বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে অতিথি আপ্যায়নে হরেক পদের খাবারের পাশাপাশি বাহারি রকমের মিষ্টির পরিবেশন করে থাকি। এর মধ্যে অন্যতম হলো পায়েস। এটি খেতে আমরা কম বেশি সকলেই পছন্দ করি। বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবার যারা পছন্দ করেন তাদের কাছে প্রিয় একটি ডেজার্ট হলো পায়েস। পায়েস রান্না করা যেমন সহজ তেমনটি খেতেও অসাধারণ। ঘরে থাকা অল্প উপকরণেই তৈরি করা যায় খুব সহজেই।
পায়েস সাধারণত গরুর দুধ, সুগন্ধি চাল ও চিনি মিশিয়ে মিষ্টি আইটেমটি রান্না করা হয়। এবং স্বাদ বৃদ্ধির জন্য কিসমিস, বিভিন্ন ধরনের বাদামটিও ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও যুগের সাথে বিভিন্ন ধরনের পায়েস এখন তৈরি করছেন আমাদের মা খালারা। যেমন ছানার পায়েস, তালের পায়েস, কাউনের চালের পায়েস সাবুদানার পায়েস ইত্যাদি। আজকের আর্টিকেলে মজাদার পায়েসের রেসিপিগুলো জানবো।
পায়েস রেসিপি
পায়েস বাঙালির একটি প্রিয় ডেজার্ট আইটেম। এটি খেতে মিষ্টি ও ক্রিমি টেক্সচার হওয়ায় প্রায় সকলের কাছে পছন্দে। বিভিন্ন অনুষ্টান যেমন বিবাহ, জন্মদিন ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসবগুলোতে পরিবেশন করা হয়। বিশেষ দিনকে আরও স্পেশাল করার জন্য বাসায় ঝটপট তৈরি করে ফেলা যাবে। চলুন পাসেয় রান্নার সহজে কয়েকটি রেসিপি জেনে নেওয়া যাক-
সুগন্ধি চালের পায়েস রেসিপি
উপকরণ
- দুধ ২লিটার
- ১টি তেজপাতা
- ৩টি এলাচ
- কালোজিরা চাল ২মুঠো
- কিসমিস
- বাদাম কুচি
প্রস্তুতপ্রণালী
প্রথমে একটি বড় প্যান চুলা বসিয়ে তরল দুধ দিতে হবে। তেজপাতা ও এলাচ দিতে হবে। এবার চুলার আঁচ মিডিয়াম থেকে সামান্য বাড়িয়ে দুধ ভালোভাবে জ্বাল দিতে হবে। প্রায় ১০-১৫ মিনিটের মতো অনবরত নেড়ে ভালোকরে জ্বাল দিয়ে ৪/৫বার বলক তুলে নিতে হবে। তারপরে সুগন্ধ কালোজিরা চাল ভালোকরে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে দিতে হবে। তারপরে সময় নিয়ে চাল সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে একটা পটেটো মেশানোর সাহায্যে আধাভাঙা করে নিতে হবে। এবার স্বাদমতো চিনি ও কনডেন্সমিল্ক দিয়ে ভালোকরে মিশিয়ে নিতে হবে। চিনি থেকে পানি বের হলে পায়েস একটু পাতলা হয়ে যাবে। বেশকিছুক্ষণ নেড়ে জ্বাল দিতে হবে। তারপরে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে। কিসমিস ও কিছু বাদাম কুচি পায়েসের ওপরে দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
ভিন্ন স্বাদের পায়েস রেসিপি
উপকরণ
- চিনি গুড়ো চাল ১/৪ কাপ
- হাফ কাপ চিনি
- হাফ কাপ গুড়ো দুধ
- ১ লিটার গরুর দুধ
- ২টি এলাচ
- ১ টি তেজপাতা
- ১/৪ চা চামচ কেওড়া জল
প্রস্তুতপ্রণালী
চাল খুব ভালোকরে ধুয়ে পরিষ্কার করে ১৫-২০ মিনিটের জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে করে পায়েস রান্না করতে সময় কম লাগবে ও ভালোভাবে সেদ্ধ হবে। একটি বাটিতে চিনি
ও গুড়ো দুধ মিশিয়ে একটা ঢাকনা দিয়ে একপাশে রাখতে হবে।
একটি বড় প্যানে গরুর দুধ দিতে হবে। এলাচ, তেজপাতা ও ভিজিয়ে রাখা চাল দিতে হবে। চুলার আঁচ কম রেখেই এই রান্নাটা করে নিতে হবে। সময় নিয়ে নেড়েচেড়ে রান্না করতে হবে। চাল সেদ্ধ হয়ে গলে গেলে গুড়ো দুধ ও চিনির মিশ্রণটি দিতে হবে। এই মিশ্রণটি দেওয়ার সাথে সাথেই পানি পানি ভাব হয়ে যাবে। তাই ভালোকরে পানি শুকিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় পায়েস রান্নার এক বেলা পরেই পায়েস থেকে পানি বের হয়ে যাবে। চুলা থেকে নামানোর আগে কেওড়া জল দিতে হবে। এবং পরিবেশন সময় কিছুবাদাম কুচি দিতে হবে।
সাবুদানার পায়েস রেসিপি
উপকরণ
- সাবুদানা হাফ কাপ
- পানি ৪ কাপ
- ১ চিমটি লবন
- ১ লিটার গরুর দুধ
- ১টি তেজপাতা
- ২টি এলাচ
- ১টি দারুচিনি
- ২টেবিল চামচ কিসমিস
- বাদাম কুচি পরিমাণমতো
প্রস্তুতপ্রণালী
প্রথমে একটি বাটিতে সাবু নিয়ে দুই তিনবার পানি দিয়ে হাত দিয়ে নেড়ে ধুয়ে নিতে হবে। পানি থেকে ছেকে একটি হাড়িতে নিতে হবে, ২ কাপ পরিমাণ পানি ও ১চিমটি লবন দিতে হবে। এতে সাবুদানা তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যাবে। চুলা জ্বালিয়ে অনবরত নাড়তে হবে। সাবু ঘন হয়ে গেলে আরও ২ কাপ পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। সাবু দানাগুলো দেখতে স্বচ্ছ হলে বুঝতে হবে সাবুদানা পুরোপুরি সেদ্ধ হয়ে গিয়েছে। বেশকিছুক্ষণ সময় নিয়ে নেড়ে সাবুদানা সেদ্ধ হয়ে গেলে আধা কাপ কোড়ানো খেজুরের গুড়ো দিতে হবে। গুড় গলিয়ে নিতে হবে।
এবার অন্য একটি পাত্রে গরুর দুধ দিতে হবে। তারপরে তেজপাতা, এলাচ ও দারুচিনি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। প্রায় ১লিটার দুধকে ঘন করে আধা লিটার করে নিতে হবে। তারপরে গুড় মেশানো সেদ্ধ সাবুদানার হাড়িটি আবারও চুলায় বসিয়ে ঘন দুধ দিতে হবে। এবার নেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপরে কিসমিস ও কুচিকরা বাদাম দিয়ে কয়েকমিনিট জ্বাল দিতে হবে। তারপরে ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে হবে।
কাউনের চালের পায়েস রেসিপি
উপকরণ
- ১/৩ কাপ কাউনের চাল
- ১লিটার পরিমাণ দুধ
- ২টি এলাচ
- ১টি দারুচিনি
- ১ কাপ খেজুরের গুড়
- কিসমিস
- বাদাম কুচি
- ১/৪ কাপ গুড়ো দুধ
- ১ চা চামচ ঘি
প্রস্তুতপ্রণালী
চাউনের চাল খুব ভালোকরে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপরে পানি দিয়ে ১০ মিনিটের মতো ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে করে রান্নার সময় তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যাবে।
এবার চুলায় দুধ দিয়ে এলাচ ও দারুচিনি দিতে হবে। দুধ ফুটিয়ে গেলে আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা কাউনের চাল দিতে হবে। এবার একটু নেড়ে দিতে হবে যাতে নিচে দলা না বাধে। একটা বলক এলে চুলার আঁচ কমিয়ে রান্না করে নিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে খেজুরের গুড় দিতে হবে। গুড়ের পরিবর্তে চিনিও ব্যবহার কর যাবে। তবে এই পায়েসে গুড় ব্যবহার করলে স্বাদ বেড়ে যায়। তারপরে কিছু কিসমিস, বাদাম কুচি ও গুড়ো দুধ দিয়ে ভালোকরে মিশিয়ে নিতে হবে। নামানোর আগে ঘি ব্যবহার করতে হবে। চুলা থেকে নামিয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এলে ফ্রিজে ২-৩ ঘন্টা রেখে পরিবেশন করতে হবে।
তালের পায়েস রেসিপি
উপকরণ
- এক টেবিল চামচ ঘি
- ২ টেবিল চামচ কুচি করা বাদাম
- ১ টেবিল চামচ কিসমিস
- ১ লিটার লিকুয়েড গরুর দুধ
- ১/৩ কাপ গুড়ো দুধ
- ২টি এলাচ
- ১টি তেজপাতা
- ১/৪ কাপ চিনিগুড়ো পোলাও চাল
- ১ কাপ তালের কাথ
- হাফ কাপ কোড়ানো নারিকেল
প্রস্তুতপ্রণালী
চুলায় মিডিয়াম আচেঁ ঘি দিতে হবে। ঘি হালকা গরম হয়ে গেলে এরমধ্যে কুচি করা বাদাম ও কিসমিস দিয়ে কয়েক সেকেন্ড নেড়ে ভেজে নিতে হবে। বাদামগুলো থেকে সুন্দর একটা স্মেইল বের হলে একটি বাটিতে তুলে নিতে হবে। অবশিষ্ট ঘি এর মধ্যে গরুর দুধ দিতে হবে। হালকা গরম হয়ে গেলে হাফ কাপ পরিমাণ দুধ আলাদা ভাবে তুলে গুড়ো দুধের মধ্যে মিশিয়ে একসাইডে রাখতে হবে।
এবার দুধের মধ্যে ২টি এলাচ ও ১টি তেজপাতা দিয়ে বলক তুলে নিতে হবে। এরমধ্যে চিনিগুড়ো পোলাও চাল ধুয়ে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপরে পানি ঝরিয়ে লিকুয়েড দুধের মধ্যে দিতে হবে। এবং আবাও নেড়ে নেড়ে মিশিয়ে জ্বাল দিতে হবে। চুলার আঁচ কমিয়ে চাল সেদ্ধ করে নিতে হবে। মাঝে মধ্যে একটু নেড়ে নিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে হাফ কাপ চিনি দিতে হবে। চিনি দেওয়ার পরে পায়েসের মিশ্রণটি পাতলা হয়ে যাবে, তারপরে আবারও জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে। আগে থেকে গুড়ো দুধের মিশ্রণটি দিতে হবে। তারপরে আগে থেকে জ্বাল করা ঘন তালের কাথ ও কোড়ানো নারিকেল ও আগে থেকে ঘিয়ে ভাজা বাদাম কিসমিস কুচি দিতে হবে। এবার সবগুলো উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। কিছুক্ষণ জ্বাল করে নিতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনায় বিভিন্ন পদের পায়েসের রেসিপি সম্পর্কে জানলাম। রেসিপিগুলো অনুসরণ করে বাসায় তৈরি করে নিতে পারবেন সহজ উপায়ে। বিশেষ করে নতুন রাধুনীদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি বেশ উপকারী হবে। পায়েস রান্না করে প্রিয়জনদের পরিবেশন করাতে পারেন।