বাঙালির খুব পছন্দের একটি খাবার মিষ্টি। দোকানের মিষ্টি চোখে পরলে মুখে পানি চলে আসে। মিষ্টি দেখতে যেমন লোভীয় খেতেও অনেক মজাদার। তাইতো যেকোনো সুখবর উদযাপনে আমরা মিষ্টি দোকান থেকে কিনে খাই। শুধু তাই নয় বাসায় অতিথি আপ্যায়ান, উৎসব, শুভ কাজে ও আড্ডায় মিষ্টি ছাড়া যেনো চলেই না।
মিষ্টি বাঙালির প্রানের সাথে জড়িয়ে আছে। খাবারের শেষ মিষ্টি খাওয়া বাঙালির একটি প্রাচীন অভ্যাস। বিশেষ করে বিয়ে বাড়িতে খাওয়া শেষে মিষ্টি ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়। যা বিভিন্ন নামেও পরিচিত। আজকের আর্টিকেলে স্পঞ্জ মিষ্টির রেসিপি সম্পর্কে জানবো।
স্পঞ্জ মিষ্টি রেসিপি
মিষ্টি প্রেমিকরা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মিষ্টি রাখতে চান। তবে রোজ রোজ বাজার থেকে মিষ্টি কেনার চেয়ে ঘরে বসেই আপনি সহজেই স্পঞ্জ মিষ্টি তৈরি করে নিতে পারবেন। বাংলার খুবই জনপ্রিয় ও লোভনীয় আইটেম হলো স্পঞ্জ মিষ্টি। ঘরে অনেকেই এই মিষ্টি তৈরি করতে নিয়ে সমস্যায় পরেন। মিষ্টিগুলো ঠিকমতো ফুলতে চায়না, শক্ত হয়ে যায়, স্পঞ্জটি ভাবটা খুব একটা ভালো আসে না। তাদের জন্য আজকে সহজ কিছু রেসিপি রয়েছে। স্পঞ্জ মিষ্টি তৈরির সহজ কিছু রেপিসি জানতে সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
সাধারণত স্পঞ্জ মিষ্টি ছানা হতে তৈরি ছোট আকারে বল তৈরি করা হয়। তারপরে চিনির সিরার মধ্যে দিয়ে রাখতে হবে। এই মিষ্টির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হলো, একটু খানি চাপ দিয়ে রস বেরিয়ে আসবে আবার ছেড়ে দিয়ে রস শুষে নিবে। মুখরোচক রসালো স্পঞ্জ মিষ্টি যেকোনো মানুষের জিভেই পানি এনে দেয়।
রেসিপি ১
উপকরণ
- দুধ ১ লিটার
- সিরকা বা ভিনেগার হাফ কাপ
- পানি হাফ কাপ
চিনির সিরা তৈরির জন্য
- চিনি হাফ কাপ
- পানি ৩ কাপ
প্রস্তুতপ্রণালী
ছানা তৈরির জন্য প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ফুটে নিতে হবে। চুলার আঁচ বন্ধ হয়ে এলে সিরকার সাথে পানি মিশিয়ে একটু একটু করে দুধের মধ্যে দিয়ে নাড়তে হবে। এরপরে দুধ ফেটে গেলে অর্থাৎ দুধ থেকে সবুজ পানি আলাদা হয়ে গেলে একটা পরিষ্কার পাতলা কাপড়ের মধ্যে ছানা ছেঁকে নিতে হবে। ১ কাপ পানি ছানার মধ্যে পানি ঢেলে ঝুলিয়ে রাখুন। এতে করে টক ভাব কেটে যাবে। এবং সম্পূর্ণ পানি বেরিয়ে যাবে।
গোপালগঞ্জের রসগোল্লা- ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার লড়াই!
চিনির সিরা তৈরির জন্য চুলায় একটি পাত্র বসিয়ে পানি ও চিনি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। সিরা তৈরি হয়ে গেলে আঁচ কমিয়ে রাখতে হবে। এবার ছানার পানি ঝরে গেলে হাত দিয়ে ভালো করে মথে নিতে হবে। তারপরে গোল করে ছোট ছোট বল তৈরি করতে হবে।
ফুটন্ত সিরার মধ্যে ছানার বলগুলো ছেড়ে দিতে হবে। চুলার আঁচ বাড়িয়ে ঢেকে দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর একটি বড় চামচ দিয়ে মিষ্টিগুলো সিরার মধ্যে ডুবিয়ে দিতে হবে। মাঝারি আঁচে রেখে দিতে হবে ২০ মিনিটের জন্য। তারপরে চুলা থেকে নামিয়ে পরিবেশন করা যাবে।
রেসিপি ২
উপকরণ
- দুধ ১ লিটার
- ভিনেগার ১ টেবিল চামচ
- চিনি ১ কাপ
- এলাচ ২/৩টি
প্রথমে চুলায় একটি পাত্র বসিয়ে দুধ দিতে হবে। চুলা জ্বালিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিতে হবে। প্রায় ২ মিনিটের মতো ফুটিয়ে নেওয়ার পরে ১ টেবিল চামচ ভিনেগারে সাথে ২ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে দুধের মধ্যে দিতে হবে। ছানা হতে শুরু করলে চুলার আঁচ বন্ধ করে দিতে হবে।
একটি ছাকনিতে কিচেন টাওয়াল বা পরিষ্কার সুতি কাপড় বিছিয়ে ছেকে নিতে হবে। তারপরে কিছুটা ঠান্ডা পানি দিয়ে ছানা ধুয়ে নিতে হবে। তারপরে কাপড়ে পেচিয়ে ৩০ মিনিটের মতো ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এতে পানি ঝরে যাবে।
স্পঞ্জ মিষ্টির সিরা তৈরির জন্য প্রথমে চুলার একটি প্যান বসিয়ে চিনি ও পাঁচ কাপ পানি দিতে হবে। এরমধ্যে এলাচ দিতে হবে। এবার সিরা ফুটতে শুরু করলে চুলার আাঁচ কমিয়ে রাখতে হবে।
এরপরে ছানার পানি ঝড়ে গেলে একটি ট্রেতে ছানা খুব ভালো করে মথে নিতে হবে। হাতের তালু দিয়ে চেপে চেপে সময় নিয়ে অবশ্যই সফট করে মথে নিতে হবে। তারপরে সবগুলো মিষ্টির সাইজ একই হওয়ার জন্য ভাগ করে নিতে হবে। এরপরে হাতের সাহায্য গোল করে মিষ্টি বানিয়ে নিতে হবে।
চুলার আঁচ মিডিয়াম টু লো রেখে তৈরি করে রাখা সিরার মধ্যে মিষ্টিগুলো দিতে হবে। এরপরে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ১০ মিনিট পরে ঢাকনা তুলে একটা চামচ দিয়ে একটু নেড়ে নিতে হবে। তারপরে আবার ১০ মিনিটের জন্য জ্বাল দিতে হবে। চুলা থেকে নামিয়ে সিরার মধ্যে প্রায় ১ ঘন্টা পর্যন্ত রেখে দিতে হবে। তারপরে পরিবেশন করতে হবে।
রেসিপি ৩
- স্পঞ্জ মিষ্টি তৈরির জন্য প্রথমে সঠিক পাত্র বাছাই করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে গোল ধাচের কড়াই বা হাড়ি বেছে নেওয়া যেতে পারে। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে কড়াই বা হাড়িতে তৈরি করা হবে সেটা যেনো চুলার তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। দস্তা বড় সাইজের কড়াই নিলে অনেক ভালো হবে।
- মিষ্টি তৈরির প্রথম পদক্ষেপ হলো দুই ধরনের সিরা তৈরি করে নিতে হবে।
- পাতলা সিরা তৈরির জন্য ৪ কাপ চিনির মধ্যে ৪ কাপ পানি দিতে হবে। এই সিরা জ্বাল দিয়ে ভালো করে বোলক দিতে হবে। তারপরে অন্য একটি গোল পাত্রে সিরা ঢেলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। যাতে সিরা ঠান্ডা না হয়ে যায়। একটি পাত্রে প্রায় ১থেকে দেড় লিটারের মতো পানি ফুটতে দিতে হবে।
- ঘন সিরা তৈরির জন্য কড়াই চুলায় বসিয়ে ৬ কাপ চিনি দিতে হবে। ৬ কাপ চিনির জন্য ৪ কাপ পানি দিতে হবে। চিনি নেড়ে গলিয়ে নিতে হবে, তারপর কিছুক্ষণ জ্বাল দিয়ে ভালো করে বোলক দিতে হবে। যখন চারপাশ থেকে বোলক চলে আসবে তখন ১ টেবিল চামচ ময়দার থাকে ৪ টেবিল চামচ পানি গুলিয়ে সিরার মধ্যে দিতে হবে। একটু রান্নার তেল দিয়ে নিতে হবে। তেল দেওয়া পরে ফেনার মতো হয়ে আসবে। একে সিরার ঝাক বলা হয়। মিষ্টি যদি ফুলকো, টসটসে করতে চান তাহলে এটি অবশ্যই ফোলো করবেন। সাধারণত দোকানে এভাবেই স্পঞ্জ মিষ্টি তৈরি করে।
- ২ লিটার দুধ থেকে ছানা তৈরি করে নিতে হবে। ছানা প্রথমে আলতো ভাবে মেখে নিতে হবে। তারপরে হাতের তালুর সাহায্যে ঘষে ঘষে নিতে হবে একপাশ থেকে অন্য পাশে মথে ঠ্যালে নিতে হবে। এই স্টেপটি অবশ্যই হাত দিয়েই করতে হবে। ব্লেন্ডারে করা যাবেনা। সবগলো ছানা একত্রে নিয়ে আবারও মিশিয়ে নিতে হবে।
- এরপরে সমান করে ১ চা চামচ করে ময়দা, এরাউড/বার্লি ও চিনি নিতে হবে। তারপরে সবগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে ছানার সাথে একটু সময় নিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এরপরে একটি রোল তৈরি করতে হবে, মিষ্টি মাঝারি সাইজের জন্য সমান ভাবে ভাগ করে নিতে হবে। মিষ্টিগুলো হাত দিয়ে গোল সেইপ দিয়ে সিরার মধ্যে ফুটতে দিতে হবে।
- চুলার জ্বাল হাই টু মিডিয়াম আঁচে রেখে সিরার মধ্যে একটা একটা দিতে হবে করে দিতে হবে। ফুটন্ত গরম পানি একটি ডাবুর মধ্যে নিয়ে মিষ্টির সিরার মধ্যে নিতে হবে। ৫ মিনিট পরে আবারও পানি মিশিয়ে নিতে হবে। ফুটন্ত পানি ৩-৪ বার সিরার মধ্যে মিশিয়ে নেওয়া যাবে। এভাবে ২০ মিনিটের মতো জ্বাল দিতে হবে। একটা মিষ্টি নরমাল পানির মধ্যে দেওয়া পারে ডুবে গেলে বুঝতে হবে মিষ্টি পারফেক্ট ভাব তৈরি হয়ে গিয়েছে। অনেকেই মিষ্টি ঘন সিরার মধ্যে রেখে দেয় এতে মিষ্টি শক্ত হয়ে যায়। তাই অবশ্যই ঘন সিরা থেকে পাতলা সিরার মধ্যে মিষ্টিগুলো তুলে দিতে হবে। কিছু পরিমাণে ঘন সিরা তুলে পাতলা সিরার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে মিষ্টি গুলো চুপছে যাচ্ছে। পাতলার সিরার তাপমাত্রা গলে গেলে মিষ্টি চুপছে যায়।
উপরোক্ত আলোচনায় স্পঞ্জ মিষ্টির রেসিপি তৈরির সকল টিপস ও টেকনিক সহ বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এই লেখাটি পড়ার পরে আপনি ঘরেতে দোকানের মতো পারফেক্টভাবে স্পঞ্জ রেসিপি তৈরি করে নিতে পারবেন। ফলে দোকান থেকে আর মিষ্টি কিনতে হবেনা।