সরিষার তেলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকার কারণে বহু শতাব্দী ধরে এই তেল ব্যবহার হয়ে আসছে। সরিষার তেলের প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। শুধুমাত্র সরিষার তেল রান্নার মধ্যে সীমাবদ্ধ এমন নয়। রান্নার কাজ ছাড়াও ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে মাথায় চুলের যত্নে উপকারী তেল হিসাবে কাজ করে এটি।
এই তেল শরীরের ছোট-বড় অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, তবে কোন সমস্যার সঠিক চিকিৎসা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। মূলত সরিষার তেল পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ম্যাগনেশিয়াম, উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন, গ্লুকোসিনোলেট সহ আরো অনেক উপাদানে সমৃদ্ধ।
তাই এই তেল বিভিন্ন স্বাস্থ্যোপকারিতায় ভরপুর। তবে প্রতিটি জিনিসের ই যেমন ভালো এবং খারাপ দিক থাকে। ঠিক তেমনি সরিষার তেলেও অনেক চুলের জন্য উপকারিতা থাকলেও রয়েছে কিছুটা অপকারিতা। আজকে আমরা চুলে সরিষার তেলের অপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
চুলে তেলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
এই তেলের অপকারিতা জানার পূর্বে আমরা আগে জেনে নেই আমাদের দেশে কত ধরনের সরিষার তেল পাওয়া যায়। সব কিছুর উপর ভিত্তি করে প্রধানত দুই ধরনের সরিষার তেল আমরা দেখে থাকি।
খাটি সরিষার তেল
খাটি সরিষার তেল আপনি যেমন রান্নার কাজ সহ নিশ্চিন্তে খেতে পারেন আবার চুলে বা ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এই তেল বেশীর ভাগ ঘানিতে ভাংগা সরিষার তেল হয়ে থাকে। তবে বাণিজ্যিক ভাবে মেশিনে সরিষা কে পিষে তেল বের করা হয় বিশেষ প্রক্রিয়ায়। তবে কাঠের ঘানিতে ভাংগা (কোল্ড প্রেসে) সরিষার তেল খাটি সরিষার তেল হিসাবে বিবেচিত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই।
ভেজাল সরিষার তেল
এই তেল বিভিন্ন ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল ও রং ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। আবার বাজারে কৃতিম সরিষার তেল ও পাওয়া যায়। যা অ্যালাইল আইওডাইড ও পটাসিয়াম থায়োসায়ানেটের রাসায়নিক বিক্রিয়া করেও কৃত্রিম ভাবে সরিষার তেল বানানো করা যায়। যা কৃত্রিম সরিষার তেল নামে পরিচিত।
চুলে সরিষার তেলের অপকারিতা
অনেক ক্ষেত্রে সরিষার তেল বেশী দিন ঝাঝালো ভাব ও গন্ধ বা মান সঠিক ধরে রাখার জন্য অনেক ধরনের ক্ষতিকারক ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা স্বাস্থ্য ও মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক এবং আপনি যদি এই তেল মাথার চুলে ব্যবহার করেন তবে তা উপকারের পরিবর্তে কিছু টা অপকার হবে। এখন ভেজাল বা ক্যামিক্যাল যুক্ত যে জিনিশই চুলে বা খাবার হিসাবে খান না কেন তা সমস্যার কারন হবেই। তাই আপনি যদি খাটি সরিষার তেল এবং কোন ক্যামিক্যাল মুক্ত ভালো মানের খাটি তেল ব্যবহার করেন তবে তার উপকার শতভাগ থাকবে।
যেহেতু সরিষার তেল সরিষার বীজ থেকে তৈরি করা হয়। তাই পুষ্টিগুনে ভরপুর থাকে যা অন্যান্য ক্যামিক্যাল যুক্ত তেলের চাইতে অনেক গুন উপকারী হবে। আবার এই তেলে সস্তা ভেজাল দেওয়ার জন্য অনেক সময় শেয়ালকাঁটার বীজের তেল ব্যবহার হয়। যা সমস্যা হতে পারে মানুষের জন্য। চুলের যত্নে ও পুষ্টিগুনে সরিষার তেল সেরা হলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকে কিছু টা ঝাঝালো অনুভব হয়। এতে অনেকেই দুশ্চিন্তা বা খারাপ মনে করেন। কিন্তু আপনার সরিষার তেল যদি খাটি হয় তবে চিন্তার কিছু নেই।
চুলে সরিষার তেল দিলে কিছুটা আঠালো বা ভারীভাব লাগে তবে আপনি যদি কিছুক্ষন রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলেন তাহলে স্বাভাবিক হবে। তবে অনেক সময় দেখা যায় ভালো ভাবে চুল পরিষ্কার না করলে সরিষার তেলের অল্প পরিমান গন্ধ অনুভব হয়। বেশী পরিমান তেল চুলে ব্যবহার করলে অনেক সময় চুল কিছু টা উঠতে পারে। তাই যাদের চুলে ব্যবহারে বেশী পরিমান চুল ঊঠছে তারা শুধু সরিষার তেল সরাসরি চুলে না দিয়ে সঠিক নিয়মে ও সাথে আরো কিছু প্রাকৃতিক উপকরন এক সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে অনেক ভালো উপকার পাওয়া যায়। সরাসরি এই তেল চোখে ব্যবহার করলে তার ফল খারাপ হতে পারে। একই সাথে ক্ষত স্থানে ব্যবহার করলে তা সমস্যা হতে পারে।
শেষকথা
এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সরিষার তেল স্বাস্থ্যসুরক্ষায় কতটা কার্যকর। কিন্তু যেকোনো সরিষার তেল কি আমাদের জন্য উপকার হবে? মোটেও না। নকল বা ভেজাল সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই সরিষা তেল ব্যবহারের আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে জেনে নিন যে আপনার সরিষার তেল খাঁটি কি না?দোকানের খোলা সরিষার তেলে ভেজাল মিশ্রিত থাকে, যা ব্যবহার করলে নানা রকম অসুখ–বিসুখ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই খাঁটি সরিষার তেল কেনার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে।