You are currently viewing চোখ ভালো রাখতে যা খাবেন -জানুন বিস্তারিত
চোখ ভালো রাখতে যা খাবেন

চোখ ভালো রাখতে যা খাবেন -জানুন বিস্তারিত

শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গ চোখ। তাই চোখের যত্নের বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিত। চোখ ভালো রাখতে আমাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর খাবারের মাঝে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন , প্রোটিন, ফাইবার এবং পানির সুষম সংমিশ্রণ।

খাদ্যের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি চোখের রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে এবং বয়স সম্পর্কিত পেশির অবক্ষয় থেকে আপনার চোখকে রক্ষা করে। এটি রাতে স্পষ্ট দেখতে এবং মায়োপিয়া থেকে চোখকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।  চোখ ভালো রাখতে আমাদের খাদ্যতালিকায়  সবসময় সুষম খাবার রাখা জরুরি। যেমনঃ সবুজ শাকসবজি, ছোট মাছ, বিভিন্ন বড় মাছ ইত্যাদি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

চোখ ভালো রাখতে যা খাবেন

সুন্দর ও আকর্ষণীয় চোখ এবং পরিষ্কার দৃষ্টিশক্তির জন্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে খনিজ ও ভিটামিন অপরিহার্য। আসুন জেনে নেওয়া যাক পুষ্টির বিভিন্ন উৎস এবং আমাদের চোখ সুস্থ রাখতে তাদের ভূমিকা।  

পালং শাক

পালং শাক আমাদের চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। পালং শাকে থাকা ভিটামিন এ আমাদের চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখে। এতে করে আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং রাতকানা প্রতিরোধেও এটি অনেক উপকারি। এছাড়াও এই শাকে রয়েছে লুটেইন ও জেক্সানথিন যা আমাদের চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করে থাকে। শাকে থাকা আয়রন আমাদের চোখে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে এতে করে আমাদের চোখের রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়।

বাদাম

প্রচুর পরিমানে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর একটু খাবার হলো বাদাম। কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, আখরোট ইত্যাদি আমাদের শরীরের পাশাপাশি আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দারুণ কার্যকরী। বাদামে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া বাদামে রয়েছে জিংক যা রাতকানা প্রতিরোধ করে এবং চোখের ক্লান্তি দূর করে।তাই চোখের স্বাস্থ্য  রাখার জন্য দৈনিক ২০-৩০ গ্রাম বাদাম খেতে পারেন।

চোখের যত্নে কি খাবেন

গাজর

গাজরে রয়েছে ভিটামিন ও বিটা-ক্যারেটিন যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্যকে উন্নত রাখে। ভিটামিন এ আমাদের চোখের রেটিনার স্বাস্থ্যের সুরক্ষা প্রদান করে সেই সাথে রাতকানা প্রতিরোধ করে থাকে। গাজরে থাকে অ্যান্টিওক্সিডেন্ট আমাদের চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ( চোখে কম দেখা) রোধে সাহায্য করে থাকে। গাজর আমাদের চোখের আদ্রর্তা বজায় রাখে। যারা দীর্ঘদিন ডিভাইস ব্যবহার করেন তারা চোখের ক্লান্তি দূর করার জন্য দৈনিক ১ টি করে গাজর খাওয়ার অভ্যাস করুন। 

কমলা লেবু

টক মিষ্টি স্বাদের দারুণ একটি ফল হলো কমলালেবু। এই লেবু শরীর ও চোখের জন্য দারুণ একটি খাবার। এতে রয়েছে নানা ভিটামিন,খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কমলা লেবু তে থাকা ভিটামিন C আমাদের চোখের রক্তনালী সুস্থ রাখে এবং চোখকে ছানি পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। 

সামুদ্রিক মাছ

চোখের যত্নে মাছ দারুন উপকারি একটি খাবার। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ আমাদের চোখের স্বাস্থ্য এর জন্য সবচেয়ে উপকারি। সামুদ্রিক মাছ যেমন টুনা, সার্টিন, রুপচাঁদা, কোরাল ইত্যাদিতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা আমাদের চোখের শুষ্কতা দূর করে সেই সাথে চোখের রেটিনা কে সুস্থ রাখে। সামুদ্রিক মাছে আরও রয়েছে ভিটামিন ডি, যা আমাদের চোখের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

ছোট মাছ 

ছোট বেলায় মা সবসময় জোর করতো ছোট মাছ খাওয়ার জন্য। কারণ ছোট মাছে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। দেশী ছোট মাছ যেমন মলা মাছ, টেংর আমাছ, কাচকি মাছ, পুটি মাছ ইত্যাদিতে থাকা ভিটামিন এ আমাদের চোখের রেটিনার কার্যক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রাতকানা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।  এছাড়া বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন অর্থাৎ চোখে কম দেখার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ছোট মাছে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আমাদের চোখের স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।

ডিম

ডিম হলো একটি  সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার। ডিমে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা প্রতিরোধ করে ও চোখের রেটিনার স্বাস্থ্য উন্নত রাখে। ডিমের কুসুমে রয়েছে লুটেইন যা আমাদের চোখকে ক্ষতিকর সূর্য রশ্নি থেকে রক্ষা করে থাকে। এছাড়াও ডিমে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড,প্রোটিন এবং জিংক যা আমাদের চোখের জন্য দারুণ উপকারী।

পেঁপে

পেঁপে তে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই- এর মতো উপাদান। দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে পেপের জুড়ি মেলা ভার। পেঁপে চোখের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। 

মিষ্টি আলু

আলুতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি। বিটা- ক্যারোটিনের আরও একটি উৎস হলো মিষ্টি আলু। চোখের যত্ন নিতে মিষ্টি আলু অন্যতম একটি। এতে নানা রকম পুষ্টি  রয়েছে। 

কলা

ভিটামিন এ, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি ফল হলো কলা। তাই চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিয়মিত কলা খেতে পারেন। এটি আপনার চোখের রেটিনা কে সুরক্ষা প্রদান করার পাশাপাশি রাতকানা প্রতিরোধ এবং চোখের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে আপনি পাকা কলা বা কাচা কলা দুটোই খেতে পারেন।

কচু শাক

কচুশাকে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, লৌহ, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকরী।

টমেটো

টমেটোতে থাকা লাইকোপিন চোখের রেটিনাকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয়। 

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার

চোখের ছানি পড়া, ঝাপসা দেখা প্রতিরোধ করতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। কমলা লেবু, লেবু, পেয়ারা, টমেটো, পেঁপে, সবুজ সবজি, স্ট্রবেরিতে ভিটামিন সি আছে। 

চোখের যত্নে উপকারি টিপস

চোখের যত্নে ১০ টি উপকারি টিপস

চোখ আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময় থাকতেই আমাদের চোখের স্বাস্থ্য এর বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি চোখের যত্নে মানতে হবে কিছু বিশেষ টিপস। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

  • সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
  • দীর্ঘ সময় যাবত যদি আপনার মোবাইল বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে কাজ করার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই অন্তত ৩০ মিনিট পর পর হালকা বিশ্রাম নিবেন। এতে করে চোখের ক্লান্তি সহজেই দূর হবে।
  •  সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি আমাদের চোখ ও ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই বাহিরে যাবার আগে চোখের নিচের ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহারের পাশাপাশি একটি ভালো মানের সানগ্লাস ও ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
  • চোখের সুস্থ তার পাশাপাশি সমগ্র স্বাস্থ্য কে উন্নত রাখার জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
  • যারা নিয়মিত মেকআপ করেন । তারা রাতে ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই ভালো ভাবে মেকআপ পরিষ্কার করবেন, বিশেষ করে চোখের মেকআপ অবশ্যই পরিষ্কার করে ভালো মানের একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ঘুমাবেন। 
  • চোখ কে সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য দৈনিক চোখের কিছু ব্যায়াম করতে পারেন।
  • ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেমন ওয়ার্কশপ বা কোনো রাসায়নিক কাজের সময় নিরাপত্তা জনিত কারণে চশমার ব্যবহার করুন। 
  • গরমের দিনে চোখে ক্লান্তি অনুভব করলে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন অথবা ভেজানো কাপড় দিয়ে চোখে হালকা সেঁক দিতে পারেন
  •  চোখে লেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন। নিম্নমানের লেন্স ব্যবহার করবেন না।
  • চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করুন। এক্ষেত্রে বছরে অন্তত একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞ দের পরামর্শ নিন।

উপসংহার

সুস্থ চোখ ও প্রখর দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখার জন্য অ্যান্টি-অক্সিজেন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যথেষ্ট পরিমাণে আছে, এমন খাবার গুলো খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সুন্দর ও আকর্ষণীয় চোখ এবং পরিষ্কার দৃষ্টিশক্তির জন্য পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে খনিজ ও ভিটামিন অপরিহার্য। চোখের যত্নের অংশ হিসেবে কিছু খাবার নিয়মিত পাতে রাখা জরুরি। পাশাপাশি প্রয়োজন ছাড়া স্ক্রিন ব্যবহার না করা এবং পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমানো প্রয়োজন। এছাড়া বাধর্ক্যজনিত কারণে চোখে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিনের অভাবজনিত কারনেও হতে পারে চোখের রোগ। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করার মাধ্যমে চোখের রোগ প্রতিরোধ করা যায়। আশা করি আজকের এই ব্লগ থেকে আপনার চোখের যত্নে কি কি খাবার খাবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পেয়েছেন। এখনই সময় চোখের যত্নে আরও যত্নবান হোন।