মিষ্টি ও পোড়া কফির ঘ্রাণ পেলে আমাদের মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। ধোঁয়া ওঠা গরম কফি বিকেলের আড্ডায় থাকলে আর কিছুর প্রয়োজন হয়না । কফিপ্রিয় মানুষদের কফি ছাড়া যেনো চলে না। শুধু কি তাই, বন্ধু কিংবা প্রিয়মানুষদের সাথে ক্যাফেতে বসে কফি খেতে খেতে গল্প করার অভিজ্ঞতা কম বেশি সকলের রয়েছে। এছাড়াও কফি আমাদের কান্তিতে নিমিষেই দূর করে দেয়। তাই এটি অনেকের নিত্যদিনের সঙ্গী।
রেস্টুরেন্ট বা কোনো ক্যাফেতে কফি অর্ডার করার করে থাকি। তখন কফির একটা মেনু চোখের সামনে দেখতে পাই। কফির এতো সমাহার দেখে বুঝতেই পারিনা। কোন কফির স্বাদ কেমন? নানান স্বাদের কফি সম্পর্কে পূর্ব ধারণা থাকলে আর কোনো দ্বিধায় পরতে হবেনা। আপনার পছন্দের কফিটি অর্ডার করে খেতে পারবেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা জনপ্রিয় কিছু কফির নাম ও স্বাদ সম্পর্কে জানবো।
কফির পরিচিতি
কফি বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। পানির সাথে ফুটিয়ে কফি বীজ নামের পরিচিত এক প্রকার বীজ পুড়িয়ে গুড়ো করে মিশিয়ে কফি তৈরি করা হয়। এই বীজকে কফি চেরি নামক একধরনের ফলের বীজ। প্রায় ৭০ টি দেশে এই ফলের গাছ জন্মে। কফিয়া গাছের ফল থেকে বীজ আলাদা করে তা থেকে সবুজ কফি বীজ তৈরি করা হয়। এবং বীজগুলো ভেজে মিহি গুড়ো করা হয়। তারপরে গরম পানিতে মিশিয়ে এককাপ কফি তৈরি করা হয়। সাধারণত কফি গরম গরম পরিবেশন করা হয়। বর্তমানে ঠান্ডা ও বরফযুক্ত কফি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কফি বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত ও পরিবেশন করা হয়। যেহেতু কফির স্বাদ তিক্ত তাই স্বাদ বাড়াতে দুধ, চিনি বা চকোলেট ব্যবহার করা হয়। ফলে এর স্বাদ মিষ্টি ও ক্রিমি হয়ে থাকে।
কোন কফির কী নাম জানেন কি

বিশ্বে বহু জাতের কফি রয়েছে। প্রধানত দুই কফি আমরা পান করে থাকি। প্রথমটি উৎকৃষ্টমানের যাতে ক্যাাফিন কিছুটা কম ও দামও বেশি হয়ে থাকে। অন্যদিকে দ্বিতীয় কফির ধরন হলো রোবাস্তা, এই কফি বিনে ক্যাফিন বেশি থাকায় কিছুটা কড়া ফ্লেভারের হয় ও দামটাও কিছুটা কম। শুধু তাই নয়, কফির স্বাদ ও সুবাসের জন্য কফির প্রকারভেদ রয়েছে। চলুন জনপ্রিয় কিছু কফির সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
ক্যাপুচিনো কফি
কফি ভক্তরা নিশ্চয়ই ক্যাপুচিনো কফির নামটা শুনেছেন। এটি একধরনের এসপ্রেসোভিত্তিক কফি। এক শর্ট এসপ্রেসো, ফুটন্ত দুধ এবং উপরে দুধের ফেনা দিয়ে তৈরি করা হয়। এর স্বাদ সাধারণত ক্রিমি মসৃণ। দুধের ফেনা ঠান্ডা হতে শুরু করলে বেশ ঘন হয়ে যায়। এবং স্বাদকে আরও সমৃদ্ধি করে তোলে। এটি সাধারণত ছোট সিরামিকের কাপে পরিবেশন করা হয়।
উৎপত্তি
ক্যাপুচিনো শব্দটি ইতালী ভাষা থেকে এসেছে। যার অর্থ ছোট ঢাকনি। এটি তৈরির মেশিন প্রথম উদ্ভাবিত হয় ইতালিতেই। এটি ইতালিতে খুব জনপ্রিয় এবং সেখান থেকেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য দুধসহ কফির তুলনায় এটি কড়া হয়ে থাকে। যারা একটু কড়া দুধ কফি পছন্দ করেন তাদের জন্য ভালো ক্যাপুচিনো কফি।
মোকা কফি
বিভিন্ন জনপ্রিয় কফির মধ্যে মোকা কফি বেশ মজাদার। এটি এসপ্রেসো, দুধ ও চকলেট দিয়ে তৈরি করা হয়। সাথে পছন্দ অনুযায়ী গরম দুধ বা ঠান্ডা দুধ ব্যবহার করা হয়। এই কফির বৈশিষ্ট্য হলো এটি ক্যাপুচিনো বা লাট্টের চেয়েও মিষ্টি। অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে কম তেলো। যারা চকলেট ও কফি উভয় পছন্দ করেন তাদের জন্য এই মোকা কফি।
উৎপত্তি
ইয়েমেনের উৎকৃষ্ট অ্যারাবিকা কফি বিনকে মোকা বিন বলা হয়। এটি উৎপত্তি ইয়েমেনের মোকা বিন থেকে হলেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইতালিয়ান কফি হাউজগুলোর কারণে। এটি একটি চকলেট স্বাদযুক্ত গরম পানীয়। এতে সাধারণত কোকো পাউডার ও চিনি যোগ করা হয়। এতে চকোলেটের স্বাদ ও মিষ্টি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে চকোলেট সিরাপ ব্যবহার করা হয়। এটিও এসপ্রেসো গমর দুধের উপর ভিত্তির করে তৈরি করা হয়।
আমেরিকানো কফি
দুধ ছাড়া কফি যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য রয়েছে আমেরিকানো । এটি এসপ্রেসো শটে গরম পানির সাথে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যায়। অনেকেই সারাদিন সতেজ থাকতে চান সেক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন এই কফি। যা আপনার যারা দিনের কাজ করার শক্তি দিতে সাহায্য করবে। অর্থাৎ আপনার প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে তুলবে। কান্তি দূর করে শরীরকে চাঙা করে তুলবে।
উৎপত্তি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে অবস্থানরত মার্কিন সৈন্যরাদের জন্য ইউরোপীয় বারিস্টারা এসেপ্রোসেতে গরম পানি মিশিয়ে একটি স্ট্রোং স্বাদের কফি তৈরি করেছিলেন। তারপরেই আজকে আমেরিকানো কফি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আফোগাতো কফি
এটি একধরনের ডেজার্টও বলা যায়। সাধারণত গরম এসপ্রেসো ও ১ স্কুপ ভ্যানিলা আইসক্রিম দিয়ে তৈরি করা হয়। যারা মিষ্টি পছন্দ করেন তাদের জন্য জন্য এই কফি বেস্ট হবে। সামান্য পরিমাণে দুধের সাথে ভ্যানিলা আইসক্রিম ও ডাবল বা এক শট এসপ্রেসোর মিশ্রণে তৈরি করা হয়। অনেকে এর সাথে চকলেট সিরাপ ব্যবহার করে পান করে থাকেন। এই কফি গরম কিংবা ঠান্ডার মিশ্রণে তৈরি করা হয়। তাই বানানো তাৎক্ষণিক খাওয়া উচিত।
উৎপত্তি
আফোগাতো শব্দটি ইতালিয়ার থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো নিমজ্জিত। এটি ইতালিতে বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় এটি বিভিন্ন ক্যাফেগুলোতে একটি বিশেষ ডেজার্ট হিসেবে পরিবেশিত হয়।
লাতে কফি

ইতালিয়ান শব্দ লাতের অর্থ হলো মিল্ক। এটি সাধারণত মৃদু স্বাদের কফি পানীয়। দ্বিগুণ পরিমাণ দুধ ব্যবহার করা হয়। ওপরে দুধের ফেনা ভেজে থাকে। এটি বিভিন্ন ফ্লেভারের হয়ে থাকে। যেমন ভ্যানিলা, ক্যারামেল ইত্যাদি। কফি। আমাদের দেশের বেশ জনপ্রিয় একটি কফি এটি। দুধের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে কম তেলো ও খেতে মিষ্ট হয়। যারা খুব বেশি কড়া কফি খেতে পছন্দ করেন না। তারা চাইলে এই লাতে কফি খেতে পারেন। এই কফি পরিবেশনের সময় দুধের ফেনার মাধ্যমে বিভিন্ন ডিজাইন করা করা। এতে আলাদা একটা সৌন্দর্য যোগ হয়।
ফ্রাপুচিনো কফি
এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একধরনের এসপ্রেসোভিত্তিক কফি। দুধ, বরফ ও বিভিন্ন স্বাদের সিরাপ দিয়ে ব্লেন্ড করে তৈরি করাা হয়। এই কফির বৈশিষ্ট্য হলো এটি ঠান্ডা ও ক্রিমি পানীয়। বিভিন্ন ফ্লেভারের হয়ে থাকে যেমন চকোলেট, ক্যারামেল, ভ্যানিলা। এটি পরিবেশনের সময় হুইপড ক্রিম ও সিরাপ ব্যবহার করা হয়। গরমের দিনে ঠান্ডা কফি হিসেবে বেশ দারুণ। নিজেদেরকে রিফ্রেশিং এর জন্য উপযুক্ত একটি কফি।
লং ব্ল্যাক কফি
এটি এসপ্রেসোর ডাবল শট কফি গরম পানিতে দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে খুব জনপ্রিয়। এই কফির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো কফির স্বাদ অনেক বেশি তীব্র ও সুন্ধযুক্ত হয়। এতে চিনি ও দুধ ব্যবহার করা হয়না তাই স্বাস্থ্যকর বলা যায়। কাজের ফাঁকে এনার্জি বাড়ানোর জন্য দারুণ।
কফির রয়েছে কিছু স্বাস্থ্যগুণ। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গিয়েছে, কফি লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করে। ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে অধিক মাত্রায় ক্যালেইন যা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তবে প্রয়োজনীয় তুলনায় কফি অধিক খাওয়ার ফলে উচ্চরক্ত চাপ, হৃ্দরোগ ও কোষ্টকাঠিন্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
উপরোক্ত আলোচনায় জনপ্রিয় কিছু কফি নাম, স্বাদ ও উৎপত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ক্যাফেতে গিয়ে পছন্দের স্বাদ অনুযায়ী কফি আপনি অর্ডার করে খেতে পারবেন। শুধু তাই নয় বাসাতেও খুব সহজেই কফি বানিয়ে খেতে পারবেন। বর্তমানে বাজারের বিভিন্ন ধরনের ইনস্ট্যান্ট কফি পাওয়া যায়। ইনস্ট্যান্ট কফি দিয়েও খুব সহজেই বাসায় তৈরি করা হবে।