You are currently viewing অল্পতেই সব ভুলে যাচ্ছেন? জানুন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে যা খাবেন  
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে যা খাবেন

অল্পতেই সব ভুলে যাচ্ছেন? জানুন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে যা খাবেন  

স্মৃতিশক্তি আমাদের মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুন। তাই  দৈনন্দিন জীবন কে আরও সহজ ও ফলপ্রসূ করার জন্য আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে উপকারী হলো সঠিক পরিমানে  পুষ্টিকর খাবার খাবার গ্রহণ করা। 

পুষ্টিকর খাবার গ্রহনের ফলে আমাদের শরীর ও  মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত পুষ্টির নিশ্চয়তা পায়। এতে করে আমাদের ব্রেইন  ডেভেলপমেন্ট হয়ে থাকে। আজ আপনাদের জানাবো  স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য কার্যকরী কিছু খাবারের গুনাবলি সম্পর্কে।  

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে যা খাবেন 

প্রতিদিন তো আমরা কত রকম খাবার ই খেয়ে থাকি। তবে ইদানীং আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যাবার কারনে প্রসেসিং কৃত খাবার গুলোর প্রতি আমরা বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি যা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। মানসিক স্ট্রেস, পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া ও নিজের প্রতি যত্নশীল না হওয়া সহ আরও নানা কারনে আমাদের স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তবে এমন বেশ কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো  পরিমিত পরিমাণে খেলে  এটি আপনার ব্রেইন বুস্ট করতে সাহায্য করবে। 

সবুজ শাকসবজি   

সবুজ শাকসবজির উপকারিতা বলে শেষ করা কঠিন। শাকসবজি তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। এই পুষ্টি উপাদান গুলোকে বলা হয় ব্রেইনের খাদ্য। বিশেষ করে পালং শাক, ব্রকলি, গাজর, বাঁধাকপি, টমেটো ইত্যাদি তে রয়েছে ভিটামিন কে  যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া পালং শাকে থাকে আয়রন বা ফোলেট আমাদের মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে এতে করে আমাদের স্মৃতিশক্তির ক্ষমতা উন্নত হয়। সবুজ শাকসবজিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি  মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই দৈনিক খাবার তালিকাতে বেশী পরিমানে সবুজ শাকসবজি রাখার চেষ্টা করুন। 

বাদাম খেলে কি স্মৃতিশক্তি বাড়ে

ফল

শরীরের যত্নে আমরা অনেকেই ফল খেয়ে থাকি। প্রতিটি ফলের মাঝে রয়েছে আলাদা কিছু পুষ্টিগুণ। মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে উপকারি ফল হলো স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি এবং ব্লুবেরি। এই ফলে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে খুবই উপকারি। এছাড়াও লেবু, আমলকী , পেয়ারা, পেঁপে, কমলা ইত্যাদি ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি । যা আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত  সঞ্চালন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমরা বাড়াতেও সাহায্য করে। আপনার ব্রেইন কে ডেভেলপ করার জন্য দৈনিক খাবার তালিকাতে কলা,  আপেল, আঙুর, মাশপাতি, মাল্টা, ড্রাগন ইট্যাদি ফল রাখতেও ভুলবেন না।

বাদাম

বাদাম হলো মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপকারি একটি খাবার। খুবই পরিচিত বাদাম হলো চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম ও আখরোট। বাদামে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ উপাদান, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।  এই উপকারি খাদ্য উপাদান গুলো আমাদের ব্রেইনের  কোষগুলো পুনর্গঠন ও মজবুত রাখতে সাহায্য করে। বাদামে থাকা ভিটামিন ই আমাদের অতিরিক্ত স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। এতে আমরা মানসিক ভাবে কিছুটা শান্তি অনুভব করি যা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারি। এছাড়া বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের  মস্তিষ্কের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ছোট থেকে বাচ্চার ব্রেইন ডেভেলপ এর পাশাপাশি বাচ্চাকে অ্যাক্টিভ রাখার জন্য দৈনিক কিছুটা পরিমানে বাদাম খাওয়াতে পারেন। 

বীজ ( seeds) 

বীজ জাতীয় খাবার যেমন চিয়া সিড, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ , ফ্ল্যাক্সসিড ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন, জিংক ও আন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ও মানসিক উদ্বেগ কমাতেও কার্যকরী। আপনারা চাইলে এই বীজ গুলোকে হালকা ভেজে বা কাচা খেতে পারেন। অন্যদিকে চিয়া সিড জুস বা স্মুথি বানিয়ে খেলেও দারুণ উপকার পাবেন।

ডিম 

ডিম হলো আমাদের মস্তিষ্ক এর জন্য অন্যতম সুপারফুড। ডিমে প্রোটিনের পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন  বি-১২ ও কোলিন যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । তাই দৈনিক খাবার তালিকাতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ১-২ টি ডিম খেতে  পারেন। 

ডার্ক চকলেট 

চকলেট পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটা কিছুটা কঠিন বটে। বিশেষ করে বাচ্চাদের ভীষণ পছন্দের খাবার এটি। সাধারনত আমরা চকলেট কে unhealthy খাবার বলে থাকলেও আমাদের শরীর অ মস্তিষ্কের জন্য ডার্ক চকলেট কিন্তু বেশ উপকারি। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আপনি দৈনিক কিছুটা পরিমানে ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। কারন এই চকলেটে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যাফেইন যা আমাদের মস্তিষ্কের রক্ত  সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে চকলেট কেনার সময় অবশ্যই চেক করে নিবেন যাতে চকলেটে কোকোয়া এর উপস্থিতি ৭০% এর উপরে থাকে। 

গ্রিন টি

ওজন কমানোর জন্য গ্রিন এর উপকারি আমরা অনেকেই জানি। তবে গ্রিন টি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়েতেও অনেক কার্যকরী। গ্রিন টি তে রয়েছে ক্যাফ্রেইন ও এল-থিনানিন। গ্রিন টি খেলে এটি আমাদের মানসিক দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে সেই সাথে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। 

ব্রেইন বাড়াতে কি  খাওয়া উচিত

বিটরুট

বিটরুট কে অনেকেই ফল ভাবেন আবার কেউ সবজি। সাধারণত সালাদ হিসেবেই বেশী প্রচলিত এই খাবার টি। অনেকেই আবার বিটরুটের তৈরি জুস ও অনেক পছন্দ করে থাকেন। আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী এটি।  বিটরুটে রয়েছে নাইট্রেট, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের কোনো কাজে মনোযোগ বাড়াতে ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া মস্তিষ্কের বয়স জনিত ক্ষত রোধ করতেও বিটরুট অনেক উপকারি। 

হলুদ 

রান্নায় বহুল ব্যবহৃত একটি প্রাকৃতিক মশলা হলো হলুদ। তবে এই হলুদ রান্নার সৌন্দর্য ও স্বাদ বৃদ্ধি এর পাশাপাশি আমাদের মস্তিষ্কের জন্যও কার্যকরী। হলুদে রয়েছে কারকিউমিন নামের একটি শক্তিশালী উপাদান এটি আমাদের মস্তিষ্কের প্রদান হ্রাস করতে সাহায্য করে সেই সাথে আমাদের মস্তিষ্কের কোষের পুনর্গঠনে সাহায্য করে থাকে।

চর্বিযুক্ত মাছ 

সামুদ্রিক মাছে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর চর্বি রয়েছে। আমাদের মস্তিষ্কের জন্য এই স্বাস্থ্যকর চর্বি অনেক উপকারি। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ যেমন টুনা, কোরাল, রূপচাঁদা, স্যামন, সারডিন ইত্যাদি মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, DHA এবং EPA যা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে মনোযোগ ক্ষমতার উন্নতি করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও চর্বিযুক্ত এই মাছগুলো আমাদের মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই স্মৃতিশক্তি বাড়তে সপ্তাহে ২-৩ দিন আমাদের চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া উচিত। 

কফি 

কফি তে রয়েছে ক্যাফেইন যা আমাদের মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর করে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে । এটি মস্তিষ্কের স্মৃতি শক্তি বাড়াতেও বেশ কার্যকরি। কফি তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে  ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।তাই স্মৃতিশক্তি বাড়াতে রোজ কফি খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত কফি খেলে রুচি নষ্ট হওয়া, ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া সহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ১-২ কাপ কফি খাওয়ায় যথেষ্ট। 

উপসংহার

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কের জন্য উপকারি ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আমাদের আরও বেশ কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত। যেমন পর্যাপ্ত পানি পান করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করা, দীর্ঘক্ষণ মোবাইল , কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না করা এবং সেই সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো ইত্যাদি। বিভিন্ন কারনে ও বয়সের চাপে আমাদের অনেক সময় স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে এতে কর্মজীবনেও আমাদের নানাবিধ ভোগান্তিতে পরতে হয়। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারবেন। এতে করে আপনি কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনে দ্রুত সফলতা অর্জন করতে পারেন। আশা করছি আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনারা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে স্মৃতিশক্তি বাড়তে কি কি খাবার খাবেন সেই সম্পর্কে একটা বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। সময় থাকতেই নিজের যত্ন নিন। সুস্থ থাকুন।