You are currently viewing বাংলাদেশের দেশি মাছ গুলো কি কি এবং কোন মাছের দাম কেমন?
দেশি মাছ

বাংলাদেশের দেশি মাছ গুলো কি কি এবং কোন মাছের দাম কেমন?

বাংলাদেশের জলাশয়ে দেশি মাছের একটি বিশাল বৈচিত্র্য রয়েছে, যা আমাদের খাদ্যতালিকাকে পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং সুস্বাদু করে তোলে। দেশি মাছের জনপ্রিয়তা এবং পুষ্টিগুণের কারণে এর চাহিদা সর্বদাই উচ্চ। তবে বর্তমানে দেশি মাছ চেনা এবং সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা সহজ কাজ নয়। এর কারণ বাজারে নানা প্রকারের দেশি মাছ পাওয়া যায়। আর তাই সঠিক গুণগত মান ও আসল দেশি মাছের পার্থক্য নির্ধারণ করা ক্রেতাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

বাজারে মাছের মূল্যে ভিন্নতা নির্ভর করে মাছের প্রকারভেদ, মাছের আকার, তাজা বা জমাট বাঁধা অবস্থা এবং উৎপাদনের মৌসুমের ওপর। এই আর্টিকেলটিতে আমরা বিভিন্ন দেশি মাছ এবং তা চেনার উপায়, বাজারের বিভিন্ন প্রকার মাছের দাম এবং কীভাবে উন্নত মানের দেশি মাছ কেনা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বাংলাদেশের দেশি মাছ গুলো কি কি?

বাংলাদেশে বুক চিরে বয়ে চলা শত শত নদীতে রয়েছে অসংখ্য মাছ। এছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজ পুকুর বা বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা হয় বিভিন্ন প্রকার দেশি মাছ। আর্টিকেলের শুরুতেই চলুন কিছু দেশি মাছের পরিচিতি সম্পর্কে জেনে আসি। 

ইলিশ

ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এটি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা সহ প্রধান নদীগুলোতে পাওয়া যায়। এই মাছটি আকারে ৩০ সেন্টিমিটার থেকে ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণও অনেক বেশি; এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, ভিটামিন এ এবং ডি। ইলিশ মাছে থাকা ওমেগা-৩ হার্টের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত ভাপা, ভাজি, সর্ষে ইলিশ এবং দই ইলিশ জনপ্রিয় রান্নার উপায়।

বাংলাদেশের দেশি মাছ

রুই

রুই মাছ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় মাছ। এটি   নদী, বিল ও পুকুরে চাষ করা হয়। এই মাছ আকারে ১ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এবং লম্বায় প্রায় ১ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন বি-১২ এবং ওমেগা-৩ রয়েছে। রুই মাছের পাতলা মাংস এবং সুস্বাদু স্বাদ একে বাঙালির খাবারের তালিকায় বিশেষ স্থান দিয়েছে। রুই মাছ সাধারণত ঝোল, কালিয়া, ভাজি এবং গ্রিল করে খাওয়া হয়।

কাতলা

কাতলা মাছ দেখতে গোলাকার এবং শরীরের উপরিভাগ বেশ চওড়া হয়। এটি   পুকুর, নদী ও খালে পাওয়া যায়। এ মাছ আকারে ২ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এতে প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পাশাপাশি ভিটামিন ডি ও বি-১২ রয়েছে। কাতলা মাছের মাথা ও পেটের অংশ খেতে খুবই সুস্বাদু। এটি দিয়ে মাছের ঝোল, কালিয়া, দোপেঁয়াজা, ও বাটার মাছ রান্না করা হয়।

মাগুর

মাগুর মাছ বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর মাছ হিসেবে বিবেচিত। এটি   বিল, খাল ও নদীতে পাওয়া যায়। মাগুর মাছ আকারে ২০০ গ্রাম থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এই মাছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসসহ প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিশেষ করে যকৃতের সমস্যায় উপকারী। মাগুর মাছ   ঝোল এবং ভুনা রান্নায় ব্যবহৃত হয়।

পুঁটি

পুঁটি মাছ আকারে ছোট কিন্তু এটি বাংলাদেশের পানির অন্যতম পরিচিত মাছ। এ মাছ সাধারণত নদী, খাল ও পুকুরে পাওয়া যায়। এর ওজন ৫০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। পুঁটি মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং আয়রন রয়েছে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। পুঁটি মাছ ভাজি, ঝোল এবং ডাল-সহ বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়।

চিতল

চিতল মাছের বৈশিষ্ট্য হলো এর লম্বা এবং সামান্য চ্যাপ্টা আকৃতি। এটি সাধারণত নদী ও হাওরে পাওয়া যায়। এই মাছটি আকারে ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। চিতল মাছে প্রোটিন, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। এটি মাংসাশী মাছ হওয়ায়, চাষ করা কিছুটা কষ্টসাধ্য। চিতল মাছ দিয়ে তৈরি হয় বিখ্যাত চিতল মুইঠ্যা এবং মাছের কোপ্তা।

পাবদা

পাবদা মাছ দেখতে ছোট এবং পাতলা হয়। এটি  পুকুর, বিল ও নদীতে পাওয়া যায়। এই মাছ আকারে ১৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। পাবদা মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, এবং ভিটামিন ডি রয়েছে। এই মাছ হজমে সহজ এবং স্বাদে অত্যন্ত সুস্বাদু। পাবদা মাছ সাধারণত সর্ষে পাবদা, দই পাবদা, এবং পাবদা ভুনা রান্নায় ব্যবহৃত হয়।

শিং

শিং মাছের বৈশিষ্ট্য হলো এর তীক্ষ্ণ পাখনা এবং শক্ত আঁশ। এটি সাধারণত বিল, পুকুর ও নদীতে পাওয়া যায়। শিং মাছ আকারে ১০০ গ্রাম থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। শিং মাছে প্রোটিন, ভিটামিন বি-১২, ক্যালসিয়াম ও আয়রন রয়েছে। এই মাছটি বিশেষ করে রক্তাল্পতা ও দুর্বলতা নিরাময়ে উপকারী। শিং মাছ   ঝোল, শিং মাছের পায়েস এবং ভুনায় ব্যবহৃত হয়।

টেংরা

টেংরা মাছ আকারে ছোট এবং এর শরীর চকচকে হয়। এটি নদী, পুকুর ও বিলের মিঠা পানিতে পাওয়া যায়। টেংরা মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এ এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। এটি হজমে সহজ এবং শিশুদের জন্য খুব উপকারী। টেংরা মাছ সাধারণত টেংরা মাছের ঝোল, টেংরা ভুনা এবং ডালের সঙ্গে রান্না করা হয়।

বোয়াল

বোয়াল মাছ বড় আকারের হয় এবং মুখে বড় শুঁড় থাকে। এটি নদী ও বড় জলাশয়ে পাওয়া যায়। বোয়াল মাছ আকারে ২ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এতে প্রোটিন, আয়রন, ফসফরাস এবং ওমেগা-৩ রয়েছে। বোয়াল মাছে কম কাঁটা থাকায় এটি অনেকের পছন্দের খাবার। বোয়াল মাছ দিয়ে বোয়াল কালিয়া, বোয়াল ভুনা এবং বোয়াল মাছের ঝোল রান্না করা হয়।

ভালো মানের দেশি মাছ চেনার উপায়

ভালো মানের দেশি মাছ চেনার উপায় কি?

ভালো মানের দেশি মাছ চেনার জন্য কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করা প্রয়োজন। প্রথমত, মাছের শরীর টানটান ও উজ্জ্বল হতে হবে এবং আঁশগুলো উজ্জ্বল ও শক্ত থাকবে। তাজা মাছের চোখ স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল হয়, কোটরাগত বা ফ্যাকাসে নয়। মাছের গায়ের রং উজ্জ্বল এবং শরীরের অংশে কোনো দাগ বা ক্ষত থাকা উচিত নয়। তাজা মাছ থেকে মৃদু কাঁচা গন্ধ আসে, তবে এটি কখনোই পচা বা তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত হয় না। 

বাংলাদেশের জনপ্রিয় মাছ ও এগুলো চেনার সহজ উপায়

মাছের পেটের অংশ চ্যাপ্টা ও শক্ত হলে তা তাজা মাছের লক্ষণ। মাছের কাঁটা (গিলস) গাঢ় লাল বা গোলাপি রঙের এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার থাকা উচিত। এছাড়া, হাত দিয়ে চাপ দিলে মাছের মাংস শক্ত অনুভূত হয় এবং চাপের দাগ থেকে গেলে তা তাজা মাছের লক্ষণ। এসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলে সহজেই ভালো মানের দেশি মাছ চেনা যায়।

দেশি কোন মাছের কেমন দাম? 

বাংলাদেশের দেশি মাছের দাম সাধারণত মাছের প্রকার, আকার, মৌসুম এবং সরবরাহের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত, রুই, কাতলা এবং মৃগেল মাছের দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে, যা কেজি প্রতি ২০০-৪০০ টাকার মধ্যে থাকে, কারণ এগুলো পুকুরে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয় এবং বাজারে সহজলভ্য। তবে, যদি মাছের আকার বড় হয় বা বিশেষ জাতের হয়, তবে এর দাম আরও বাড়তে পারে। 

শিং, মাগুর ও কৈ মাছের দাম সাধারণত বেশি, যা ৪০০-৭০০ টাকা প্রতি কেজির মধ্যে থাকে, কারণ এদের চাষ ও সংগ্রহের প্রক্রিয়া জটিল এবং এগুলো পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। 

টেংরা, পাবদা এবং পুঁটি মাছ ছোট আকারের হলেও এদের স্বাদ ও পুষ্টিগুণের কারণে এদের দামও ৩০০-৬০০ টাকা প্রতি কেজির মধ্যে ওঠানামা করে। বোয়াল, আইড় ও চিতল মাছ আকারে বড় এবং সুস্বাদু হওয়ায় এদের দাম অনেক বেশি হয়, যা ৫০০-১০০০ টাকা বা এরও বেশি প্রতি কেজি হতে পারে, বিশেষ করে যদি মাছটি প্রাকৃতিক জলাশয়ে ধরা হয়। 

বর্ষা মৌসুমে দেশি মাছের প্রাচুর্য থাকলে দাম কিছুটা কমে, তবে শীতকালে সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরের বাজারে দেশি মাছের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে।

উপসংহার

দেশি মাছের পুষ্টিগুণ, স্বাদ এবং বৈশিষ্ট্য আমাদের খাদ্যাভ্যাসে একটি বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। উন্নত মানের দেশি মাছ কেনা এবং চেনার কৌশল জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সঠিকভাবে মাছের গুণমান চেনা এবং দামের তুলনামূলক ধারণা থাকা আমাদেরকে উন্নত মানের মাছ ক্রয় করতে সাহায্য করে। 

তাই, দেশি মাছ কেনার সময় কিছু মৌলিক বিষয়ে লক্ষ্য রাখা এবং সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সচেতনতার মাধ্যমে আমরা আসল দেশি মাছের প্রকৃত স্বাদ ও পুষ্টিগুণ উপভোগ করতে পারি এবং আমাদের প্রতিদিনের খাবারের টেবিলকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারি।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.