You are currently viewing গাইবান্ধার রসমঞ্জুরি কেন বিখ্যাত? রসমঞ্জুরির ইতিহাস ও রেসিপি

গাইবান্ধার রসমঞ্জুরি কেন বিখ্যাত? রসমঞ্জুরির ইতিহাস ও রেসিপি

এখন থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগে গাইবান্ধায় প্রথম রসমঞ্জুরির উৎপাদন ও প্রচলন শুরু হয়। তৎকালীন সময়ে এটি যেমন মানুষের মন জয় করা শুরু করেছিল তা এখন পর্যন্ত গতিশীল রয়েছে। পক্ষান্তরে রসমঞ্জুরি নিয়ে মানুষের মনে জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। রসে টইটুম্বুর গাইবান্ধার রসমঞ্জুরি আমাদের সকলের মন যেমন জয় করেছে তেমনি এর স্বাদের গোপন রহস্য উদ্‌ঘাটনে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। 

আমাদের আজকের লেখায় আমরা গাইবান্ধার রসমঞ্জুরি তৈরি করার রেসিপি। এটি বিখ্যাত হওয়ার পেছনের গল্প এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করবো। দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক। 

গাইবান্ধা রসমঞ্জুরি কেন বিখ্যাত?

গাইবান্ধা রসমঞ্জুরি কেন বিখ্যাত?

মিষ্টান্ন বাঙালিদের একটি ঐতিহ্যবাহী খাদ্য। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন কারণে হরেক রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। বিশেষ করে মিষ্টি ও সন্দেশ এই ঐতিহ্যের অনেক বড় অংশ ধরে রেখেছে। তবে প্রতিটি মিষ্টির নাম যেমন আলাদা আলাদা তেমনি এদের বৈশিষ্ট্য আলাদা। 

গাইবান্ধা বাংলাদেশের অনেক প্রচলিত অঞ্চল। আমাদের দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে এই অঞ্চলের অনেক গভীর সম্পর্ক। তার ধারাবাহিকতায় আমরা এই অঞ্চলের সব থেকে বেশি পরিচিত সুস্বাদু মিষ্টান্ন রসমঞ্জুরি সম্পর্কে ধারণা লাভ করবো। 

তো রসমঞ্জুরি দেখতে অনেকটা রসমালাইের মত। প্রথম দেখায় যে কেউ রসমঞ্জুরি ও রসমালাইকে একই ভেবে ভুল করতে পারে। তবে তাদের মধ্যে উৎপাদনগত পার্থক্য বিদ্যমান। যাইহোক, ভুট্টা ও মরিচের জন্য গাইবান্ধা যেমন সুপরিচিত তেমনি রসমঞ্জুরির জন্যও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। 

এই খ্যাতির প্রধান কারণ হলো রসমঞ্জুরি খেতে অসাধারণ স্বাদের। অর্থাৎ এটি রসমালাইের থেকেও বেশি সুস্বাদু এবং রসালো। এটি তৈরি করার সময় এতে ব্যবহার করা ছানার রস রসমঞ্জুরির বিখ্যাত হওয়ার পেছনে অনেক বেশি গুরুত্ব রাখে। সবসময় চেষ্টা করা হয় ছানার রস যেন পর্যাপ্ত মিষ্টি ও মালাইয়ের মত ঘন হয়। 

এতে রসমঞ্জুরির ছোট ছোট মিষ্টি খাওয়ার সময় এর রস স্বাদ বৃদ্ধি করে দেয়। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় রসমঞ্জুরি পাওয়া যায়। তবে গাইবান্ধায় তৈরি করা রসমঞ্জুরি স্বাদে এবং গুনে অনন্য হয়। অন্যদিকে সর্বপ্রথম এই অঞ্চলেই রসমঞ্জুরি তৈরি ও বিক্রি করা শুরু হয়। মোটকথা রসমঞ্জুরি বিখ্যাত হওয়ার প্রধান কারণ এর অনন্য স্বাদ। 

গাইবান্ধা রসমঞ্জুরির ইতিহাস

আমরা জানি গাইবান্ধা ভুট্টা ও মরিচের জন্য আগে থেকেই বিখ্যাত। তবে এই অঞ্চলে তৈরি হওয়া দেশের সব থেকে উৎকৃষ্ট রসমঞ্জুরি গাইবান্ধাকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করেছে। যাইহোক, ১৯৪৮ সালে সর্বপ্রথম বাংলার মাটিতে রসমঞ্জুরি তৈরি করা শুরু হয়। 

বগুড়া যেমন দই এর জন্য বিখ্যাত, পুরান ঢাকার বাকরখানি, কুমিল্লার রসমালাই ঠিক তেমনি গাইবান্ধা জেলার বিখ্যাত মিষ্টি জাতিয় খাবারের নাম রসমঞ্জুরি। যা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি দুধের রসের মধ্যে ডুবানো ছানার কিউট ছোট্ট গোল গোল ছানার মিষ্টি খেতেও ভারী মজার ও সুস্বাদু।

তৎকালীন সময় রমেশ ঘোষ নামক একজন ব্যক্তি গাইবান্ধার সার্কুলার রোডের পাশে একটি মিষ্টির দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর সেখানে ভারতের ওড়িশা থেকে একজন মিষ্টির কারিগর নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে সেই কারিগরের সাহায্যে এক নতুন ধারার রসমঞ্জুরি তৈরি করা শুরু করেন। পূর্ব থেকেই রসমঞ্জুরি তৈরি ও বিক্রি প্রচলিত থাকলেও তা রমেশ ঘোষের হাত ধরে আধুনিকতা পায়। 

অর্থাৎ রসমঞ্জুরি আগে থেকেই প্রচলিত থাকলেও রমেশ ঘোষের উদ্যোগে ধীরে ধীরে গাইবান্ধা এবং পরবর্তীতে পুরো দেশে এবং বর্তমানে অন্যান্য দেশে পরিচিতি লাভ করেছে। তো প্রথমদিকে রসমঞ্জুরিতে দেওয়া ছোট ছোট মিষ্টির দানা লম্বা আকারের তৈরি করা হতো। পরবর্তীতে তা গোল গোল এবং আগের থেকে ছোট করা হয়েছে। 

এতে প্রতিটি মিষ্টি আগের থেকে ভালোভাবে রসে ভিজে যাচ্ছে যা স্বাদ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে। বর্তমানে গাইবান্ধাকে রসমঞ্জুরির শহর নামেও ডাকা হয়। কারণ এখানে রমেশ ঘোষের “রমেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার” বাদেও “গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার” ও “নারু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার” নামক বিখ্যাত দোকান রয়েছে। 

রমেশ সুইটস রসমঞ্জুরি আদি প্রস্তুতকারক হলেও বাকি দুই দোকান তাদের থেকে ভালো করছে। এমনকি গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার সব থেকে বেশি পরিমাণে এই মিষ্টান্ন বিক্রি করে। তাদের ভাষ্যমতে প্রতিদিন তারা অন্যান্য মিষ্টির সাথে কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি রসমঞ্জুরি তৈরি করে। 

এই পরিমাণ রসমঞ্জুরি প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হওয়ার পাশাপাশি বিদেশে পার্সেল হিসেবে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতি কেজি রসমঞ্জুরি ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যেখানে আপনি দোকানে বসে ফুল প্লেট ৬০ টাকা এবং হাফ প্লেট ৩০ টাকায় খেতে পারবেন। 

গাইবান্ধা রসমঞ্জুরি রেসিপি

গাইবান্ধা রসমঞ্জুরি রেসিপি

মূলত রসমঞ্জুরি তৈরির প্রণালি রসমালাইের সাথে অনেক অংশে মিলে যায় তবে দুটোই আলাদা। নিচে রসমঞ্জুরির রেসিপি বর্ণনা করা হলো। 

উপকরণঃ চিনি, দুধ, এলাচ, ছানা, সুজি 

গাইবান্ধার বিখ্যাত রসমুঞ্জুরি প্রস্তুত প্রনালী

মনে রাখা দরকার রসমঞ্জুরি (Roshmonjuri) তৈরি করার সময় অবশ্যই খাঁটি গরুর দুধ প্রয়োজন। বিশেষ করে যে ধরনের গরু চর এলাকায় পালিত হয়। কারণ এই ধরনের গরুর দুধের স্বাদ অন্যান্য দুধ থেকে ভালো হয়। যাইহোক প্রতি কেজি রসমঞ্জুরি তৈরি করার জন্য আমাদের প্রয়োজন হবে আড়াই কেজি দুধ, দুধের ছানা ২০০ গ্রাম, ১০০ গ্রাম চিনি, ২৫ গ্রাম ময়দা ও এলাচ।

প্রথমে দুধ একটি কড়াইয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এতে সেই দুধ পর্যাপ্ত জ্বাল হয়ে লালচে রং ধারণ করবে। এই অবস্থায় দুধ একটু ঠান্ডা হলে তাতে পরিমাণ মত ভিনেগার দিতে হবে। এতে দুধ ছানায় পরিণত হবে। তারপর সেই ছানা থেকে পানি ছেঁকে নিতে হবে। 

পানি ছাঁকা হয়ে গেলে তাতে ময়দা, এলাচ ও চিনি দিয়ে মিশিয়ে নিতে হয়। বর্তমানে অটোমেটিক যন্ত্র ব্যবহার করে মিশ্রণ ও মিষ্টির দানা তৈরি করা হয়। আপনি চাইলে হাতেও তৈরি করে নিতে পারবেন। তো মিষ্টির দানা তৈরি হয়ে গেলে তারপর সেগুলো একটি বড় পাত্রে ১০ মিনিটের মত চিনির সিরায় সিদ্ধ অথবা ভেজে নিতে হবে। 

এই সময় সুজি, চিনি এবং অবশিষ্ট ছানা দিয়ে তা পরিমাণমতো দুধে জ্বাল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করে নিতে হবে। অর্থাৎ ক্ষীর যত ভালো হবে রসমঞ্জুরি খেতে তত সুস্বাদু হবে। তারপর ফুটন্ত মিষ্টির দানা গুলোকে বেশি পরিমাণ চিনির সিরায় ডুবিয়ে রাখতে হবে। যখন সেগুলো রসে টইটুম্বুর হবে তখন মিষ্টির দানা গুলোকে ক্ষীরের মধ্যে ডুবিয়ে দিতে হবে। 

রসমঞ্জুরি তৈরি হওয়ার পর ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ার উপযোগী থাকে। আবার গরম বেশি পরলে এই খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে ওরিজিনাল গাইবান্ধার রসমঞ্জুরি সব জায়গায় পাওয়া যায় না। অবশ্য শীতকালে রসমঞ্জুরির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার এটি অন্যতম বড় কারণ। তবে যাইহোক রসমঞ্জুরি খেতে অনেক বেশি সুস্বাদু যা অনেক মিষ্টিকে হার মানায়।  

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.