You are currently viewing কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও সতর্কতা 
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও সতর্কতা 

কিসমিস হলো শুকনো আঙুর। ইংরেজি তে একে বলা হয় Raisins. সাধারণত আঙুর কে প্রাকৃতিক ভাবে বা বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে কিসমিস তৈরি করা হয়। কিসমিস খেতে মিষ্টি স্বাদের এবং এটির বর্ণের বেশ ভিন্নত রয়েছে, যেমন সোনালি, সবুজ, এবং কালো রঙের কিসমিস বাজারের বেশি দেখা যায়। 

মিষ্টি স্বাদের এই খাবার টি অত্যন্ত পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা, আয়রন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত কিসমিস খাওয়া  আমাদের স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। কিসমিস সাধারনত আমরা ডেজার্ট আইটেমে ডেকোরেশন এর কাজে ব্যবহার করলেও এটির স্বাস্থ্য উপকারিতা  আমাদের অনেকেরই অজানা। তাই আজকের এই পুরো আর্টিকেলে থাকবে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও প্রতিদিন কি পরিমানে কিসমিস খাবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাবলি। 

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। নানা পুষ্টিগুনে ভরপুর এই কিসমিস আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । চলুন কিসমিসের কিছু দারুন উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

হজমে সাহায্য করে

কিসমিস রয়েছে ফাইবার বা আঁশ। ফাইবার আমাদের পাকস্থলি এর হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিয়মিত কিসমিস খেলে এটি আপনার হজম ক্ষমতা উন্নত করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করবে। 

রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হলো কিসমিস। এটি আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা   দূর করতে সাহায্য করে। সেই সাথে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতেও কিসমিস দারুণ কার্যকরী।

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর খাবার হলো কিসমিস। কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। সেই সাথে এটি আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ দূর করে শরীর  কে ফ্রেশ রাখতেও সাহায্য করে। 

চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে ভিটামিন A অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কিসমিসে রইয়েছে ভিটামিন A এবং ক্যারোটিন যা আমাদের চোখের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার পাশাপাশি চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। বিশেষ করে নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার ফলে এটি ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং রাতকানা প্রতিরোধেও  কার্যকরী। 

ত্বক সুন্দর রাখে

কিসমিসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের ত্বকের জন্য ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে। এটি আমাদের ত্বক কে  বয়সের  ছাপ থাকে রক্ষা করে সেই সাথে ত্বকের উজ্বলতা বা লাবণ্যও বজায় রাখে। এর পাশাপাশি ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বক কে  প্রাণবন্ত করে তুলতেও কিসমিস অনেক উপকারী। 

হৃদরোগ প্রতিরোধ করে

কিসমিসে রয়েছে ফাইবার  এবং পলিফেনলস। এটি আমাদের রক্তের ব্যাড কোলেস্ট্রেরল কমাতে সাহায্য করে ফলে আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। 

দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

কিসমিসে রয়েছে অলেনোলিক অ্যাসিড , যা আমাদের দাঁতের জন্য বেশ উপকারী। এটি আমাদের দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে এবং মুখে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে। 

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে

কিসমিসে শর্করা থাকার কারণ এবং এটি খেতে যেহেতু মিষ্টি তাই আমরা অনেকেই মনে করি কিসমিস খেলে হয়তো ওজন বেড়ে যায়। এটি একটু ভুল ধারণা। শুধু কিসমিস খাওয়ার ফলে কখনোই ওজন বাড়বে না। বরং কিসমিস আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কারন কিসমিসে রইয়েছে ফাইবার। ফাইবার দীর্ঘক্ষণ আমাদের পেট ভরা রাখে। এতে দ্রুত ক্ষুধা পাবার প্রবণতা বেশ কমে যায়। তাই স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অংশ  হিসেবেও নিয়মিত কিসমিস খেতে  পারেন। 

হাড় মজবুত রাখে

কিসমিসে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং বোরন। এই উপাদান গুলি আমাদের হাড়ের জন্য খুব উপকারী। এটি আমাদের হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে পাশাপাশি হাড়ের মজবুত গঠনে সাহায্য করে।

গ্যাসের সমস্যা দূর করে

কিসমিসে থাকা ফাইবার আমাদের হজম ক্ষমতা উন্নত করে। এছাড়া কিসমিসে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যালকালাইন যৌগ যা আমাদের পেটের অতিরিক্ত গ্যাস বা অ্যাসিড নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে । এছাড়া কিসমিস খেলে এটি আমাদের অন্ত্রে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার পরিমান বাড়াতে সাহায্য করে সেই সাথে পেটের অতিরিক্ত গ্যাস দূর করতেও সাহায্য করে। তাই গ্যাসের সমস্যা কমাতেও এটি বেশ উপকারী। 

কিসমিস খাওয়ার উপায়

কিসমিস সাধারনত আমরা যেকোনো রান্না শেষে পরিবেশন এর সময় ব্যবহার করে থাকি। অনেকেই আবার খালি মুখেই সুস্বাদু এই খাবার টি খেয়ে থাকি। তবে সরাসরি খাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রান্নার স্বাদ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এই কিসমিস ব্যবহার করতে পারেন

পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া

পানিতে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এজন্য কিসমিস গুলোকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে রাতের বেলা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এটি আমাদের শরীর কে প্রাকৃতিক ভাবে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করবে এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। 

দুধে ভিজিয়ে

দুধ হলো আমাদের  শরীরের জন্য সেরা  প্রোটিনের উৎস। দুধের সাথে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ফলে এটি আমাদের  এনার্জি লেভেল টাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। রাতে ঘুমানোর সময় অথবা সকালের নাস্তায় এক গ্লাস দুধে ভেজানো কিসমিস খেতে পারেন।

রান্নায় ব্যবহার

সাধারনত সেমাই, পায়েস, ফিরনি সহ বিভিন্ন ডেজার্ট  বা পিঠা তৈরিতে কিসমিস ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পোলাও , বিরিয়ানি, রোস্ট সহ বিভিন্ন রান্নার স্বাদ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও কিসমিসের ব্যবহার করতে পারেন। আবার আপনি চাইলে মিল্কশেক বা জুস তৈরির ক্ষেত্রেও অল্প পরিমানে  কিসমিস ব্যবহার করতে পারেন। 

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস খাওয়ার সেরা সময়

কিসমিস  খাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। আপনি চাইলে যে কোনো সময় এই কিসমিস খেতে পারবেন। যেমন আপনি সকালের নাস্তায় এই কিসমিস রাখতে পারেন। ওটমিল, বা কোনো সালাদের সাথে কিসমিস মিশিয়ে খেলে বেশ ভালো স্বাদ পাওয়া  যায়। এছাড়া দুধে ভেজানো কিংবা পানিতে ভেজানো কিসমিস  সকালের নাস্তার জন্য সেরা একটি খাবার। সকালের নাস্তায় কিসমিস খেলে এটি আপনার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। 

এছাড়া আপনি চাইলে দুপুরে, বিকালের অথবা যেকোনো কাজের ফাকে কিসমিস টা খেতে পারেন। কিসমিসে থাকা গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ আপনার  শক্তি এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। যেহেতু কিসমিস খেলে এক্সট্রা একটা শক্তি পাওয়া যায় তাই অনেকেই ব্যায়ামের আগে এবং পরে এই কিসমিস খেয়ে থাকে। এটি দ্রুত শক্তি যোগানোর পাশাপাশি আমাদের শক্তি পুনরুদ্ধার এবং পেশী গঠনে সাহায্য করে। 

সর্বশেষ আপনি রাতে ঘুমানোর সময়েও কিসমিস খেতে পারেন। রাতে কিসমিস ভিজিয়ে খেয়ে এটি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং শরীর কে প্রাকৃতিকভাবে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। এছাড়া কিসমিস ভালো ভালো ঘুমের জন্য সাহায্য করে থাকে। তবে খাবার খাওয়ার পরে কিসমিস খেয়ে থাকলে অবশ্যই ভালো ভাবে দাঁত এবং মুখ পরিষ্কার করে নিবেন। কারণ দাঁতের ফাঁকে এই কিসমিস আটকে থাকলে সেটি দাঁতের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। 

প্রতিদিন কি পরিমাণে কিসমিস খাওয়া ভালো

যেকোনো খাবার ই আমাদের পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞ দের মতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ১০-১৫ টি কিসমিস খাওয়া যথেষ্ট। তবে আপনি ডায়েট মেনে চলেন সেক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন ৮-১০ টির বেশী কিসমিস  না খাওয়ার। এছাড়া কারও যদি ডায়াবেটিকস এর সমস্যা থেকে থাকে সেক্ষেত্রে দৈনিক ৫ টির বেশী কিসমিস খাওয়া যাবে না। তবে একজন সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ বিশেষ অথবা শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে এমন কেউ দৈনিক ১৫ টি পরিমানে কিসমিস খেতে পারবেন। 

সতর্কতা

কিসমিস আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হলেও কিসমিস খাওয়ার সময়ে আমাদের বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। 

  • প্রয়োজনের অধিক কিসমিস খাওয়া যাবে না, দৈনিক ১০-১৫ টি কিসমিস খাওয়ায় যথেষ্ট।
  • ডায়েবেটিকস এ আক্রান্ত রোগীরা কিসমিস খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারে। কারন কিসমিস খেলে এটি আমাদের রক্তে  শর্করা এর পরিমান বাড়াতে পারে। 
  • কিসমিসে রয়েছে সালফাইট।  তাই যাদের সালফাইটে অ্যালার্জি রয়েছে তারা কিসমিস খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন। 
  • কিসমিস খাওয়ার পরে অবশ্যই দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে । নয়তো এটি দাঁতের ক্ষয়ের কারণ হতে পারে।
  • যাদের অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা তারা শুকনো কিসমিস খাওয়ার পরিবর্তে কিসমিস ভিজিয়ে খেতে পারেন। 

কিসমিস একটি প্রাকৃতিক পুষ্টিকর খাবার যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।  নিয়মিত কিসমিস খেলে আপনার শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত হবে। তাই দৈনিক খাবারের তালিকা তে সঠিক পরিমানে কিসমিস রাখুন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান, নিজে সুস্থ থাকুন এবং পরিবারের সকলের সুস্থতাও নিশ্চিত করুন।