ছোট বেলায় আচার খাওয়া জন্য মায়ের কাছে আমরা খুব বায়না করতাম। আমাদের আবদার মেটানোর জন্য মা নিজের হাতে যত্ন করে তৈরি করতেন খুব মজাদার আচার। কি! আচারের কথা শুনতেই জিভে পানি চলে এলো?
সচরাচর আচারের কথা শুনলে যেন আমাদের জিভে পানি চলে আসে। আর আচার পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল বটে। বিভিন্ন সিজনের ফল দিয়ে তৈরি করা হয় হরেক পদের আচার। এসব আচার আমাদের মা চাচীরা নিজের হাতে যত্ন সহকারে তৈরি করতেন।
বর্তমানে শহরমুখী হওয়ায় তাদের হাতের তৈরিকৃত আচার খাওয়ার সুযোগ তেমনটা হয়ে ওঠে না। ফলে আমরা নিজেরাই ঘরে তৈরি করে থাকি। এছাড়াও অনেক নারীরা আচার তৈরি করে ব্যবসার মাধ্যমে আয়ের পথ বেছে নিয়েছেন।
রসুন
বাংলাদেশের অন্যান্য সুপারফুডের মধ্যে অন্যতম হলো এই রসুন। একে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয়। আমাদের জ্বর সর্দি হলে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট খেয়ে থাকি এবং ফুল ডোজ কমপ্লিট না করেই আমরা ঔষধ সেবন করা ছেড়ে দেই। এক্ষেত্রে আমাদের শরীরের জীবাণুগুলো পুর্নঃজীবিত হয় এবং পরবর্তীতে সেই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না।
ফলে ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয়ে পরে। অর্থাৎ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ঔষধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে যদি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক সম্পন্ন খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। তাহলে আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে পারবো।
রসুন খাওয়ার উপায়
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেতে পারবেন। যদি গ্যাসের সমস্যা হয় তাহলে ভরা পেটে খাওয়া উত্তম। এছাড়া কাচা রসুন তীব্র গন্ধ ও ঝাঁঝালো হওয়ার ফলে অনেকে খেতে পারেন না। এর অন্যতম একটি কারণ হলো এতে উপস্থিত রয়েছে সালফাইড যৌগ।
রসুনের আচার কত প্রকার? রসুনের আচারের উপকারিতা ও তৈরির নিয়ম
রসুনের আচার কি
আচ্ছা, এখন যদি বলি, রসুন দিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু টক ঝাল স্বাদের আচার। তাহলে কি আপনি অবাক হবেন? নিশ্চয় ভাবছেন রসুন তো রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। তাহলে রসুন দিয়ে আবার আচার কীভাবে সম্ভব!
জি, রসুন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপাকরী একটি মসলা উপাদান। অন্যান্য আচারের থেকে রসুনের আচার অন্যতম। রসুনকে বলা হয় যৌন রোগের মহা ঔষধ। বলা বাহুল্য, যারা কাঁচা রসুন খেতে পারেন না, তাদের জন্য রসুনের আচার পুষ্টি গুণাগুণ বজায়ের অন্যতম সেরা একটি উপায়। খিচুড়ি ,সাদা ভাত কিংবা পোলাও এর স্বাদ বাড়িয়ে দিবে এই রসুনের আচার।
গোটা রসুনের আচার
মাকে দেখতাম গরুর মাংস রান্নাতে গোটা রসুন ব্যবহার করতেন। গরম ভাতের সাথে এই রসুন খেতে উফ কি যে মজা! ভাবতেই জিভে পানি চলে এলো! গোটা রসুন বা আস্ত রসুন যাই বলি না কেনো , আমার মনে হয় সকলের এটি পছন্দ। মূলত আস্ত রসুন দিয়ে বিভিন্ন মসলা ও খাঁটি সরিষার তেলের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় এই গোটা রসুনের আচার।
কোয়া রসুনের আচার
গোটা রসুনকে ছাড়ানো হলে আমরা ছোট ছোট কোয়া রসুন পেয়ে যাই। আর এই ছোট কোয়া রসুন দিয়ে আচার তৈরি করা হয় বিধায় একে বলা হয় কোয়া রসুনের আচার। কোয়া রসুনের আচার হোক বা গোটা রসুনের আচার , দুটোর পুষ্টি গুণাগুন ও স্বাদ অতুলনীয় ।
গঁজানো রসুনের আচার
রসুন খাওয়ার আরও একটি কার্যকারী উপায় হলো গঁজানো রসুন। অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে গঁজানো রসুন আবার কি? আবার হয়ত অনেকে এটাও চিন্তা করে ফেলি, যে রসুন নতুন গজিয়েছে তাকেই হয়ত গঁজানো রসুন বলে। আসলে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। মধুর মধ্যে প্রায় তিন মাস পর্যন্ত রসুন ভিজিয়ে বা ডুবিয়ে রাখলে তৈরি হয়ে যায় গঁজানো রসুন বা ফার্মান্টেড গার্লিক হানি। যদিও এটি তৈরি প্রসেস বেশ সময় সাপেক্ষ।
রসুনের আচারের উপকারিতা
- রসুনের আচারে ভিটামিন মিনারেল ও খনিজ পদার্থ থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- রুচি বৃদ্ধি করতে রসুনের আচার গুরুত্বপূর্ণ পালন করে থাকে। যাদের রুচির সমস্যা রয়েছে তারা এই রসুনের আচার খেতে পারেন।
- রসুনের আচারের যে সকল উপাদান ও মসলা ব্যবহার করা হয় তা হজমের এনজাইম বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ফলে হজর শক্তি বাড়ে ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- রসুনের আচারে বিদ্যমান আয়রন, যা রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে
- রক্তসঞ্চালনে সাহায্য করে এবং হার্টের রক্ত সঞ্চালিত হয়। ফলে মানব দেহের হার্ট সুরক্ষিত থাকে।
- সরিষার তেল ও রসুনে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন থাকে। যা আমাদের হাড় মজবুত রাখতে সহায়তা করে।
- উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রসুনের আচারের অবদান রয়েছে।
রসুনের আচারের রেসিপি
প্রথমে রসুনের কোয়াগুলো ভালোভাবে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। সেগুলো পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এরপরে একটি প্যানে সরিষার তেল দিয়ে তেল গরম করতে হবে। এর মধ্যে শুকনো লাল মরিচ ও রসুনের কোয়াগুলো দিয়ে ভালো করে ভাজতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে তেঁতুলের ক্বাথ দিয়ে একটু নাড়তে হবে। এরপরে গরম মসলা গুঁড়ো, স্বাদমতো লবণ ও চিনি দিতে হবে। সব কিছু মিশানো হয়ে গেলে ভালো ভাবে জাল দিতে হবে এবং নাড়তে হবে। আচার তৈরি হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে।
রসুনের আচার তৈরির উপকরণ
খুব সহজেই ঘরে তৈরি করা যায় এই আচার। আচার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন উপাদান। যেমন- রসুন, পাঁচফোড়ন, মরিচের গুঁড়ো, চিনি, লবণ, সরিষার তেল, তেঁতুলের ক্বাথ, গরম মসলা গুঁড়ো ।
রসুনের আচার সংরক্ষণ পদ্ধতি
রসুনের আচারে যেহেতু কোনো প্রিজারভেটিভস, কেমিক্যাল বা ভিনেগার ব্যবহার করা হয় না। তাই এটি কাচের বোয়ামে সরিষার তেলে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এবং মাঝে মাঝে হালকা রোদে দিতে হবে। এটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ছয় মাস পর্যন্ত এবং ফ্রিজে রাখলে এক বছর পর্যন্ত রেখে সংরক্ষণ করা যাবে।
রসুনের আচার খাওয়ার সর্তকতা
রসুনের আচার খাওয়ার অপকারিতা নেই বললেই চলে। তবে আচার পরিমিত খেতে হবে। বেশি খেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। যেমন গ্যাস, আলসার, ডায়রিয়া ইত্যাদি। এবং যারা ডাক্তারের নির্দেশনায় আছেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আচার খাবেন।
উপরিউক্ত আলোচনায় রসুনের আচার কি খাওয়ার উপায় ও সুস্বাদু আচার রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে। আশাকরি লেখাটি পরে আপনি বাসায় বসে রসুন দিয়ে আচার তৈরি করে পরিবার সহ মজা করে খেতে পারবেন।