পুরাতন ঘি পুরাণ ঘৃত নামেও পরিচিত। ঘি আমাদের শরীরের জণ্য একটি সুপারফুড। ঘি নতুন হোক বা পুরাতন, ঘি এর উপকারিতা অপরিসীম। পুরনো খাবারের নাম শূনলেই আমার মাথায় আসে, এটি বোধহয় নষ্ট খাবার। কোনো কাজেই আর ব্যবহার করা যাবে না হয়তো ফেলেই দিতে হবে। তবে ঘি এর ক্ষেত্রে এই ধারনা টি সম্পূর্ন ভুল। দীর্ঘদিন বা পুরাতন হলেও যে খাবারের গুনাগুন আরও বৃদ্ধি পায় সেটা ঘি আর মধু সম্পর্কে না জানলে বুঝতাম ই না। তাই আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনাদের পুরাতন ঘি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
পুরাতন ঘি কী
ঘি তৈরি করে সেটিকে কয়েক বছরের জন্য সংরক্ষন করা হলে তাকে পুরাতন ঘি বলা হয়। ভারতের অনেক স্থানীয় ব্যাক্তি ঘি তৈরি করে সেটিকে পাত্রে রেখে মটির নিচে পুতে রাখেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। বলা হয়ে থাকে যেই ঘি তো বেশি পুরনো সেই ঘি নাকি ততো বেশি দামী। এমনকি ভারতের অনেক স্থানে ১০০ বছরের ও বেশী পুরনো ঘি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। প্রাচীন কাল থেকেই ঘি এর ব্যবহার বিধি লক্ষ্য করা যায়। এমনকি প্রাচীন বৈদ্য রাও বিভিন্ন চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই ঘি এর ব্যবহার করতেন। ঘি আমাদের জন্য একটি পজিটিভ সুপার ফুড।
ঘি এর পুষ্টি উপাদান
ঘি তে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য উপকারি চমৎকার সব পুষ্টিউপাদন। এই উপাদান গুলো আমাদের শরিরের সুপারফুডের ন্যায় কাজ করে।
- ভিটামিন A: ভিটামিন এ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন অর্গান সুস্থ্য রাখার পাশাপাশি প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে থাকে।
- ভিটামিন কে: ভিটামিন কে শরীরের রক্ত জামাট বাধতে সাহায্য করে থাকে।
- ভিটামিন ডি: ভিটামিন ডি শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যাথা কমাতে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে থাকে।
- অ্যান্টিওক্সিডেন্ট: এটি আমাদের শরির কে রোগ জীবানুর হাত থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ব্যাটাইরিক এসিড: এই এসিড আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।
- ব্রেইন টনিক: এটি আমাদের মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশের করে শীশুদের ব্রেইন ডেভেলোপ এর জন্য এটি দারুন উপকারি।
এছাড়াও ঘি তে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, আয়রন সহ আরও অনেক পুষ্টি উপাদান। ঘি তে থাকা এই উপাদান গুলো আমাদের শরীর কে ভিতর থেকে পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে। ফলে কেউ যদি নিয়মিত পরিমিত পরিমানে ঘি খায় তাহলে সে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পেয়ে থাকে।
ঘি এর উপকারিতা
- ঘি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
- দেহের সকল কোষের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
- শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে।
- শিতকালে সর্দি কাশী দূর করতে সাহায্য করে।
- রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
- ঘি শরীরর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- ঘি ত্বক এবং চুল সুন্দর রাখে।
- কোষ্টকাঠিন্য এর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- ঘি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ঘি আমাদের দেহে হরমোনের ভারসম্য বজায় রাখে।
- ঘি তে রয়েছে মশীঈয়াম এবং শর্ট চেইন ফ্যাটি এসিড। এটি আমাদের হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
পুরনো ঘি ব্যবহারের নিয়ম
দীর্ঘদিন যাবত ঘি সংরক্ষন করার ফলে অনেক সময় ঘি এর ঘ্রানের কিছুটা তারতম্য দেখা যায়। তবে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনি পুরনো ঘি তেও নতুন ঘি এর ঘ্রান ও স্বাদ খুজে পাবেন। দীর্ঘদিনের জমাকৃত ঘি এর মাঝে আপনি সামান্য পরিমানে দই ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে দই টাকে কিছুক্ষন জাল করে নিবেন। এরপর ঘি এর মাঝে দই মীশিয়ে অল্প কিছুক্ষন জাল করে সেটি ভালো ভাবে ছেকে নিয়ে ঠান্ডা করে কাচের পাত্রে রেখে দিবেন। দই এর পরিমান টা সবসময় খেয়াল রাখবেন। এক কেজি ঘি এর জন্য ২ টেবিল চামচ দই ই যথেষ্ট্য।
ঘি দীর্ঘদিন সংরক্ষন করার উপায়
সঠিক উপায় বা পদ্ধতি মেনে চললে আপনি দীর্ঘদিন ঘি সংরক্ষন করতে পারবেন। সখের খাবার যেনো নষ্ট না হয় সেই জন্য কি কি পদ্ধতি মেনে চলবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক-
ফ্রিজে সংরক্ষন করা
ঘি সংরক্ষন এর জন্য সেরা পদ্ধতি এটি। ঘি এর শেলফ লাইফ রয়েছে। সাধারনত ঘি এর সেলফ লাইফ ৩ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি দীর্ঘদিন ঘি সংরক্ষন করতে চান তাহলে নিশ্চিন্তে ফ্রিজে রাখতে পারেন।
ঘি কিভাবে তৈরি করে এবং ঘি খাওয়ার নিয়ম
রোদে রাখা
সূর্যের আলো তে রয়েছে ভিটামিন ডি, যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। অন্যদিকে এই সূর্যের রশ্নি বিভিন্ন খাবার কে ক্ষতিকত ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন হতে রক্ষা করে। আপনি ঘি সংরক্ষনের জন্য আপনি মাঝে মাঝে ঘি রোদে দিতে পারেন। বিশেষ করে শীতকালে ঘি জমে গিয়ে থাকে। এই সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঘি রোদে রাখুন। এতে ঘি এর গুনগত মান যেমন অক্ষুন্য থাকবে সেই সাথে সহজে ঘি ব্যবহারের সুবিধা ও পাবেন।
ভেজা পাত্রে ঘি না রাখা
কথায় বলে তেলে জলে মেশে না। ঠিক তেমনি যদি ঘি এর মাঝে পানি মিশ্রিত হয় তাহলে সেই ঘিয়ের গুনগত মান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ঘি সংরক্ষনের জণ্য সবসময় শুকনো এবং বাতাস নিরোধী পাত্র ব্যবহার করুন।
ঘি কি নষ্ট হয়?
প্রতিদিন কত রকমের খাবার কিনি আমরা! দোকানে গেলেই কিছু কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে মুল্য এবং এক্সপায়ার্ড ডেট চেক করা হয়। কারন সকল খাবারই পচনশীল। প্রায় সব খাবারের ই ভালো থাকার একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। তবে ঘি আর মধুর ক্ষেত্রে এটি একটু ব্যাতিক্রম। আপনি চাইলে সঠিক কৌশল অবলম্বন করে দীর্ঘদিন এই ঘি কে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
ঘি এর গুনগত মান সহজে নষ্ট হয় না। ঘি এর স্ফুটাংক অনে বেশী। ঘি কে প্রায় ২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট পর্যন্ত গরম করা যায়। অথচ এই চেয়ে কম তাপমাত্রা তেও অনান্য তেল গরম করলে সেটির গুনগত মান একদম নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া ঘি তে থাকা এন্টিওক্সিডেন্ট যেমন আমাদের শরীর কে রোগ জিবানুর হাত থেকে রক্ষা করে ঠিক তেমনি এতে থাকা এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দীর্ঘসময় যাবত ঘি কে ক্ষতিকত ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এতে দীর্ঘদিন ঘি ভাল থাকে।
রূপচর্চায় পুরনো ঘি এর ব্যবহার
রুপচর্চায় ঘি এর ব্যবহার বেশ প্রাচীন কাল থেকেই। ঘি এর উৎপত্তি শুরু হয়েছিলো ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে। তখন থেকেই রাজা মহারাজাদের খাদ্যতালিকায় ছিলো ঘি এবং রানী ও উচ্চবিত্তরা রুপচর্চায় এই ঘি ব্যবহার করব। পরবর্তিতে বৈজ্ঞানিক ভাবেও এই ঘি এর উপকারিতা বা ব্যবহার বিধি সম্পর্কে সকলে জানতে পেরেছে।
- ঘি বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
- ঘি ত্বকের উজ্বলতা বৃদ্ধি করে ।
- ত্বকের মসৃনতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে।
- চুলের রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে।
- ঘি ত্বকের কোষের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফলে ত্বক গভীর থেকে পূষ্টিলাভ করে এবং ত্বক ও সুন্দর হয়ে উঠে।
উপসংহার
ঘি এর আরেকটি নাম হলো পজেটিভ ফুড। সত্যি ! ঘি এর উপকারিতা অনেক বেশি। যেহেতু ঘি পুরনো হলে এর উপকারিতা ও বৃদ্ধি পায় তাই আমাদের দৈনিক পরিমিত পরিমানে ঘি খাওয়া উচিত। এছাড়া যারা সৌন্দর্য্য সচেতন আছেন তারা ও রূপচর্চায় পুরনো ঘি এর ব্যবহার করতে পারেন।