গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ তীব্র হওয়ার ফলে আমাদের অস্বস্তির মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। ঘর হতে বের হওয়াটাই যেনো মুশকিল হয়ে পরে। এমনকি ফ্যানের বাতাস, বাসার দেওয়াল ও আসবাবপত্রসহ গরম হয়ে যায়। সেইসাথে খাাবরের প্রতি অনিহার সমস্যা বেড়েই চলে। সবমিলিয়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পরে। এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যার সম্মূখীন হতে হয়।
একবার ভাবুন তো তীব্র গরমে আমরা বড়রাই সহ্য করতে পারিনা। সেখানে শিশুরা কিভাবে সহ্য করবে? কথা বলতে না পারাই তাদের কস্টে বেদনার কথা বলতে পারেনা। কান্নার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আসলে বড়দের পাশাপাশি গরমে শিশুদের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়। এতে পানিশূন্যতা, ডায়রিয়া, হজমে সমস্যাসহ নানার ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি লক্ষ্য করা যায়। তাই এই সমযে শিশুর পুষ্টি ঠিক রাখতে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। চলুন আজকে আমরা জেনে নেই কোন খাবারগুলো বাচ্চাদের খাওয়ানো উচিত এবং কোন খাবার পরিহার করা উচিত।
গরমে বাচ্চাদের কি খাওয়ানো উচিত?
তাপপ্রবাহ বাড়ার ফলে বাচ্চারা কেনো খাবার ঠিকভাবে খেতে চায়না। কারণ এই সময়ে তাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে শরীরে ডিহাইড্রেশন ও পুষ্টির খাটতি দেখা দেয়। জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গরমে সঠিক পুষ্টি বড়ায় রাখার জন্য ও শিশুদের বিভিন্ন রোাগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সঠিক পুষ্টি প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চাাদের পর্যাপ্ত হাইড্রেশন ও সঠিক পুষ্টি তাদের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এই গরম আবহাওয়ায় তাদের সুস্থ রাখতে পুষ্টি খাবারের সাথে বেশ কিছু খাবার যোগ করতে হবে। যা তাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।
মৌসুমি ফল
শিশুর দৈনিক খাদ্য তালিকায় মৌসুমি রসালো ফল রাখা যেতে পারে। যেমন তরমুজ, আম, পেয়ারা, কলা ইত্যাদি। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, রিনারেলস, খনিজ উপাদান, ক্যালসিয়াম, ফাইবার ইত্যাদি। যা বাচ্চাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মস্তিষ্কের ও পেশির কার্যকারিতা, হজম শক্তি ও মুখের রুচি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অর্থাৎ মৌসুমি ফল দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে সহায়ক।
শাক সবজি
শাকসবজির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। বাচ্চাদের খাবারের পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি রাখতে হবে। সবজির মধ্যে পেঁপে, মিষ্টিকুমড়ো, করলা, টমেটো, লাউ ইত্যাদি। এবং শাক এর মধ্যে বিশেষ করে লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক অন্যতম।
ডিম
প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ডিম থেকে পাওয়া যায়। প্রোটিনের চাহিদা মেটার সাথে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য বেশ উপকারি। এজন্য প্রতিদিনে তাদেরকে ডিম খাওয়াতে হবে। অনেকে মনে করেন ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও শিশুদের খাওয়ানো উচিত নয়। কিন্তু বিশেজ্ঞরা মনে করেন ছয় মাস বয়স থেকেই শিশুকে ডিম খাওয়ার অভ্যাস করানো যেতে পারে। এবং শিশুর জন্য একে আর্দশ্য খাবারও বলা হয়েছে।
পানি
গরমে বাচ্চারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করছে কিনা সেদিকে নজর রাখতে হবে। যেহেতু গরমে ঘাম ঝরে যায় এতে পানিশূন্যতার একটা ঘাটতি দেখা যায়। এই ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ফলে শরীর থাকতে হাইড্রেট ও সতেজ। তৃষ্ণা মেটাতে পানির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
সহজপাচ্য খাবার
গরমে বাচ্চারে পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার বেশ উপাকরী। সবজি বা মাংসের পাতলা স্যুপ বা নমর সবজি খিচুড়ী শিশুদের জন্য উপযুক্ত। এতে হজমের সমস্যা থেকে রেহায় পাাওয়া যায়। এবং মেজাবলিজম শক্তি বাড়ে।
সুস্থ থাকার জন্য খাবারের তালিকা – সুস্থতার অর্গানিক সমাধান
দুধের বিকল্প খাবার
শিশুদের জন্য দুধ অত্যাবশ্যকীয় খাবার হলেও গরমে শিশুকে জোর করে দুধ খাওয়ালে অনেক সময় হজমে ব্যাগাত হতে পারে। তাই গরমের সময় যেসকল বাচ্চারা দুধ খেতে চায় না, তাদের জোর করে দুধ না খাওয়ানোই উচিত। এর বিকল্প হিসেবে মাঠা, লাচ্ছি বা মিল্কশেক দেওয়া যেতে পারে।
ফলের শরবত
ফলের পুষ্টিগুণ ফলের শরবতেও পাওয়া যায়। গরমে তৃষ্ণা ও কান্তিভাব মেটাতে ফলের শরবতের জুড়ি নেই। তাই বাচ্চাদের গরমে বিভিন্ন ফলের শরবত দেওয়া যেতে পারে। এতে তাদের শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। ফলের শরবতের মধ্যে লেবুর শরবত, বেলের শরবত অন্যতম।
ডাবে পানি
গরমের সময় রাস্তায় ডাববিক্রেতার পাশে মানুষের উপচেপড়া ভীর দেখতে পাই আমরা। ডাবের পানিতে সোডিয়াম, ক্যালসিয়অম, ভিটামিন সি, প্রোটিন ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও ডাবের পানিতে মোনোলৌরিন নামক একটি যৌগ থাকে। যা শিশুদের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
দই
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার হলো দই। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো ও হজমে উন্নতি করতে বেশ উপকারী। দইয়ে প্রোটিস, ভিটামিন, খনিজ রয়েছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে। এজন্য গরমের সময়ে শিশুদের খাদ্য তালিকায় দই রাখা যেতে পারে।
খাবারের পুষ্টিমান
শিশুর দ্রুত বিকাশ ও বেড়ে ওঠার জন্য অবশ্যই খাবারের মান পুষ্টিসমৃদ্ধ হতে হবে। গরমে শিশুকে টাটকা ও ফ্রেশ খাবার দিতে হবে। যা শিশুদের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে। শাকসবজি, ফলমূল খাবারের সাথে মাছ মাংস রাখতে হবে। তবে এটি পরিমাণমতো বাচ্চাদের দিতে হবে।
গরমের সময় যেসকল খাবার শিশুকে দেওয়া যাবে না
গরমের সময় যেসকল খাবার ভুলেও শিশুকে দেওয়া উচিত নয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বাজারের প্যাকেটজাত ফলের জুস
গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে অনেকে বাচ্চাদের বাজারের প্যাকেতটজাত ফলের জুস খেতে দেন। আসরে এসকল ফলের জুসে বিভিন্ন রাসায়নিক কৃতিম রং ও প্রিজারভেটিভস দেওয়া হয়। যা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই ভুলেই দোকানের ফলের জুস বাচ্চাদের দেওয়া উচিত নয়। তবে বাসায় বিভিন্ন ফলের জুস তৈরি করে খাওয়ানো যেতে পারে।
ফাস্টফুড
ফাস্টফুড জাতীয় খাবার যেমন বার্গার, পিজ্জা, সিংগাড়া, পাউরুটি ইত্যাদি খুব পছন্দ করে। তারা বাসায় তৈরিকৃত খাবারের চেয়ে ফাস্টফুড খাবারের প্রতি আগ্রহ বেশি। অনেকে বাচ্চাদের প্রতিদিন এসব খাবার দিয়ে অভ্যস্ত করে ফেলেছেন। তারা পরবর্তীতে বাসার খাবার খেতে অনিহা করে। একসময় মুখের রুচি নষ্ট হয়ে যায়। দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হয়। গরমের কালের পাশাপাশি যেকোনো সময় ফাস্টফুড থেকে তাদের দূরে রাখা প্রয়োজন। এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার
গরমে শিশুদের খাবার তৈরির সময় অতিরিক্ত মসলা ও তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে শিশুর পেটের পীড়ার কারণ হতে পারে। তাই শিশুকে কম মশলাযুক্ত খাবার দিতে হবে। এতে শিশু পেটের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবে।
টিফিনের খাবার
অতিরিক্ত গরমে শিশুদের স্কাুলের টিফিনের খাবারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে। শিশুরা যেনো বাহিরের খাবার না খায় সেদিকটি নিশ্চিন্ত হতে হবে। ফাস্টফুড খাবারে পরিহার করে কম মসলাযুক্ত খাবার বাচ্চার টিফিনে দিতে হবে। যেমন সবজি চিকেন। টিফিনের সাথে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি দিতে হবে।
পরামর্শ
গরমে শিশুর খাবারের পাশাপাশি তাদের যত্নের দিকেও নজর রাখতে হবে। চলুন শিশুর যত্নের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
- এ সময়ে শিশুদের পোশাকের ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। তাদেরকে সুতি, হালকা রঙের ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোশাক পরাতে হবে।
- গরম থেকে মুক্তি পেতে আমরা ঘরে এসি ব্যবহার করে থাকি। ঘর খুব বেশি ঠান্ডা হয়ে গেলে বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এসির তাপামাত্রার দিতে খেয়াল রাখতে হবে।
- অত্যাধিক গরমে শিশুদের ঘরের বাহিরে যেতে দেওয়া যাবে না। এবং রোদের মধ্যে যেনো খেলাধুলা না কারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থানে খেলতে পারে।
- গরমে শরীরে ঘাঝ ঘরে পোশাকি ভিজে যায়। শিশুদের পোশাক ভিজে গেলে পাল্টিয়ে দিতে হবে এবং শুকনো পোশাক পরাতে হবে। যদি ঘাম শরীরে শুকিয়ে যায় তাহলে জ্বর হতে পারে।
- নিয়মিত গোসল করাতে হবে বাচ্চাদের। মাঝে মাঝে শরীর মুছে দিতে হবে। ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ঘামের কারণে ত্বকে ঘামাচি র্যাশ দেখা দিতে পারে। সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
গরমের সময়ে শিশুর খাবারের তালিকায় হালকা, টাটকা ও পুষ্টিকর খাবার রাখা একান্ত জরুরী। তাদেরকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে অভ্যস্ত করতে হবে। এতে শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টিচাহিদা মিটিয়ে শিশুকে রাখবে সুস্থ। ফলে সহজে রোগ বলায়ের আশংকা থেকে অবিভাবকগণ থাকে নিশ্চিন্ত। খাবারের পাশাপাশি তাদের যত্নে দিতে হবে বিশেষ নজর। উপরোক্ত আলোচনায় তীব্র গরমে শিশুর যেসকল খাবার খাওয়ানো উচিত এবং যেসকল খাবার পরিহার করা উচিত তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।