বোরহানি নামটি শুনেননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। বিভিন্ন রেস্টুনেন্টে বিরিয়ানি বা পোলাও খাওয়ার পরে বোরহানি খেয়ে থাকি। বিশেষ করে বিয়ে বাড়িতে এই আইটেমটি ছাড়া যেনো চলেই না। কম বেশি প্রায় অনেকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এটি। অনেক সময় বাসায় অতিথি এলেও আমরা বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করে থাকি। সাথে থাকে কোমল পানীয়। কিন্তু এর পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর একটি ড্রিংকস বোরহানি আয়োজন করলে কিন্তু মন্দ হয়না। শুধু কি বিয়ে বাড়ি বা রেস্টেুরেন্টে গিয়েই এটি খেতে হবে? রেসিপি অনুসরণ করে বিয়ে বাড়ির স্বাদের বোরহানি কিন্তু চাইলেই ঘরেতেই সহজেই তৈরি করে ফেলা যাবে। আজকের আর্টিকেলে আমরা বোরহানি রেসিপি ও খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
বোরহানি
বোরহানি খুবই স্বাস্থ্যকর ও মজাদার একটি পানীয়। এটি মূলত টক দই দিয়ে তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে ঢাকা চট্রগ্রামে বিয়ের আয়োজনে পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ইফতারিতেও পরিবেশন করা হয়। ভারী খাবারের পরে আমরা সাধারণত কোল্ডড্রিংস পান করে থাকি। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দই দিয়ে তৈরি করা এই বোরহানী হজমের জন্য উপকারী। তাই ভারী খাবারের পরে এটি পরিবেশন করা স্বাস্থ্যকর।
বোরহানি রেসিপি
বোরহানি বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় ও ট্রেডিশনাল ড্রিংকস। বিয়ে বাড়িতে এটি ছাড়া যেনো অসম্পূর্ণ থেকে গেলো। এছাড়া রেস্টুরেন্ট বা হোটেলে বিনিয়ানির সাথে আমরা বোরহানি খেতে থাকি। কিভাবে ঘরে তৈরি করা যায় তা বিস্তারিত জানবো-
রেসিপি ১
উপকরণ
- ৪ টেবিল চামচ পুদিনার পাতা
- ২ টেবিল চামচ ধনিয়া পাতা
- ৪টি কাচা মরিচ
- ১ চা চামচ সরিষা
সবগুলো উপকরণ মিহি করে বেটে নিতে হবে। তারপরে খুব সামান্য পরিমাণে পানি দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করার সময় অল্প পরিামণে পানি দিয়ে ব্লেন্ড করা যাবে।
- আধা কেজি টকদই
- ১ চা চামচ টেলে নেওয়া জিরার গুড়ো
- ২ চা চামচ বিটলবন
- হাফ চা চামচ সাদা গোল মরিচের গুড়ো
- ২ টেবিল চামচ চিনি
- ১ চা চামচ টমেটো সস
প্রস্তুতপ্রণালী
একটা বাটিতে টকদই (পানি ঝড়িয়ে নিতে হবে) হালকা করে একটু ফেটিয়ে নিতে হবে। এরপরে বাকি উপকরণ ও ধনিয়া-পুদিনা পাতার মিশ্রণটি ছেকে মিশিয়ে নিতে হবে। ব্যস খুব সহজে ঝটপট তৈরি করে ফেলা সম্ভব। পরিবেশনের সময় বরফ কুচি দিতে হবে।
রেসিপি ২
বোরহানি তৈরির মসলা
- ভাজা ধনে গুড়ো হাফ টেবিল চামচ
- ভাজা জিরা গুড়ো হাফ টেবিল চামচ
- সাদা গোলমরিচের গুড়ো ১ টেবিল চামচ
- বিট লবন ১ টেবিল চামচ
- সাদা সরিষার গুড়ো ১ টেবিল চামচ
- লবন দেড় চা চামচ
সবগুলো মসলা একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। বোরহানি তৈরির জন্য এই মসলাটি বাসায় তৈরি করে নরমাল ফ্রিজে রাখা যাবে। এতে ঝটপট তৈরি করে নেওয়া যাবে। ১ কেজি দইয়ের জন্য এই পরিমাণের মসলা ব্যবহার করলে বোরহানির স্বাদ পারফেক্ট হবে। বেশি পরিমাণে বানাতে চাইলে সমানুপাতহাতে মসলার পরিমাণবাড়িয়ে তৈরি করা যাবে। আধা কেজি পরিমাণ দই দিয়ে বানাতে চাইলে মসলার অর্ধেক পরিমাণ নিলেই হবে।
- ৩ টেবিল চামচ চিনি
- ১ টেবিল চামচ ধনেপাতা বাটা
- ১ টেবিল চামচ পুদিনাপাতা বাটা
- আধা টেবিল চামচ কাচা মরিচ বাটা
- দেড় টেবিল চামচ টমেটো সস
প্রস্তুপ্রণালী
একটি বাটিতে ঠান্ডা পানি ১ কাপ দিতে হবে। তারপরে বাকী উপকরন দিয়ে মিশিয়ে নেওয়ার পরে বোরহানি তৈরির মসলা দিয়ে সবগুলো উপকরণ চিনি গলে যাওয়া অব্দি একসাথে ভালোকরে মিশিয়ে নিতে হবে।
১ কেজি টক দই ভালোকরে ফেটিয়ে নিতে হবে। তবে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করা যাবেনা। ফেটানো হয়ে গেলে মসলার মিশ্রণটি ছাকনি দিয়ে ছেকে দইয়ের মধ্যে দিতে হবে। এবার দইয়ের সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। ঘন একটু বেশি মনে হলে ১/৪ কাপ ঠান্ডা পানি দিতে হবে। আবারও মিশিয়ে নেওয়ার পরে টেস্ট করতে হবে সবকিছু ঠিক আছে কিনা। প্রয়োজন হলে উপকরণ এড করতে হবে সামান্য পরিমাণে। আরও কিছুক্ষণ নেড়ে পরিবেশন করতে হবে।
রেসিপি ৩
- ১/৩ কাপ পুদিনা পাতা
- ১/৩ কাপ ধনিয়া পাতা কুচি
- ১ টি কাচা মরিচ
- হাফ কাপ পানি
- ১ কাপ টক দই
- হাফ চা চামচ সাদা গোল মরিচের গুড়ো
- ১/৪ চা চামচ কালো গোল মরিচের গুড়ো
- লবন স্বাদমতো
- ১ চা চামচ কালো সরিষার বাটা
- ধনিয়া গুড়ো হাফ চা চামচ
- ভাজা জিরার গুড়ো হাফ চা চামচ
- ১/৪ চা চামচ বিটলবন
- ২ টেবিল চামচ চিনি
প্রস্তুপ্রণালী
একটি ব্লেন্ডারের জারে পুদিনা পাতা, ধনিয়া পাতা কুচি ও কাচা মরিচ নিতে হবে। হাফ কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করার পরে এই মিশ্রণের মধ্যে টক দইসহ বাকী উপকরণ দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। বোরহানি রেডি করে বোতলে ভরে প্রায় ৭ দিনের মতো নরমাল তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।
রেসিপি ৪
উপকরণ
- ১ কাপ পরিমাণ বরফ
- হাফ কাপ পানি
- ১ টেবিল চামচ পুদিনাপাতা বাটা
- হাফ টেবিল চামচ ধরিয়াপাতা বাটা
- হাফ টেবিল চামচ মরিচ বাটা
- আড়াই টেবিল চামচ চিনি
- ২ টেবিল চামচ টমেটো সস
- ১ চা চামচ ভাজা জিরার গুড়ো
- ১ চা চামচ ধনিয়া গুড়ো
- ১ চা চামচ সাদা গোল মরিচের গুড়ো
- ১ চা চামচ হলুদ সরিষার গুড়ো
- ১ চা চামচ লবন
- ১ চা চামচ বিটলবন
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি বাটিতে সবগুলো উপকরণভালোভাবে মিশানো হলে ছেকে নিতে হবে। তারপরে অন্য বাটিতে ৩ কাপ টক দই নিতে হবে। তারপরে দই ভালোভাবে ফেটে নিতে হবে। হ্যান্ডউইস না থাকলে চামচ দিয়ে ফেটিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু কখনোই ব্লেন্ডারে বেল্ড করা যাবে না। তাহলে দই একদম পাতলা হয়ে যাবে। ক্রিমির মতো হলে গেলে ছেকে রাখা পুদিনা ধনিয়া ও মসলার উপকরণ দিতে হবে। তারপরে আবারও দইয়ের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। যারা ঠান্ডা ঠান্ডা খেতে পছন্দ করেন তারা চাইলে ইন্সট্যান্সেট বরফ কুচি ও ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিবেশন করতে পারবেন। এবং যদি কয়েকঘন্টা পরে পরিবেশন করতে চান তাহলে তৈরির সময় নরমাল পানি ব্যবহার করা যাবে। বোরহানি তৈরি করে নরমাল ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করেও পরিবেশ করা যাবে। বোহানি একটু ঘন হয়ে থাকে, খুব বেশি ঘন বা পাতলা হয়না। তারপরেও পছন্দ অনুযায়ী ঘনত্বে চলে এলে পরিবেশন করতে হবে। চেক করে নিতে হবে সবকিছু পারফেক্ট আছে কিনা। লবন বা চিনির পরিমাণ বাড়ানোর প্রয়োজন হলে পরিমাণমতো বাড়িয়ে দিয়ে আবারও মিশিয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ পছন্দ মতো সবকিছু কমিয়ে ও বাড়িয়ে এই বোরহানি বানিয়ে নেওয়া যাবে।
বোরহানি তৈরিতে কালো গোল মরিচের গুড়ো ব্যবহার করলে খেতে অনেকের কাছে ঝাঝালো মনে হয় সেক্ষেত্রে সাদা গোল মরিচের গুড়ো ব্যবহার করা যাবে। এবং ফ্রেশ পুদিনা, ধনিয়া কাচা মরিচের বাটা ব্যবহার করতে হবে এতে করে টেস্ট ভালো আসবে।
বোরহানরি উপকারিতা
বোরহানি তো আমরা সকলেই খেয়েছি। তবে এর উপকারিতা সম্পর্কে হয়তো অনেকেই অবগত নই। চলুন কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
হজমে সাহায্য করতে
আমরা অনেক সময় অতিরিক্ত পরিমানে ফ্যাট জাতীয় খাবার খেয়ে থাকি। পরবর্তীতে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি করে। এবং খাবার হজম হতে সময় নেয়। এক্ষেত্রে এই সমস্যা দূর করতে বোরহানি একটি ভালো উপায়। এটি হজমে দারুণ ভাবে সহায়তা করে।
ভিটামিন সি এর চাহিদা পুরণ করতে
বোরহানিতে ব্যবহার করা হয় কাচা মরিচ। আমরা সকলেই জানি এতে ভিটামিন সি উপস্থিত রয়েছে। যা আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। সেই সাথে মৌসুমি রোগ যেমন সর্দি জ্বর কাশি ইত্যাদি হওয়ার প্রবণতাকে প্রতিরোধ করতে বেশ কার্যকরী।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে
জেনে অবাক হবেন, ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে বোরহানি বেশ কার্যকরী । কারন এতে ইলেকট্রিক অ্যাসিড থাকায় যাদের ডায়রিয়া হয় তারা খেলে ডায়রিয়া প্রতিরোধ হবে। এছাড়াও আমাদের শরীরের খনিজ ও আয়োডিনের অভার পূরন করতে বোরহানি সাহায্য করে।
উপরোক্ত আলোচনায় বোরহানি কি, কিভাবে তৈরে করা হয় তার বিভিন্ন রেসিপি ও বোহানী খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আজকের আর্টিকেল পড়ার পরে বাসায় ঝটপট পারফেক্টভাবে বোরহানি তৈরি করে নিতে পারবেন।