আমসত্বের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত, যদিও অঞ্চল ভেদে রয়েছে ভিন্ন নাম ডাক। রাজশাহী চাপাইনবাবগঞ্জের স্থানীয়রা আমসত্বকে আমতা বলে চিনে। যাদের অনেক পছন্দ তারা অল্প কয়েকদিনের মধ্যে খেয়ে শেষ করে ফেলেন। এমন অভিজ্ঞতা কম বেশি অনেকের আছে। আসলে পছন্দের খাবারটি ঘরে থাকলে না খেয়ে কি আর থাকা যায়।
গ্রীষ্মকালের জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করে থাকি। কারণ এই সময় আম জাম সহ বিভিন্ন সিজনাল দেশীয় ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের একটি ফল হলো আম। আম শুধু ফল হিসেবেই নয় আচার, আমসত্ব, কেক, আইক্রিমসহ বিভিন্ন ডেজার্ট আইটম হিসেবেও খাওয়া যায়। আমের সিজন শেষ হলেও আমের স্বাদ ধরে রাখতে আমসত্ব অন্যতম একটি উপায়।
পাকা আমের আমসত্ব
কাচা আম দিয়ে তৈরি করা আমসত্ব আমরা অনেক খেয়েছি। কাচা আমের পাশাপাশি পাকা আম দিয়ে আমসত্ব বানানো যেমন সহজ তেমননি খেতেও অনেক মজাদার। আজকে আমরা কয়েকটি পাকা আমের আমসত্ব রেসিপি জানবো-
রেসিপি ১
উপকরণ
- মাঝারি সাইজের ৩ টি পাকা আম
- মরিচের গুড়ো ১ টেবিল চামচ
- চিনি হাফ কাপ
- ভিনেগার ২ টেবিল চামচ
প্রস্তুতপ্রণালী
আমের খোসা ছাড়িয়ে কিউব করে নিতে হবে। এরপরে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করার সময় কোনো পানি ব্যবহার করা যাবেনা। এবং খেয়াল রাখতে হবে যেনো কোনো দানা ভাব না থাকে। এরপরে একটি প্যানে ব্লেন্ড করে রাখা আমসত্ব দিতে হবে। প্যানের মধ্যে কোনো তেল ব্যবহার করতে হবেনা। এর মধ্যে মরিচের গুড়ো, চিনি (আমের টক ভাবের ওপর নির্ভর করে চিনির পরিমান কমিয়ে বা বাড়িয়ে দিতে পারেন)।
এগুলো মিশিয়ে নেওয়ার পরে ভিনেগার দিতে হবে। এতে আমসত্ব বেশিদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। চুলার আচঁ মিডিয়ামে রেখে অনবরত জ্বাল দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমের লিকুয়িটভাব শুকিয়ে ঘন হয়ে আসবে। ১৫-২০ মিনিটের মতো জ্বাল দিলেই তৈরি হয়ে যাবে আমসত্ব। আমসত্বে লেয়ার পছন্দ অনুযায়ী দেওয়া যেতে পারে। যদি পুরুত্ব বেশি বা মোটা খেতে পছন্দ করেন তাহলে কয়েকটি লেয়ার দিতে হবে। পাতলা পছন্দ করলে ১টা বা ২টা লেয়ার দিলেই হবে।
রেসিপি ২
পাকা আমের টক ঝাল মিষ্টি আমসত্ব
উপকরণ
- ১ কেজি পাকা আম
- ১ চা চামচ মিষ্টি জিরা/ মৌরি
- ১ চা চামচ আস্ত ধনে
- ৫/৭ টা শুকনো লাল মরিচ
- লবন পরিমান মতো
- চিনি পমিরাণ মতো
প্রণালী
পাকা আম ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে কিউব করে কেটে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপরে কড়াইয়ে আস্ত ধরে, মৌরি, শুকনো লাল মরিচ একটু ভেজে টেলে নিতে হবে।
চুলায় অন্য একটি প্যান বসিয়ে ব্লেন্ড করে রাখা আমসত্ব দিয়ে দিতে হবে। তারপরে লবন ও চিনি দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। ভালো করে জ্বাল দিয়ে এরমধ্যে টেলে নেওয়া মসলা দিয়ে আবারও কিছুক্ষণ জ্বাল দিতে হবে। ঘন হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে রাখতে হবে।
একটি বড় প্লেটে বা ট্রে এর মধ্যে লেয়ার করে সমান ভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে দুই দিন কড়া রোদে শুকাতে হবে। ব্যস হয়ে গেলো খুব সহজে টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের আমসত্ব। এবার আপনার পছন্দের সেইপ অনুযায়ী কেটে নিতে পারেন।
রেসিপি ৩
উপকরণ
- পাকা আম ৪টি
- হলুদের গুড়ো ১ চা চামচ
- লবন পরিমাণ মতো
- চিনি স্বাদ অনুযায়ী
প্রণালী
প্রথমে আমগুলোকে ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে ছাল ছাড়িয়ে নিতে হবে। পিস করে কেটে মিক্সিং জারে মিক্সড করে নিতে হবে। আমগুলো স্মুদ করে পেস্ট হয়ে গেলে চেক করে নিতে হবে কোনো গোটা বা দানা ভাব আছে কিনা। তারপরে একটি কড়াইয়ে ঢেলে দিতে হবে।
চুলা জ্বালিয়ে লো টু মিডিয়াম আচেঁ অনবরত নাড়তে হবে। এরপরে লবন ও হলুদ গুড়ো ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। বিটলবন কেউ চাইলে ব্যালেন্স করে ব্যবহার করতে পারেন। এবার পরিমাণ মতো চিনি দিয়ে দিতে হবে। আমের পেস্ট গাঢ় হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে।
আমসত্ব শুকানোর পদ্ধতি
প্রাকৃতিক উপায়ে/ রোদের মাধ্যমে
অন্য একটি ট্রেতে একই পদ্ধতিতে আমসত্ব বিছিয়ে কড়া রোদে ৪-৫ ঘন্টা দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। রোদে দেওয়ার সময় জাল/নেট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে যাতে ধুলাবালি না লাগে। আগের যুগে সাধারণত প্রাকৃতিক উপায়ে অর্থাৎ রোদে দেওয়াা মাধ্যমে আমসত্ব শুকানো হতো। কিন্তু বর্তমানে অনেকের বাসায় রোদে দেওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই বলে কি আমসত্ব শুকানো যাবে না এমনটিও নয়। এর বিকল্প হিসেবে চুলা বা ওভেন রয়েছে।
চুলার মাধ্যমে
চুলা জ্বালিয়ে তার পাশে আমসত্বের ট্রে রেখে দিতে হবে কয়েকঘন্টা যাবৎ। একটি লেয়ার শুকিয়ে এলে তারপরে অন্য আরেকটি লেয়ার দিয়ে সেইম ভাবে চুলার পাশে রাখতে হবে। এভাবে ৩-৪ দিন রাখতে হবে। যতক্ষন না আমসত্ব পুরোপুরি শুকিয়ে আসে।
টক ঝাল মিষ্টি ভিন্ন স্বাদের আমসত্ত্ব পছন্দ করেন?
ওভেনের মাধ্যমে
একটি ট্রেতে তেল ব্রাশ করে আমসত্ব সমান ভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। এবার ওভেনে ২০০ ড্রিগ্রী তাপমাত্রায় বেক করে নিতে হবে।
আমসত্বের উপকারিতা
- হজমের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হজম শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে আমসত্ব।
- রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
- সর্দিকাশি থেকে রেহাই পেতে আমসত্ব খাওয়া যেতে পারে।
- ক্যালসিয়ামের অভাব রোধ করতে সাহায্য করে।
- আমসত্বে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে যা স্কার্ভি নামক রোগকে প্রতিরোধ করে।
- এতে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে রাখে সুরক্ষিত।
- আমসত্বে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের রোগ প্রতিরোধ দূর করতে সাহায্য করে।
উপরোক্ত আলোচনায় পাকা আমসত্ব বানানোর কয়েকটি সহজ নিয়ম, শুকানোর মাধ্যম ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আজকের এই লেখাটি পরে আপনার পছন্দের রেসিপিটি ফলো করে বাসায় ঘরে থাকা কিছু উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করে নিতে পারবেন সুস্বাদু আমসত্ব। বাচ্চাসহ সকলেই খুব পছন্দ করবে। তাই দেরি না করে ঝামেলাহীনভাবে তৈরি করে ফেলুন। আর পরিবারের সকলকে নিয়ে উপভোগ করুন মজার স্বাদের আমসত্ব।