You are currently viewing সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে নারিকেল তেল খাওয়ার উপকারিতা
নারিকেল তেল খাওয়ার উপকারিতা

সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে নারিকেল তেল খাওয়ার উপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকেই চুলের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে নারিকেল তেল। নারিকেল তেল দুই ধরনের পাওয়া যায়। একটি রিফাইন করা নারিকেল তেল, অন্যটি এক্সট্রা ভার্জিন গ্রেড নারিকেল তেল। এই তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান রয়েছে। এছাড়াও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, পেনিফেনোলস ও ভিটামিন ই উপাদান রয়েছে। 

রিফাইকৃত তেলের চেয়ে ভার্জিন গ্রেড তেল বহুগুণ উপকারী। কারণ এই তেল সরাসরি খাওয়ার যায়। এছাড়াও এটি রান্নার কাজে ব্যবহার করা করার পাশাপাশি ত্বকের যত্নে দারুন কার্যকারী। নারিকেল তেলের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে তা হয়তো আমাদের অনেকের জানা নেই। আজকের এই আর্টিকেলে নারিকেল তেল খাওয়ার উপকারিতা ও এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

ত্বকের যত্নে নাকিলের তেলের উপকারিতা

নারিকেল তেল চুলের যত্নে ব্যবহারের কথা তো আমরা সকলেই জানি। কিন্তু এই তেল রুপচর্চায় কখনও কি ব্যবহার করেছেন? অনেকের কাছে এটি নতুন এক ধারণা হতে পারে। আমাদের স্কিনের তৈলাক্ত উপাদানগুলো ত্বকের ক্ষতি করতে পারে বিধায় তেল জাতীয় উপাদান ব্যবহারে আমরা বিরত থাকি। তবে আপনিও জেনে অবাক হবেন এই তেল ত্বকে সরাসরি ব্যবহারে যত্নে কতটা উপকারি। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

বয়সের ছাপ দূর করে

নারিকেল তেল বযসের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। কারণ এই তেলে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা আমাদের ত্বক সুরক্ষায় দারুন উপকারী। 

মুখের কালো দাগ 

ত্বকে বাড়তি কালো দাগ নিয়ে অনেকে চিন্তিত থাকেন। দাগ থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে সহজ একটি সমাধান হলো নারিকেল তেল ত্বকে ব্যবহার করা। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ নারিকেল তেল দাগ দূর করতে খুবই উপকারী। 

বলিরেখা দূর করতে 

বয়সের সাথে  সাথে আমাদের ত্বকে বলিরেখা দেখা যায়। পুরোনো বলিরেখা দূর করতে নারিকেল সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

ত্বকের র‌্যাশ কমাতে 

অতিরিক্ত গরম ও ধুলাবালির কারণে স্কিনে র‌্যাশ দেওয়া দেয়। নারিকেল তেল ত্বকের র‌্যাশ কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের স্কিনে র‌্যাশ ও চুলকানির সমস্যা রয়েছে তারা এই তেল ব্যবহার করতে পারেন।  

ময়েশ্চারাইজার হিসেবে 

ত্বকের রুক্ষ ভাব দূর করতে আমরা বিভিন্ন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে থাকি। যারা কেমিক্যালযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে চান না। তারা চাইলে নারিকেল ব্যবহার করতে পারেন। এই তেল ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বককে করে কোমল। 

মেকআপ ‍রিমুভার হিসেবে 

মেকআপ করার পরে ক্লিনজার দিয়ে ধুয়ার আগে রিমুভার ব্যবহার করতে হয়। না হলে শুধু ক্লিনজার  দিয়ে পুরোপুরি মেকআপ তোলা যায় না। পরবর্তীতে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে ব্রণসহ অন্যান্য সমস্যা দেয়া দিতে হবে। নারিকেল তেল মেকআপ রিমুভার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। 

ব্রণ কমাতে 

হয়তো ভাবছেন নারিকেল তেল দিয়ে আবার ব্রণ কিভাবে কমে! আমাদের অনেকের একটা ধারণা রয়েছে তেল মুখের ব্রণ বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, নারিকেল তেল ব্রণের ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে। 

কোন ত্বকের জন্য নারিকেল তেল বেশি উপযোগী

কোন ত্বকের জন্য নারিকেল তেল বেশি উপযোগী 

ত্বকের যত্নে নারিকেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। এবার আমরা জানবো কোন ত্বকের জন্য তেল ব্যবহার করা উচিত আর কোন ত্বকে ব্যবহার করা যাবেনা। কারণ প্রতিটি মানুষের ত্বকের ধরণ আলাদা থাকে। তাই ত্বকে ধরন বুঝে ব্যবহার করতে হবে। 

সেনসিটিভ স্কিন 

যাদের সেনসিটিভ স্কিন এবং এলার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ত্বকে সহজে কোনো উপাদান স্যুট করে না। তাই এই তেল ব্যবহার না করাটাই উচিত। এতে স্কিনের সমস্যা আরও বাড়তে পারে। 

ড্রাই স্কিন 

নারিকেল তেল ড্রাই স্কিনের জন্য বেশ ভালো। কারণ এই ধরনের ত্বক সবসময় শুষ্ক ও ডিহাইড্রেট থাকে। তেল ব্যবহার করার ফলে স্কিন ময়েশ্চার করার পাশাপাশি স্কিনকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। 

বয়স্ক ব্যক্তির ত্বকে

যেহেতু বয়সের সাথে ত্বকে বয়সের ছাপ ও বলিরেখা পরে। এই সমস্যা দূর কমাতে নারিকেল তেল অন্যতম সহজ একটি উপায়।  

নরমাল স্কিন 

যাদের স্কিন নরমাল তারা চাইলে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে স্কিনকে মসৃণ করে তোলে। ত্বকে নারিকেল তেল ব্যবহারের সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমবার  ত্বকে তেল ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে। অর্থাৎ ত্বকের সামান্য এক অংশ তেল ব্যবহার করে দেখতে হবে। যদি কোনো সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া না করে তাহলে এই তেল ত্বকে ব্যবহারের জন্য উপযোগী।  

চুলের যত্নে নারিকেল তেলের উপকারিতা

চুলের যত্নে নারিকেল তেলের গুণের শেষ নেই। নারীর সৌন্দর্য তার ঘন কালো চুলের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যুগ যুগ ধরে তেল ব্যবহার হয়ে আসছে। মাথার ত্বকে তেল ম্যাসাজ করলে ব্লাড সার্কুলেশন বেড়ে যায়। এবং চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগান দিয়ে দেয় ও চুলকে করে ঝলমলে, উজ্জ্বল ও প্রাণ্যবন্ত। 

চুল পড়া দূর করতে 

বর্তমানে চুল পড়ার সমস্যায় প্রায় সকলেই চিন্তিত থাকি। এই সমস্যা দূর করতে নারিকেলে তেলের অবদান অনেক। কারণ এটি তেল চুলের প্রোটিন জোগান দেয়। চুলের গোড়া শক্তিশালী করে। 

চুল ঘন করতে 

মাথা ভর্তি ঘন চুল কার না পছন্দ। আর চুল ঘন করতে নারিকেলের দারুণ কার্যকারী। এই তেল চুল গোজাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহারে চুল ঘন হয়। তাই যারা চুল ঘন করতে চান তারা এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। 

চুলের আদ্রতা 

নারিকেল তেল চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে, চুলকে স্বাস্থ্যকর করতে সাহায্য করে। চুলের সৌন্দর বাড়াতে ও যত্নে নারিকেল তেল প্রথম তালিকায় রাখা যেতে পারে। 

মাথার খুশকি দূর করতে 

শীতকাল আসলেই মাথা ভর্তি খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। নারিকেল তেল মাথার তালুতে ব্যবহার করলে খুশকি অনেকাংশে কমে যায়। 

চুল কন্ডিশনিং 

চুলতে সতেজ ও চকচকে করতে প্রয়োজন চুলের ডিপ কন্ডিশনিং। আর নারিকেল তেল চুলের কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে থাকে। একে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার বলা হয়। যা ব্যবহারে চুলকে গভীরভাবে কন্ডিশনিং করে চুলে হাইড্রেশন প্রদান করে।  

সুস্বাস্থ্যের জন্য নারিকেল তেলের উপকারিতা 

নখ মসৃণ ও শক্ত 

নখ হাতের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। তবে যাদের নখ শুকনো তাদের নখ দ্রুত ফেটে বা ভেঙে যায়। এতে নখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। এই সমস্যা দূর করতে নারিকেল তেল সপ্তাহে দুই তিন বার নখে ম্যাসেজ করতে হবে। ফলে নখ শক্ত ও মসৃণ হবে। 

ঠোঁট ফাটা রোধ 

বেশিভাগ সময় শীতকালে ঠোঁট ফাটা সমস্যা দেখা যায়। আবার অনেকের সারাবছর ঠোঁট ফাটা থাকে। মূলত ঠোঁটের আদ্রতা না থাকার কারণে এমনটি হয়। এই সমস্যা দূর করতে নারিকেল তেল ভালো কাজ করে। সামান্য পরিমাণে এই তেল ঠোঁটে ম্যাসেজ করলে ঠোঁট আদ্রতা বজায় থাকবে। ফলে ঠোঁট ফাটা দূর হয়ে ঠোঁটকে সুন্দর ও নরম করে তোলে। নারিকেল তেলটি ন্যাচারাল লিপবাম হিসেবে কাজ করে। 

হজম শক্তি বাড়াতে

নারিকেল তেল হজমের উন্নতিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। হজম সংক্রান্ত্র সমস্যা থাকলে রান্নায় নারিকেল ব্যবহার করতে পারেন। ফলে হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটাতে পারে। পরিপাকতন্ত্রের উন্নতির পাশাপাশি গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সহায়ক।

কোল্ড প্রেসড সরিষার তেল কি, ব্যবহারবিধি ও উপকারিতা 

ওজন কমাতে 

অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন অনেকে। নারিকেল তেলে রয়েছে লরিক অ্যাসিড, ক্যাপ্রিলিক অ্যাসিড, ক্যাপ্রিক অ্যাসিড, মাঝারি চেইন ট্রাইগ্রিসারাইড রয়েছে যা ওজন কমাতে সাহায্যে করে। ওজন কমানোর জন্য এই তেল খাওয়ার পাশাপাশি ব্যায়াম করতে হবে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে 

নারিকেল তেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। ফলে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। 

হাড় মজবুত করতে 

নারিকেল তেল তেলে উপস্থিত পলিফেনল যৌগগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। যা আমাদের হাড়কে মজবুত ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।  

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে 

নারিকেল তেলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়েছে তারা চাইলে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় পরিমিত মাত্রায় এই তেল রাখতে পারেন। 

দাতেঁর যত্নে নারিকেল তেল 

দাতেঁর যত্নে নারিকেল তেল 

দাঁতের যত্নে নারিকেল তেলের ব্যবহার করাটা হয়তো অনেকের কাছেই নতুন মনে হতে পারে। সাধারণত দাঁতের যত্নে আমরা টুথপেস্ট, মাউথওয়াশ ব্যবহার করে থাকি। জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পাওয়া যায়, নারিকেল তেল দাঁতের প্লাক তৈরিতে বাঁধা দেয় এবং প্লাক সম্পর্কিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এই তেল মুখের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে। মুখের দুর্গন্ধ, দাতেঁর ক্ষয় ও মাড়ির বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে এই তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দাঁতের মাড়ি ম্যাসাজ করার পাশাপাশি মাউথওয়াশের মতো ব্যবহার করা যাবে। 

উপরোক্ত আলোচনায় নারিকেলের তেলের উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে। এই আর্টিকেল পড়লে আপনিও এই তেলের উপকারী গুনাগুণ সম্পর্কে অজানা তথ্য জানতে পারবেন। এই তেল আমাদের জীবন যাপন স্বাস্থ্যজ্জ্বল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.

Leave a Reply