You are currently viewing নিম্ন রক্তচাপের রোগীর খাবার, এবং নিয়ন্ত্রনে রাখার টিপস
নিম্ন রক্তচাপের রোগীর খাবার

নিম্ন রক্তচাপের রোগীর খাবার, এবং নিয়ন্ত্রনে রাখার টিপস

নিম্ন রক্তচাপ কথাটার সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। নিম্ন রক্তচাপের ইংরেজি নাম হলো Hypotension। সহজ ভাবে বলতে গেলে নিম্ন রক্তচাপের এই অবস্থা কে বলা হয় Low pressure। কি এইবার চেনা যাচ্ছে তো? নিম্ন রক্তচাপ অনেকে না বুঝলেও হাই প্রেশার আর লো প্রেশার বোঝে না এমন মানুষ কিন্তু খুব কম। 

হটাৎ করেই নিম্ন রক্তচাপে ভুগলে কি করবেন কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রনে আনবেন এটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আবার অনেকেই তো মনে করেন এটি স্বাভাবিক একটা বিষয়। কিন্তু না! হাইপ্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপের মতো নিম্ন রক্তচাপের কারনেই আমাদের মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে। এজন্য আমাদের প্রয়োজন একটু সচেতনতা। চলুন আজকের আর্টিকেল থেকে জেনে নেওয়া যাক নিম্ন রক্তচাপ কী? এবং নিম্ন রক্তচাপ হলে কি কি করনীয় এই সকল বিষয় সম্পর্কে। 

নিম্ন রক্তচাপ মানে কি?

নিম্ন রক্ত চাপ রোগীদের খাবার সম্পর্কে জানার আগে আমাদের সকলের এই নিম্ন রক্তচাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিত। যখন আমাদের শরীরে ধমনী দিয়ে প্রবাহিত রক্তের চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায় সেই অবস্থাকে বলা হয় নিম্ন রক্তচাপ। চিকিৎসাবিজ্ঞান এর ভাষায় যখন রক্তের সিস্টোলিক চাপ ৯০ মি, মি পারদ এর নিচে থাকে এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৬০ মি ,মি এর নিচে থাকে তখন সেই অবস্থাকে বলে নিম্ন রক্তচাপ বা Low pressure।

আমরা সকলেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে চিন্তিত থাকলেও নিম্ন রক্তচাপের ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কে বা এক ভয়াবহ দিক গুলো সম্পর্কে জানি না তবে দীর্ঘদিন যাবত এই নিম্ন রক্তচাপের সমস্যার কারনে আপনি ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুকি তে পরতে পারেন।

নিম্ন রক্তচাপের কারন কি?

নিম্ন রক্তচাপের লক্ষন 

নিম্ন রক্তচাপ হওয়ার বেশ কিছু কারন থাকতে পারে। এমনকি অনেক সময় একসাথে একাধিক সমস্যার কারনেই নিম্ন রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। নিম্নে কিছু প্রধান কারন দেওয়া হলোঃ

  • শরীরে রক্তের পরিমান কমে যাওয়া।
  • সময় মতো খাবার না খাওয়া।
  • সঠিক পুষ্টিকর খাবার গ্রহন না করা।
  • অধিক দুশ্চিন্তা।
  • অধিক পরিমানে রাত জাগা।
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম।
  • থাইরোয়েডের সমস্যা। 
  • বমি বা ডায়রিয়া সহ অনান্য যেকোনো কারনে পানিশুন্যতা ।
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা।
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকস।
  • শরীরে হরমোনের ভারসম্য বজায় না থাকা।
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম।

নিম্ন রক্তচাপের লক্ষন 

সবসময় কিন্তু আমাদের হাতে রক্তচাপ মাপার মেশিন থাকে না বা সবসময় মেডিক্যাল চেকআপ করার সুযোগ ও হয় না। তা সত্ত্বেও আপনি কীভাবে বুঝবেন আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় কম? চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম্ন রক্তচাপের কিছু সাধারন লক্ষন। 

  • ক্লান্তিভাব।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • মাথা ঘুরানো।
  • বমি বমি ভাব।
  • বুক ধরফর করা।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
  • মাথা ব্যাথা।
  • প্রস্রাব কম হওয়া।
  • হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসা।
  • ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া।
  • মনোযোগ বিঘ্নিত হওয়া।

নিম্ন রক্তচাপ রোগীর খাবার 

প্রায় সময়েই যারা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের উচিত নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাবন করা এবং খাদ্যাভাসে পরিবর্তন নিয়ে আসা। নির্দিষ্ট কিছু খাবার দ্রুত আপনার রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। কি সেই খাবার? চলুন জেনে নেই।

লবন  

লবন খুব সহজেই রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। লবনে থাকা সোডিয়াম রক্তের সাথে মিশে গিয়ে দ্রুত আমাদের রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। হুট করে নিম্ন রক্তচাপের লক্ষন দেখা দিলে সামান্য লবন এবং চিনি পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে খালি মুখে শুধু লবন খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। 

তরল পানীয় 

বিভিন্ন তরল পানিয় বিশেষ করে ফলের জুস বা শরবত খেলে এটি রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া অতিরিক্ত ক্লান্তিভাব মনে হলে ডাবের পানি খেতে পারেন।

সুস্থাস্থ্যের জন্য দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকা 

স্যালাইন 

দ্রুত সময়ের মাঝে প্রেশার ঠিক রাখতে অন্যতম উপকারি হলো স্যালাইন। নিম্ন রক্তচাপ থাকা অবস্থায় নিয়মিত স্যালাইন খেলে এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে।

বিটরুটের রস

বিটরুট আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। বিটরুটের রসে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। 

লেবু

লেবু তে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিওক্সিডেন্ট। অনেক সময় পানি সল্পতার কারনে রক্তচাপ কমে যায়। এক্ষেত্রে লেবু খেতে পারেন। বিশেষ করে লো প্রেশার রোগীদের জন্য লেবুর শরবত অনেক উপকারি। 

স্যুপ

বিভিন্ন ধরনের সবজি, মাংস বা ডিম দিয়ে তৈরি করা স্যুপ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। এক্ষেত্রে স্যুপ এর সাথে একটু সস মিশিয়ে খেতে পারেন। 

ক্যাফেইন

ক্যাফেইন খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। তাই চা- কফির মতো ক্যাফেইনসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন। 

ডার্ক চকলেট

হট চকলেট বা ডার্ক চকলেট রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। 

বাদাম ও কিসমিস

কিসমিসে রয়েছে ভিটামিন এবং অ্যান্টিওক্সিডেন্ট। অন্যদিকে বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি। তাই বাদাম ও কিসমিস খেলে এটি রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করবে। 

পর্যাপ্ত পানি পান করা 

পর্যাপ্ত পানি পান করা 

পরিমান মতো পানি পান না করার কারনে লো প্রেশারের সুচনা হতে পারে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করুন। বিশেষজ্ঞ দের মনে দৈনিক ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত। 

তুলসি পাতা 

তুলসি পাতা তে রয়েছে ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং খনিজ উপাদান। তাই এটি রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।

ফল 

আমরা অনেকেই জানি টক জাতীয় ফল আমাদের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে ফলে থাকা ভিটামিন সি আমাদের রক্তচাপ বাড়াতেও কিন্তু সাহায্য করে। বিশেষ করে লেবু, মাল্টা, কমলালেবু ইত্যাদিতে থাকা মিনারেল ও ভিটামিন আমাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। 

মাখন 

মাখনে রয়েছে সোডিয়াম। তাই রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে খাবার তালিকায় এই মাখন রাখতে পারেন।

আদা 

আদা হলো এমন একটি ভেষজ উপাদান, যেটি অ্যান্টিওক্সিডেন্টে ভরপুর। আদাতে রয়েছে জিনজেরল নামের একটি উপাদান যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। 

সবুজ শাকসবজি

শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির ঘাটতির কারনে প্রেশার লো হতে পারে। তাই দৈনন্দিন খাবার তালিকায় বেশী বেশী শাকসবজি রাখুন। বিশেষ করে লাল শাক, পালং শাক, মিষ্টিকুমড়া, মটরশুটি, কচু শাক, সিম ইত্যাদি। 

ডিম

ডিমে থাকা ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ার রক্তে শর্করা এর মাত্রা বাড়াতে ও রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই দৈনিক একটি করে ডিম খেতে পারেন। বিশেষ করে হাসের ডিম এক্ষেত্রে অধিক উপকারি। 

গরুর মাংস

গরুর মাংস তে থাকা ফরফরাস ও সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তবে গরুর মাংসে যদি কারো এলার্জি থেকে থাকে সেক্ষেত্রে এটি না খাওয়ায় উত্তম ।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখার টিপস

নিম্ন রক্তচাপ রোধ করার জন্য একটু সচেতনতায় যঠেষ্ট। কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলেই আপনাকে আর এই সমস্যায় ভুগতে হবে না। 

  • পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
  • ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। ব্যায়াম না করলেও দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাটুন। এটি আপনাকে ফিট রাখতেও সাহায্য করবে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  • অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন।
  • কাজের ফাকে একটু বিশ্রাম নিন।
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা স্বাস্থ্য এর জন্য ক্ষতিকর। দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
  • অধিক সময় যাবত নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন। 

উপসংহার 

সুস্থ্যতা হলো একজন মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। সুস্থ্য থাকার জন্য আমাদের নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করা খুবই প্রয়োজন। গুরুতর সমস্যা ছাড়া ঔষুধের বিকল্প হিসেবে শুধু মাত্র সঠিক খাবার গ্রহন করেই আপনি খুব সহজে নিজের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আশা করছি আজকের এই ব্লগ থেকে আপনারা নিম্ন রক্ত চাপ কী এবং কোন কোন খাবার খেলে আপনি নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.