You are currently viewing বিভিন্ন দেশী মৌসুমি ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
ফলের উপকারিতা

বিভিন্ন দেশী মৌসুমি ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ফল খুবই উপকারী। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যেকোনো ধরনের ফল রাখা  উচিত। ফল খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। ফলের মধ্যে থাকা পুষ্টিউপাদান  আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দূর করতে সাহায্য করে থাকে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে যা রক্তে মিশ্রিত হয়ে দেহের অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে মস্তিষ্ক সজাগ করে। 

ফলের অগণিত উপকারিতা রয়েছে, সেই সম্পর্কে হয়তো আমরা সম্পূর্ণভাবে জানিনা। আবার অনেকে মনে করেন দামি ও বিদেশি ফলের পুষ্টিগুণ বেশি। তাই অসুখ বিসুখ হলেই আপেল, কমলা, আঙুর ফল কিনে থাকেন। তবে সত্যি বলতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দেশি ফলের জুড়ি নেই। চলুন আপনার পছন্দের ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আজকে জেনে নেওয়া যাক। 

ফল খাওয়ার উপকারিতা 

প্রতিদিন ফল খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের মধ্যে রোগ বাসা বাধতে পারেনা। স্বাস্থ্য উন্নত করার পাশাপাশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। ফল এ বিদ্যমান পানি ত্বককে সুস্থ ও নরম রাখতে সহায়ক। আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম ভিটামিন এবং মিনারেল এর ঘাটতি পূরনে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কার্যকারীতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে । হার্ট ভালো রাখতে। 

আমড়া 

বাজারের খুবই সহজলভ্য সুস্বাদু আমড়া ফল। এটি কম বেশি আমরা সকলেই খেয়েছি। জেনে অবাক হবেন, তিনটি আপেলের চেয়ে একটি আমড়ার পুষ্টিগুণ বেশি। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, ক্যারোটিন, পেকটিন রয়েছে।  

উপকারীতা 

  • আমড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 
  • রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়ক। 
  • বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রোধ করে। 
  • ভিটামিন সি এর অভাব মিটাতে সাহায্য করে। 
  • মুখে রুচি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রয়েছে। 

আমলকী 

ভেষজ গুনে ভরপুর আমলকী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। পুষ্টিগুণে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩গুণ ও ১০গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। এমনকি আমলকির চেয়ে ১২০গুণ বেশি, কলার চেয়ে ৬০গুণ বেশি। 

আমলকীর উপকারীতা

উপকারীতা 

  • আমলকী খেলে মুখের রুচি বাড়ে। 
  • স্কার্ভি নামক রোধ থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। 
  • সর্দি কাশি রোধ করতে সাহায্য করে। 
  • লিভার ও জন্ডিস রোগে বেশ উপকারী। 
  • রক্তে শর্করা ও কোলেষ্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। 

পেয়ারা

দেশীয় সস্তা ও সহজলভ্য ফলগুলোর মধ্যে পেয়ারা অন্যতম।বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি পেয়ারায় ৪টি কমলালেবুর চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে।  এছাড়াও প্রচুর ভিটামিন সি, বি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফাইবার, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ হওয়ার কারণে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারীতা। 

উপকারীতা 

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ও ভিটামিন সি যুক্ত পেয়ারা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য  করে। 
  • এতে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়ক। রাতকানা রোগের প্রতিরোধে ভূমিকা রয়েছে। 
  • পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুবই উপকারী। 
  • ঠান্ডাজনিত সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
  • কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়সহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে। 

আম 

আমের জনপ্রিয়তার কারণ এটির স্বাদ, পুষ্টি ও গন্ধে অতুলনীয়। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও সোডিয়াম রয়েছে। এছাড়াও খনিজ লবণ, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, সাইট্রিক এসিড, টারটারিক অ্যাসিড আছে। যা আমাদের শরীরকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।  

উপকারীতা

  • ক্যান্সার থাকে শরীরকে রক্ষা করে। 
  • চোখের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কার্যকরী। 
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও ত্বকের ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। 
  • রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। 

লটকন 

মৌসুমি ফল হলো লটকন। টক মিষ্টি স্বাদের হওয়ায় জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। 

এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এছাড়াও পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, খনিজ পর্দাথ বিদ্যমান। 

উপকারীতা 

  • রুচি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 
  • দাঁত ও হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। 
  • ক্যালরি ও ফ্যাট কম থাকায় ওজন কমাতে সাহায্য করে। 
  • রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 
  • খনিজ উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। 

কামরাঙা 

টক মিষ্টি স্বাদযুক্ত কামরাঙা ফলটি সারাবছরই পাওয়া যায়। এটি মাঝারি আকৃতির ও খুবই সহজলভ্য । এতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ আনারস, আঙ্গুর ও আমের চেয়েও বেশি। ঔষধীগুণ সম্পন্ন এই ফল শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।

উপকারীতা

  • কামরাঙা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। যা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টরল কমাতে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে কামরাঙা সাহায্য করে। 
  • ভিটামিন সি বেশি থাকায় কামরাঙা খেলে স্কার্ভি রোগ দূর হয়। 
  • খাবারের রুচি বাড়ায় ও হজম শক্তি উন্নতি করে। 
  • ত্বক মসৃণ করতেও কামরাঙার ভূমিকা রয়েছে। 

আতা ফল 

দেশীয় এই আতা ফল খেতে খুবই সুমিষ্ট। এতে রয়েছে নানান ধরনের পুষ্টি উপাদান। এতে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন, থায়ামিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। 

উপকারীতা

  • আমাদের শরীরের ফ্রি র‌্যাডিকেল থেকে মুক্তি দিতে পারে। 
  • রক্তশূন্যতা দূর করতেও বেশ কার্যকরী।
  • যেহেতু এটি আঁশ সমৃদ্ধ তাই হজম জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। 
  • উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। 
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ কার্যকরী। 

ড্রাগন 

বর্তমানে ড্রাগন একটি বেশ জনপ্রিয়। এটি দেখতে যেমন আকর্ষনীয় তেমনি পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অনন্য। এটি বিদেশী ফল হলেও আমাদের দেশেই চাষ হচ্ছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। একে বলা হয় প্রিবায়োটিক পাওয়ার হাউজ। 

উপকারিতা

  • রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করে থাকে। 
  • ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও কাজ করে থাকে। 
  • প্রচুর আঁশ থাকায় হজমে সাহায্য করে।
  • চোখের সমস্যা ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে বেশ সহায়ক। 
 বাঙ্গির উপকারিতা

বাঙ্গি 

গ্রীষ্মকালীন বাঙ্গি ফলটি খেতে খুব বেশি সুস্বাদু না হওয়ায় অনেকের অপছন্দের তালিকাতে রয়েছে। তবে এতে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বাঙ্গি মিনারেল ও ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি ফল। যা গরমের আমাদের শরীরের জন্য বেশি উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার রয়েছে। এছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ম্যানেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান। 

উপকারিতা

  • শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। 
  • পানির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে ও শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। 
  • হজম শক্তি উন্নতি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। 

কমলালেবু 

শীতকালীন কমলালেবু ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও  পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস রয়েছে। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। 

উপকারিতা

  • হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। 
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। 
  • ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। 
  • ওজন হ্রাস কমাতে দারুণ উপকারী। 
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক কার্যকরী। 

জামরুল

সুপরিচিত জামরুল আমাদের দেশে প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায়। এটি সাদা ও লাল রঙের হয়ে থাকে। পুষ্টিহীনতায় থাকলে নিয়মিত একটি জামরুল খেলে পুষ্টিপূরণে সহায়তা করবে। এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম রয়েছে। এছাড়াও সামান্য পরিমানে ক্যারোটিন, এ্যাসকোরবিক এসিড ও থায়ামিন রয়েছে। 

উপকারিতা

  • যকৃতের কোষ ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে। 
  • সুগার ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। 
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বেশ উপকারী। 

বাতাবিলেবু

এতে প্রচুর ভিটামিন সি, থায়ামিন, ক্যারোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়া ও সোডিয়াম। এতে ভিটামিন সি থাকায় রোগপ্রতিরোধ বাড়াতে সহায়তা করে। 

উপকারিতা

  • পেশির দুর্বলতা ও ব্যথা দূর হয়। 
  • সর্দি কাশি ও ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা করে। 
  • ওজন ও অ্যাসিডিটি কমায়। 
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে এই ফলটি বেশ কার্যকরী। 

গাব

স্বাদ ‍ও ‍পুষ্টির কথা বিবেচনা করে খাদ্যতালিকায় এই ফলটি রাখা যেতে পারে। এটি খেতে মিষ্টি হয়। এতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।    

উপকারিতা

  • ওজনহীনতা ও নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় প্রতিরোধে খুবই উপকারী। 
  • দুর্বলতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 
  • রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

উপরোক্ত আলোচনায় ফলের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে। লেখাটি পরে ফলের উপকারিত সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেতে পারেন। এবং সুস্থ থাকতে আপনার পছন্দের ফল  প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।