বর্তমানে স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিবর্গ বাদাম শেকের সাথে খুবই পরিচিত । বিভিন্ন রকমের বাদাম ও দুধের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় খুবই মজাদার সুস্বাদু এই বাদাম শেক। বাদাম শেক লেখার আগে বাদাম নিয়ে একটু না লিখলেই নয়। চলুন বাদাম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি –
বাদাম
বাদাম একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ও মুখরোচক খাবার। এটি স্ন্যাকস হিসেবেও খাওয়া যায়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা চলাকালীন বাদামের খোসা ছিলে হাতের তালুতে রেখে ফুঁ দিয়ে খাওয়ার অভিজ্ঞতা সবারই রয়েছে। গল্পের আসরে বাদাম ছাড়া যেন চলেই না। এছাড়া বিভিন্ন মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের স্বাদ বাড়াতে কিন্তু বাদাম ব্যবহার করা হয়।
বাদামের প্রকারভেদ
আচ্ছা, আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, কয় ধরনের বাদাম চেনেন? তখন সবার প্রথমে কোন বাদামের কথা মাথায় আসবে? চিনাবাদাম তাই তো! সেই ছোট বেলা থেকে সবাই এই চিনা বাদামের সাথে পরিচিত। এই বাদামের সাথে ছোটো বেলার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কাগজ বা লোইওয়ালারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাগজ বা লোহা জাতীয় জিনিস গুলো কিনতো, তার বিনিময়ে বাদাম দিতো।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া কাচা বাদাম গানের শিরোনামের সেই গায়ক ও কিন্তু গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাদাম বিক্রি করতেন। যাইহোক এই বাদামের সাথে আমাদের ছোটো বেলার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে । বর্তমানে চিনাবাদাম, পেস্তা বাদাম, কাঠবাদাম, কাজু বাদাম, আখরোট ইত্যাদি বাদামের সাথে আমরা পরিচিত। এবার আমরা জানবো এসকল বাদামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ।
বাদামের পুষ্টিগুণ
সব ধরনের বাদামে রয়েছে প্রোটিন ও অনেক ক্যালরি । যা আমাদের শরীরের ক্যালরি পূরণে সহায়তা করে । বাদামে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় আমিষ ও আঁশ । উপকারী স্নেহজাতীয় পদার্থ ও ফ্যাটি অ্যাসিড । এছাড়াও ভিটামিন ই , ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস , আয়রন জিংক, ম্যাগনেশিয়াম ও খনিজ পদার্থ রয়েছে । আমরা জানি ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারী । ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখে ও চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ।
চিনা বাদাম
চিনা বাদাম অন্যান্য বাদামের তুলনায় স্নেহ জাতীয় পদার্থ বেশি । এবং শর্করা ও আমিষের পরিমাণ কম থাকে। তাই এটি অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তারা এটি এড়িয়ে চলবেন ।
কাঠ বাদাম
ইংরেজিতে আমন্ড নাট বলা হয়। বাজারে আমন্ড ওয়েল নামের এটি তেল রয়েছে । যা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের ম্যাগনেশিয়ামের অভাব পূরণ করতে কাঠবাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
কাজু বাদাম
সকল বাদামের চেয়ে শর্করার পরিমাণ বেশি রয়েছে এই কাজু বাদামে । এবং আমিষ ও স্নেহ পদার্থ তুলনামূলক কম রয়েছে । কাজু বাদামকে বেকিং করলে এটি আরও মজাদার হয় । একে রোস্টেড কাজু বাদামও বলা হয়। এই বাদাম আমাদের দাঁত ও মাড়ি ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও মানসিক চাপ কমাতেও অবদান রয়েছে।
পেস্তা বাদাম
সবচেয়ে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন বাদাম হলো পেস্তা বাদাম। এতে রয়েছে উপকারী ফ্যাট , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , ফাইবার , প্রোটিন , ভিটামিন রয়েছে ।
বাদামের উপকারিতা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ বাদাম থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- হাড় মজবুতঃ এতে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন রয়েছে যা আমাদের দাঁতকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি শরীরের হাড়কে মজবুত রাখে।
- হজম শক্তিঃ বাদাম খাওয়ার ফলে আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ।
- ক্যান্সার প্রতিরোধঃ এতে থাকা সকল পুষ্টিসমৃদ্ধ উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়ক। এবং আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে স্ট্রোং করে তোলে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ বাদামে থাকা ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে থাকে।
- হার্ট ভালো রাখেঃ আমাদের শরীরের হার্টকে সুস্থ রাখতে বাদামের ভূমিকা রয়েছে ।
- মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধিঃ উইকিপিডিয়া তথ্যসূত্রে, বাদামের মধ্যে এমন এক কগনিটিভ রয়েছে যা আমাদের ব্রেন বা মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- ত্বক ও চুলের যত্নেঃ ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে বাদাম বেশ সহায়ক। এবং চুলকে রুক্ষ হতে বাঁচাতে এটি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
কি পরিমাণে বাদাম খাওয়ার উচিত
বাদাম যেহেতু একটি মুখরোচক খাবার। তাই কাচা হোক বা ভাজা, প্রতিদিন মুঠো মুঠো বাদাম খেতে ইচ্ছে করে। তবে যেকোনো খাবার যতই উপকারী হোক না কেনো অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই আমরা খাবারের পরিমাণ নিতে একটু সচেতন হবো।
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো বাদাম ৩০ গ্রাম বা ১ আউন্স রাখা যেতে পারে। অর্থাৎ এক মুঠো পরিমাণ। সকল বাদামে কম বেশি একই পুষ্টিগুণ রয়েছে।
হানি নাটস কখন খাওয়া উচিত, খেলে কি হয় এবং কত টাকা?
বাদাম শেক কি
বাদাম বিভিন্ন ভাবেই খাওয়া যায়। যেমন মধুর সাথে মিশিয়ে, বিভিন্ন মিষ্টান্ন খাবারের সাথে বা দুধের সাথে মিক্সড করে, যাকে বাদাম শেক বলা হয়। বাদাম শেক বানানো খুবই সহজ। চলুন বাদাম শেক রেসিপি জেনে আসি-
উপকরণ
- জ্বাল করা তরল দুধ ২৫০ গ্রাম
- পছন্দের কয়েক রকমের বাদাম ৩০ গ্রাম বা এক মুঠো
- টেস্ট অনুযায়ী মধু/ চিনি ।
প্রস্তুতপ্রণালী
বাদামগুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করতে হবে। এরমধ্যে দুধ ও মধু/ চিনি দিয়ে মিক্সড করতে হবে। তারপরে একটি গ্লাসে ঢেলে কিছু বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করতে হবে। এছাড়াও বাদাম শেকের স্বাদ বাড়াতে কলা, কিশমিশ ও খেজুর এড করা যেতে পারে । বাদাম শেককে আবার প্রোটিন শেকও বলা যায়।
বাদাম শেক খাওয়ার উপকারিতা
নিচে বাদাম শেক নিয়মিত খাওয়ার উপকারিতাগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ওজন বৃদ্ধি
এটি নিয়মিত খেলে ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। তাই যারা ওজন কম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা ঘরোয়াভাবে এই বাদাম শেক তৈরি করে নিয়মিত খেতে পারেন।
কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
বাদাম শেকের প্রচুর প্রোটিন রয়েছে যা আমাদের কার্যক্রম ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে। ফলে আমরা যেকোনো কাজ করতে গিয়ে হাপিয়ে উঠিনা।
হার্ট সুস্থ রাখে
আপনি নিয়মিত পরিমাণমত বাদাম শেক খেলে আপনার হার্টের স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান হার্ট এর জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল উপাদান সরবরাহ করে।
হাড় শক্তিশালী করে
বাদাম শেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে। এদের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করার পাশাপাশি শক্তি বৃদ্ধি করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরের গঠন সুগঠিত করার পাশাপাশি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
টিনেজ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
বাড়ন্ত বয়সে আমাদের দেহের জন্য বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন পরে। বাদাম শেক থেকে হরেক রকমের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণ করে
শরীরে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমে গেলে তা বিভিন্ন রকমের সমস্যা তৈরি করে। বাদাম শেক কার্বোহাইড্রেটের কারখানা নামে পরিচিত। নিয়মিত এটি খেলে আপনার দেহের কার্বোহাইড্রেট চাহিদা পূরণ হবে এবং সুস্থতা অনুভব করবেন।
শক্তি বৃদ্ধি করে
শরীর যখন সুস্থ থাকে তখন কাজ করার সময় যেমন আলসেমি লাগে না তেমনি ক্লান্তি অনুভব হয় না। তবে জীবন-যাপনে নানা অনিয়ম ও অপুস্টিকর খাদ্য গ্রহণের কারনে শরীর কর্মক্ষমতা হারায়। তবে নিয়মিত বাদাম শেক খেলে দেহের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
উপরিউক্ত আলোচনায় বাদাম শেক কি এবং কিভাবে তৈরি করে এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।