নারকেল তেলের নাম শুনলেই চুল কেন্দ্রিক নানান চিন্তা ভাবনা চলে আসে। আমরা ভেবে থাকি নারকেল তেলে চুলে ব্যবহার ছাড়া আর কোন ব্যবহার নেই। তবে বিভিন্ন গবেষনার মাধ্যমে জানা গেছে এই তেল চুলের ব্যবহারের পাশাপাশি রয়েছে ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য নানা উপকারী দিক।
প্রাচীন কাল থেকেই আমরা জেনে এসেছি, নারিকেল তেল চুলের যত্নে অনেক উপকরী। চুলের যত্নে নারিকেল তেলের ব্যবহার আমরা সকলেই করে থাকি। কিন্তু ত্বকের যত্নে নারিকেল তেল ব্যবহারের কথা কখনো চিন্তাই করিনা আমরা। তবে ত্বকেও এই তেল ব্যবহারে উপকারিতা মেলে। অনেকেই হয়তো এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। আজকে এই আর্টেকেলের মাধ্যমে রুপচর্চায় নারিকেল তেল ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। চলুন যেনে নেওয়া যাক-
রূপচর্চায় নারিকেল তেল ব্যবহারের উপকারিতা
নারকেল তেলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-ই থাকে। আর ভিটামিন-ই খুবই ভালো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ত্বকে যখন ভিটামিন-ই ব্যবহার করা হয় তা আমাদের ত্বক কে রিংকেল ফ্রি করে দেয়। এজন্যই নারকেল তেলকে এইজ স্টোপার বলা হয়।
ডার্ক সার্কেল দূর করতে
আমরা অনেকেই চোখের নিচের কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকি। সাধারণত অতিরিক্ত রাতজাগা ও ডিভাইস ব্যবহারে এই সমস্যা দেখা যায়। যা চোখের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। এক্ষেত্রে নারিকেল তেল দারুণ কার্যকরী। বিশেষজ্ঞর মতে, ডার্ক সার্কেল কমানোর জন্য প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে চোখের চারপাশে হালকা করে নারিকেল তেল ম্যাসাজ করা যেতে পারে। এতে চোখের ফোলাভাবও দূর হতে সাহায্য করে।
মেকআপ রিমুভার
মেকআপ রিমুভারের বিকল্প হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহার করা করা যেতে পারে। সঠিকভাবে মেকআপ রিমুভ না করলে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে ব্রণ ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই রিমুুভার দিয়ে মেকআপ তুলে ফেলতে হয়। এই তেল ব্যবহার করলে ত্বকে জ্বালাভাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। তাই রিমুভার হিসেবে খাঁটি নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
ভ্রু ঘন করতে
অনেকের চোখের ভ্রু পাতলা হয়ে থাকে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। যা আপনার ভ্রুতে ঘন করতে সাহায্য করবে।
প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে
ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি থেকে বাঁচাতে আমরা সানস্ক্রিন ব্যবহার করে থাকি। সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়। এমনকি ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চান না। তারা চাইলে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন সানস্ক্রিনের কাজ করবে। এতে এসপিএফ-৫ নামক উপাদান রয়েছে। যা আপনার ত্বককে সুরক্ষা করতে সাহায্য করবে।
ময়েশ্চাইজার হিসেবে
শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের জন্য নারিকেল তেল প্রাকৃতিক ময়েশ্চাইজার হিসেবে কাজ করবে। ক্ষতিকর নাইট ক্রিম ব্যবহারের পরিবর্তে এই তেল দারুন কার্যকরী। ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বককে কোমল ও নরম রাখতে সহায়ক।
ঠোঁট ফাটা দূর করতে
ঠোঁট ফাটা সমস্যা কম বেশি আমাদের সকলের হয়ে থাকে। বিশেষ করে শীতকালে অতিরিক্ত ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফেঠে যায়। এই সমস্যা দূর করতে নারিকেল তেল বেশ উপকারী। বাজারের কেনা লিপবার ঠোঁটকে আরও কালো করে দেয়। তাই যাদের ঠোঁট অনেক শুষ্ক ও ফাটা তারা তাইলে লিপবার হিসেবে ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রণ কমাতে
বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া যায়, নারিকের তেল ব্রণের ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে। এমনকি নারিকেল তেলে বিদ্যমান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণও কমাতে কার্যকরী।
আর্দ্রতা বজায় রাখতে
নারিকেল তেলে ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ই রয়েছে যা ত্বকের জন্য উপকারী। এটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। ত্বককে সজিব ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতে
নারিকেল তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়ায় গুণাবলী উপাদান রয়েছে। বয়সের বাড়ার সাথে আমাদের ত্বকের বলিরেখা দেখা যায়। ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সহায়ক এবং বার্ধক্য রোধ করতে এই তেল গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নারিকেলে তেলের ব্যবহার
ত্বকের সৌন্দর্য ও সুস্থতার জন্য নারিকেলের প্রতি আস্থা রাখা যেতে পারে। ত্বকের যত্নে অবশ্যই খাঁটি নারিকেল তেল বা এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল ব্যবহার করতে হবে। চলুন নারিকেলের তেল দিয়ে জাদুকরী দুটো ফেসপ্যাক বানানোর নিয়ম জেনে নেওয়া যাক-
ব্রণকমাতে নারিকেল তেলের ফেসপ্যাক
- নারিকেল তেল ১ চা চামচ
- দারুচিনি গুড়া ১ চা চামচ
এই দুটো উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্টের মতো করে নিতে হবে। এরপরে ব্রণের উপর আধা ঘন্টার জন্য লাগিয়ে রেখে দিন। আধাঘন্টা হলে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ত্বক উজ্জ্বল করতে নারিকেল তেলের ফেসপ্যাক
- নারিকেল তেল ৩ টেবিল চামচ
- হলুদ গুঁড়ো আধা চা চামচ
- লেবুর রস আধা চা চামচ
- মধু ১ টেবিল চামচ
একটি পাত্রে সবগুলো উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্টের মতো করে নিন। পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট্রে জন্য রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করা যাবে। আমরা সকলেই জানি হলুদ ত্বকের দাগঝোপ দূর করে উজ্জ্বলতাভাব আনতে সাহায্য করে, লেবু ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে এবং মধু ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
কোন ত্বকের জন্য নারিকেল তেল উপযোগী
আমাদের ত্বক সাধারণত তৈলাক্ত, শুষ্ক, সেনসিটিভ ও নমলাম হয়ে থাকে। আজকে আমরা জানতে পারবো ত্বকের ধরন অনুযায়ী বুঝতে পারবো কোন ত্বকের জন্য নারিকেল তেল উপযোগী। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
নরমাল ত্বকে নারিকেল তেল
নরমাল ত্বক বলতে সাধারণত বুঝায় যে ত্বকের যত্নে কোনো ঝামেলা নেই, নেই কোন নির্দিষ্ট নিয়ম। তবে নিয়ম মেনে ত্বকের যত্নে পাওয়া যায় উপকারিতা। নরমাল ত্বক খুব বেশি শুষ্ক আবার খুব বেশি তৈলাক্ত নয়। এই ত্বকে নারিকেল তেল ভালো কাজ করে।
তৈলাক্ত ত্বকে নারিকেল তেল
তৈলাক্ত ত্বকে সাধারণত মুখে সুস্পষ্ট লোম কুপ ও পোরস দেখা যায়। তৈলাক্ত ত্বকে সিবেসিয়াস গ্লান্ড থেকে প্রচুর পরিমানে তেল নিসঃরন হয় যার কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় তৈলাক্ত ত্বকের পোরস গুলো বড় দেখায়। এই ধরনের ত্বক যেহেতু অতিরিক্ত পরিমাণে তৈলাক্ত হয়ে থাকে। তাই এই ত্বকে নাকিতেল তেল ব্যবহার না করাটাই উত্তম।
শুষ্ক ত্বকে নারিকেল তেল
শুষ্ক ত্বক ফেটে যাওয়া, চামড়া ওঠা, চামড়া ফুলে যাওয়া, জ্বালা পোড়া হতে পারে। ত্বক শুষ্ক হলে হাত পা কনুই ও মাথার স্কাল্ভ অতিরিক্ত শুষ্ক থাকবে। শুষ্ক ত্বককে ড্রাই স্কিন বলা হয়। এই ত্বকে নারিকেল তেল সব থেকে বেশি ভালো কাজ করে। নিয়মিত ব্যবহারে স্কিন ময়েশ্চার ও হাইড্রেট থাকে।
সেনসিটিভ স্কিনে নারিকেল তেল
যতগুলো স্কিন টাইপ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শ কাতর ত্বক হলো সেনসিটিভ স্কিন। খুব সহজে বোঝায় যায় না কোন টাইপের ত্বক তবে কোন স্কিন প্রডাক্ট বা প্রসাধনী ব্যবহারে নিমিষেই ত্বকের পরিবর্তন চোখে পরে। এই ত্বকে নারিকেল তেল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায় ত্বকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
নারিকেল তেল খাওয়ার নিয়ম ও রান্নায় ব্যবহারের কয়েকটি ধরণ
সর্তকতা
রুপচর্চায় নারিকেল তেল ব্যবহারের আগে অবশ্যই সর্তক হতে হবে। অর্থাৎ প্রথমবার ত্বকে ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে। যদি ত্বকে কোনো সংবেদনশীল দেখা দেয় বা ত্বকে জ্বালাপোড়া অনুভব হয় তাহলে নারিকেল ত্বকে ব্যবহারের জন্য উপযোগী হবেনা। আর যদি কোনো প্রতিক্রিয়া না হয় তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
নারিকেল তেল নির্বাচনে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। বাজারের কেমিক্যালযুক্ত নারিকেল তেল কখনোই রুপচর্চায় ব্যবহার করা যাবেনা। এতে উপকারের চেয়ে ত্বকে ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে। অবশ্যই খাঁটি নারিকেল তেল ব্যবহার করতে হবে। ভার্জিন গ্রেড নারিকেল তেল ত্বকের জন্যে উপযোগী।
নারিকেল তেল সরাসরি ব্যবহারে উপকার বেশি পাওয়া যায়। তবে ত্বকে ব্যবহারে সময় সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। পরিমাণে বেশি ব্যবহার করলে তেলচিটচিটে ভাব হতে পারে। এবং বাহিরের ধুলা বালি ত্বকে জমে লোপকূপ বন্ধ হতে পারে। একারণে অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা জরুরী।
উপরোক্ত আলোচনায় রুপচর্চায় নারিকেল তেল ব্যবহারের উপকারিতা, ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনার ত্বককে সুন্দর, কোমল করতে আপনিও ব্যবহার করততে পারবেন এই তেল। চুলের যত্নের পাশাপাশি ত্বকের যত্নে খাঁটি নারিকেল তেলের কোনো তুলনা হয়না।