বর্ষার মধ্যে বেশি মাছ পাওয়া যায়। দেশে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছের মধ্যে টেংরা, মলা, কাঁচলি, পুটি ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়। ছোট দেশি মাছগুলো খেতে যেমন মজাদার তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি ছোট মাছ চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ ছোট মাছে প্রচুর পমিাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
ছোট মাছের বহু রেসিপি রয়েছে। আলু বেগুণ টেমেটো দিয়ে তৈরি করা হয় অসাধারণ ছোট মাছের ঝোল। কুচিকুচি করে আলু কেটে হাতে মাখানো ছোট মাছের চচ্চড়ি খাননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। আজকের আর্টিকেলে আমরা সহজ কিছু ছোট মাছের রেসিপি জানবো।
ছোট মাছ রান্নার রেসিপি
আমরা বাঙালিরা ছোটমাছ বেশ পছন্দ করে থাকি। দুপুরের পাতে ছোটমাছের তরকারি থাকলে তৃপ্তি সহকারে খাওয়া যায়। মাছ বাঙালির ভীষণ প্রিয় হওয়ায় একটি প্রচলিত বাক্য উম্মচন হয়েছে তা হলো মাছে ভাতে বাঙালি। এই প্রবাদটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। এটি শুধু প্রবাদ তাই নয় বাঙালির সংস্কৃতি বহন করে। বাজারে গেলেই ছোট মাছ চোখে পরে। সকালের তাজা মাছগুলো বাজার থেকে কিনে রান্না করলে রান্নার স্বাদ আরও বেড়ে যায়। এবং পেটপুরে খুব মজা করে আমরা খেয়ে থাকি। আর ছোট মাছ যদি নদীর হয় তাহলে তো কথায় নেই। চেটেপুটে খাওয়া যাবে এক নিমিষেই। এবার ছোট মাছের রেসিপিগুলো জেনে নেওয়া যাক-
কাঁচকি মাছ ভুনা
উপকরণ
- কাঁচকি মাছ ২৫০ গ্রাম
- পেঁয়াজ কুচি দেড় কাপ
- আলু ১/২ কাপ
- পেয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ
- আদা রসুন বাটা ১ চা চামচ
- তেল ১/৪ কাপ
- জিরা ১/২ চা চামচ
- জিরা গুড়ো ১ চা চামচ
- হলুদ গুড়ো ১/২ চা চামচ
- মরিচ গুড়ো ১ চা চামচ
- ভাজা জিরা গুড়ো ১/৪ চা চামচ
- স্বাদমতো লবন
- টমেটো ১টি লম্বা করে কুচি করা
- কাঁচা মরিচ
- ধনেপাতা
প্রস্তুতপ্রণালী
মাছ কেটে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। চুলার আঁচ মিডিয়াম হিটে রেখে একটি প্যান বসিয়ে তেল দিতে হবে। তারপরে গোটা জিরা দিয়ে ফোড়ন চলে এলে পেয়াজ কুচি দিতে হবে। এবার পেয়াজ তেলের মধ্যে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপরে পেয়াজ বাটা দিতে হবে। সাথে আদা রসুন বাটা দিয়ে একটু নেড়ে নিতে হবে। তারপরে টমেটো কুচি, লবন, হলুদ গুড়ো, মরিচের গুড়ো ও আলু কুচি দিয়ে কয়েকমিনিট কষিয়ে নিতে হবে। সামান্য পরিমাণে পানি দিয়ে ঢাকনা দিতে হবে। এতে আলু সিদ্ধ হয়ে যাবে। এরপরে কাঁচকি মাছগুলো মসলার সাথে আলতো হাতে মিশিয়ে নিতে হবে। পরিমাণ মতো পানি দিয়ে কয়েকটি কাচা মরিচ ও ধনেপাতা কুচি দিতে হবে। ৫ মিনিটের জন্য ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। চুলার আঁচ কম করে আরও ১০ মিনিটের জন্য জ্বাল করতে হবে। মাখো মাখো হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে।
আম দিয়ে মৌরলা মাছের টক
গরমে সস্তি মেটাতে দুপুরের পাতে মৌরলা মাছের টক রাখতে পারেন। খাবারে ভিন্ন স্বাদ এনে দিবে।
উপকরণ
- মৌরলা মাছ ১৫০ গ্রাম
- কাচা আম মাঝারি সাইজের ১ টি
- লবন হাফ চা চামচ
- হলুদ হাফ চা চামচ
- সরিষার তেল ১ টেবিল চামচ
- ২ টুকরো লাল শুকনো মরিচ
- হাফ চা চামচ কালো সরষে
- ১ টেবিল চামচ চিনি
- ১ টেবিল চামচ সরষে বাটা
প্রস্তুতপ্রণালী
খুব ভালো করে পরিষ্কার করে কেটে ধুয়ে রাখতে হবে। এবং আমের খোসা ছিলে লম্বা করে ফালি করে নিতে হবে। মাছের মধ্যে লবন ও হলুদ দিয়ে মাখয়ে নিতে হবে।
চুলার একটি কড়াই বসিয়ে সরিষার তেল দিতে হবে। তেল গরম হলে মাছগুলো দিতে হবে। মাছের একপাশ ভালো করে ভাজা হয়ে গেলে অপর পাশেও ভালো করে ভেজে নিতে হবে। ভাজা হলে গেলে তুলে নিতে হবে। এবার একই তেলে লাল শুকনো মরিচ ও কালো সরষে দিয়ে কয়েক সেকেন্ড ভেজে নিতে হবে। কেটে রাখা ফালি আমগুলো দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। আম ভাজার সময় সামান্য পরিমাণে হলুদ গুড়ো ও লবন দিতে হবে। পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে নিতে হবে প্রায় ৫ মিনিটের জন্য। এই রান্নায় পাতলা ঝোল রাখা হয় তাই সেইবুঝেই পানি দিতে হবে। আমগুলো প্রায় সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা মাছগুলো দিতে হবে। ১ টেবিল চামচ চিনি দিয়ে নেড়ে নিতে হবে। চিনির স্বাদ পছন্দ অনুযায়ী দেওয়া যাবে। যদিও এই তরকারি টক খেতেই বেশি ভালো লাগে। দসরষে বাটা ছেকে দিতে হবে। এবার কয়েকমিনিট রান্না করতে হবে। চুলা বন্ধ করে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।
বেগুণ টমেটো দিয়ে টেংরা মাছের ঝোল
উপকরণ
- ২ টেবিল চামচ তেল
- হাফ কাপ পেয়াজ কুচি
- ৫ টি কাচা মরিচ
- আধা চা চামচ শুকনো মরিচের গুড়ো
- ১/২ চা চামচ ধনিয়া গুড়ো
- ১/২ চা চামচ জিরার গুড়ো
- ১/২ চা চামচ হলুদের গুড়ো
- স্বাদমতো লবন
- ১ টি বেগুন বড় সাইজের
প্রস্তুতপ্রাণালী
চুলায় একটি প্যান বসিয়ে রান্নার জন্য তেল দিতে হবে। এবার এই তেলের মধ্যে পেয়াজ কুচি দিতে হবে। পেয়াজ হালকা ভাজা নিতে হবে। এবার একটু পানি দিতে হবে জ্বাতে পেয়াজ পুড়ে না যায়। কাচা মরিচ ফালি করে দিতে হবে। শুকনো মরিচের গুড়ো, ধনিয়া গুড়ো, জিরার গুড়ো, হলুদের গুড়ো ও লবন স্বাদ অনুযায়ী দিতে হবে। এবার সবগুলো মসলা ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে। আগে থেকে কেটে রাখা বেগুণ লম্বা ও মোটা টুকরো করে কেটে দিতে হবে। অল্প আঁচে মসলার সাথে বেগুণ কষিয়ে নিতে হবে। তারপরে দেশি টেংরা মাছ দিতে হবে। বেগুনের সাথে মাছ কিছুক্ষণ আবারও কষিয়ে নিতে হবে। এবার ছোট সাইজের ২টি টমেটো লম্বা ফালি করে দিতে হবে। পরিমাণমতো ঝলের জন্য পানি দিতে হবে। জ্বাল বাড়িয়ে দিতে হবে। ঝোল পছন্দ মতো রেখে চুলা থেকে নামিয়ে ভাতের সাথে পরিবেশন করা যাবে।
ঝিঙে দিয়ে কাজলি মাছ
উপকরণ
- কাজলি মাছ ২০০ গ্রাম
- ঝিঙে হাফ কেজি
- কাচা মরিচ ৪/৫টি
- হলুদ গুড়ো ১ চা চামচ
- মরিচের গুড়ো ১ চা চামচ
- ধনিয়া গুড়ো ১ টেবিল চামচ
- ধনেপাতা কুচি
- লবন স্বাদ অনুযায়ী
- সরিষার তেল হাফ কাপ
- কালোজিরা ১/২ চা চামচ
প্রস্তুতপ্রণালী
মাছের মধ্যে লবন ১ চা চামচ লবন ও হাফ চা চামচ হলুদ গুড়ে দিয়ে ভালোভাবে মাখিয়ে নিতে হবে। চুলায় কড়াই বসিয়ে তেল দিতে হবে। তেল গরম হয়ে গেলে মাঝারি সাইজে কেটে নেওয়া ঝিঙে গুলো দিতে হবে। এগুলো একটু হালকা করে ভেজে নিতে হবে। ঝিঙে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। একটু পানির মধ্যে ধনেগুড়ো, মরিচের গুড়ো ও হলুদের গুড়ো দিতে মিশিয়ে নিতে হবে।
অন্য একটি কড়াইয়ে তেল দিয়ে গরম করতে হবে। কালোজিরা তেলের মধ্যে একটু ভেজে নিতে হবে। এরমধ্যে গুলিয়ে রাখা মসলা দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। এবার ভেজে রাখা ঝিঙে ও লবন দিয়ে মসলার সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। ঢাকনা দিয়ে রান্নার করতে হবে ৩ মিনিটের জন্য। ঝিঙে প্রায় সেদ্ধ হয়ে গেলে হাফ কাপ পানি ও কাচা মরিচ দিতে হবে। এবার ঝোল ফুটে উঠলে মাখিয়ে রাখা মাছ দিতে হবে। প্রায় ৫মিনিটের জন্য ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। ঝোল প্রায় মাখো মাখো হলে এলে ধনিয়াপাতা কুচি দিতে হবে। কিছুক্ষণ পরে চুলা বন্ধ করে নামিয়ে নিতে হবে।
হাতে মাখা ঝাল ঝাল ছোট মাছের চচ্চড়ি
উপকরণ
- ছোট মাছ ৫০০ গ্রাম
- হলুদ গুড়ো ১ চা চামচ
- ধনিয়া গুড়ো ১ চা চামচ
- স্বাদমতো লবন
- তেল ২ টেবিল চামচ
- মাঝারি সাইজের আলু ১টি
- কাচা মরিচ ৪/৫টি
- পেয়াজ কুচি ৩টি
প্রস্তুতপ্রণালী
মাছ কেটে ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপরে সবগুলো মসলার উপকরণ মাছের সাথে দিয়ে হাত দিয়ে মাখিয়ে নিতে হবে। এবার দেড় কাপ পানি দিয়ে মাঝারি আচেঁ ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। মাঝে মধ্যে আলতো হাতে রান্না করতে হবে যাতে মাছগুলো ভেজে না যায়। এবার কিছুক্ষণ রান্না করে চুলা থেকে নামানো আগে পছন্দ অনুযায়ী ধনেপাতা কুচি দিতে হবে। ছোটমাছের সবচেয়ে সহজ রেসিপি তৈরি হয়ে গেলো। এখন গরম ভাতের সাথে এই চচ্চড়ি খেতে দারুন মজাদার।
উপরোক্ত আলোচনায় ছোট মাছ রান্নার সহজ পাঁচটি রেসিপি তুলে ধরা হয়েছে। বেশির ভাগ সময় আমরা ছোট মাছের চচ্চড়ি খেয়ে থাকি। তাই খাবারে নতুন স্বাদ পেতে বিভিন্ন সবজি যোগ করলেও খেতে অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। নতুন রাধুনীরা এই আর্টিকেল পড়ে ছোট মাছের রেসিপি তৈরি করতে পারবেন খুব সহজেই।