প্রতিদিনের ব্যবহারে নানা রকম বাসনকোসন ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষে বাড়িতে হরেক পদের রান্নার আয়োজন তো থাকেই। রান্নার প্রসংশা পেতে যত্ন সহকারে রান্না করা হয়। তাবে রান্না করার পরে বাসন পরিষ্কার করার ঝক্কি কিন্তু কম নয়! তেলমশলাযুক্ত বাসন খুব সহজেই পরিষ্কার করার সহজ কিছু টিপস রয়েছে যা ঘরের গৃহীনিদের এই ঝক্কি দূর করতে সাহায্য করবে।
পরিষ্কার ও চকচকে বাসন দেখতে কারনা ভালো লাগে? বিভিন্ন মেটারিয়ারে তৈরি যেমন কাঠের বাসন, মাটির বাসন, স্টিল কিংবা কাচের বাসন ইত্যাদি সকলের বাসায় দেখতে পাওয়া যায়। এই ধরনের বাসনগুলো সাধারণভাবে পরিষ্কার করার পরেও অনেক সময় দাগ পরে নষ্ট হয়ে যায়। তাই কয়েকটি চিপস মাথায় রেখে নিয়ম করে পরিষ্কার করলে বাড়তি ঝামেলায় পরতে হবেনা। আজকের আর্টিকেলে বাসন পরিষ্ককার সহজ কিছু টিপস জানবো।
সহজেই বাসন পরিষ্কার করার টিপস
রান্নার পরে ব্যবহৃত বাসন ধোয়া নিয়ে আমাদের বেশ চিন্তিত থাকতে হয়। তেল চিটচিটে ভাব, পোড়া দাগ এবং জীবাণু সবকিছু একসাথে ডিশ ক্লিনার দিয়ে দূর করা সম্ভব হয়ে পরেনা। চলুন বাসন পরিষ্কার করার সহজ উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক-
বেকিং সোডা
বাসন ধোয়ার সময় আমরা অনেকেই লিকুইডের ব্যবহার করে থাকি। এর সঙ্গে দুই টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিয়ে ভালো করে মেজে বাসন পরিষ্কার করলে বাসন নতুনের মতো ঝকঝক করবে।
ফ্রিজে ঠান্ডার মাধ্যমে
খাবার ফ্রেশ রাখার জন্য ফ্রিজের ব্যবহার করা হয়। নিত্যদিনের রান্না করা বহুকাল থেকে ব্যবহার করার ফলে বাসনে পোড়া দাগ বসে যায়। সাধারন ডিশ ক্লিনার দিয়ে জেদী দাগগুলো দূর করা সম্ভব হয়না। এক্ষেত্রে বাসনগুলো ফ্রিজে ১ ঘন্টার জন্য ঠান্ডা করে নিতে হবে। পোড়া দাগগুলো ঠান্ডার কারণে বরয়ে পরিণত হবে। তারপরে ঘষা দিলেই এই দাগ উঠে যাবে। তারপরে ডিশ ক্লিনার দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
লবন পানির মিশ্রণ
তেলতেলে ভাগ দূর করার জন্য লবন পানি বেশ কার্যকরী একটি উপায়। সারারাত লবনের পানিতে বাসন ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন সকালে লবন পানিসহ বাসন চুলায় গরম করতে হবে। এর ফলে বাসন থেকে যেমন তেলতেলে ভাগ দূর হবে তেমনটি বাসনগুলোর উজ্জ্বরতা বেড়ে যাবে।
লবন
অনেক সময় দুধ জ্বাল করতে নিয়ে পোড়া দাগ লেগে যায়। দুধের এই পোড়া দাগ দূর করতে ১০ মিনিটের জন্য লবণ মেখে রাখতে হবে। তারপরে ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। এভাবেই খুব সহজেই দুধের পোড়া দাগ দূর করা সম্ভব হবে।
লেবুর রস
অনেক পুরনো বাসনগুলোতে কালকে দাগ পড়ে যায়। এক্ষেত্রে লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে ঘষলে ঝকঝক করবে। কারণ লেবুতে বিদ্যমান সাইট্রেক এসিড দাগ তুলতে বেশ কার্যকরী।
ভিনেগারের ব্যবহার
সহজেই বাসন পরিষ্কার করার আরেকটি উপায় হলো পানির সাথে ১ চা চামচ ভিনেগার মিশিয়ে গরম করে নিতে হবে। তারপরে বাসন পরিষ্কার করলে তেল, দাগ ও গন্ধ সবকিছু দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও অনেকের বাসায় এখনো স্টিলের বাসন রয়েছে। স্টিলের বাসন পরিষ্কার করার একটি সহজ উপায় হলো ৩০ মিনিটের জন্য ভিনেগারে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপরে ভালো করে ঘষে পরিস্কার করতে হবে।
টমেটো কেচাপ
জেনে অবাক হতে পারেন, টমেটো কেচাপ মরিচা পরা বাসনের দাগ তুলতে সাহায্য করে। বাসনের ওপর কেচাপ দিয়ে প্রায় ২০-২৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপরে ভালো করে ঘষে মেজে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মরিচার দাগ সহজেই উঠে গিয়েছে।
ভিনেগার ও লবন পানির মিশ্রণ
অনেকের কাছেই চা খুব পছন্দের একটি পানীয়। চা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে চায়ের পাত্রে দাগ পরে যায়। এই দাগ দূর করতে পানিতে সামান্য ভিনেগার মিশিয়ে সারারাত পাত্রটি ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে ডিসওয়াশের সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে নিলেই পরিস্কার হয়ে যাবে।
নরম ফোম ক্রাবার
সিরামিক ও কাচের জিনিসপত্রে শক্ত স্ক্রাবার ব্যবহার করলে দাগ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এবং বাসনের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। শুধু তাই নয় পিতল, কাঁসা, স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের বাসনের ক্ষেত্রে শক্ত স্ক্রাবার ব্যবহারে দাগ পরে যাওয়ায় আশঙ্কা থাকে। তাই এই ধরনের বাসন পত্র পরিষ্কার রাখতে নরম স্ক্রাবার ব্যবহার করতে হবে। যেমন- ফোম জাতীয় নরম স্ক্রাবার ব্যবহার করা যেতে পারে। এবং এটি সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ব্যবহারের পরে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকনো স্থানে রাখতে হবে।
মুছে রাখা জরুরী
কাচ বা সিরামিকের বাসন গুলো ধুয়ে পরিষ্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। ফলে পানির দাগ বসবে না। ধাবত জিনিসেগুলো একই ভাবে কাপড় দিয়ে মুছে বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে। ফলে মরিচা পরা রোধ হবে। এবং বাসন মোছার জন্য একই কাপড় ব্যবহার না করে পেপার টাওয়েল ব্যবহার করতে হবে। এতে জীবানু কম ছাড়াবে।
এছাড়াও রান্না করার সময় তরকারি কাটা থেকে শুরু করে রান্না করে খাওয়া পর্যন্ত অনেকধরনের বাসন ব্যবহার করতে হয়। যেমন ছুটি, বটি, চামচ ইত্যাদি। এই ধরনের জিনিসগুলো ধোয়া পাতলা নরম সুতি কাপড় দিয়ে মুছে শুকনো করে তারপরে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে হবে।
ননস্টিক বাসনের যত্ন
ননস্টিক প্যাক পরিষ্কার করার সময় লবন ব্যবহার করা যাবেনা। এতে স্ক্রাচ পড়ে প্যান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে দুই টেবিল চামচ বেকিং সোডা, আধা কাপ ভিনেগার ও ১ কাপ পানি ১০ মিনিটের জন্য গরম করে ডিশক্লিনারের সাথে মিশিয়ে ননস্টিক প্যানগুলো ধুতে হবে।
কাচের ও সিরামিকের বাসন চকচকে রাখার কিছু টিপস
- কাচের বাসন দেখতে সুন্দর লাগে। তবে প্রতিদিন ব্যবহার করার ফলে দাগ পরে যায়। তাই কাচের বাসন পরিষ্কার করার সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। তবে পানি খুব বেশি গরম না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নয়তো ভেঙে যেতে পারে ।
- ডিসওয়াশের সাথে বেকিং বোডা মিশিয়ে কাচের বাসন পরিষ্কার করলে চকচকে দেখাবে।
- চা পাতা ব্যবহারের পরে ফেলে না দিয়ে সেটি লিকুইডের সাথে মিশিয়ে কাচরে বাসন মাজতে হবে। হালকা গরম পানিতে লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে। কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে শুকনো কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে নিতে হবে।
- কাচ সিরামিকের পাত্রে পানির দাগ বসে যায়। তাই লিকুয়িড ব্যবহারের পরে লেবুর রস মেশানো কুমুস গরম পানিতে ২০-৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ৪ টেবিল চামচ লেবুর রসের মধ্যে ১ লিটার পানি যথেষ্ট।
আরও প্রয়োজনীয় টিপস
- বাজারে বাসন পরিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের তরল সাবান পাওয়া যায়। এগুলো দিয়ে বাসন মাজলে সহজেই পরিষ্কার হয়ে যায়। এবং বাসনের ক্ষতি হয়না। তবে তরল সাবানের ওপর স্ক্রাবার ঘষে নেওয়া সময় খেয়াল রাখতে হবে গোটা অংশ দলা হয়ে স্ক্রাবারে লেগে না যায়। ধাতব স্ক্রাবার ব্যবহার করা যাবে না।
- অনেকেই ছাই ব্যবহার করেন। যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। এতে হাতের ত্বকেরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই সাথে বাসনে দাগ পরে যেতে পারে।
- বাঁশ ,কাঠ বা বেতজাতীয় উপকরন দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র পরিষ্কার করার সময় সাবান পানি ব্যবহার করা যাবেনা।
- অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে বাসন পরিষ্কার করলে পুরে যাওয়া দাগ সহজেই দূর হয়ে যায়। এটি সাধারণত স্ক্রাবের কাজ করে থাকে।
- পিতল ও অ্যালুমিনিয়ামের জিনিস পরিষ্কার করার সময় লেবুর রস বা ভিনেগারের পানিতে কখনো ভিজিয়ে রাখা যাবেনা।
উপরোক্ত আলোচনায় সহজেই বাসন পরিষ্কর রাখার টিপস তুলে ধরা হয়েছে। দৈনন্দির ব্যবহার্য সামগ্রী ধোয়ার সময়ও আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত। এতে অনেকদিন পর্যন্ত ঝকঝকে ও টেকশই থাকবে। তাই বাসন পরিষ্কার করা নিয়ে আর কোনো দুশ্চিন্তা নয়। টিপসগুলো অনুসরণ করলে বাড়তি ঝামেলা খুব সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে। যা আমাদের কাজকে আরও সহজ করে তুলতে সাহায্য করবে।