বাড়তি ওজন যেমন চিন্তার কারন, ঠিক তেমনি কম ওজনের কারনেও আমাদের নান ভোগান্তি এবং রোগবালাই এর সম্মুক্ষীন হতে হতে। অতিরিক্ত শুকনো কাউকে দেখলেই মনে হয় সে বোধহয় অপুষ্টিতে ভুগছে। এমনকি দৈহিক সৌন্দর্য্য এর পিছনেও বড় বাধার কারন হয় এই কম ওজন। তাই অনেকেই নিজের ওজন কে বাড়িয়ে তুলে পার্ফেক্ট হতে যান।
ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঘি এর উপকারিতা অনেক। সঠিক পদ্ধতি অনুসরন করে ঘি খেলে আপনি খুব সহজেই নিজের ওজন বাড়িয়ে ফেলতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘি কীভাবে আপনার ওজন বাড়াবে এবং ফিট ও সুস্থ্য থাকার জণ্য আমাদের করনীয় সকল বিষয় সম্পর্কে।
কীভাবে বুঝবেন আপনি কম ওজনের অধিকারি?
একজন মানূষের দৈহিক গঠনে তাকে শুকনো মনে হলেই যে, তিনি কম ওজনের অধিকারি বিষয় টি এমন না। একজন মানুষের পার্ফেক্ট ওজন নির্ভর করে তার উচ্চতার উপরে। উচ্চতার সাথে ওজন পরিমাপের এই পদ্ধতিকে বলা হয় BMI পদ্ধতি। BMI এর পূর্ন রুল হলো Body Mass Index.
এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি খুব সহজে আপনার সুষম ওজন নির্ধারন করতে পারবেন এবং খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার শরীরের ওজন টি আপনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন কিনা! একজন মানূষের BMI যদি ১৮.৫ এর নিচে হয়ে থাকে তাহলে সে কম ওজনের অধিকারী। অন্যদিকে কারও BMI এ পরিমান যদি ১৮.৫ থেকে ২২.৯ এর মাঝে হয়ে থাকে তাহলে সে আদর্শ ওজনের অধিকারী।
একজন মানূষ যখন তার আদর্শ ওজন সম্পর্কে জানতে পারবেন তখন সে খুব সহজেই তার দৈনিক কি পরিমান খাবার খাওয়া উচিত সেই সম্পর্কে ধারনা পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে যদি আপনার ওজন কম হয়ে থাকে তাহলে দৈনিক অধিক পরিমানে ক্যালরি গ্রহন করে আপনিও আদর্শ ওজনের অধিকারি হতে পারবেন। খুব সহজে যেভাবে BMI পরিমাপ করবেন-
BMI= ( ওজন ÷ উচ্চতা২)
এখানে উচ্চতা ২ এর অর্থ হলো = উচ্চতা X উচ্চতা
এক্ষেত্রে ধরুন করিম সাহেবের ওজন ৫০ কেজি এবং উচ্চতা ১.৭ মিটার ।
তাহলে তার BMI হবে= ৫০÷১.৭X ১.৭
এখানে BMI পরিমান হবে ১৭.৩০। আমরা জানি জানি যে আদর্শ BMI শুরু হয় ১৮.৫ থেকে। যেহেতু এখানে করিম সাহেবের BMI ১৭.৩০ তার মানে তিনি কম ওজনে ভুগছেন। এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই নিয়ম মেনে সঠিক ক্যালরি যুক্ত খাবার খেতে হবে।
কম ওজনের কারন
ওজন কম হওয়ার বেশ কিছু কারন থাকতে পারে। এমনকি হুট করে অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া স্বাস্থ্য এর জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঠিক কি কি কারনে আপনার ওজন কমতে পারে।
পর্যাপ্ত সুষম খাবার না খাওয়া
ওজন কমে যাওয়ার পিছনে এটি একটি অন্যতম প্রধান কারন। একজন মানুষ পর্যাপ্ত পরিমানে খাবার গ্রহন না করলে একদিকে যেমন সে দ্রুত শুকিয়ে যাবে ঠিক সেই সাথে তার শক্তি ক্ষমতা ও দিন দিন হ্রাস পাবে। আমাদের সকলের উচিত দৈনিক পরিশ্রমের ফলে যে পরিমান ক্যালরি আমাদের শরীর থেকে নষ্ট হয় ঠিক সেই পরিমান ক্যালরি খাবারের মাধ্যমে গ্রহন করা। তাই দৈনিক খাবার তালিকায় সুষম খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, শাকসবজি, বাদাম,ইত্যাদি রাখুন।
ডায়াবেটিকস
বর্তমান সময়ে একটি মরন ব্যাধি এর নাম হলো ডায়েবেটিকস। বিশেষ করে টাইপ ওয়ান ডায়েবেটিকস এর আক্রমনের ফলে মানুষ দ্রুত শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এমনকি ডায়াবেটিকস এর সঠিক চিকিৎসা না নিলে এটি আক্রান্ত ব্যাক্তির নান শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
শুনতে অবাক মনে হলেও অতিরিক্ত মানুষিক দুশ্চিন্তা আপনার স্বাস্থ্য এর জন্য ক্ষতিকর। আপনি যদি মানুষিক অবসাদে ভুগে থাকেন তাহলে একটা সময় দেখবেন আপনার দ্রুত ওজন কমতে শূরু করেছে এবং আপনিও ধিরে ধিরে দূর্বল হতে শুরু করেছেন।
হরমোনাল সমস্যা
শরীরের অভ্যন্তরে হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারনেও ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে। অথবা কেউ যদি কোনো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রেও ওজন কমে যেতে পারে।
ঘি খেলে কি ওজন বাড়বে
শারীরিক কোনো অসুবিধা বা গুরুতর কোনো হরমোনাল প্রব্লেম না থাকলে নিয়মিত ঘি খেলে এটি আপনাকে স্বাস্থ্যবান হতে সাহায্য করবে। ঘি তে রয়েছে ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ভিটামিন বি ১২, ম্যাগনেসিয়াম , আয়রন সহ আরও অনেক পুষ্টিউপাদান যা আমাদের শরীর কে ফিট রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে ঘি আমাদের রোঘ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
ঠিক এই কারনেই ঘি কে সুপার ফুড নামেও বলা হয়ে থাকে। মানব দেহে ঘি এর উপকারিতা এতো বেশী যে অনেক ডাক্তার একজন সুস্থ্য ব্যাক্তিকে দৈনিক ১ থেকে ২ চা চামচ ঘি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ঘি তে থাকা ক্যালরি একজন ব্যাক্তির ওজন বৃদ্ধি করতে সক্ষম। দ্রুত ওজন বাড়ানোর জন্য আপনি নির্দিষ্ট কিছু খাবারের সাথে ঘি খেতে পারেন। যেমন ভাতের সাথে ঘি, ডালের সাথে ঘি, ঘি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন মিষ্টান্ন, ঘি দিয়ে মাছ বা ডিম ভাজা ইত্যাদি।
ওজন বাড়ানোর জণ্য যা করনীয়
শুধু ঘি খেলেই ওজন বাড়বে বিষয় টি কিন্তু এমন না। আপনি যদি ঘি এর সাথে অনান্য পুষ্টিকর ও ক্যালরি যুক্ত খাবার না খান এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাবন না করেন তাহলে ঘি খেয়েও সুফল পাবেন না। আর হ্যা অতিরিক্ত ওজন লাভের আশায় কেউ ভুলেও অধিক পরিমানে ঘি খাবেন না। এতে হীতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা টাই বেশী। দ্রুত ওজন বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু খাবার অনেক উপকারি।
- ভাত: ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভাত বেশ কার্যকরী। এছাড়া ভাতে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি এর যোগান দেয়।
- দুধ: খাটি দুধে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস যা ওজন বারাতে এবং শরীর কে ফিট রাখতে সাহায্য করে।
- খেজুর: শুধু ওজন না বরং শক্তি বৃদ্ধিকারক হিসেবে খেজুর অনেক উপকারি। হাদিসে রয়েছে খেজুর এবং শশা একত্রে মিলিয়ে খেলে এটি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
- বাদাম ও কিসমিস: বাদাম ও কিসমিসে রয়েছে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন ও ফাইবার। তাই এটি ওজন বারাতে সাহায্য করে। দ্রুত ওজন বাড়াতে চাইলে দৈনিক বাদাম এবং কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস গরে তুলুন। বিশেষ করে বাদাম ও কিসমিস রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেটি সকালে খালি পেটে খেলে বেশি সুফল লাভ করা সম্ভব।
এছাড়া ওজন বাড়ানোর জন্য খাবারের তালিকায় রাখুন আলু, মিষ্টিকুমড়া, অ্যাভোকোডা, পিনাট বাটার, ডার্ক চকলেট, মাছ, মাংস, ডিম, মিষ্টি খাবার ইত্যাদি।
ঘি এর পুষ্টি উপাদান, প্রয়োজনীয়তা ও ঘি খাওয়ার সতর্কতা
ঘি এর তৈরি কিছু মজাদার আইটেম
একঘেয়েমী খাবার কার ভালো লাগে বলুন। শুধু ঘি খেতে অনেকেই পছন্দ করেন না। তাদের জন্য আর ঘিয়ের তৈরি কিছু মজাদার রেসিপি সম্পর্কে জানাবো।
- ঘিয়ের খিচুড়ি।
- ঘি দিয়ে তৈরি পায়েস।
- ঘিয়ের নাড়ু।
- ঘি দিয়ে রোস্ট।
- ঘিয়ে ভাজা বেগুন।
- ঘি স্পেশাল মিষ্টি
উপসংহার
ওজন বাড়াতে চাইলে পর্যাপ্ত পরিমানে খাবার গ্রহনের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে অনেক ঔষুধ পাওয়া যায়, এগুলো সাময়িক ভাবে আপনার ওজন বৃদ্ধি করে থাকলেও পরবর্তিতে আপনার মারাত্নক ক্ষতি সাধন করতে পারে। তাই নিয়মিত পুষ্টি কর খাবার গ্রহন করুন এবং খাবার তালিকায় অবশ্যই খাটি ঘি রাখুন।