ওটস (Oats) একটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ শস্যজাতীয় খাবার। ওটস কে অনেকেই ওটমিল নামেও চিনে থাকে। আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে দিনের শুরু করতে চান তাহলে সবার প্রথমেই আসবে সকালের নাস্তায় এই ওটস এর কথা। বিভিন্ন ফল কিংবা দুধের মিশ্রণে এই খাবার টি খেতে দারুণ মজার সেই সাথে পুষ্টিকর।
ওটস এ রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বহু পুষ্টি উপাদান। আমরা অনেকেই নাস্তায় ওটস খেলেও এটির উপকারিতা সম্পর্কে খুব একটা জানি না। আজকের এই পুরো লেখায় আপনি জানবেন ওটস খাওয়ার উপকারিতা এবং ওটস এর কিছু মজাদার রেসিপি সম্পর্কে।
ওটস খাওয়ার উপকারিতা
ওটস একটি ফাইবার যুক্ত খাবার। এছাড়াও ওটস এ রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনিয় প্রোটিন, ভিটামিন , মিনারেল , ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার জিংক সহ আরও অনেক পুষ্টিগুণ।সকাল কিংবা বিকেলের নাস্তায় আপনি নিয়মিত ওটস খেতে পারেন। যদিও স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিদের কাছে ব্রেকফাস্টেই ওটসের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশী। চলুন ওটস খাওয়ার কিছু বিশেষ উ কারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে
ওটস হলো ফাইবারে ভরপুর একটি খাবার। এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট হজমে কিছু সময় লাগে ফলে দীর্ঘক্ষণ আপনার পেট ভরা অনুভব হয়। সকালের নাস্তায় চটজলদি রেডি করা যায় এমন একটি খাবার ও হলো এই ওটমিল। তাই পুষ্টিতে ভরপুর ফাঁকিবাজি নাস্তা হিসেবে সকালের খাবার হিসেবে ওটস খেতে পারেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
যেহেতু ওটস খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে ফলে সহজে খিধে পায় না। এতে করে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ও প্রয়োজন হয় না। যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করতে চান তারা খাবারের লিস্টে ওটস রাখবেন। এতে করে আপনি পুষ্টিকর খাবার গ্রহনের মাধ্যমেই সহজে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
ওটসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সেই সাথে ওটস আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বেশ কার্যকরী।
হজমে সাহায্য করে
ফাইবার যুক্ত খাবার গুলো আমাদের হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। যারা কোষ্টকাঠিন্য কিংবা হজমের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত ওটস খেতে পারেন।
এনার্জির জোগান দেয়
সকালের নাস্তায় ওটস খেলে এটি আপনাকে এক্সট্রা এনার্জি এর জোগান দিবে। বিশেষ করে ওটস যেহেতু দুধ এবং ফলের সাথে খাওয়া হয় তাই এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার।
হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে
ওটস আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং এই সাথে শরীর থেকে ব্যাড কোলেস্টেরল কমায়। এতে করে আমাদের রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ফলে হার্ট ও সুস্থ থাকে। তাই হার্ট কে ভালো রাখার জণ্য ওটস খাবার অভ্যাস করুন।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
গবেষনায় প্রমানিত , ওটস আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে , মানসিক উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। ওটস আমাদের মস্তিস্কে সেরোটোনিন এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। মস্তিস্কে সেরোটিনিনের উপস্থিতি আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণে, ভালো ঘুম হতে এবং মানসিক স্ট্রেস কমাতে খুব কার্যকরী।
ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
ওটস আমাদের রক্তে শর্করা এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া ওটস যেহেতু দীর্ঘক্ষণ আমাদের পেট ভরা রাখে তাই ডায়াবেটিকস রোগিরা ওটস খেলে তাদের ঘন ঘন ক্ষুধার ভাব টা অনেক কমে আসবে। এতে করে তাদের ডায়াবেটিকস ও নিয়ন্ত্রণে আসবে ।
উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি করে
ওটস এ রয়েছে প্রোবায়োটিক উপাদান। এটি আমাদের দ্রুত হজমের পাশাপাশি আমাদের অন্ত্রে থাকা উপকারি ব্যকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
শিশু দের জন্য উপকারী
বাচ্চার বয়স ৬ মাস পেরিয়ে গেলেই আমরা বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি কিছু বাড়তি খাবার দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে অনান্য খাবারের পাশাপাশি সামান্য পরিমানে ওটস ও খাওয়াতে পারেন।
ত্বক ও চুল সুন্দর রাখে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর খাবার হলো ওটস। ওটস এ থাকা পুষ্টিকর উপাদানের কারনে নিয়মিত ওটস খেলে এটি আপনার ত্বক ও চুল সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে। ওটস বাচ্চার শরীরে মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে এবং সেই সাথে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ওটস এ রয়েছে ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট উপাদান যা কোলন ও ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। ওটস খাওয়ার ফলে এটি শুধু কোলন কিংবা ব্রেস্ট ক্যাণসার প্রতিরোধেই না বরন আমাদের শরীর কে বিভিন্ন ভাইরাস ও ক্যাটেরিয়ার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে।
রক্ত সল্পতা কমাতে সাহায্য করে
ওটস এ রয়েছে আয়রন , খনিজ লবণ ও লৌহ উপাদান। ১০০ গ্রাম ওটস থেকে প্রায় ৩০০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
সকালে নাকি রাতে কখন ওটস খাওয়া ভালো?
সাধারণত আমরা ওটস সকালের নাস্তায় খেয়ে থাকি। আবার অনেকেই বিকেলে কিংবা রাতেও এই খাবার টি খেয়ে থাকে। এতে যারা ওটস কখনো খায় নি তারা বেশ দ্বিধায় পরে যায় যে কখন ওটমিল খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
আসলে ওটস খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় নেই। আপনি যেকোনো সময় এটি খেতে পারবেন। তবে সকালের নাস্তায় এটি খাওয়ার উপকারিতা সর্বাধিক। যেহেতু ওটমিল ফাইবার ও প্রটিনে ভরপুর একটি খাবার তাই সকালের নাস্তায় এটি খেলে আপনি সারাদিন এনার্জেটিক থাকবেন সেই সাথে এটি আপনার ক্ষুধা ভাব ও কমাবে। বিশেষজ্ঞ দের মতে রাতে ঘুমানোর সময় এমন কোনো খাবার খাওয়া উচিত না যেটি আমাদের হজমে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ওটমিল হজমে কিছু সময় নেয় তাই রাতের খাবারে ওটমিল খেলে এটি অনেকের শরীরের হজম ক্ষমতা বিঘিন্ত করতে পারে। অন্যদিকে ওটস খেলে এটি আমাদের শরীরে সেরোটনিন উৎপন্ন করে ফলে আমাদের ঘুমের ভাব সৃষ্টি হয়। শুধু ঘুমের ভাব না বরং এই সেরোটনিন উপাদান আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য কেই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই রাতের ভালো ঘুমের জণ্য কিছুটা ওটস খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘন্টা আগে খাবার খাওয়ার।
ওটস খাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় না থাকলেও আপনি আপনার শরীরের কন্ডিশন অনুযায়ী সকালে কিংবা রাতে এই পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার টি খেতে পারেন।
ওট্মিলে তৈরি কিছু মজাদার রেসিপি
নাস্তা হিসেবে সাধারণত আমরা দুধ এবং বিভিন্ন ফলের মিশ্রণে এই ওটস খেয়ে থাকি। তবে এভাবে খাওয়া ছাড়াও আপনি ওটস দিয়ে কিছু মজাদার খাবার ও তৈরি করতে পারবেন।
ওটস খিচুড়ি
যারা মিষ্টি খাবার পছন্দ করেন না , তারা ওটস দিয়ে ঝাল খাল খুচিড়ি বানিয়ে নিতে পারেন। খিচুড়ি রান্নার পদ্ধতি টা খুবই সহজ। প্রথমে ওটস কিছুটা হালকা আচে ভেজে নিতে হবে। এরপর সাধারণ খিচুড়ি রান্নার মতোই চালের পরিবর্তে ওটস দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন এই খিচুড়ি। ওটস দিয়ে আপনি ডিম খিচুড়ি, সবজি খিচুড়ি কিংবা মাংস খিচুড়ি ও বানিয়ে নিতে পারবেন।
ওটস প্যানকেক
এটি বেশ মজার একটি খাবার। এই প্যানকেক তৈরির জন্য প্রথমে একটি ব্লেন্ডারে ওটস গুলো ভাবে ব্লেন্ড করে নিবেন। এরপর একটি পাত্রে ডিম, সামান্য চিনি অথবা মধু, এবং দুধ মিশিয়ে নিন ভালো করে। মেশানো শেষে এর মাঝে ব্লেন্ড করে রাখা ওটস এবং সামান্য পরিমাণে বেকিং পাউডার ও স্বাদ অনুযায়ী এক চিমটি লবণ দিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে একটি ব্যাটার তৈরি করে নিন। এরপর একটি ফাইপেনে অল্প পরিমাণে ঘি দিয়ে প্যানকেক তৈরি করে নিন।
ওটস এগরোল রেসিপি
প্রথমে একটি ব্লেন্ডারে এক কাপ ওটস ও এক টেবিল চামচ কাচা সুজি ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর সেই গুড়া করা ওটস এর মাঝে সামান্য লবন ও পানি মিশিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে রাখতে হবে। এর পর এর মাঝে সামান্য হলুদ গুড়া ও মরিচ গুড়া মিশিয়ে রটির মতো করে একটি ফাইপেনে ভাজতে হবে। আবার আলাদা আরেকটি পাত্রে ডিম ফেটিয়ে এর মাঝে লবন , হলুদ , কাচা মরিচ, পেঁয়াজ ইত্যাদি মিশিয়ে ডিম ভেজে নিতে হবে এবং সেই ভাজা ডিমের উপরে সেই ভেজে রাখা ওটস ও সুজির রুটি দিয়ে রোলের মতো করে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপসংহার
ব্যস্ততম এই সময়ে আমরা অনেকেই চটজলদি তৈরি করা যায় এবং সেই সাথে ক্ষুধাও মেটানো যায় এমন খাবার গুলো খুব বেশী পছন্দ করি। অনেকে আবার রান্নার ঝামেলা এড়ানোর জন্য প্রসেসিংকৃত খাবার বা বাহিরের ফার্স্ট ফুড খেয়ে থাকি যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে স্বাস্থ্যকর ও মজাদার খাবার হিসেবে এই ওটস খেতে পারেন। আমাদের শরীরের জন্য ওটস এর উপকারিতা অনেক। এটি দীর্ঘক্ষণ যাবত আপনার পেট ভরা রাখার পাশাপাশি আপনার শরীরে এক্সট্রা এনার্জি এর জোগান দিবে। তাই স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ হিসেবে খাবারের তালিকায় ওটস খাওয়ার অভ্যাস করুন। সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।