You are currently viewing চিনি খাওয়ার অপকারিতা ও চিনির বিকল্প খাবারসমূহ  
চিনি খাওয়ার অপকারিতা 

চিনি খাওয়ার অপকারিতা ও চিনির বিকল্প খাবারসমূহ  

মিষ্টিজাতীয় খাবার আমাদের কম বেশি সকলের পছন্দ। যেকোনো খুশির সংবাদে আমরা মিষ্টি খেয়ে থাকি। বিভিন্ন অনুষ্ঠান উৎসবের আয়োজনে মিষ্টি ছাড়া যেনো চলেই না। মিষ্টি জাতীয় খাবার মানেই চিনির ব্যবহার। শুধু তাই নয় প্রতিদিনের চা-কফি বানাতে ব্যবহার করা হয় চিনি। যারা অনেক মিষ্টি খাবার খেতে পছন্দ করেন, তাদের ক্ষেত্রে চিনি বাদ দেওয়া প্রায় অসম্ভব। 

কিন্তু প্রতিদিন অতিমাত্রায় মিষ্টি খাবার ও চিনি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে।চিনির ক্ষতিকর প্রভাব শুধু শরীরেই নয় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেও প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি খাওয়ার ফলে মেজাজ পরিবর্তন হয়, হতাশা ও উদ্বেগ কাজ করে। হয়তো অনেকেই এর অপকারিতা সম্পর্কে অবগত নন। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা চিনি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। 

চিনি খাওয়ার অপকারিতা 

চিনি খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনি একটি নীরব ঘাতক। এটি শরীরে বিষের মতো কাজ করে। যা দীর্ঘদিন অত্যাধিক পরিমাণে খাওয়ার ফলে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে শরীরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। সাদা চিনির পরিবর্তে অনেকেই লাল চিনি খেতে বলেন। কারণ রিফাইন করা সাদা চিনির মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি খনিজ লবন বিদ্যমান থাকে না । অন্যদিকে লাল চিনি রিফাইন করা হয় না বিধায় এতে থাকা খনিজ লবনের পুষ্টিগুণ আমরা পেয়ে থাকি। তবে এই লাল চিনিও অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যাবেনা। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। চলুন চিনি খাওয়ার অপকারিতা জেনে নেওয়া যাক-

ফ্যাটি লিভার 

লিভারের ক্ষতি করে এমন একটি উপাদান হলো অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করা। মূলত অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে এই চিনি চর্বিতে রুপান্তরিত হয়ে আমাদের লিভারে জমা হয়। এতে লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। 

হার্টে ব্লক 

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার কারণে রক্ত ট্রােইগ্লিসারাইড ও ক্ষতিকর এলডিএলের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে হার্ট ব্লক হতে পারে। তাই হার্টে ব্লক ধরা পড়লে চিনির খাওয়া কমাতে হবে। 

ড্রিপেসশনের ঝুঁকি বাড়াতে 

চিনি খাওয়ার অপকারিতা 

বিভিন্ন ধরনের খাবার রয়েছে যা ডিপ্রেশন বা বিষন্নতাকে বাড়িয়ে দেয় তারমধ্যে অন্যতম হলো চিনি। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এতে মেজাজ খারাপ হয় এবং বিরক্ত, অস্থিরতা বৃদ্ধি করে। 

চিনি মস্তিষ্কের প্ররোচিত করে 

চিনি আমাদের মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। লিম্বিক সিস্টেম নামক মস্তিষ্কের অংশকে এসব খাবার আরও বেশি করে খাওয়ার প্ররোচিত করতে পারে। মিষ্টান্ন খাবার খেলে এসব খাবার খাওয়ার জন্য আমাদের মস্তিষ্ক প্রশিক্ষণ পায়। যার ফলে এগুলো খাবার খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। 

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় 

অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের জন্য চিনি অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইনসুলিন আমাদের শরীরের রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। বেশি পরিমাণে চিনি খাওয়ার ফলে ইনসুলিন নিঃসরণ বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদনের সামর্থ্য না থাকলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস দেখা যায় । 

ওজন বৃদ্ধি 

চিনি খাওয়ার ফলে চিবুক, হাত ও পায়ের পেশীসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ফ্যাট জমতে শুরু করে। ওজন বেড়ে যায় ও  শরীরর খুব দ্রুত মোটা হয়ে যায়। আর শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমলে বিভিন্ন রোগ বাসা বাধে। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয় আমাদের শরীরে ক্যালোরি বৃদ্ধি করে। তবে এতে প্রোটিন ও ফাইবারের মতো পুষ্টি কম থাকে। আর এ কারণে উচ্চ চিনিযু্কত খাবার ওজন বৃ্দ্ধি করে। 

দাঁতের ক্ষয় করে 

বেশি পরিমাণে চিনি  খাওয়ার  ফলে মুখে অনেক বেশি অ্যাসিডিক হবে এবং দ্রুত দাঁতের ক্ষয় হতে থাকবে।  বিশেষজ্ঞরা  বলেন, আমাদের মুখে থাকা  ব্যাকটেরিয়া চিনি পছন্দ করে, চিনি   খাওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়া এসব খেয়ে বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে এসিড  নিঃসরণ হয়। তারপরে এই এসিড দাঁতের এনামেলকে আক্রমণ করে ও ডেন্টিন নামক দাঁতের গভীর স্ততে প্রবেশের ‍সুযোগ সুষ্টি  করে ।

স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয় 

অনেক বেশি পরিমাণে চিনি জাতীয় খাবার আমাদের দেহের বিশেষ করে মস্তিষ্কের প্রোটিন ও পুষ্টির শোষণ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। ফলে মস্তিষ্কের নিউরন এবং কোষ বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। চিনির কারণে আলঝেইমারসের মতো রোগ হতে পারে। এতে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। 

হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে 

বেশি চিনি খাওয়ার ফলে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। মূলত উচ্চ চিনিযুক্ত ডায়েটে হৃদরোগ থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিনি এলডিএল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে। এবং এইচডিএল নামক উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে হৃদরোগজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। 

চিনি ইনসুলিন বৃদ্ধি করে 

অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের একটি তাৎক্ষণিক ফলাফল হচ্ছে ইনসুলিন সিঃসরণ বেড়ে যাওয়া। এটি মূলত আমাদের শরীরের রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এমনটি  যাদের  মধ্যে  উচ্চ রক্ত  শর্করার উপস্থিতি রয়েছে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। 

উচ্চরক্তচাপ বাড়াতে 

অধিক পরিমাণে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার উচ্চরক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। এই চিনি উচ্চরক্তচাপ বা হাইপরটেনশন হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। মূলত চিনি গ্রহনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে এই হাইপারটেনশন হতে পারে। 

রক্ত চলাচলে বাধা 

অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি খাওয়ার ফলে শরীরের রক্ত চলাচেলের ধমনীর দেয়ালের পুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে রক্ত স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না এবং রক্তচাপও বেড়ে যায়। তাই কখনোই অরিতিক্ত পরিমাণে চিনি খাওয়া উচিত নয়। 

ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় 

চিনি খাওয়ার ফলে ক্যান্সারের প্রবণতা বেড়ে যায়। এমনকি ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আয়ু কমিয়ে আনে।

চিনি কেনো খারাপ?

চিনি খাওয়া ক্ষতিকর কিন্তু চিনি কেনো খাওয়া খারাপ সেই বিষয়ে আমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগ্রত হয়েছে। আপনি হয়তো জানেন চিনিকে হোয়াইট পয়জন বা সাদা বিষ বলা হয়। মূলত চিনি থেকে ক্যালরি শক্তি পেয়ে থাকি। একই ভাবে ভাত, আটা থেকেও সমপরিমাণ ক্যালরি পেয়ে যাই। এই চিনি, আটা  ও ভাত এগুলো কিন্তু শর্করা জাতীয় খাবার। তবে চিনি খাওয়ার ক্ষেত্রে  কেনো ভয় কাজ করে। কারণ হলো চিনি সবচেয়ে ক্ষতিকর শর্করা। 

সাদা চিনির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সর্বোচ্চ। চিনি খাওয়ার পরে এটি খুব দ্রুত গ্লুকোজে রুপান্তরিত হয়ে রক্তের সাথে মিশে যায়। প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করে। এবং বাকী গ্লুকোজ চর্বি হিসেবে শরীরের বিভিন্ন অংশে জমা হয়। যার ফলে আমরা অনেক তাড়াতারি ক্ষুধা অনুভব করি। এবং বেশি পরিমাণে বারবার খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করে থাকি। এতে ওজন বেড়ে যায়, ডায়াবেটিস সমস্যা, লিভারজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা যায়। 

চিনি খাওয়ার অপকারিতা 

চিনির বিকল্প হিসেবে যেসকল খাবার 

চিনি একটি প্রক্রিয়াজাত খাবার। শিল্পকারখানায় রিফাইনিং পদ্ধতিতে আখের রস থেকে চিনি তৈরি করা হয়। রিফাইন করার ফলে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারী পুষ্টি উপাদান দূর করে। যার ফলে অতিরিক্ত চিনি খেতে চিনির বিষক্রিয়ার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই চিনির বিকল্প হিসেবে আমরা যেসকল খাবার খেতে পারি তা নিচে আলোচনা করা হলো।

আখের গুড়ের পাউডার: আখের গুড় থেকে পাউডার তৈরি করা হয়। দেখতে বাদামী রঙের হয়ে থাকে। চিনির মতো দানাদার। চিনির পরিবর্তে এই আখের গুড়ের পাউডার শরবত বা ডেজার্ট তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে।

বাদাম: অতিরিক্ত চিনি খেলে আমাদের ক্ষুধা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন কাজু, কাঠ, চিনা, আখরোট ইত্যাদি প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যেতে পারে। এতে পেট অনেক্ষণ ভরা থাকবে। 

তাজা ফল: ফলের মধ্যে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। ফলের শর্করার ক্ষতিকর প্রভাব নেই। কারণ ফলের ফাইবার ধীরে শর্করা শোষণে সাহায্য করে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এমনকি দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টিউপাদান পূরণে সাহায্য করে। চিনির বিকল্প হিসেবে ফল অন্যতম।

মধু: প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হলো মধু। এতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। চিনির বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন শরবত বা পানীয় তৈরিতে মধু ব্যবহার করতে পারেন। 

গুড়: চিনির চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হলো গুড়। তাই বিভিন্ন ডেজার্ট আইটেমে খেজুরের গুড় বা আখের ‍গুড় ব্যবহার করা যেতে পারে। 

স্টেভিয়া: চিনির বিকল্প হিসেবে স্টেভিয়া দারুণ। মূলত এটি একধরনের ভেষজ পাতা। স্বাদবৃদ্ধিতেও স্টেভিয়ার অনেক চাহিদা। এটিও চা কফি, পানীয় খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা যায়। 

খেজুর: চিনির বিকল্প হিসেবে খেজুরের কোনো তুলনা হয়। এতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন রয়েছে। এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। 

উপসংহার

আজকের আর্টিকেলে চিনি খাওয়ার অপকারিতা ও চিনির বিকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। আশা করছি এই লেখাটি পড়ার পরে সুষ্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবেন। চিনি সরাসরি খাওয়া উচিত না। অনেক বিশেষজ্ঞরা না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে চিনির পরিবর্তে গুড় ব্যবহার করলে যেমন স্বাদ ঘ্রাণ পাওয়া যায় তেমনটি পুষ্টিগুণও পাওয়া যায়। 

ভেজাল ও কেমিক্যাল মুক্ত প্রিমিয়াম গুড়।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.