প্রাচীনকাল থেকেই মসলার ব্যবহার প্রচলিত। খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধ আনতেই মসলা ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি খাবারের জন্য স্পেশালভাবে তৈরিকৃত মসলা থাকে। যেমন- গরুর মাংসের মসলা, বিরিয়ানির মসলা, কালাভুনার মসলা ইত্যাদি। তেমনি আচার তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় আচারের মসলা। এতে আচারের স্বাদ দিগুণ বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, ঘ্রাণটাও দারুণ। তাই তো মসলা ছাড়া আচারের কথা চিন্তাই করা যায় না।
আচার এটি একটি মুখরোচক খাবার। সেই সাথে আমাদের ছোটবেলার স্মৃতির সাথে জরিয়ে আছে। বিভিন্ন মৌসুমি ফল দিয়ে তৈরি করা হয় মজাদার আচার। তবে বর্তমানে মৌসুমি ফলের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি দিয়েও তৈরি হয় মজাদার আচার। আচার তৈরির লিস্টে বাদ যায়নি মাংস। এখন গরুর মাংসের আচারও তৈরি করছেন অনেকে। একটি সুস্বাদু আচার তৈরির জন্য তেল, মসলা ও আচারের উপকরণ, সংরক্ষনের জন্য কাঁচের পাত্রের প্রয়োজন হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো আচার তৈরির মসলা। বেশ কিছু উপকরনের সংমিশ্রণে আচারের মসলা তৈরি করা হয়।
আচার তৈরির মসলা
আগের যুগে নানী দাদিরা ঘরে থাকা উপকরণ দিয়ে আচারের মসলা তৈরি করতেন। যদিও বর্তমানে বাজারেই কিনতে পাওয়া যায়। তবে বাজারের রেডিমেট মসলা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। কারণ এতে বিভিন্ন কেমিক্যাল ও প্রিজারভেটিভস ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে আমরা চাইলেই ঘরোয়াভাবে কিছু উপকরণ দিয়ে খুব সহজেই তৈরি করতে পারি সুঘ্রাণযুক্ত মসলার আচার। ফলে ঝটপট যেকোনো আচার তৈরিতে মসলাটি ব্যবহার করে আচারের স্বাদ কয়েকগুণ বাড়িয়ে নেওয়া যাবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
উপকরণঃ
১) মিষ্টি জিরা/ মৌরি ৫০গ্রাম (হাফ কাপ)
২) জাউন হাফ কাপ ( রাধুনী মসলার মতোই দেখতে তবে আলাদা)
৩) জিরা ৩ টেবিল চামচ
৪) আস্ত ধনিয়া ৪ টেবিল চামচ
৫) পাঁচ ফোড়ন মসলা ১ চা চামচ
পদ্ধতিঃ
এবার উক্ত উপকরণগুলো ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপরে একটি কড়াই বা ফ্রাইপ্যানে সবগুলো উপকরণ সঠিক পরিমানে ঢেলে নিতে হবে। চুলার আচঁ মিডিয়ামে রেখে মসলাগুলো ভালো ভাবে ভাজতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত ভাজা বা পুরে না যায়। এতে মসলার স্বাদ তিতো হতে পারে।
অনেকে মসলার সাথে আস্ত শুকনো লাল মরিচ ও লবন মিক্সড করেন। অনেকমসয় আচারের টেস্ট অনুযায়ী ঝাল ও লবন কম বেশি হয়ে যায়। তাই শুকনো লাল মরিচ আলাদাভাবে ভেজে গুড়ো করে নিতে হবে। একইভাবে লবন বা বিট লবন আলাদাভাবে গুড়ো করে রাখতে হবে। এতে যেকোনো আচারের তৈরিতে পছন্দ অনুযায়ী লবন ও ঝালের পরিমাণ ঠিক রাখা যায় ব্যবহার করা যায়।
ভেজে নেওয়া মসলা ঠান্ডা হয়ে এলে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ডার না থাকলে শিলপাটাতেও গুড়ো করে নেওয়া যাবে। তবে গুড়ো করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে একেবারেই মিহি গুড়ো না হয়ে যায়। কারণ আচারে ব্যবহার করলে কাচলে ভাবটি বেশি হয়ে যায়। এবার গুড়ো করে নেওয়া মসলাটি একটি এয়ার টাইট বক্সে রাখতে হবে।
আচারের মসলার সংরক্ষণ পদ্ধতি
ঘরোয়া আচারের মসলাতে যেহেতু কোনো ধরনের প্রিজারভেটিভস ব্যবহার করা হয় না। তাই এটি দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা করতে চাইলে সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যথায় সহজেই জমাট বেঁধে যাবে সেই সাথে মসলার স্বাদ ও ঘ্রাণ হারিয়ে যেতে পারে। তাই বছরজুরে মসলা ভালো রাখতে এটি সংরক্ষণের জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক –
- আচারের মসলা তৈরির পরে একটি এয়ার টাইট বক্সে বা বায়ুরোধী পাত্রে রাখতে হবে। যাতে কোনো ধরনের বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। কারণ বাতাসের সংস্পর্শে দ্রুত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আচারের মধ্যে মসলা ব্যবহারের সময় অবশ্যই শুকনো চামচ ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে চামচে পানি বা অন্য কোনো কিছু লেগে না থাকে।
- মসলার বোয়ামটি একটি শীতল ও শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ আলো বা তাপের সংস্পর্শে এর স্বাদ হারাতে পারে। এছাড়াও উচ্চ আর্দ্রতাযুক্ত জায়গা যেমন স্টোভ, ডিশওয়াশার এসব জায়গা থেকে দূরে রাখতে হবে।
- মসলার পাত্রে নাম ও উৎপাদনের তারিখ লেখা যেতে পারে। এতে মসলা বেশ পুরোনো হয়ে গেলে সহজেই বুঝতে পারা যাবে। সাধারণত আচারের মসলা প্রায় ছয় মাস স্থায়ী হবে। এটি খুব বেশি সময়ের জন্য সংরক্ষণ করাও যেতে পারে। তবে এর স্বাদ ও ঘ্রাণ কিছুটা কমে যেতে পারে।
আচার তৈরির মসলার গুণাগুণ ও উপকারিতা
মসলা যেমন খাবারের স্বাদ ও ঘ্রাণ বৃদ্ধি করে তেমনি সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যাপক অবদান রাখে। আজকে আমরা আচার তৈরিতে যেসকল মসলা ব্যবহার করা হয় সেকল উপাদানের বিভিন্ন স্বাস্থ্য গুণাগুন সম্পর্কে অজানা তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো
মৈৗরি বা মিষ্টি জিরা
আচারের মসলায় ব্যবহৃত হয় মৌরি। এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করে। পাশাপাশি এতে থাকা এন্টিসেপটিক, এন্ডিজাইটিভ আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এতে ভিটামিন, খনিজ পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিস রয়েছে।
খাবারে মসলার ব্যবহার, উপকারিতা, সঠিক পরিমাণ এবং সতর্কতা
তেজপাতা
সাধারণত খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয় তেজপাতা। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। এছাড়াও স্নায়ুতন্ত্র উন্নত, শরীরের বিকাপ নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুলের জন্য বেশ কার্যকরি একটি মসলা।
জিরা
একটি উপকারি মসলা হলো জিরা। এটি আমাদের শরীরের নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রক্তের কোষ বৃদ্ধি করে। যেহেতু এটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি প্রদাহ তাই আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও শুক্রানু বৃদ্ধি করে ও হাড় শক্তিশালী করে।
মরিচ
মরিচ এমন একটি মসলা যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি আমাদের দেহের সাইনোসিস পরিষ্কার করতে, প্রসাব বৃদ্ধি ও মাথা ব্যাথা রোধ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন ও ক্যান্সার প্রতিরোধ ও রক্ত চাপ কমায়।
সরিষার তেল
এছাড়াও আচারের মসলা পাশাপাশি সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারি একটি উপাদান। সরিষার তেলে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখে। ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও ভালো কোলেস্টেরলের বাড়াতে সহায়ক।
হলুদ
হলুদে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকম ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কালোজিরা
কালোজিরার স্বাস্থ্য উপকারিতা কমবেশি আমরা সকলেই জানি। কোরআনে বর্ণিত রয়েছে মৃত্যু ব্যতিত সকল রোগের ঔষধ হলো কালোজিরা। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে ও প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে।
আমাদের আজকের আলোচনায় আমরা আচার তৈরির পদ্ধতি ও এতে ব্যবহার করা মশলা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে আপনি আচার তৈরির উপকরণ, নিয়ম এবং প্রয়োজনীয় মশলা সম্পর্কে জানতে পারবেন।