You are currently viewing সুন্দরবনের মধু, প্রাকৃতিক মধু, লিচু, খলিশা, সরিষা,কালোজিরা ফুলের মধু

সুন্দরবনের মধু, প্রাকৃতিক মধু, লিচু, খলিশা, সরিষা,কালোজিরা ফুলের মধু

মধু প্রকৃতির একটি অনেক বড় উপহার। প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের দেহে শর্করা তৈরি করার জন্য এর কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির মধু পাওয়া যায়। এদের মধ্যে স্বাদের যেমন ভিন্নতা থাকে তেমনি রং এবং গন্ধেরও ভিন্নতা থাকে। আমাদের আজকের লেখায় বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু বিখ্যাত প্রাকৃতিক মধুর পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

মধু কত প্রকার কি কি?

মধু কত প্রকার কি কি?

মৌমাছি ফুল থেকে যে নেকটার সংগ্রহ করে তা তাদের হানি স্টমাক থেকে এনজাইম দ্বারা প্রোসেসিং হয়ে মধু তৈরি করে। মধু সাধারণত প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম দুই উপায়ে তৈরি হয়। এদের মধ্যে প্রাকৃতিক মধু হলো খাঁটি মধু অন্যদিকে কৃত্রিম মধু ভেজাল হয়ে থাকে। 

কোন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হবে তার উপর নির্ভর করে এর প্রকারভেদ কত প্রকার ও কি কি হবে। অর্থাৎ মৌমাছি বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এবং তাদের গন্ধ ও স্বাদ ভিন্ন হয়। অতএব প্রাকৃতিক ভাবে বিভিন্ন প্রকারের মধু পাওয়া যায়। নিচে বাংলাদেশের বিখ্যাত কিছু মধুর বর্ণনা দেওয়া হলো। 

প্রাকৃতিক মধু

প্রকৃতি থেকে আসা সকল মধুকেই প্রাকৃতিক মধু বলা হয়। তবে এই নামে সব থেকে বেশি প্রচলিত হলো সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধু। বছরের সব সময় এই মধু পাওয়া গেলেও ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস সুন্দরবনের মধু সংগ্রহের উৎকৃষ্ট সময়। কারণ এই সময় তাতে মৌমাছি সুন্দরবনে থাকা খলিশা ফুল থেকে বেশি মধু সংগ্রহ করে। 

বিশেষত মধু সংগ্রহ করার জন্য মৌয়ালরা নৌকায় করে সুন্দরবনের গহিনে চলে যায়। সব থেকে বেশি মৌমাছির চাক গহিন বনেই পাওয়া যায়। সে গুলো সাধারণ চাকের থেকে অনেক বড় ও বেশি মধু সমৃদ্ধ হয়। পুরো দেশে এই মধুর চাহিদা সব থেকে বেশি থাকে। যদিও ভেজাল মধু তৈরি করে তা সুন্দরবনের খাঁটি মধু হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয় তবে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে খাঁটি মধু চেনা যায়। 

লিচু ফুলের মধু

মধ্য মে থেকে মধ্য জুন এই সময়ে বাংলাদেশে লিচুর সময়। লিচু খেতে যেমন সুস্বাদু ও ভিটামিন সি যুক্ত ঠিক তেমনি এর ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু অনেক সুস্বাদু। লিচু ফুলের মধু দেখতে এর ভেতরে নেক্টারের মাত্রার উপর নির্ভর করে হালকা হলুদ বা গাঁড় হলুদ হতে পারে। 

এই মধু স্বাদে এবং গন্ধে লিচু ফলের মতই। হালকা ঘনত্বের লিচু ফুলের মধুতে ফেনা হলেও বেশি ঘনত্বের মধুতে কোনো ফেনা হয় না। সংগ্রহ করার কিছু সময়ের মধ্যে এর ভেতর কি পরিমাণ নেক্টার উপাদান উপস্থিত তার উপর নির্ভর করে হালকা বা বেশি মাত্রায় জমে যেতে পারে। 

লিচু ফুলের মধুতে সাধারণত শর্করা, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ থাকে। এগুলো ছাড়াও অল্প পরিমাণে ভিটামিন সি সহ মিনারেল, এনজাইম, ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, থায়ামিন এবং নিয়াসিন থাকে। এই উপাদান গুলো লিচু ফুলের পুষ্টিগুণ অনেকাংশে বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে এই মধু খেলে শারীরিক বিভিন্ন ধরনের উপকার পাওয়া যায়। 

লিচু ফুলের মধুর গ্রেডের উপর নির্ভর করে স্বাদ পরিবর্তন হতে দেখা যায়। শুরুর দিকে সব গ্রেডের মধু মিষ্টি স্বাদের হলেও সময়ের সাথে সাথে সি গ্রেডের মধু মুখে হালকা তেতো লাগতে পারে। তেতো লাগলেই যে তা ভেজাল মধু তা কিন্তু ভাবা যাবে না। কারণ গ্রেড নিম্ন হওয়ার কারণে এই রকম হয়ে থাকে। 

খলিশা ফুলের মধু

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ জংগল হল বাংলাদেশের সুন্দরবন। একে মধু সংগ্রহের কারখানাও বলা হয়। কারণ সুন্দরবনের ভেতরে রয়েছে অসংখ্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। এগুলোর মধ্যে খলিশা ফুলের গাছ মধু উৎপাদন করার জন্য অন্যতম। প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে যে পরিমাণ মধু সংগ্রহ করা হয় তার সবগুলোই খলিশা ফুলের মধু। 

সাধারণত খলিশা ফুলের অবয়ব দেখে একে পদ্ম ফুলের সাথে তুলনা করা হয় এবং এর থেকে সংগ্রহ করা মধুকে পদ্ম মধুও বলা হয়। যাইহোক, খলিশা ফুলের মধুর ঘনত্ব অনেক হালকা হয় এবং সামান্য ঝাঁকিতে তাতে ফেনা তৈরি হয়। 

এই মধু গন্ধে যেমন সর্ব উৎকৃষ্ট তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু। এর গাছকে বলা হয় হানিপ্লান্ট এবং খলিশা ফুলের মধু দেশের আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই কারণে এর দাম অন্যান্য সকল মধু থেকে বেশি। তবুও সারা দেশে এই মধুর চাহিদা সব থেকে বেশি। 

সরিষা ফুলের মধু

গ্রামে গঞ্জে হর হামেশাই সরিষা ফুল ক্ষেতের দেখা পাওয়া যায়। মধু সংগ্রহ করার জন্য এই সময় মধু চাষিরা তাদের মধু সংগ্রহ করার বক্স খেতের পাসে স্থাপন করে। মৌমাছিগুলো তখন সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বক্স গুলোয় জমা করে। 

বাংলাদেশে সাধারণত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সরিষার মধু সংগ্রহ করা হয়। সরিষা ফুলের মধু দেখতে হালকা উজ্জ্বল অ্যাম্বার রঙের হয়ে থাকে। এই মধুর ঘনত্ব হালকা হওয়ার কারণে তা একটু ঝাঁকি লাগলেই ফেনা হয়। তবে বছরের বেশিরভাগ সময় এই মধু জমে সাদা চিনির মত হয়ে থাকে। তবে জমাট বাঁধা মধু জিহ্বায় রাখলে গ্লুকোজের মত গলে যায়।

যেহেতু সরিষা ফুল থেকে এই মধু সংগ্রহ করা হয় সেহেতু এর ঘ্রাণ অনেকটা সরিষার মতই লাগে। এই কারণে অনেকে এই মধু পছন্দ করলেও অনেকেই আবার অপছন্দ করে। তবে সরিষা ফুলের মধুর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। বিশেষ করে পেটের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি এটি হার্টের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। সহজেই সংগ্রহ করা যায় জন্য এর দাম অপেক্ষাকৃত কম পাওয়া যায়। তাছাড়া খাঁটি সরিষা ফুলের মধু চেনা অনেক সহজ যা একে ভেজাল মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। 

কালোজিরা ফুলের মধু

কালোজিরাকে বলা হয় সকল রোগের মহৌষধ। এতে রয়েছে অকল্পনীয় পুষ্টিগুণ যা আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে মোক্ষম ভূমিকা পালন করে। তো কালোজিরার ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধুও স্বাদে গুনে অনন্য। 

যাইহোক, কালোজিরা ফুলের মধু দেখতে কালো রঙের হয়ে থাকে যার স্বাদ হুবহু খাঁটি খেজুরের গুড়ের মত। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে এই মধু খেতে কেমন সুস্বাদু হবে। বরঞ্চ খেজুরের গুড় থেকে এই মধুর স্বাদ উৎকৃষ্ট। কালোজিরা মধুর ঘনত্ব পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। 

তবে আমাদের দেশে পাওয়া যায় এমন এমন কালোজিরার মধুতে ১৮% থেকে ২৫% পর্যন্ত জলীয় উপাদান থাকে। এই পরিমাণ জলীয় উপাদান থাকার ফলে এই মধুর ঘনত্ব সব থেকে বেশি না হলেও অনন্য মধুর থেকে গাঁড়। আমাদের দেশে সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে এই মধু সংগ্রহ করা হয়। এই সময় বাএ অন্য সময়ে যে মধুই পাবেন তা একদম টাটকা হবে না। 

সুন্দরবনের মধু

সুন্দরবনের মধু

আমরা আগেই জেনেছি আমাদের দেশের সব থেকে বড় মধু সংগ্রহশালা হলো সুন্দরবন। এখানে হরেক প্রজাতির উদ্ভিদ থাকায় বিভিন্ন প্রকৃতির মধু পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে পদ্ম মধু বা খলিশা ফুলের মধু অন্যতম। তবে খলিশা ফুল বাদেও এই বনে শেওড়া ও কেওড়া ফুলের মধুও পাওয়া যায়। 

বেশিরভাগ সময় অন্যান্য ফুলের মধু সহ খলিশা ফুল থেকে সংগ্রহ করার মধুর চাকে জমা করা হয়। এতে মধুর স্বাদ ও ঘ্রাণ খলিশা ফুলের মধুর মতই হয়। আমাদের দেশে সুন্দরবনের মধুর চাহিদা সব থেকে বেশি। এই মধু সারাদেশে অন্যান্য মধুর থেকে বেশি দামে বিক্রি হয়। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা জোনের মধ্যে সব থেকে বেশি মধুর চাক পাওয়া যায়। মৌচাক সংগ্রাহকরা সেই মধু সংগ্রহ করে পুরো বাংলাদেশে তা সাপ্লাই করে থাকে। 

খাঁটি মধু শরীরের জন্য সব থেকে বেশি উপকারী। আমাদের আজকের লেখায় মধু কত প্রকার ও কি কি সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আসা করি লেখাটি পরে বাংলাদেশের প্রচলিত বিখ্যাত মধু সম্পর্কে আপনার ধারণা আরও স্পষ্ট হবে। এছাড়াও মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের এই আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত আরো অনেক কিছু জানতে পারেন। ধন্যবাদ

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.