You are currently viewing স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা
দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা

দারুচিনি, আমাদের দৈনন্দিন রান্নায় ব্যবহৃত একটি মসলা। এটি শুধুমাত্র একটি সুগন্ধি মসলাই নয় বরং এটি স্বাস্থ্য ও ত্বক উভয়ের জন্যই উপকারি। এই মসলা আমাদের শরীরের নানা ধরণের উপকারে আসে। দারুচিনিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের সংক্রমণ, হৃদরোগ, রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হজম শক্তি বৃদ্ধি, ভাইরাস এবং ক্যান্সার রোগের জন্যে অনেক কার্যকরী। 

দারুচিনি মূলত গাছের ছাল থেকে পাওয়া যায়। যেকোনো মাটিতে এই গাছটি হওয়াতে খুব সহজেই আমরা সংগ্রহ করতে পারি। এটি সুগন্ধি ও মিষ্টি মিষ্টি হওয়ার কারণে কাঁচা খেতেও অনেকেই পছন্দ করে থাকে। সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের প্রতিদিনের খাবারে রাখতে পারি। আমরা নিয়মিত এই মশলা তরকারীতে ইউজ করলেও দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা কি সে সম্পর্কে অবগত নই? আমাদের আজকের লেখায় আমরা দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা

দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা

দারুচিনি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো কি কি সেই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

দারুচিনি হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি নিয়মিত খেলে পাচনতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়। এতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাবলী রয়েছে যা হজম সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রিকের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।

রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

দারুচিনির মধ্যে রয়েছে বিশেষ কিছু উপাদান যার কারণে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। দারুচিনি খাওয়ার ফলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই কার্যকরী একটি খাবার।

ব্যথা কমায়

দারুচিনি প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা-নাশক হিসেবেও কাজ করে। এটি আথ্রাইটিসের মতো শরীরে নানা ধরণে ব্যথা কমাতে সাহায্য সাহায্য করে থাকে। এটি প্রাচীন কাল থেকেই ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই আমরা হাতের কাছে থাকা এই মশলাটি শরীরের ব্যথানাশক হিসেবে খেতে পারি।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। দারুচিনি খাওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে এবং হৃদরোগের জন্য দায়ী কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন দারুচিনি খেলে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্যে করে ।

কোলেস্টেরল কমায়

এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান থাকে, তাই নিয়মিত দারুচিনি খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে সাহায্য করে। দারুচিনি শরীরে থাকা খারাপ LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভাল HDL কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে ।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ

এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। শরীরের কোষগুলোকে রোগ প্রতিরোধ করে থাকে এবং বার্ধক্যজনিত রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যদি কারো এই ধরণের কোনো রোগ হয়ে থাকে তাহলে নিয়মিত দারুচিনি সেবন করে শরীর কে রোগ মুক্ত রখতে পারবেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো

দারুচিনিতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল গুণাবলী থাকার ফলে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই মশলা সাধারণত জ্বর, সর্দি ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। 

ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ 

প্রাচীন কাল থেকেই আয়ুর্বেদিক ওষুধপত্র বা চিকিৎসার জন্য দারুচিনি রক্তে বাড়তি শর্করার মাত্রা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, টানা ৪০ দিন ধরে ৬ গ্রাম করে দারুচিনি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে। এর সাথে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য দারুচিনি অত্যন্ত কার্যকরী ভাবে কাজ করে। যার ফলে একজন ডায়াবেটিসের রোগী যদি নিয়মিত পরিমাপ অনুযায়ী দারুচিনি খায় তাহলে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। 

কোন খাবারে কেমন মশলা- স্বাদের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা!

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে 

দারুচিনিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা মানুষের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। এটি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি  করতে সাহায্য করে। যদি আমরা এই  দারুচিনি প্রতিদিন অল্প করে খাবার তালিকাতে রাখতে পারি, তাহলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারবো।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে 

এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে থাকে। যখনই আমরা কার্বোহাইড্রেড জাতীয় খাবার অধিক পরিমাণে খেয়ে থাকি তখনই আমাদের ইনসুলিন স্বাভাবিক প্রসেসে আসতে থাকে এবং যার কারণে ফ্যাট হিসেবে তা শরীরে জমা হতে শুরু করে। তাই আমরা যদি নিয়মিত অল্প পরিমাণে দারুচিনি গ্রহণ করি সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে এটি কার্বোহাইড্রেটকে মেটাবোলাইট করে খরচ করিয়ে দেয় যা শরীরের ভেতর থেকে। এই কারণে শরীরে ফ্যাট জমতে পারবে না। কাজেই আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।

ত্বকের যত্নে দারুচিনির উপকারিতা 

দারুচিনিতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যদি কেউ ত্বকে দারুচিনি ব্যবহার করে তাহলে ত্বকের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। দারুচিনি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের দাগ-ছোপ কমাতে সাহায্য করে।

গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উৎস

  • ফাইবার
  • আয়রন
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • ক্যালসিয়াম

দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম

দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম

দারুচিনি খাওয়ার জন্য বেশ কিছু সহজ পদ্ধতি আছে। আপনি দারুচিনিকে গরম জলে মধু, দারুচিনি ও লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। চা, মিষ্টি জাতীয় খাবার কিংবা রান্নার ভিতরে মসলা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা বাজারে দারুচিনি গুঁড়া পাওয়া যায় যা পানিতে ভিজিয়ে সেবন করা যায়। দিনে এক থেকে দুই চা চামচ দারুচিনি সেবন করাই যথেষ্ট।

চা এর সাথে

আমরা সাধারণত যেভাবে চা বানায় ঠিক সেই ভাবেই চা বানিয়ে নিব কিন্তু সেই চায়ের ভিতরে তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি দারুচিনি দিতে হবে। দারুচিনি ব্যবহার করে চা বানিয়ে পান করুন, যা হজম এবং শীতলতা কমাতে সহায়ক। 

মিষ্টিতে 

যেকোনো মিষ্টি জাতীয় খাবার রান্নার জন্য যেভাবে দারুচিনি মশলা দিয়ে থাকি ঠিক সেবেই একটু বেশি পরিমানে দারুচিনি যোগ করুন, যা স্বাদের সাথে সাথে স্বাস্থ্য উপকারে আসবে।

রান্নায় 

যেকোনো রান্নার মসলা হিসেবে দারুচিনি ব্যবহার করুন, যা খাবারের স্বাদ বাড়াবে এবং স্বাস্থ্য উপকারিতাও দেবে।

দারুচিনি ও আদা পানি

দারুচিনি, গোলমরিচ ও আদা এক সাথে নিয়ে মিহি করে বেটে নিয়ে সেই মিশ্রণ টি অল্প কিছু পানি মিস্ক করে কিছু সময় নিয়ে গরম করে নিতে হবে, এই গরম পানিটি সর্দি, কাশির জন্য খুবই উপকারী।

অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও দারুচিনিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম, তবে খুব বেশি পরিমাণে খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন গ্যাস্ট্রিক, অ্যালার্জি, পেট ব্যথা হতে পারে। যাদের এলার্জি বা অন্য কোন সমস্যা রয়েছে, তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গর্ভবতী মহিলাদের দারুচিনি না খাওয়াটাই ভাল কারণ অতিরিক্ত দারুচিনির খেলে পাকস্থলীতে জ্বলুনি সৃষ্টি হতে পারে যা গর্ভপাতের কারণ হতে পারে|

দারুচিনি শুধু মাত্র রান্নার কাজেই ব্যাবহৃত হয় না বরং এর বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মশলা। এটি হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে, রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ সহ আরো অনেক সুবিধা প্রদান করে থাকে। তাই, আপনার খাদ্য প্রতিদিনের খাবার তালিকায় দারুচিনি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। অনেকেই মনে করে যে দারুচিনি সব রোগের ঔষধ, কিন্তু এমনটা ভাবাও ভুল কারণ, শুধুমাত্র একটি সহায়ক উপাদান বলা যায়। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.