প্রতিটি জিনিসেই ভালো দিকের পাশাপাশি খারাপ দিকও থাকে। তেমনি সরিষার তেলের অনেক ভালো দিক বা উপকারিতা থাকলেও অপকারিতা রয়েছে। তবে তা খুবই সামান্য পরিমানে। যা মানব দেহের তেমন কোন ক্ষতির কারন হয় না। এরপরও আজ আমরা জানব সরিষার তেলের অপকারিতা বা ক্ষতির দিক গুলো সম্পর্কে।
বেশি সরিষার তেল খেলে কী কী রোগ হতে পারে?
সরিষার তেল খুব বেশি খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরল সমস্যায় ভুগতে পারেন। সরিষার তেলে প্রচুর ইউরিক অ্যাসিড থাকায় সমস্যা তৈরি করতে পারে। যদিও উপকারিতা অনেক তাই ক্ষতির দিক থাকলেও সেটা খুবই সামান্য। যেমন কারো যদি ডায়াবেটিস হয় তবে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার তাদের জন্য ক্ষতিকর। যদিও পরিস্থির উপর নির্ভর করে ডায়াবেটিস কমে গেলে খুবই সামান্য পরিমানে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে হয়। যাই হোক, তেমনি যদি তেল চর্বি বা সরিষার তেলের কোন একটি উপাদান আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয় তবে সেটা অবশ্যই ক্ষতিকারক হবে। তাই আপনার শরীরের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে তেল খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত কোন জিনিসই ভালো হয় না সেটা যত ভালো জিনিশই হোক না কেন।
সরিষার তেলের খারাপ দিক
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে, সরিষার তেল পিত্ত বৃদ্ধি করে। যদি শরীরের অতিরিক্ত পিত্ত বৃদ্ধি হয় তবে জ্বালার অনুভূতি, জ্বর এবং প্রদাহ হয়ে থাকে। আবার, সরিষার তেল চোখে ব্যবহার করলে তার ফল খারাপ হতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজিকা প্রকারের সরিষার তেল ব্যবহারে প্রস্রাবের হার কম ও বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেয়া যায়, কোন ব্যক্তির সরিষার তেল ব্যবহার করলে এলার্জি হয়। যদিও এলার্জি বিষয় টি মানুষের শারীরিকের উপর নির্ভর করে। আর এলার্জি যে কোন খাবার বা জিনিসে হতে পারে। এটি একেক ব্যক্তির জন্য এক এক রকম জিনিশ হয়ে থাকে। যা খুবই কমন ও সাধারণ বিষয়।
অনেক সময় সরিষার তেল দিয়ে ম্যাসাজ করার পর বা ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। সবার স্ক্রিন যেহেতু এক না। তাই যাদের স্ক্রিন বেশি সেন্সিটিভ এবং এলার্জি হয় তাদের জন্য এই তেল ব্যবহার না করাই ভালো। তাই সরিষার তেল শরীরের ত্বকে ব্যবহার করার আগে ত্বকের ওপর অল্প করে ব্যবহার করে দেখে নিতে হবে কোন আ্যালার্জির উপসর্গ বা সমস্যা বোধ হচ্ছে কিনা। যদিও এই রকম বিষয় অনেক কম দেখা যায়।
ইরিউসিক এসিড (erucic acid) সরিষার তেলে থাকার কারনে রান্নার কাজে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপে এই তেল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এক সময়। তবে ত্বকে ব্যবহার বা মালিশের জন্য এই দেশ গুলোতে নিষিদ্ধ ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে নিষিদ্ধ হলেও সরিষার তেল অন্যান্য দেশ বিশেষ করে এশিয়ার সর্বত্র রান্নার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। বর্তমান সময়ে অনেকেই সয়াবিন তেলের পরিবর্তে খাঁটি ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকেন। যা অনেক স্বাস্থ্যসম্মত ও উপকারী। বাজারে সব তেলের মধ্যে সরিষার তেল সব থেকে বেশী স্বাস্থ্যকর। তবে এটি অবশ্যই খাঁটি ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল বা কোল্ড প্রেসড (cold pressed) হতে হবে। অর্থাৎ কোন ভেজাল থাকা যাবে না।
সরিষার তেলে কি আছে?
সরিষার তেলের বিভিন্ন স্বাস্থ্যোপকারিতা আছে, মূলত তার কারণ এটি মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ তেল। তেল স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল হয়ে থাকে। আর অর্ধ জমাট বা পুরো জমাট বেধে থাকে চর্বি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সব ধরণেই তেলেই চর্বি বা ফ্যাট থাকে। আমরা অনেকেই মনে করে থাকি তেল-চর্বি মানেই খারাপ। আসলে ব্যাপারটি এমন না। এটি নির্ভর করে কী পরিমান ও কী ধরণের তেল খাচ্ছেন তার উপর। আমরা যে সব তেল-চর্বি খেয়ে থাকি, তার মধ্যে কিছু তেল স্যাচুরেটেড এবং কিছু তেল রয়েছে পলি-আনস্যাচুরেটেড।
তেলের জন্য স্মোক পয়েন্ট হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্মোক পয়েন্টে পৌঁছালে তেলের গুণাগুণ হারাতে শুরু করে এবং বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। যে তাপমাত্রায় তেল পুড়ে ফ্যাটগুলো ভেঙে যায়, তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যে কারণে তেল স্মোক পয়েন্টে পৌঁছানোর আগেই তাতে রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত এবং সেই তেল একাধিক বার ব্যবহারও করা যেতে পারে। যে তেলের স্মোক পয়েন্ট বেশি, সেটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশি নিরাপদ বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই কতক্ষণ ধরে রান্না হচ্ছে, সেটা বেশ জরুরি। সরিষার তেলের স্মোক পয়েন্ট যদিও অন্যান্য ভোজ্য তেল গুলো থেকে বেশি। সরিষার তেলের স্মোক পয়েন্ট প্রায় ২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তবে এই তেল যদি আপনি বার বার ব্যবহার করা হয় এবং উচ্চ তাপে বেশিক্ষন রান্না করা হয় তবে এটি উপকারের থেকে অপকার হতে পারে মানব দেহের জন্য। এটি যে শুধু সরিষার তেলের ক্ষেত্রে এমন তা না। যে কোন ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে এমন।
যাদের গ্যাস্টিকের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত পরিমিত হারে রান্নায় সরিষার তেল নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। বরং পেটের বদ হজম ও গ্যাস্টিক সমস্যা নিরাময়ে সরিষার তেল কার্যকরী। তবে যদি মাত্রার চাইতে বেশি তেল প্রতিদিন খাবারে খাওয়া যায় তবে এর বিপরীত হতে পারে। অর্থাৎ গ্যাস্টিকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
মাথার ত্বকে বা শরীরে ব্যবহার করলে কিছুটা ঝাঝালো ভাব অনুভব হতে পারে।
যেহেতু সরিষার তেল বিভিন্ন কার্যকরী উপাদানে ভরপুর। তাই এতে ভেজাল দেয়া হলে বা ভেজাল যুক্ত সরিষার তেলে খেলে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তবে যে কোন খাবার বা তেল যদি ভেজাল যুক্ত হয় তবে মারাত্মক ক্ষতিকর আমাদের জন্য। তাই আপনি যদি ভেজাল মুক্ত সরিষার তেল বা ঘানি ভাংগা সরিষার তেল খান তবে কোন সমস্যাই হবে না।
উইকিপিডিয়া এক তথ্য বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য দেয়া আছে, সরিষার তেলে সস্তা ভেজাল দেওয়ার জন্য শেয়ালকাঁটার বীজের তেল ব্যবহার হয়। উত্তর ভারতে কয়েকটি বিখ্যাত খাদ্যতেল কোম্পানির সরিষার তেলে ভেজাল থাকার কারণে প্রায় আড়াই হাজার লোকের মধ্যে এর বিষক্রিয়া দেখা দেয়, এবং অন্ততঃ ৬৫ জন মৃত্যুবরন করেন। এই কারণে সর্বজনীনভাবে সরিষার তেলের ব্যবহার দিন দিন কমে যায়।