ভিটামিন সি সমৃদ্ধ দেশীয় ফলের মধ্যে অন্যতম একটি ফল নামের আমড়া। কাচা অবস্থায় ফলটি টক মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে, এবং পেকে গেলে টক ভাবটি অনেকটা কমে যায়। এই ফলের বীজ কাঁটাযুক্ত হয়ে থাকে। ফলটি দুই জাতের পাওয়া যায়। বিলাতি জাতের আমড়াগুলো খেতে মিষ্টি ও বীজ সাধারণত ছোট হয়ে থাকে। এবং দেশি আমড়া খেতে টক ও বীজ বড় হয়।
আমরা অনেকেই বাস জার্নির সময় আমড়াওয়ালাকে দেখে থাকি। তারা আমড়ার ছাল পরিষ্কার করে কেটে ধুয়ে বিক্রি করে। লোভনীয় স্বাদের আমড়াগুলো দেখলেই জিভে পানি চলে আসে। টক মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। যেমন আচার, চাটনি, জ্যাম, মোরব্বা, টক ডাল ও রান্নাতে।
আমড়ার আচার কি?
আমড়ার সিজনে এটি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। অন্যান্য ফলের চেয়ে দামে কম হলেও এতে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণাগুণ। আমড়ার আচার খেতেও বেশ মজাদার হয়। আজকে আমরা এই আচার তৈরির কয়েকটি রেসিপি সম্পর্কে জানবো
উপকরণ
- আমড়া ১ কেজি
- মরিচের গুড়া ১ টেবিল চামচ
- হলুদের গুড়া ১ চা চামচ
- লবন পরিমাণ মতো
- সরিষা দেড় টেবিল চামচ
- মৌরি দেড় চা চামচ
- মেথি ১/৪ চা চামচ
- আজোয়ান ১ চা চামচ
- ভিনেগার ১ টেবিল চামচ
- আদা বাটা ১ চা চামচ
- রসুন বাটা ১ চা চামচ
- জিরার গুড়া ১ চা চামচ
- ধনিয়া গুড়া ১ চা চামচ
- সরিষার তেল ১ কাপ
- শুকনো মরিচ ১ কাপ
- আস্ত পাঁচফোড়ন ১ চা চামচ
- কালোজিরা আধা চা চামচ
- চিনি আধা কাপ
প্রণালী
- আমড়ার খোসা ছাড়িয়ে ফালি করে কেটে নিতে হবে। মরিচের গুড়া, হলুদের গুড়া ও লবন দিয়ে মেখে নিতে হবে।
- একটি ব্লেন্ডারে ভিনেগার, মৌরি, মেথি, আজোয়ান ও সরিষা একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করা মসলার সাথে আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরার গুড়া ও ধনিয়ার গুড়া দিয়ে দিতে হবে।
- চুলার প্যান বসিয়ে সরিষার তেল দিতে হবে। কালোজিরা, আস্ত পাঁচফোড়ন ও শুকনো মরিচ দিতে হবে। লো মিডিয়াম আঁচে কিছুক্ষণ ভেজে নিতে হবে। এরপরে মসলা ও আমড়াগুলো দিয়ে দিতে হবে। সবগুলো উপকরণ ভালো করে নেড়ে চিনি দিতে হবে। পানি বের হলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কিছুক্ষণ ভালো করে জ্বাল দেওয়ার পরে আচার হয়ে এলে ভিনেগার মিশিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে।
আমড়ার কাশ্মীর আচার
উপকরণ
- আমড়া ফালি করে কাটা ৪ কাপ
- চিনি ৪ কাপ
- ভিনেগার ২ টেবিল চামচ
- ফিটকিটি ৪ চা চামচ
প্রণালী
- চিকন ফালি করে রাখা আমড়া ফিটকিরিতে ৩ ঘন্টার জন্য ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপরে পানি দিয়ে ধুয়ে বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে। যেনো আমড়ার গায়ে কোনো পানি লেগে না থাকে।
- চুলার আঁচ মাঝারিতে রেখে একটি প্যান বসিয়ে এরমধ্যে আমড়া, ভিনেগার ও চিনি একসঙ্গে জ্বাল করতে হবে। সিরা হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।
টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের জলপাই আচার খাওয়ার উপকারিতা ও রেসিপি
টক ঝাল মিষ্টি আমড়ার আচার
উপকরণ
- আমড়া ১ কেজি
- শুকনো মরিচ ১০/১২টি
- সরিষার তেল ২ কাপ
- রসুনের কোয়া হাফ কাপ
- গুড়/চিনি ১ কাপ
- পাঁচফোড়ন হাফ চা চামচ
- রসুন বাটা ১ চা চামচ
- আদা বাটা ১ চা চামচ
- সারিষা বাটা ২ টেবিল চামচ
- তেঁতুল ২ টেবিল চামচ
- ভিনেগার ২ টেবিল চামচ
- লবন ২ চা চামচ
- তেজপাতা ২টি
- শুকনো লাল মরিচের গুড়া ১ চা চামচ
- ভাজা মৌরি গুড়ো ১ চা চামচ
প্রণালী
- আমড়াগুলোর খোসা ভালোভাবে ছিলে নিতে হবে। একটি হাড়িতে নরমাল পানি ও সামান্য পরিমাণ লবন মিশেয়ে আমড়াগুলো ঘন্টা ঘানিকের জন্য ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপরে পানি ঝরিয়ে অন্য একটি পাত্রে রাখতে হবে। একটি গ্রেটার দিয়ে ভালো করে গ্রেড করে নিতে হবে।
- একটি প্যানে সরিষার তেল দিয়ে তেজপাতা, পাঁচফোড়ন দিতে হবে। এরমধ্যে সরিষার বাটা দিয়ে তাড়াতাড়ি নেড়ে নিতে হবে। রসুন বাটা ও আদা বাটা, শুকনো মরিচ গুড়ো, দিতে হবে। চুলার আচঁ কমিয়ে আমড়ার বিচিগুলো চিড়ে দিয়ে নাড়তে হবে। তারপর গুড় দিয়ে তেঁতুল দিয়ে আবারও নাড়াচাড়া করতে হবে। এরপরে অনবরত নাড়ার পরে লবন ও ভিনেগার দিয়ে দিতে হবে। গোটা রসুনের কোয়া ও শুকনো মরিচের বোটা ফেলে আচারের মধ্যে দিয়ে রান্নার করতে হবে। সর্বশেষে ভাজা মৌরি গুড়ো ছিটিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বাল দিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে।
আচার তৈরিতে টিপস
- আচার রান্নার সময় কখনো পানি ব্যবহার করবেন না। এতে আচার দ্রুত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আচারে সরিষা বাটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাদা সরিষা বাটা ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। এতে স্বাদ ভালো থাকবে। কারণ কালো সরিষা বাটা ব্যবহারে আচারটি তেতো হয়ে যেতে পারে।
- আচার তৈরি হলে এলে চুলা থেকে নামিয়ে পরিষ্কার একটি পাত্রে তুলে রাখতে হবে। প্যানে রেখে দিলে আচারের রং কালচে হয়ে আসবে।
- আচারে কালোজিরা কম ব্যবহার করলে আচার তেতো হবে না বা স্বাদ নষ্ট হবেনা।
পুষ্টিগুণ
মৌসুমি ফলগুলোর মধ্যে আমড়া খুবই জলপ্রিয় ও সহজলভ্য টক স্বাদযুক্ত ফল। এত অনেক উপকারী পুষ্টিগুণ রয়েছে। একটি আমড়াতে একটি আপেলের চেয়েও বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকে। উইকিপিডিয়া তথ্যসূত্র অনুযায়ী, আমড়াতে ৯০ ভাগ পানি, ৪-৫% কার্বোহাইড্রেট ও সামান্য প্রোটিন থাকে। এছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ২০মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৩৬মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।সেই সাথে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার বিদ্যমান।
আমড়ার আচার কেনো খাবেন
রক্তস্বল্পতা দূর করতে
আমড়াতে প্রচুর আয়রন রয়েছে। যা আমাদের রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে নিয়মিত আমড়ার আচার খেলে উপকার পাওয়া যাবে। শরীরে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বৃদ্ধি করে রক্তের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ
আমড়ার আচার খাওয়ার ফলে ভিটামিন সি অভাব পূরণ হতে পারে। এতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে ও বার্ধ্যকের ছাপ পরতে দেয়না। সেই সাথে সর্দি, কাশি প্রতিরোধ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে বিভিন্ন অসুখ দেওয়া দেয়। যেহেতু আমড়া একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যেহেতু এই আচারটি আমাদের খাবারের তালিকায় রাখা যেতে পারে। নিয়মিত খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
হজমে উপকারী
হজমের সমস্যা হলে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানে আমড়ার আচারটি বেশ কার্যকরী। কারণ আমড়াতে অনেক ফাইবার ও আঁশ রয়েছে। যা আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে।
খাবারে রুচি বৃদ্ধি
রুচি বাড়াতে ভিটামিন সি বেশ উপকারী। যাদের খাবারের প্রতি অরুচি আছে তারা আমড়ার আচার খেতে পারেন। এটি অরুচি ভাব দূরে করে খাবারে রুচি বাড়ায়। এতে ক্ষুদা বৃদ্ধি পায়।
রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
আমাদের শরীরে রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে আমড়ার আচার। এটি পরিমিত খাওয়ার ফলে রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় ও উপকারি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রনে রাখে। ফলে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
হাড়কে মজবুত করতে
ক্যাসিয়াম আমাদের হাড়তে অনেক মজবুত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আচার আচারটি খাওয়া যেতে পারে। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। যা হাড়ের যেকোনো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
অতিরিক্ত আমড়ার আচার খাওয়ার সর্তকতা
বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত যেমন, ডায়াবেটিস, কিডনি জনিত সমস্যা ইত্যাদি ব্যক্তি আমড়ার আচার খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন নারীরা পরামর্শ ছাড়া এই আচারটি গ্রহন করবেন না। যারা সুস্থ আছেন তারা পরিমাণ মতো খেতে পারেন। অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খালি পেটে কখনোই খাওয়া যাবেনা।
উপরোক্ত আলোচনায় আমড়ার আচার কি, টিপসসহ আচার তৈরির পদ্ধতি, পুষ্টিগুণ স্বাস্থ্যউপকারিতা ও সর্তকতা ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি এই আর্টিকেল পড়ার পরে আপনি ঘরে বসেই মজাদার আমড়ার আচারটি তৈরি করে নিতে পারবেন।