You are currently viewing ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও সর্তকতা
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও সর্তকতা

ইসবগুলের ভুসি খুবই পরিচিত একটি খাবার। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসির জুরি মেলা ভার। এছাড়াও এই ভুসির স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক রয়েছে। এটি খেলে যেমন পেট পরিষ্কার করে অন্যান্য সমস্যা দূর করে। তেমনটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায্য করে। তবে এটি খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। নিয়ম মেনে খেলে আমাদের শারীরিক সমস্যার কার্যকরী সমাধান। 

সবগুলের ভুসি খাওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন জাগ্রত হয়েছে। এই ভুসি কি সারারাত ভিজিয়ে তারপরে সকালে খেতে হয়? নাকি খাবার খাওয়ার আগে খেতে হবে নাকি পরে? রাতে খাওয়া যাবে কিনা? এই ভুসি কতক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে? স্বাদ বাড়ানোর জন্য চিনি বা অন্য কিছু উপাদান ব্যবহার করা যাবে কিনা? শুধু কি কোষ্টকাঠিন্য রোগীরাই এটি খেতে পারবে?  ইত্যাদি আরও নানান প্রশ্ন আমাদের মনে থেকেই যায়। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। তাই আজকের  আর্টিকেলে আমরা এই ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম 

যেকোনো খাবার গ্রহণের আগে পুষ্টিগুণ ও নিয়ম সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন। ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা কম বেশি জানলেও এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম অনেকের অজানা। চলুন এই ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

পানিতে মিশিয়ে 

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ১ থেকে ২ চা চামচ পর্যন্ত ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যেতে পারে। গ্রাম হিসেব করলে ৫- ১০ গ্রামের মতো ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যথেষ্ট।  

মধু কিংবা গুড়ের সাথে মিশিয়ে 

২৫০ মিলিলিটার বা ১ গ্লাস পানির মধ্যে ১-২ চা চামচ ভুসি ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে হবে। যেহেতু এর কোনো নিজস্ব স্বাদ বা গন্ধ নেই তাই অনেকের কাছে স্বাদহীন মনে হয়। সেক্ষেত্রে চিনির পরিবর্তে গুড় কিংবা মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। 

দইয়ের সাথে মিশিয়ে 

ইসবগুলের ভুসি দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। ডায়রিয়াজনিত রোগের ক্ষেত্রে এটি প্রোবায়োটিক হিসেবেও কাজ করবে। খাওয়ার নিয়ম হলো ২ চা চামচ  ভুসি ও ১৫ মিলিলিটার টক দই একত্রে মিশিয়ে খেতে হবে। তারপরে পানি খেতে হবে। এতে খাদ্যনালির ক্ষত সারিয়ে তোলে।  

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে

২ চা চমচ ইসবগুল কুমুস গরম পানির সাথে মিশিয়ে সাথে সাথেই খেতে হবে। যা পাকস্থলী পরিষ্কার করে ও টক্সিক পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। 

সকালে খালি পেটে

অনেকে কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ১ গ্লাস পানির সাথে ২ চা চামচ ভুসি মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেলেও কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। 

বুক জ্বালাপোড়ার ক্ষেত্রে 

অনেক সময় খাবার খাওয়ার পরে পেট বুক জ্বালাপোড়া করে। সেক্ষেত্রে ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসির সাথে ১ গ্লাস ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। যা আমাদের খাদ্যনালির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে। 

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে 

অতিরিক্ত ওজন নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। ওজন কমাতে ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসিতে ১ গ্লাস পানি ও ১-২ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে সকালে খাটি পেটে খেতে হবে। এটি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি বার্ন করতে সাহায্য করবে। আমাদের পেট অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভরা থাকবে। সেই সাথে পেট পরিষ্কার করবে। 

ডায়বেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ইসবগুলের ভুষি শরবত খাওয়া পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভুসির শরবত দারুণ একটি পথ্য। 

খাওয়ার আগে 

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার আধাঘন্টা আগে খেলে ভালোফল পাওয়া যায়। এবং পানিতে এই ভুসি সারারাত ভিজিয়ে রাখা উচিত নয়। কারণ দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে বাইরে থেকে পানি শোষণ করবে ফলে কার্যকারিতাও কমে যাবে।

ইসবগুলের ভুসির সর্তকতা 

বর্তমানে আমাদের দেশে ইসবগুলের ভুসি বেশ সহজলভ্য। তাই অনেকেই এই ভুসি প্রতিদিনের খাবরের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছে। তবে বাজারের চেনা ইসবগুলের ভুসি আমাদের জন্য কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা হয়তো সেভাবে ভেবে দেখিনা। আজকাল সব ধরনের খাবারে  ভেজাল মিশ্রণ করা হয়। তাই ইসবগুলের ভুসি কেনার সময় অবশ্যই কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। সেই সাথে এই ভুষি খাওয়ার কিছু সর্তকরা রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক- 

  • ইসবগুলের ভুসি অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে ডায়রিয়া  হতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। ডায়রিয়া রোগী তারা অবশ্যই এই ভুসি চিনি ছাড়া খাবেন। 
  • ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরে প্রচুর পরিমাণে পানি করতে হবে। এই ভুসি খেলে পেটে ১০গুণ পরিমাণ ফুলে যায়। পানি খাওয়ার ফলে এটি  রীরে ভালোভাবে কাজ করে। 
  • বাজার থেকে ভুসি কেনোর সময় ফ্রেশ ও অরিজিনাল দেখে কিনতে হবে। অনেক সময় কৃত্রিম সাদা রং ব্যবহার করা হয় এমনকি স্বাদ যোগ করা হয়। এই ধরনের ভুসি কখনোই কেনা যাবেনা। ভুসির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো স্বাদহীন একটি খাবার। 
  • বাজার থেকে কেনার সময় প্যাকেটজাত ভুসি কিনুন। কারণ খোলা ইসবগুলের ভুসি নষ্ট বা ভেজাল থাকতে পারে। যা খাওয়ার ফলে ভালো ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে প্যাকেটজাত কেনার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নিশ্চিত হতে হবে যাতে কৃত্রিম গন্ধ বা স্বাদ না থাকে। 
  • জটিন কঠিন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভুসি সেবনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খাবেন। পরামর্শ ছাড়া কখনোই ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবেনা। এতে শরীরের উপকারের চেয়ে বরং অপকার বেশি হবে। 
  • যেহেতু ইসবগুলের ভুষি বিভিন্ন ঔষধের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে। তাই ঔষধ খাওয়ার ২  ঘন্টা আগে বা ২ ঘন্টা করে খেতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 
  • একটানা ইসবগুলের ভুসি খাওয়া ঠিক নয়। এতে ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা হতে পারে। 
  • যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে। তাদের এই ভুসি না খাওয়ার ভালো। 
  • যেহেতু ভুসি উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের নিম্নরক্ত চাপ রয়েছে তারা এই ভুসি এড়িয়ে চলুন।

ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা 

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

ইসবগুলের ভুসির অনেক উপকারিতা রয়েছে। চলুন সংক্ষেপে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক- 

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে 

কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের ঘরোয়া উপায় সহলো ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খাওয়া। এটি আমাদের পাকস্থরীতে গিয়ে ফুলে যায়। এবং বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।  

ডায়রিয়া প্রতিরোধে 

ইসবগুলের ভুসির সাথে দইয়ের মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এটি ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম।  

হমজে উন্নতি 

এটি ডায়েটারি ফাইবার সম্পন্ন হওয়ায় আমাদের পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। নিয়ম করে খলে হজমশক্তি উন্নত করে।  

ওজন কমাতে 

যেহেতু এই ভুসি খেলে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে। এতে খাবার খাওয়ার অনুভূত কমিয়ে দেয়। এছাড়াও অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। 

অ্যাসিডিটি প্রতিরোধে 

অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে গ্যাস্টিকের সমস্যা দেয়া যায়। এই সমস্যা দূরীকরণে ইসবগুলের ভুসি দারুন কাজ করে। এটি আমাদের পাকস্থলীর ভেতরের দেয়াল প্রতিরক্ষঅ মূলক স্তর তৈরি করে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে 

এই ভুসি গ্লাইসেমিক ইনডেস্ককে নিয়ন্ত্রণ করে। এবং জিলাটিন নামক একটি পদার্থ রয়েছে যা আমাদের দেহের গ্লুকোজ এর শোষণে বাধা প্রদান করে। মূলত রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই ডায়াবেটিস  নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।   

উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে 

ইসবগুলে ভুসি উচ্চরক্তচাপ কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখাতে সাহায্য করে। তাই যাদের উচ্চরক্ত চাপ রয়েছে তারা নিয়ম করে খেতে পারবেন। 

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ 

ইসবগুলের ভুসি আমাদের দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে । এটি ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে কমিয়ে ভালো  কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।  

হৃদরোগের ঝুকি কামতে 

ইসবগুলের ভুসি রক্তে গ্লিসারাইড  এর পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। ফলে  আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনে।  

উপরোক্ত আলোচনায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম ও সর্তকতা নিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। ইসবগুলের ভুসি একটি প্রাকৃতিক ফাইবার যা আমাদের দেহের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে  থাকে। তবে এটি সঠিক নিয়মে খেতে হবে। এবং এই ভুসি খাওয়ার পরে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ফলে আমরা উপকৃত হতে পারবো। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.