বাঙালি মানেই ভোজন রসিক। বাঙালি খাবারি আনার পাশাপাশি মুখোরচক সিঙারা, পুরি, চপ থাকলে আর কথাই নেই। রাস্তার ধারে এসব লোভনীয় খাবার দেখে আসলে লোভ সামলানোই মুশকিল হয়ে পরে। তাই তো প্রতিদিন উপচে পড়া ভির ঠেকাতে বিক্রেতারা হিমশিম খান।
সাধারণত হালকা নাস্তাগুলোকে স্ন্যাকস বলা হয়। প্রধান তিনবেলা খাবারের পরেও আমাদের ক্ষুধা লাগে তখন এই ক্ষুধা নিবারনের জন্যই স্ন্যাকস আইটেম খেয়ে থাকি। স্ন্যাকস মানেই খারাপ নয়। অনেকের ধারণা স্ন্যাকস জাতীয় খাবার গুলো আমাদের শরীরের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। জি যদি আপনি ভাজা পোড়া আইটেমগুলো খেয়ে থাকেন তাহলে সেটা আপনার জন্য কখনোই কল্যাণ বয়ে আনবে না। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা, অ্যাসিডিটি, উচ্চরক্তচাপ দেখা দেওয়া সম্ভাবনা থাকে। তবে নিজেদের সুস্থ রাখতে বেছে নিতে হবে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস। আজকের আর্টিকেলে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস নিয়ে আলোচনা করা হবে।
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস
বিকেলে বা সন্ধ্যার ক্ষুধা নিরারণ করার জন্য আমরা খাবার খেয়ে থাকি। তবে আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি সেসব খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কিনা। তাই প্রোটিন ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত স্ন্যাকস বেছে নিতে পারেন। যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এটি বেশ ভালো একটি উপায় হতে পাারে। আমাদের শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে।
পিনাট বাটার
এতে প্রোটিন, মিনারেল ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে। যা স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে দারুন আইটেম হতে পারে। শুধু পিটান বাটার নয় কেউ চাইলে আমন্ড বাটার, সয়া বাটার বা কাজু বাটারও খেতে পারবেন। এটি হজমে সহায়তা করে। শক্তির উৎস হিসেবে বেশ উপকারী। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
ড্রাই ফ্রুটস
ড্রাই ফ্রুটসে চিনি, ক্যালরি ফ্যাট পাওয়া যায়। কাজের ফাঁকে এটি খেলে কাজে অনেক শক্তি পাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি এজিং থাকে, যা তারুন্য ভার ধরে রাখে। এছাড়াও রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। এমনকি এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিউপাদান দাঁত, হাড় ও চোখের জন্য বেশ উপকারী। ড্রাইফ্রুটস ভিজিয়ে খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে।
তাজা ফল
স্ন্যাকস হিসেবে তাজা ফল সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট থাকে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তাজা ফলে বিদ্যমান বিভিন্ন খনিজ উপাদান, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও হার্ট ও শরীর সুস্থ্য রাখতে সহায়ক।
ছোলা
ছোলা তো আমরা প্রায় খেয়ে থাকি। খিদে মেটাতে ছোলা হতে পারে একটি প্রোটিনসমৃদ্ধ
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস। এতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণসহ আরও অনেক স্বাস্থ্য উপকরীতা রয়েছে।
বাদাম
বাদাম অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার যা প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ফাইবারে পরিপূণ্য। গল্পের আড্ডায় বা সন্ধ্যায় টিভি দেখতে অল্প করে বাদাম খাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন চিনা, কাজু, কাঠ পেস্তা থাই ।এগুলো ১ দিনে একমুখো পরিমাণ পর্যন্ত খাওয়া উত্তম। বেশ পরিমাণে খেতে পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। গবেষণায় বলা হয়েছে, পরিমিত পরিমাণে বাদাম খেলে ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
টক দই
দুগ্ধজাতীয় প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার হলো টক দই। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। টক দয়ের সাথে কিছু ফ্রুটস যোগ বা চকলেট মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে খেতেও অনেক ভালো লাগবে। এটি পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
সেদ্ধ ডিম
দূরে যাওয়ার পথে টিফিনে সিদ্ধ ডিম রাখা যেতে পারে। এটি পুষ্টিকর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। যা আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য গঠন ও উন্নতি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অনেকপুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শারীরিক বৃদ্ধি ও হাড়ের স্বাস্থ্য গঠনে সহায়ক। স্নাকস আইটেম হিসেবে দারুণ কাজ করে। এটি খেলে পেট ভরে যায়।
সুস্থ থাকার জন্য খাবারের তালিকা – সুস্থতার অর্গানিক সমাধান
পপকর্ন
বাহিরের পপকর্নের দোকানগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ঘ্রাণ আমাদের নাকে পৌঁছে যায়। মুখোরচক এই খাবার স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে। জানলে অবাক হতে পারেন, এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে, হার্টকে সুস্থ রাখে। এছাড়াও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কটেজ পনির বা চিজ
এটি সম্পূর্ণ প্রোটিনে ভরপুর। অন্যান্য পনিরের থেকে এই পনির বেশ স্বাস্থ্যকর। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ক্যালরির পরিমাণ বেশি তাই পেট পূর্ণ রাখে দীর্ঘ সময়ের জন্য। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে যা দাত ও হাড়রে জন্য বেশ উপকারি। যারা পনির পছন্দ করেন তারা চাইলে স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন।
ডার্ক চকোলেট
অন্যান্য চকোলেটের চেয়ে ডাক চকোলেট অনেকের বেশ পছন্দের একটি আইটেম। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। কেউ চাইলে ডার্ক চকোলেটের সাথে একমুঠো বাদাম একসাথে খেতে পারেন। এতে খেতে বেশ ভালো লাগবে।
স্মুদি
একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ স্ন্যাকসের জন্য প্রোটিনের স্মুদি বানানো যেতে পারে। চিয়াসীড, খেজুর, ফল, বাদাম, দই ইত্যাদি মিশ্রণে বাসায় সহজে তৈরি করে ফেলতে পারেন। যা আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়াও ওজন কমাতেও ভূমিকা রয়েছে।
কলা
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে রাখতে পারেন কলা। বাজারে খুবই সহজলভ্য একটি ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আঁশ রয়েছে। যা খেলে পেট ভরা থাকে। এছাড়াও পটাশিয়াম উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে। এমনি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস নির্বাচন
যেসকল খাবারের চর্বি কম থাকবে তবে স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে। এটি শরীরের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। ফাইবার ও পানির পরিমাণ বেশি এমন স্ন্যাকস নির্বাচন করতে হবে। সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি এমন খাবার পরিহার করা। চেষ্টা করতে হবে যেসকল খাবারে সোডিয়াম কম আছে এমন খাবার বেছে নেওয়া। যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। ভিটামিনে পরিপূর্ণ এমন খাবার স্ন্যাকস জন্য নির্বাচন করা।
সতকর্তা
অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাবার গ্রহন করা মোটেও আমাদের শরীরের জন্য ভালো না। বরং শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেকেই মনে করেন যেহেতু পুষ্টিকর খাবার তাই বেশি খেতে হয়তো উপকারিতা বেশি পাওয়া যাবে। বিষয়টি একদম ঠিক না। তাই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের পরিবর্তে জাঙ্ক ফুড খাওয়া যাবেনা। নিজেদেরকে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই খাবারের বিষয়ে সর্তক হতে হবে। যদিও বাহিরের ফাস্টফুড দেখতে লোভ সামলানোটা মুশকিল হয়ে পরে। তবে সবার আগে নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভাবতে হবে।
তিন বেলা খাবার গ্রহণে সচেতনতা
আমাদের প্রধান খাবারের সময় হচ্ছে সকাল, দুপুর ও রাত। অবশ্যই এই তিন বেলার খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। এবং তিন বেলার মাঝে যেসময় থাকবে সেই সময়ে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খেতে হবে। আপনি চাইলে দিনে দুইবার খেতে পারেন স্ন্যাকস। প্রধান খাবারের সময়ে কখনোই স্ন্যাকস আইটেম খাওয়া যাবেনা। এতে পেট ভরা থাকবে তখন অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে করবে না। এতে শরীরের ঘাটতি তৈরি হতে পারে।
উপরিক্ত আলোচনায় স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সুস্থ থাকতে অস্বাস্থ্যকর বা তেল চর্বিযুক্ত স্ন্যাকস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। হালকা নাসতা হিসেবে বেছে নিন পুষ্টিকর স্ন্যাকস। যা আপনাকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।