন লক্ষন রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে কিনা।
- মাথাব্যথা এবং হুট করে মাথা ঘোরার সমস্যা।
- শ্বাসকষ্ট।
- বুকে ব্যথা।
- নাক দিয়ে রক্ত পড়া।
- দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া
- পেশি দুর্বলতা।
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
উচ্চ রক্তচাপের এই সমস্যা গুলো দেখা দিলে যতো দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখুন। কারন দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবে আপনার হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা এমন কি স্ট্রোক ও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যতটা সম্ভব সচেতন থাকুন।
উচ্চ রক্তচাপের রোগিদের জন্য কিছু পরামর্শ
সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
সুস্থ্য থাকার জণ্য এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য পুষ্টিকর ও সঠিক খাবার গ্রহন করা খুবই গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয়। আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা যায় সেক্ষেত্রে প্রতিদিন পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। সেই সাথে সবুজ শাকসবজি ও ফলমুল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সেই সাথে ক্যাফেইন জাতীয় খাবারের পরিবর্তে গ্রিন টি, ফলের রস অথবা বেশী বেশী পান করুন।
ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন আপনার রক্তচাপ বাড়ার কারন হতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন। এটি শুধু আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখবে না বরং আপনার সুস্থ্য ও ফিট থাকতেও সাহায্য করবে। ওজন নিয়ন্ত্রনে জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশী নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম ও করতে পারেন।
পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান
অনিদ্রা আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এটি শুধু আমাদের রক্তচাপ ই বাড়াই না বরং অনিদ্রার কারনে অনেক সময় আমাদের শরীরের নানা রোগের সৃষ্টি হয়। তাই নিয়মিত একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। সেই সাথে রাত জাগার অভ্যাস এড়িয়ে চলুন।
ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন
যাদের দীর্ঘমেয়াদি রক্তচাপ তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সেই সাথে ঘরে নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত। কারন প্রাথমিক অবস্তায় কোনো লক্ষন ছাড়াই অনেক সময় এটি আমাদের শরীর কে ক্ষতিগ্রস্থ করে থাকে। তাই সর্বোচ সতর্ক থাকা উচিত।
উপসংহার
বর্তমানে সারা বিশ্বে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। তাই উচ্চ রক্তচাপ কে অবহেলা করা বা সাধারন ভাবার কোণো সুযোগ নেই। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে আপনি অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সক্ষম হবেন। তাই সময় থাকতেই নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন থাকুন। আশা করছি আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনি উচ্চরক্তচাপের রোগিদের জন্য প্রয়োজনিয় খাবার ও কিছু পরামর্শ জেন উপকৃত হয়েছে।