You are currently viewing গাওয়া ঘি কীভাবে তৈরি করে ও ঘি সংরক্ষণের উপায়
গাওয়া ঘি কিভাবে তৈরি করে

গাওয়া ঘি কীভাবে তৈরি করে ও ঘি সংরক্ষণের উপায়

ঘি তৈরি করা হয় খটি দুধ থেকে। স্বাভাবিক ভাবে শুনতে সহজ মনে হলেও গাওয়া ঘি তৈরি প্রসেস কিন্তু বেশ সময় সাপেক্ষ্য ব্যাপার। গরম ভাত কিংবা খিচুড়ির সাথে এক চামচ ঘি মীশিয়ে খেতে কার না ভালো লাগে বলুন! এই সুস্বাদু এই গাওয়া ঘি তৈরির পিছনের গল্প অনেকের ই অজানা। তাই আজকের এই লেখার মাধ্যমে আমারা জানবো সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি অনুসরন করে কীভাবে গাওয়া ঘি তৈরি করা  হয় এবং ঘি এর এই অসাধারন স্বাদ ও ঘ্রানের রহস্য।  

ঘি কত ভাবে তৈরি করা যায়

সচারাচর ঘি তৈরি করা হয় দুইটি পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে ঘি এর স্বাদ ও ঘ্রানের বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। 

দুধ জ্বাল করে ঘি তৈরি

এই পদ্ধতিতে চুলায় দুধ জ্বাল করে সেখান থেকে স্বর সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তিতে সেই স্বর থেকে ঘি তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিতে তৈরি করা ঘি কে বলা হয় গাওয়া ঘি। গাওয়া ঘি কে অনেকেই স্বরের ঘি নামে চিনে থাকে। এটি তুলনামুলক সমইয় সাপেক্ষ্য পদ্ধতি। তবে সকল ঘি এর মাঝে এই ঘি আর স্বাদ সবচেয়ে বেশি। 

মেশীনের সাহায্য ক্রিম থেকে ঘি তৈরি

মেশীনের সাহায্য খুব কম সময়ে এবং সহজেই  ঘি তৈরি করা যায়। এই পদ্ধতিতে দুধ থেকে মেশিনের সাহায্য ক্রিম সংগ্রহ করা হয় এবং ক্রিম গুলোকে জ্বাল করে ঘি বানানো হয়। এই পদ্ধতিতে তৈরি  ঘি কে বলা হয় ক্রিমের ঘি।  

গাওয়া ঘি তৈরির নিয়ম 

গাওয়া ঘি তৈরির নিয়ম 

ঘি বাঙ্গালিদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। আমরা অনেকেই বাসায় ঘি বানানোর কথা ভাবি। তবে ঘি পার্ফেক্ট হবে কিনা এমন চিন্তা অনেকের মাথাতেই ঘুরপাক খায়। খুব সহযে মাত্র ৫ টি স্টেপ বা পদ্ধতি অনুসরন করেই আপনি পার্ফেক্ট গাওয়া ঘি তৈরি করতে পারবেন। 

দুধ সংগ্রহ 

খাটি ঘি তৈরির প্রধান উপকরন হলো দুধ। তাই ভালো মানের ঘি তৈরির জন্য আপনাকে অবশ্যই নির্ভেজাল দুধ সংগ্রহ করতে হবে। দুধের ফ্যাটের অংশ টা থেকেই ঘি সংগ্রহ করা হয়। যেই দুধে ফ্যাটের পরিমান বেশী সেই দুধ থেকে বেশী পরিমানে ঘি তৈরি সম্ভব। সাধারনত  দেশি গরু এবং মোষের দুধ থেকে ঘি তৈরি করা হয়। তবে দেশি গরুর দুধে তৈরি ঘি এর স্বাদ অন্য যেকোনো ঘি কে ছাড়িয়ে যাবে। তাই ঘি তৈরির জন্য বেস্ট অপশন হলো দেশী গরুর দুধ। 

স্বর সংগ্রহ 

দুধ সংগ্রহ করে একটি পরিষ্কার পাত্রে রাখা হবে। স্বর সংগ্রহ করার একমাত্রে উপায় হলো দুধ গুলোকে দীর্ঘক্ষন সময় যাবত জ্বাল করা। এটি অনেক বেশী সময় সাপেক্ষ্য ব্যাপার। তবে খাটি ও মজাদার ঘি এর স্বাদ পেতে চাইলে এটুকু সময় আপনাকে ব্যায় করতেই হবে। যাইহোক দুধ গুলোকে চুলাতে রেখে জ্বাল দিতে হবে। 

একটা সময় পর দুধ থেকে উপরের দিকে হলুদ বর্নের স্বর জমা হতে থাকবে। তখন সেই স্বর গুলোকে আলাদা করে তুলে রাখতে হবে। এভাবেই জ্বালের মাধ্যমে অল্প অল্প করে স্বর সংগ্রহ করতে হবে। আপনি যদি বাসায় এই ঘি তৈরি করতে চান তাহলে একদিনে এই স্বর সংগ্রহ সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে হাতে ১ সপ্তাহ সময় নিয়ে রোজ এই সংগ্রহ করে ফ্রিজে রাখতে পারেন। 

স্বর মাখানো   

ঘি তৈরির জ্ন্য পর্যাপ্ত স্বর সংগ্রহ করা হলে এইবার স্বর গুলোকে সুন্দর ভাবে মিক্সড করা পালা। এক্ষেত্রে হাতের সাহায্য, ডালঘুটনির সাহায্য, শিল পাটায় বেটে কিংবা ব্লেন্ডারের মাধ্যমে স্বর গুলোকে মিহি করে নিতে হবে। মোট কথা স্বর গুলোকে কোনো ভাবে শক্ত বা জমাট বাধা অবস্থায় রাখা যাবে না। যতটা সম্ভব মিহি করে রাখতে হবে। 

মাখন তৈরি

দুধের তৈরি স্বর থেকেই মাখন বানানো হয়। বেটে রাখা স্বর গুলোকে একটি বড় পাত্রে রাখতে হবে। এরপর এই বাড়া স্বরের মাঝে অল্প অল্প করে ঠান্ডা পানি মেশাতে হবে। এতে করে মাখনের অংশ স্বর থেকে আলাদা হয়ে উপরে ভেসে উঠবে। অন্যদিকে বাকি অংশ ঘোল হিসেবে পাত্রের তলানিতে জমা হবে। এবার মাখন গুলোকে একটি পাতলা ও পরিষ্কার কাপড়ে বেধে রাখতে হবে অথবা চাইলে ছাকুনি  ও ব্যবহার করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে যেনো মাখনের মাঝে কোনো পানি না থাকে। 

মাখন থেকে ঘি তৈরি  

মাখন গুলো থেকে অবশিষ্ট পানি ঝরে গেলে এগুলোকে স্টিল কিংবা লোহার কড়ায়ে রেখে জ্বাল দিতে হবে। প্রথম অবস্থায় চুলার আচ টা হাই রাখতে হবে। এরপর যখন মাখন গুলো গলে তেলের মতো আকার ধারন করবে তখন চুলার আঁচ কিছুটা কমিয়ে দিতে হবে। 

ঘি এর পুষ্টি উপাদান, প্রয়োজনীয়তা ও ঘি খাওয়ার সতর্কতা

জ্বালের ফলে মাখন গুলো থেকে ঘি উপরের দিকে উঠতে থাকবে আর অবশিষ্ট মাখন গুলো কড়াতের নিচে জমা হতে থাকবে। ঘি এর কালার চলে আসলে এবার চুলা থেকে ঘি এর পাত্র নামিয়ে কয়েক ঘন্টার জন্য রুম টেম্পারাচারে রাখতে হবে। এরপর উপর থেকে ঘি গুলো চামচের সাহায্য তুলে সংরক্ষন করতে হবে। 

ঘি এর ঘ্রান কম বেশী হওয়ার কারন কী 

ঘি এর ঘ্রান কম হবে নাকি বেশী এটা নির্ভর করে জ্বালের উপরে। একমাত্র একজন দক্ষ্য কারিগর ই জানেন একটা পার্ফেক্ট ঘি তৈরির জন্য কতক্ষন যাবত এটি জ্বাল করা উচিত। সাধারনত যেই ঘি গুলোতে জ্বালের পরিমান কম থাকে সেই ঘি কে বলা হয় মিষ্টি জ্বালের ঘি। এর ঘি এর ঘ্রান টা বেশ তীর্ব্র রবং কালার তাও হালকা হলুদ ভাব। 

তবে কম জ্বালের ফলে কয়েক মাসের মাঝেই এই ঘি এর ঘ্রান ও স্বাদের মাত্রা টা কমে যায়। অন্যদিকে পর্যাপ্ত সময় ধরে কড়া জ্বালের ফলে যেই ঘি তৈরি হয় সেটির ঘ্রান অনেক বেশী তীর্ব্র না হলেও এই ঘি এর গুনগত মান বজায় থেকে বহু মাস যাবত। সেই সাথে ই ঘি এর কালার টাও হয় সোনালি হলুদ আর ঘি তে অনেক দানা থাকে। কোনো ঘি তে পর্যাপ্ত দানা থাকলেই বুঝবেন সেটি কড়া জ্বালের ঘি। 

ঘি তৈরি করতে কত কেজি দুধ লাগে

ঘি তৈরি করতে কত কেজি দুধ লাগে

ঘি তৈরি করতে কতখানি দুধের প্রয়োজন এটা নির্ভর করে ঘি এর ফ্যাটের ও ঘনত্বের উপরে। যেই দুধে ফ্যাটের পরিমান বেশী সেই দুধ থেকে বেশী ঘি তৈরি সম্ভব। তবে সাধারনত  এক কেজি  ঘি তৈরির জন্য আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ লিটার দেশি গাভীর দুধের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে ২০ থেকে ২২ লিটার  মহিষের দুধ থেকে এক কেজি ঘি তৈরি সম্ভব। 

ঘি সংরক্ষনের উপায় 

ঘি একটি দামী খাবার। তবে সঠিক ভাবে সংরক্ষনের অভাবে নষ্ট হতে পারে এটি। তাই ঘি সংরক্ষনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। 

  • দীর্ঘদিন ঘি সংরক্ষনের জণ্য অবশ্যই এতি কাচের পাত্রে রাখুন। 
  • বয়াম থেকে ঘি বের করার সময় কোন ভাবেই  ঘি এর মাঝে হাত দিবেন না। ঘি উঠানোর ক্ষেত্রে পরিষ্কার ও শুকনো চামচের ব্যবহার করুন। 
  • ঘি এর পাত্রের মুখ অকারনে বারবার খুলবেন না। এতে ঘি এর ঘ্রান ও গুনগত মান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • দীর্ঘদিন ঘি ভালো রাখতে চাইলে ফ্রিজে রাখতে পারেন 
  • মাঝে মাঝে ঘি গুলোকে রোদে দিতে পারেন।

আশ করছি আজকের এই লেখা থেকে আপনার সঠিক ভাবে গাওয়া ঘি তৈরির নিয়ম ও কীভাবে ঘি সংরক্ষন করবেন সেই বিষয়ে স্বচ্ছ ধারনে পেয়েছেন। ঘি শুধু তার ঘ্রান ও স্বাদের জন্য বিখ্যাত না   বরং ঘি এর বহু স্বাস্থ্যউপকারিতার। তাই নিজের ও প্রিয়জনের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রোজ খাবারে ১ চা চামচ ঘি রাখুন। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.