ভোজনরসিক মানুষদের কাছে কাচ্চি বিরিয়ানি এক ধরনের আবেগ। কাচ্চির কথা শুনলেই আমাদের মুখে পানি চলে আসে। বিশেষকরে যারা বিরিয়ানি খেতে খুব পছন্দ করেন তাদের কাছে কাচ্চি অমৃত। অবশ্য এই এটি রান্না করাটা একটু সময় সাপেক্ষ ও ঝামেলার। এটি তৈরিতে উপকরণের পরিমাণটাও বেশি প্রয়োজন হয়। অল্প মসলা দিয়ে রান্না করলে কাচ্চির আসল স্বাদ ও ঘ্রাণ কোনোটাই পাওয়া যায় না।
আজকাল বিভিন্ন রেসিপি বাসায় তৈরি করতেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকি। এতে খাবার যেমন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয় খেতেও অনেক মজাদার হয়। কাচ্চি তৈরি করার জন্য রেসিপি ভালোভাবে জানতে হবে এবং অবশ্যই সবগুলো উপকরণ সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। এতে দোকানের মতো সুস্বাদু কাচ্চির স্বাদ পাওয়া যাবে। আজকের আর্টিকেলে কাচ্চি বিরিয়ানির রেসিপি সম্পর্কে জানবো।
কাচ্চি বিরিয়ানি
বিরিয়ানি খেতে কম বেশি সকলেই পছন্দ করে থাকি। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বিরিয়ানি যেমন জনপ্রিয় তেমনটি কাচ্চি ঢাকার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে। শুধু তাই নয় আমাদের দেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যেমন ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশেও জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। কাচ্চি শব্দটি এসেছে উর্দু কাচ্চা শব্দটি থেকে। যার বাংলা অর্থ কাঁচা। এই বিরিয়ারি কাচা মাংস, বিভিন্ন মসলা ও সুগন্ধি চালের আস্তরণ দিয়ে দমে বসিয়ে রান্না করা হয়।
কাচ্চি বিরিয়ানির রেসিপি
রেসিপির জন্য যেসকল উপকরণ লাগছে এবং এর সম্পূর্ণ প্রস্তুতপ্রণালী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
খাসির মাংসের কাচ্চি রিরিয়ানির রেসিপি
গোটা মসলার উপকরণ
- জিরা
- শাহি জিরা
- দারুচিনি
- গোল মরিচ
- লবঙ্গ
- জয়েত্রী
- জয়ফল
- তেজপাতা
- এলাচ
গোটা মসলা ১ চা চামচ করে নিতে হবে। সবগুলো উপকরণ বেটে নিতে হবে।
- ১০/১২টির মতো কাজুবাদাম
- ১ টেবিল চামচ পোস্তদানা
এই দুটো উপকরণ একসাথে বেটে নিতে হবে।
মাংস মেরিনেট করার জন্য
- ১ কেজি খাসির মাংস
- ৩ চা চামচ আদা বাটা
- ২ চা চামচ রসুন বাটা
- ১ চা চামচ মরিচের গুড়ো
- হাফ চা চামচ হলুদের গুড়ো
- ১ চা চামচ ধনিয়া গুড়ো
- হাফ কাপ টক দই
- এক কাপ পেয়াজ বেরেস্তা
- পরিমাণমতো লবন
- ১ কাপ বেরেস্তায় ভাজা তেল
- ১ চা চামচ কেওরা জল
কাচ্চি রান্নার জন্য রেগুলার সাইজ করে কেটে নেওয়া খাসির মাংসের মধ্যে উপরের সবগুলো উপকরণ দিয়ে হাত দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপরে পোস্তদানা ও কাজুবাদামের পেস্ট ও গোটা মসলা বাটা দিয়ে আবারও মিশিয়ে নিতে হবে।
চাল সেদ্ধ করার জন্য
- স্বাদমতো লবন
- ১ চা চামচ রান্নার তেল
- ৩কাপ বাসমতি চাল
এই বিরিয়ানি রান্নার জন্য বাসমতি চাল একটি নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপরে
চুলায় একটা পাত্র বসিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। লবন ও রান্নার তেল দিতে হবে। পানি ফুটে গেলে বাসমতি চাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ফুটানো পানির মধ্যে দিতে হবে। এবং ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চাল সেদ্ধ করে নিতে হবে। তারপরে একটি স্টেইনারের সাহায্যে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
- হাফ কাপ গুড়ো দুধ
- ১ কাপ পানি
একটি বাটিতে গুড়ো দুধ ও পানি দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে।
- পেয়াজ বেরেস্তা
- আলুবোখরা
- কিসমিস
- কাচা মরিচ
- দুই চা চামচ ঘি
- ১ চা চা চামচ কেওরা জল
- ১ চা চামচ গোলাপ জল
প্রস্তুপ্রণালী
একটি পাত্রে মেরিনেট করা মাংস দিতে হবে। তারপরে অর্ধেক পরিমাণে ভাত দিতে হবে। ফুড কালার দিয়ে হালকা ভেজে রাখা আলু দিতে হবে। তারপরে পেয়াজ বেরেস্তা, কয়েকটি আলুবোখরা ও কিসমিস ও কাচা মরিচ দিতে হবে। এবং তারপরে বাকি অর্ধেক ভাতগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে। আবারও একই ভাবে আলু, বেরাস্তা, কাচা মরিচ, কিসমিস ও আলুবোখরা দিতে হবে। ঘি, কেওরা জল,গোলাপ জল ও গুলিয়ে রাখা গুড়ো দুধ দিতে হবে।
যেহেতু এই বিরিয়ানি দমে রান্না করা হয়। তাই আগে থেকে আটা গুলিয়ে একটা লম্বা ডো তৈরি করে ঢাকনার চারিপাশে লাগিয়ে নিতে হবে। এবং ঢাকনায় কোনো ছিদ্র থাকলে সেটাও বন্ধ করে দিতে হবে। মাঝারি আঁচে চুলায় একটি তাওয়া বসিয়ে তারপরে বিরিয়ারি তৈরির পাত্রটি বসাতে হবে। প্রথমে ৫ মিনিটের মতো হাই হিটে রান্না করতে হবে। তারপরে চুলার আঁচ কমিয়ে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। ব্যস তৈরি হয়ে গেলে খুব সহজেই কাচ্চি রেসিপি।
বীফ কাচ্চি বিরিয়ানির রেসিপি
উপকরণ
- চিনি গুড়ো চাল ৭৫০ গ্রাম
পরিমাণমতো পানি দিয়ে চাল ধুয়ে নিয়ে আধা ঘন্টা পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপরে স্টেইনারের মাধ্যমে ঝরিয়ে নিতে হবে। এতে করে রান্নার পরেও ঝরঝরে থাকবে।
- আধা কেজি আলু
- স্বাদমতো লবণ
- ১/৪ চা চামচ ফুডকালার
- দেড় টেবিল চামচ তেল
এবার আলু বড় করে কুটরো করে নিতে হবে। তারপরে লবণ ও ফুডকালার দিয়ে মাখিয়ে নিতে হবে। ১০ মিনিটের মতো মাখিয়ে রাখতে হবে। চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে তেল দিয়ে হালকা গরম করে নিতে হবে। তারপরে টুকরো করা আলু দিয়ে ভেজে নিতে হবে। চুলার আঁচ লো রেখে একটু সময় নিয়ে ভেজে নিতে হবে।
- ১ কাপ কুসুম গরম দুধ
- হাফ চা চামচ জাফরান
দুধের সাথে জাফরান দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
মাংস মেরিনেট করার জন্য
- দেড় কেজি গরুর মাংস
- দেড় টেবিল চামচ লবন
- দুই টেবিল চামচ কাচা পেপে খোসাসহ বাটা
- আধা কাপ ফেটিয়ে নেওয়া টক দই
- আধা কাপ পোস্তদানা বাটা
- ১/৪ কাপ কাজু বাদাম বাটা
- ৩ টেবিল চামচ আদা বাটা
- ২ টেবিল চামচ রসুন বাটা
- আধা চামচ করে জায়ফল ও জয়েত্রী বাটা
- ১ টেবিল চামচ লাল মরিচের গুড়ো
- ১ টেবিল চামচ ভাজা জিরার গুড়ো
- ১ চা চামচ শাহী গরম মসলার গুড়ো
- ১ চিমটি আস্ত শাহি জিরা
- ১ চা চামচ কাবাব চিনি
- ১ কাপ পেয়াজ বেরেস্তা
- আধা চা চামচ গোল মরিচের গুড়ো
- ৩/৪ কাপ রান্নার তেল
- ১ টেবিল চামচ কেওরা জল
গরুর মাংস রেগুলার থেকে একটু বড় করেও কেটে নেওয়া যাবে। এবার সবগুলো উপকরণ হাত দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে। পাত্রের মাঝে ছোট একটা স্টিলের বাটি দিতে হবে। তারপরে এক টুকরো কয়লায় আগুন ধরিয়ে ছোট বাটিতে রাখতে হবে। কয়লার সাথে সামান্য ঘি দিতে হবে। তারপরে একটা ঢাকনা দিয়ে রাখতে হবে।
চাল সেদ্ধ করার জন্য
- ১ চিমটি শাহি জিরা
- ৭/৮টি এলাচ
- ২টি দারুচিনি
- ৩টি তেজপাতা
- স্বাদমতো লবন
- ১ টেবিল চামচ তেল
একটি পাত্রে পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপরে সবগুলো উপকরণ দিতে হবে। এবার ঝরিয়ে রাখা চালগুলো দিতে হবে। চাল সেদ্ধ করার সময় অবশ্যই পানি বেশি পরিমাণে দিতে হবে। প্রায় ৮০ শতাংশ পরিমাণ চাল সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
- আধা কাপ পেয়াজ বেরেস্তা
- ১ টেবিল চামচ চিনি
- স্বাদমতো কাঠ বাদাম কুচি
- ২ টেবিল চামচ ঘি
- ২টেবিল চামচ কিসমিস
- ৫/৬টি আলুবোখরা
- ১ টেবিল চামচ কেওরা জল
- ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল
- কয়েকটি কাচা মরিচ
প্রস্তুপ্রণালী
মেরিনেট করা মাংসের মাঝে কয়লার বাটি তুলে রাখতে হবে। তারপরে পেয়াজ বেরেস্তা ও চিনি মিলিয়ে মাংসের ওপরে ছিটিয়ে দিতে হবে। তারপরে ভাজা আলুর টুকরো ও কাঠ বাদাম কুচি দিয়ে সেদ্ধ করা চাল আলতো হাতে সমান করে বিছিয়ে নিতে হবে। ভিজিয়ে রাখা জাফরান দুধের সাথে ঘি মিশিয়ে চালের ওপর থেকে অর্ধেকটি দিতে হবে। জাফরানের পরিবর্তে ফুড কালার ব্যবহার করা যাবে। ওপর থেকে কিসমিস ও আলুবোখরা দিতে হবে। দ্বিতীয় ধাপেও বাকী চাল,জাফরান দুধের মিশ্রণ, কেওরা জল ও গোলাপ জল দিতে হবে। অবশিষ্ট চিনি ও পেয়াজের বেরেস্তা ও কাচা মরিচ দিতে হবে। তারপরে একটা খুনতি দিয়ে ভাতের মধ্যে কয়েকটি গর্ত করে দিতে হবে। এতে করে ভাব বের হয়ে যাবে এবং ভাত খুব বেশি নরম হয়ে যাবে না।
এবার পাত্রের মুখ সীল করার জন্য কিছুটা আটা নরমাল পানি দিয়ে মিশিয়ে একটু মথে নিতে হবে। তারপরে পাত্রের মুখের চারিপাশে আটার দিয়ে ঢাকনাটি ঢেকে দিতে হবে। ঢাকনায় কোনো ছিদ্র থাকলে সেটা বন্ধ করে দিতে হবে। এবার লোহাড় একটা তাওয়ায় পাত্রটি বসিয়ে চুলা হাই হিটে রেখে ১০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এবং ৫০ মিনিট লো হিটে রেখে জ্বাল দিতে হবে। চুলা বন্ধ করে আধা ঘন্টার মতো এভাবেই দমে রাখতে হবে। তারপরে পরিবেশন করতে হবে গরম গরম।
উপরোক্ত আলোচনায় কাচ্চি বিরিয়ানির রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিরিয়ানির কথা শুনলেই কঠিন মনে হয়। তবে অনেক লেখাটি পরে বাসায় বাবুর্চির মতো রান্না করে ফেলতে পারবেন সহজেই। খেতেও হবে অসাধারণ স্বাদের। অতিথি আপ্যায়নে ঘরেই লোভনীয় স্বাদের কাচ্চি রান্না করতে পারবেন।