আমরা অনেকেই স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে থাকি। তবে মনের যত্নের ক্ষেত্রে একেবারেই উদাসীন। যা মোটেও উচিত নয়। শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থের প্রতি আমাদের সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। ফলে জীবনে উদ্বেগ কমবে এবং ভালোভাবে মানসিক শান্তি নিয়ে জীবন কাটানো সম্ভব হবে। বর্তমান সময়ে পারিবারিক অশান্তি, কর্মক্ষেত্রে জটিলতা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আমাদের জীবনে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের বিকাশ সাধনের জন্য পুষ্টিকর খাবার প্রতিদিনের তালিকায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন মানসিক সুস্বাস্থ্যের বজায় রাখে। আমাদের বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা ও হতাশা কমাতে সাহায্য করবে। আজকের আর্টিকেলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যেসব খাবার খাববেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
মানসিক স্বাস্থ্য কি
আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও মন এই দুটোই একে অপরের সাথে জড়িত। ব্যাক্তির অভ্যন্তরীণ চিন্তাধারা, আবেগ, অনুভূতি ও বুদ্ধির সমন্বয়ে গঠিত স্বাস্থ্য। এটি বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে নির্ভর করে থাকে। যেমন ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক অবস্থা, পর্যাপ্ত পরিামণে ঘুম ও বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার ইত্যাদি।
আমাদের মন, আচরণগত ও আবেগপূর্ণ স্বাস্থ্যের দিকটি বোঝায়। মূলত আমরা কি অনুভব করি, কি চিন্তা করি এগুলোই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য। একজন ব্যাক্তি মানসিক ভাবে সুস্থ্য থাকার কারণে তারা কখনোই অপরাধবোধ বা উদ্বেগ দ্বারা প্রভাবিত হয়না। নিয়তান্ত্রিকভাবে জীবন পরিচালনা করলে মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক সুস্থ্য থাকা যায়। মানসিক সুস্থ্যতার জন্য প্রয়োজন শারীরকভাবে সুস্থ থাকা। আমরা অনেকেই শারীরিক সুস্থতাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। অপর দিকে স্ট্রেস ডিপেশনের ফলে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াকে তেমন গুরুত্বসহকারে দেখিনা। পরবর্তীতে আমাদের জীবন তিক্তময় হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক চাপ, অবসাদ হতাশ উদ্বেগের কারণে আত্নহননের পথ বেছে নেন। তাই আমাদের সকলের উচিত মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যেসব খাবার খাবেন
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও উদ্বেগকে কমাতে সাহায্য করে বেশ কিছু খাবার। সঠিক খাদ্যাভ্যাস আমাদের শরীর যেমন ভালো রাখতে সাহায্য করে। তেমনটি আমাদের মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের খাবারে প্রতি গুরত্ব দিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির সাথে মস্তিষ্কের বিকাশ সাধনে সহায়ক। সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য যেখাবার গুলো আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা উচিত। যেগুলো জেনে নেওয়া যাক-
সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিামণে ফলিক অ্যাসিড রয়েছে। যা আমাদের মস্তিষ্কের বিষন্নতা উদ্বেগের মতো বিভিন্ন মানসিক সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পালং শাক খাওয়ার ফলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে। তাই মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিদিনের খাবারে সবুজ শাকসবজি রাখা যেতে পারে।
বাদাম ও বীজ
স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার হলো বাদাম ও বীজ। এগুলো খেলে স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়। প্রতিদিন ১ মুঠ পরিমাণ বাদাম খাওয়া যথেষ্ট। শুধু তাই নয় অন্যান্য রোগের ঝুঁকি এড়াতে খাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে আখরোট ও কাজুবাদাম মস্তিষ্কের কাজের গতি বাড়িয়ে তোলে ও আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।
তাজা ফলমূল
আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন পুষ্টি ও ভিটামিন। সেক্ষেত্রে তাজা ফলমূল দুর্দান্ত একটি উৎস। কারণ তাজা ফল আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহ করে থাকে। যা স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি মানসিক বিষন্নতা দূর করতে সাহায্য করে। তাই চেষ্টা করুন খাবারের তালিকায় ফল রাখার।
ডার্ক চকলেট
মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে ডার্ক চকলেট। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড নামে পরিচিত এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও দেহের ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এবং এন্ডরফিন নিঃসরণে সাহায্য করে। যা আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন ২০- ৩০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেতে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
সামুদ্রিক মাছ
মাছে প্রচুর প্রোটিন রয়েছে। বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছ যেমন টুনা, স্যামন ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যা মানসিক চাপ ও বিষন্নতাকে কমাতে সাহায্য করে। সেই সাথে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।
দই
দই প্রোয়োবায়োটিক সমৃদ্ধ একটি খাবার। যা হজমশক্তি উন্নত করে। কম বেশি আমরা সকলেই পছন্দ করে থাকি। ভারি খাবারে পরে দই না হয়ে যেনো চলেই না। এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রখতে সাহায্য করে। গবেষনায় দেখা গিয়েছে, দই খেলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে যায়।
ডিম
ডিমে অনেক পুষ্টগুণ রয়েছে। যা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। এতে থাকা ফলিক অ্যাসিড, বায়োটিন ও কোলিন আমাদের মস্তিষেক্র কোষ ও স্নায়ুর বিকাশের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। নিয়মিত ডিম খেলে মানসিক স্থিরতা ও ভালো লাগা বাড়িয়ে দেয়।
চিয়াসীড
চিয়াসীডকে সুপার ফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যারা স্বাস্থ্য সচেতন রয়েছেন তাদের খাবারে তালিকায় রয়েছে এটি। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
গ্রিন টি
সবুজ চা বা গ্রিন ট্রিতে বিদ্যমান অ্যামিনো অ্যাসিড আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও অবসাদ দূর করে সতেজ রাখতে সহায়ক।
বেরি
ব্লুবেরি,স্ট্রবেরি, র্যাসবেরিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ডিপ্রেশন, উগ্বেদ সহ মানসিক যেকোনো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষা রাখতে সাহায্য করে।
মানসিক স্বাস্থ্যের গুরত্ব
শারীরিক সুস্থ্যতা ও মানসিক সুস্থতা এই দুটো জিনিস অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিজেরকে সুস্থ রাখতে আমরা শরীরে প্রতি যেমন যত্ন নিয়ে থাকি। তেমনটি মানসিক সুস্থতার জন্য আমাদের বিশেষ খেয়ার রাখতে হবে। কারণ মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। চলুন জেনে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বগুলো জেনে নেওয়া যাক-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
গবেষনায় দেখা গেছে যারা মানসিকভাবে অসুস্থ, তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে। এবং যেসকল ব্যাক্তি মানসিকভাবে সুস্থ তাদের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা বেশি থাকে ফলে তারা কঠিন ও জটিল রোগ থেকে মুক্ত থাকে। তাই আমাদের সকলেও উচিত মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া।
কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি
যারা মানসিকভাবে সুস্থ তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। এবং ব্যাক্তির স্বাভাবিক কার্যাবলি সুষ্ঠূভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন এমন ব্যাক্তি তাদের জীবনের কাজ কর্ম করতে ব্যর্থ হন। সুতরাং একটি স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করা একান্ত জরুরি।
সুস্বাস্থ্যের উপর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব
বিভিন্ন কারণে অনেক সময় আমরা বিষন্নতা, দুশ্চিন্তায় থাকি। দীর্ঘদিন যাবৎ দুশ্চিতা, হতাশায় থাকার কারণে আমারা মানসিক ভাবে ভেঙে পরে যাই। যা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যেমন ওজন কমতে থাকে, মাথা ব্যাথাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। তাই সুস্বাস্থ্য গঠন করতে হয়ে অবশ্যই মানসিক সুস্থ্যতা জরুরি।
ব্যাক্তি জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব
মানসিক চাপ একজন মানুষকে দুশ্চিন্তা, অনাহার, অনিদ্রায় ভোগাই। যা ব্যাক্তি জীবনে একটি খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। ব্যাক্তি নিজের দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অনিহা অনুভুত করেন। অন্যদিকে যেসকল ব্যাক্তি মানসিকভাবে সুস্থ সেসকল ব্যাক্তি নিজেদের জীবনে সুখী থাকেন। স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারেন।
পরিবার ও সমাজ জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব
মানসিক ভাবে সুস্থ্য ব্যাক্তি পরিবারে কিংবা সমাজের সকলের কাছেই প্রিয় হয়ে ওঠেন। তারা সুন্দর ভাবে সমাজ জীবনে বাঁচতে পারেন। এবং যারা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকেন, তাদের দ্বারা সমাজে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্ম সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে গুরুতর প্রভাব বিস্তার করে।
উপরোক্ত আলোচনায় মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বেশ কিছু খাবার উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের জীবনে নানান কারণে অবসাদ দুশ্চিন্তা আসবে এটাই স্বাভাবিক। সেগুলো মোকাকিলার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরত্ব দিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা মানসিকভাবে স্ট্রং থাকলে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।