বাজারে প্রচুর পরিমানে ছোট বড় মাছ পাওয়া যায়। সবধরনের মাছ দিয়ে ঝোলের তরকারি খেতে অনেক সুস্বাদু হয়। বাঙালির মশলাযুক্ত মাছ রান্নার একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি হলো মাছের ঝোল। বিভিন্ন মশলা দিয়ে কষিয়ে রান্না করলে গরম সাদা ভাতের সাথে খেতে অসাধারণ। আর এই মাছের ঝোলে বিভিন্ন সবজিও ব্যবহার করা হয়। প্রায় সকলের কাছেই মাছের ঝোল অনেক প্রিয়। মাছের ঝোল লিখতে গিয়ে মাছের ঝোল নামের একটি চলচ্চিত্রের কথা মনে পরে গেলো।
মাছ বাঙালির কাছে একধনের আবেগ। বিভিন্ন বাঙালিআনা খাবারে হরেকপদের মাছের তরকারি তো থাকবেই। আমাদের দেশে ছোট বড় দেশি মাছের ঝোল বেশ সুস্বাদু হয়ে থাকে। দেশি মাছ খেতে যেমন মজাদার তেমননি রয়েছে বেশ স্বাস্থ্য উপকারিতা। আজকের আর্টিকেলে দেশি মাছের সুস্বাদু রেসিপি সম্পর্কে জানবো।
দেশি মাছের সুস্বাদু ঝোল
মাছের ঝোল পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। ধোঁয়া উঠা গরম ভাতের সাথে মজাদার মাছের ঝোল খেতে আমরা বাঙালিরা বেশ পছন্দ করি। দেশি মাছের মধ্যে অন্যতম হলো ইলিশ, মাগুর, পাবদা, রুই, টাকি ইত্যাদি এছাড়াও অন্য মাছের ঝোল তৈরি করা যায়। পেয়াজ মরিচ ও সামান্য মসলা ব্যবহার করেও তৈরি করা হয় ভুনা মাছ। অন্যদিকে বিভিন্ন সবজি যেমন আলু, বেগুণ, টেমেটো ব্যবহার করে মাছের ঝোল রান্না করা যায় খুব সহজেই। চলুন সহজ কয়েকটি রেসিপি জেনে নিওয়া যাক-
পাবদা মাছের ঝোল
উপকরণ
- পেয়াজ ২টি কুচি করা
- আদা রসুনের পেস্ট ১ টেবিল চামচ
- হলুদের গুড়ো আধা চা চামচ
- ধনিয়া গুড়ো ১ চা চামচ
- মরিচের গুড়ো ১ চা চামচ
- ভাজা জিরার গুড়ো ১ চা চামচ
- আলু ২টা
- বেগুণ ২০০ গ্রাম
- পানি ২৫০ মিলিলিটার
- লবন স্বাদমতো
- টমেটো মাঝারি সাইজের ২টি
- কাচা মরিচ ৫/৬টি
প্রস্তুতপ্রণালী
পাবদা মাছগুলো হলুদ ও লবন দিয়ে ভালোভাবে মাখিয়ে রাখতে হবে আধা ঘন্টার জন্য। এবার হালকা করে ভেজে নিতে হবে।একটি কড়াইয়ে পরিমাণমতো তেল গরম করে নিতে হবে। পেয়াজ কুচি দিয়ে একটু হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপরে আদা রসুন বাটা, হলুদের গুড়ো, ধনিয়া গুড়ো, মরিচের গুড়ো ও সামন্য পরিমাণে পানি দিয়ে মসলা ভালোকরে কষিয়ে নিতে হবে। ভাজা জিরার গুড়ো ও লবন দিয়ে আবারও কষিয়ে নিতে হবে। এবার লম্ব করে কেটে রাখা দুইটা আলু দিতে হবে। আলু একটু কষিয়ে নেওয়ার পরে বেগুণ দিতে হবে। চুলার আঁচ কমিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে কিছুক্ষণ কষাতে হবে। খুবভালো করে কষানো হয়ে গেলে পানি দিতে হবে। তরকারিতে একটা বলক আসলেই ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। তারপরে কাচা মরিচ ও লম্বা করে টমেটো কেটে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। রান্না হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে নামিয়ে নিতে হবে।
মাগুর মাছের ঝোল
উপকরণ
- হাফ কেজি টুকরো করা মাগুর মাছ
- ৬টেবিল চামচ তেল
- ২টি মিডিয়াম সাইজের আলু
- সামান্য কাচা জিরা
- ১ টি তেজপাতা
- ২টি লাল শুকনো মরিচ
- পেয়াজকুচি হাফ কাপ
- স্বাদঅনুযায়ী লবন
- আদা রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ
- হলুদের গুড়ো ১ চা চামচ
- মরিচের গুড়ো ২ চা চামচ
- জিরার গুড়ো ১ চা চামচ
- ধনেগুড়ো হাফ চা চামচ
- ৩/৪টি কাচা মরিচ
- ধনেপাতা কুচি
- ভাজা জিরার গুড়ো ১ চা চামচ
প্রস্তুতপ্রণালী
চুলায় একটি কড়াইয়ে ৩ টেবিল চামচ পরিমাণ তেল দিতে হবে। তেল একটু গরম হয়ে গেলে আলু একটু ছোট করে কেটে দিতে হবে। সামান্য পরিমাণে লবন ও হলুদ গুড়ো দিতে হবে। আলুগুলোকে ২মিনিটের মতো ভেজে তুলে নিতে হবে। আরও ৩ টেবিল চামচ পরিমাণ তেল দিতে হবে। এরমধ্যে সামান্য কাচা জিরা, তেজপাতা ও লাল শুকনো মরিচ দিতে হবে। ফোড়ন চলে এলে পেয়াজকুচি দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিতে হবে। স্বাদঅনুযায়ী লবন দিয়ে আবারও নেড়ে নিতে হবে। সামান্য পরিমাণে পানি দিয়ে আদাবাটা রসুন বাটা দিতে হবে। একটু কষিয়ে নিয়ে হলুদের গুড়ো ও মরিচের গুড়ো দিতে হবে। তারপরে মিশিয়ে নিয়ে এরমধ্যে জিরার গুড়ো, ধনেগুড়ো দিয়ে আবারও ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে।
মষলা কষানো হলে তেল উপরে ভেসে উঠে। সেই পর্যায়ে টুকরো করা মাগুর মাছ দিতে হবে। এবার সময় নিয়ে মসলার সাথে কষিয়ে নিতে হবে। (ঝালের পরিমাণটা নিজের স্বাদ অনুযায়ী দিতে পারেন)। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে ৫ মিনিটের জন্য। তারপরে চু/লার আঁচ মিডিয়ামে রেখে ৩ কাপ পরিমাণ পানি দিতে হবে। আবারও ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বলক চলে এলে ভেজে রাখা আলু দিতে হবে। একটু নেড়ে মিশিয়ে দিয়ে কাচা মরিচ দিতে হবে। আলু সিদ্ধ হয়ে গেলে ধনেপাতা কুচি ও ভাজা জিরার গুড়ো দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করতে হবে। রান্না হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে।
নারিকেল দুধ দিয়ে কৈ মাছের ঝোল
উপকরণ
- কৈ মাছ ৬টি
- নারিকেলের দুধ দেড় কাপ
- আদা বাটা ১ চা চামচ
- রসুন বাটা ১ চা চামচ
- পেয়াজ কুচি ১ কাপ
- পেয়াজ বাটা ১টি
- হলুদ ২ চা চামচ
- মরিচ দেড় চা চামচ
- ধরে গুড়ো ১ চা চামচ
- জিরে গুড়ো ১ চা চামচ
- কাচামরিচ ৩/৪টি
- লবন স্বাদ অনুযায়ী
- তেল প্রয়োজন মতো।
প্রস্তুতপ্রণালী
প্রথমে মাছগুলোতে লবন, হলুদ ও সামান্য পরিমানে তেল দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে। একটি কড়াইয়ে তেল দিতে হবে। তেল গরম হলে মাছগুলোকে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। মাছ ভাজা হয়ে গেলে তুলে নিতে হবে। এবার একই তেলে পেয়াজ কুচি দিতে হবে। পেয়াজ একটু হালকা করে ভাজা হয়ে গেলে পেয়াজ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা দিতে হবে। একটু নেড়ে কাচা মরিচ, হলুদ, মরিচের গুড়ো, ধরে গুড়ো, জিরার গুড়ো দিয়ে ভালোকরে মিশিয়ে অল্প পানি দিতে হবে। তেল ভেজে ওঠা অব্দি মশলা ভালোকরে কষিয়ে নিতে হবে। তারপরে নারিকেলের দুধ দিয়ে দিয়ে ফুটাতে হবে। সাথে স্বাদমতো লবন দিতে হবে। এবার বলক চলে এলে কৈ মাছগুলো দিতে হবে। কিছুক্ষণ রান্না করে চুলা থেকে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।
শিং মাছ দিয়ে শিমের বিচির মজাদার রান্নার রেসিপি
উপকরণ
- শিং মাছ ১০টি
- শিমের বিচি ৭৫০ গ্রাম
- মাঝারি সাইজের আলু ২টি
- তেল হাফ কাপ
- হাফ কাপ পেয়াজ কুচি
- রসুন বাটা দেড় চা চামচ
- হাফ চা চামচ আদা বাটা
- হাফ চা চামচ জিরা বাটা
- ১ চা চামচ হলুদ গুড়ো
- দেড় চা চামচ মরিচ গুড়ো
- হাফ চা চামচ ধনিয়াগুড়ো
- স্বাদমতো লবন
- পরিমাণতো পানি
- ৪টি কাচা মরিচ
- ধনেপাতা কুচি
- হাফ চা চামচ ভাজা জিরার গুড়ো
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি ফ্রাইপ্যানে রান্নার তেল দিয়ে গরম করে নিতে হবে। গরম হয়ে গেলে পেয়াজ কুচি দিতে হবে। হালকা বাদামী করে ভেজে নিতে হবে। রসুন বাটা, আদা বাটা, জিরা বাটা দিয়ে একটু নেড়ে নিতে হবে। একটু পানি দিতে হবে যাতে মসলাগুলো পুড়ে না যায়। এবার হলুদ গুড়ো, মরিচ গুড়ো, ধনিয়াগুড়ো ও স্বাদমতো লবন দিয়ে নেড়ে দিতে হবে। সবগুলো মসলা কষানোর জন্য আবারও একটু পানি দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। তাপরে ধুয়ে পরিষ্কার করা মাছ দিতে হবে। কিছুক্ষণ মসলার সাথে মাছ ভাজা হয়ে গেলে দেড় কাপের মতো পানি দিতে হবে। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৫ মিনিটের জন্য রাখতে হবে। মাছগুলো তুলে নিতে হবে। মসলার মধ্যে শিমের বিচি ও টুকরো করে কেটে রাখা আলুগুলো দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ৫ মিনিট পরে পানি ২ কাপ দিতে হবে। বলক চলে এলে মাছগুলো দিতে হবে। তারপরে নেড়ে ১০ মিনিটের মতো জ্বাল দিতে হবে। শিমের বিচি সিদ্ধ হয়ে গেলে কাচা মরিচ, ধনেপাতা কুচি ও ভাজা জিরার গুড়ো দিতে হবে। কিছুক্ষণ পরে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে। এবার গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনায় দেশি মাছের সুস্বাদু ঝোলের রেসিপি তুলে ধরা হয়েছে। রান্নার স্বাদ বাড়াতে তরকারিতে মাছ ব্যবহার করা হয়। আর মাছ তো আমরা বিভিন্নভাবেই রান্না করে থাকি। বরাবরই মাছ বাঙালির কাছে খুবই প্রিয় একটি খাবার। আর মাছের সুস্বাদু ঝোল খাবারে পাতে থাকলে যেনো অমৃত মনে হয়। ঝোল প্রিয় মানুষগুলোর জন্য মাছের ঝোল খাবারের তালিকায় সবার আগে। বিভিন্ন মাছ সবজি বা নারিকেল দিয়ে মাছের ঝোলের তরকারি বানিয়ে খেলে রান্নার স্বাদ আরও বেড়ে যায়। যারা নতুন রাধুনী তারা মাছের ঝোলের রেসিপি অনুযায়ী বাসায় তৈরি করে নিতে পারেন খুব সহজেই।