মধু হলো পৃথিবীর অন্যতম শুদ্ধতম খাবার। মৌমাছিরা বিভিন্ন ফুল থেকে পরম যত্নে এই মধু সংগ্রহ করে থাকে। মিষ্টি, ঘন এই তরল পদার্থ টি মানবদেহের জন্য যে কতোটা উপকারি জানলে অনেকেই অবাক হবেন। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এক সেরা নিয়ামত হলো এই মধু। একবার ভেবে দেখুন মৌমাছির মত ক্ষুদ্র একটি পতঙ্গ থেকে আমরা মানবদেহের জণ্য সেরা একটি তরল খাবার পেয়ে থাকি। আমরা নিশ্চয় জানি সাদা চিনি আমাদের শরীরের জণ্য কতটা ক্ষতিকর। চিনির বিকল্প হিসেবেও কিন্তু অনেকের কাছেই বহুল পরিচিত এই মধু। আজ আমরা জানবো মধু খাওয়ার উপকারিতা ও এটি খেলে কোনো অপকার বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কাছে কিনা!!
মধু খাওয়ার উপকারিতা
মধু তে রয়েছে ৪৫ টির ও বেশী পুষ্টিকর উপাদান। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। মধু তে থাকা উপদান গুলো আমাদের দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মধু তে রয়েছে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, মঅ্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, কপার, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি২, অ্যান্টিওক্সিডেন্ট, অ্যান্টিবাকটেরিয়াল সহ আরও অনেক পুষ্টিউপাদন। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য কতটা কার্যকরী।
শক্তিবৃদ্ধি করে
মধু প্রাকৃতিক ভাবে আপনার শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এমনকি নিয়মিত মধু খেলে এটি প্রাকৃতিক ভাবে আপনার এনার্জি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে
মধু দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। এটি শরীরে তাপ উৎপাদনে সাহায্য করে। এই কারনেই অনেকে শীতকালে মধু খেয়ে থাকে। শীতকালে শীতের প্রকোপ থেকে বাচার জন্য অবশ্যই মধু খেতে পারেন। এছাড়াও বছরের যেকোনো সময়ে আপনি মধু খেতে পারবেন ।
রক্তশূন্যতা রোধ করতে সাহায্য করে
মধু তে থাকা লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ এবং কপার আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে। এর ফলে কেউ যদি রক্তসল্পতার সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে নিয়মিত মধু খেতে পারেন।
ফুসফুস ভালো রাখে এবং শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে
ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে মধু বেশ উপকারি। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট কমাতে মধুর ব্যবহার সর্বাধিক লক্ষ্য করা যায়। কালোজিরা এবং রসুনের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে এটি শ্বাসকষ্ট কমাতে এবং ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
ঠান্ডা-কাশি কমাতে সাহায্য করে
মধু তে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ঠান্ডা কাশীর রোগ জীবানুর বিরুদ্ধে কাজ করে এবং দ্রুত ঠান্ডা কমাতে সাহায্য করে।
খুশখুশে কাশি কমাতে সাহায্য করে
শুধু শীতকাল না বছরের যেকোনো সময় ই অনেকে খুশখুশে কাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এসময় তুলসি পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে এটি দ্রুত আপনার খুসখুসে কাশি কমাতে সাহায্য করবে।
ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে
মধু তে ৪৫ টির এর বেশী পুষ্টিউপাদান থাকলেও এতে নেই কোনো প্রকার ফ্যাট বা চর্বি। তাই এই মধু ওজন নিয়ন্ত্রনের জণ্য বেশ কার্যকরি। কেউ যদি নিজের অতিরিক্ত মেদ কমাতে চান তাহলে সকালে খালি পেতে এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানির সাথে মধু, চিয়া সিড এবং লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন।
শরীর কে ডিটক্সিফাই করে
মধু আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। এই জন্য রোজ সকালে মধুর শরবত খেতে পারেন। এটি প্রাকৃতিক ভাবে আপনার শরীর কে শুদ্ধিকরন করবে।
ত্বকের তারুন্য এবং লাবন্যতা বজায় রাখে
মধু তে থাকা একটি শক্তিশালি উপাদান হলো অ্যান্টিওক্সিডেন্ট। এটি সহজে ত্বকে বয়সের ছাপ পরতে দেয় না । এমনকি দীর্গদিন ত্বকের লাবন্য ভাব বজায় রাখে। চেহারা থেকে বয়সের ছাপ কমাতে নিয়মিত মধু খান।
হার্ট ভালো রাখে
হার্টের সুরক্ষায় মধু খেতে পারেন। বিশেষ করে আমরা যারা মিষ্টি খাবার পছন্দ করি তারা নিয়মিত চিনির তৈরি খাবার খেয়ে থাকি। এই চিনি আমাদের শরীরের জণ্য অনেক ক্ষতিকর। চিনি কে বলা হয় সাদা বিষ। তাই চিনির বিকল্প হিসেবে হার্টের সুরক্ষায় মধু খেতে পারেন।
ক্ষত নিরাময় এবং পোড়া দাগ কমাতে
মধু এর আরেকটি নাম হলো প্রাকৃতিক এন্টোসেপটিক।ত্বকের ক্ষত সারাতে এটি ভিষন উপকারি। বিশেষ করে ত্বকের পোড়া দাগ কমাতে এবং জ্বালাপোড়া রোধ করতে মধুর ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বক ও চুল সুন্দর রাখে
ত্বক এবং চুলের যত্নে মধুর ব্যবহার খুব লক্ষ্যনীয়।প্রাচীন কাল থেকেই সৌন্দর্য্য বিলাসি মানুষ নিজেদের রুপচর্চায় এই মধুর ব্যবহার করে আসছেন। মধুর তৈরি ফেসপ্যাক ও হেয়ারপ্যাক নিয়ম মতো ব্যবহার করলে পরিবর্তন টা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
গলার স্বর সুন্দর রাখে
ছোট বেলা থেকেই নিয়মিত মধু খেলে এটি আপনার কন্ঠস্বর সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। ঠিক এই কারনেই হয়তো কারো কন্ঠ শ্রুতিমধুর মনে হলে তাকে বলা হয় একদম মধুর মত মিষ্টি কন্ঠ।
হজমে সাহায্য করে
মধু হজমে সাহায্য করে এবং বদহজম নিরামইয়েও বেশ উপকারি। এছাড়া মধু খেলে এটি প্রাকৃতিক ভাবে আপনার কোষ্টকাঠিন্য এর সমস্যা দূর করবে।
পুরুষদের যৌনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
মধু পুরুষদের শরীরে যৌন উদ্দিপনা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি শরীরে টেস্টেস্টোরেন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।নিয়মিত দুধ, মধু, কালোজিরা রসুন খেলে এটি আপনার যৌন্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
মধু খাওয়ার অপকারিতা
মধুর অনেক উপকারিতা রয়েছে। বলতে গেলে পৃথিবীর সেরা একটি খাবার। কিন্তু তা সর্ত্বেও মধু খেলে আপনার শরীরে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। শুনতে অবাক মনে হলেও এটি সত্যি। সকল খাবার এর উপকারের পাশাপাশী কিছু অপকার বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। সঠিক নিয়মে মধু না খেলে এটি আপনার ক্ষতির কারন হতে পারে। চলুন জেনেন নেওয়া যাক সঠিক ভাবে মধু খাওয়ার উপায় সম্পর্কে।
ছোট বাচ্চাকে মধু খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন
মধু নিঃসন্দেহে একটি পুষ্টিকর এবং পবিত্র খাবার। এই কারনে অনেকেই বাচ্চা হওয়ার পরপরই নবজাতকের মুখে মধু দিয়ে থাকেন। কিন্তু এটি করা উচিত না। এতে অনেক নবজাতকের মারাত্তক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মধু খেয়ে ভালো ভাবে মুখ পরিষ্কার করুন
মধু খাওয়ার পর এটি দাতে লেগে থাকতে পারে। এতে করে দতের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মধু খাওয়ার পর অবশ্যই ভালো ভাবে মুখ পরিষ্কার রাখবেন।
অতিরিক্ত মধু খাওয়া যাবে না
চিনির চেয়ে মধু শতগুনে ভালো। তাই চিনিত বিকল্প হিসেবে মধু খেতে পারেন। তবে যারা ডায়াবেটিকস এ ভুগছেন তারা দৈনিক ২ চামচের বেশী মধু খাবেন না।
মধু খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা এবং মধু দিয়ে রূপচর্চা
অতিরিক্ত এলার্জির সমস্যা
অতিরিক্ত এলার্জির সমস্যা থাকলে কোনো ভাবেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মধু খাওয়া উচিত না। বিশেষ করে এমন অনেকেই আছেন যাদের মধু তেই এলার্জি আছে। তাই তারা মধু খাবার আগে অবশ্যঈ সতর্ক থাকবেন।
মধু রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে
অতিরিক্ত মধু খেলে এটি রক্তে শর্করা এর মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই যারা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন তারা পরিমিত পরিমানে মধু খাবেন।
খাটি মধু খান
মধু খাওয়ার সময় অবশ্যই এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন। খাটি মধু যেমন আপনার শরীরের জন্য অনেক উপকারি ঠিক তেমনি নকল মধু খাওয়ার কারনে আপনি অনেক ক্ষতির সম্মুক্ষীন হতে পারেন। তাই মধু কেনার সমইয় যাছাই বাছাই করুন।
উপসংহার
স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের সকলের ই খাবার সম্পর্কে পরিপূর্ন্য ধারনা রাখা উচিত। কোন খাবার টি আমাদের জণ্য উপকারি এবং কোনটি অপকারি এগুলো জানলে তা আমাদের স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচনে সহায়তা করবে। আশা করছি আজকের এই ব্লগ থেকে আপনারা মধু খাওয়ার উপকারিয়া এবং কাদের জন্য এই মধু ক্ষতির কারন হতে পারে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন।