গরমে স্বস্তি পেতে একগ্লাস লেবুর শরবত অমৃত। প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর থেকে ঘাম ঝরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়। শরীর দুর্বল হয়ে পরে ও তৃষ্ণা অনুভব হতে থাকে। তাই গরমে ফলের শরবত পান করা বেশ উপকারী। ঘরে বসেই দেশীয় ফল দিয়ে তৈরি করা যায় শরবত। চলুন সহজ উপায়ে ফলের শরবতের রেসিপি জেনে নেওয়া যাক।-
গরমে ফলের শরবত
মহব্বতের শরবত
“মহব্বতের শরবত” যা ইন্ডিয়াতে খুব ট্রেন্ডি। বর্তমানে আমাদের দেশেরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় সকলেই এই শরবত বাসায় বানিয়ে খেয়েছেন। এই শরবতের প্রধান উপকরণ হলো তরমুজ ও দুধ। যা ঝটপট তৈরি করা যায়।
উপকরণ
- আধা লিটার দুধ,
- কনডেন্স মিল্ক ১/৪ কাপ
- রুহ আফজা ৩ টেবিল চামচ
- গোলাপ জল ১ টেবিল চামচ
- বেশ কিছু আইস কিউব
তরমুজের একটি ফালি
প্রণালী
দুধ ভালো করে জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এরমধ্যে চিনির বিকল্প হিসেবে কনডেন্স মিল্ক দিতে হবে। কেউ চাইলে শুধু চিনির সিরা পাতলা করে তৈরি করে ঠান্ডা করে নিতে পারেন। রুহ আফজা, গোলাপ জল ও আইস কিউব দিয়ে নেড়ে নিতে হবে। এরপরে তরমুজের ফালি ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। তরমুজের বিজ ফেলে দিতে হবে। সবগুলো উপকরণ মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মহব্বতের শরবত।
তরমুজের শরবত
গরমে তরমুজ ফলটি বেশ জনপ্রিয়। এতে প্রায় ৯০ শতাংশ পানি ও অনেক পুষ্টিউপাদান রয়েছে। যা আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে তাকে। সাধারণত ফলটি সরাসরি খেয়ে থাকি। এছাড়াও এই ফলের শরবত খেতেও অনেক সুস্বাদু। সহজ একটি রেসিপি দেওয়া হলো যা খেলে আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।
উপকরণ
- মাঝারি সাইজের একটি তরমুজ
- বিট লবন ১ চা চামচ
- চিনি স্বাদ মতো
কয়েকটুকরো বরফ
প্রণালী
তরমুজ টুকরো করে বীজ ছাড়িয়ে নিতে হবে। এবার সবগুলো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ছাকনিতে ছেকে একটি পাত্রে ঢেলে নিতে হবে।
লেবুর শরবত
গরমে অন্য ফলের শরবত খাওয়া মিস হলেও লেবুর শরবত খাওয়া বাদ যাবেনা। আর যায় হোক লেবুর শরবত চাই চাই। গরমের প্রশান্তি জোগাতে লেবুর শরবত অসাধারণ কাজ করে। বাহিরেও লেবুর শরবত বিক্রি করা হয়।
উপকরণ
- লেবুর রস ১ টেবিল চামচ
- স্বাদমতো চিনি
- ১ চিমটি লবন
২৫০ মিলিলিটার ঠান্ডা পানি
প্রণালী
একটি গ্লাসের মধ্যে সবগুলো উপকরণ দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। ব্যস হয়ে গেলো ঠান্ডা
ঠান্ডা লেবুর শরবত। এই শরবতে কেউ চাইলে ১ চা চামচ ইসবগুলের ভুষি ব্যবহার করতে পারেন। এটি পেট পরিষ্কার ও ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।
বাঙির জুস
গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বাঙি ফল মিষ্টি কম হওয়ায় অনেকে খেতে পছন্দ করেন না। তারা চাইলে বাঙির জুস বা শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। এই জুস খেতে অসাধারণ। এতে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। ত্বকের কোষ পরিষ্কার করে, মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে। এছাড়াও খাবারের অরুচি দূরে করতে বেশ কার্যকরী।
উপকরণ
- বাঙি
- চিনি স্বাদমতো
- বিটলবন
- লেবুর ১টি স্লাইস
প্রণালী
বাঙির খোসা ছিলে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এরপরে টুকরোগুলো একটি ব্লেন্ডারে দিতে হবে। চিনি, বিটলবন ও লেবুর রস ও ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। জুস ঘন হয়ে গেলে পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি গ্লাসে জুস ঢেলে নিয়ে এরমধ্যে কয়েকটুকরো বরফ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
তেঁতুলের শরবত
গরমের তেঁতুলের শরবত খেলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এতে ভেষজ গুণ ও অনেক পুষ্টি রয়েছে। যা শরীরের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হজমে সহায়তা, পেটের সমস্যা দূর করে। এছাড়াও স্কার্ভি রোগের জন্য বেশ উপকারী। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা এই শরবত কম খাবেন।
তেঁতুলের আচারের রেসিপি, গুনাবলি এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি
উপকরণ
- তেঁতুলের ক্বাথ আধা কাপ
- চিনি আধা কাপ
- লবন স্বাদমতো
- বরফ কুচি ১ কাপ
- পানি ২ কাপ
- মরিচের গুড়ো আধা চা চামচ
প্রণালী
সবগুলো উপাদান একটি ব্লেন্ডারের সাহায়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপরে কিছুক্ষণ ফ্রিজের নমলাম তাপমাত্রায় রেখে ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে হবে।
কমলার জুস
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কমলা ফলটি আমাদের সকলের পরিচিত। এই ফলের জুস প্রদাহ প্রতিরোধকারী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। দেহের প্রদাহের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কমলার জুস বেশ কার্যকরী। এছাড়াও ত্বকে সৌন্দর্য, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
উপকরণ
- কমলা ৪টি
- চিনি হাফ কাপ
- লেবুর রস ১ চা চামচ
- বিটলবন সামান্য পরিমাণে
- পানি ১ কাপ
- বরফের টুকরো ৪/৫টি
প্রণালী
কমলার খোসা ছাড়িয়ে এর মধ্যে থাকা বীজ বের করে নিতে হবে। এবার ব্লেন্ডারের মধ্যে সবগুলো উপকরণ দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপরে একটি ছাকনির সাহায্যে ছেকে নিতে হবে।
কাচা আমের জুস
আমের সিজনে খুব সহজেই তৈরি করা যায় আমের জুস। এটি খেলে রিফ্রেশিং লাগে। শুধু তাই নয়, রয়েছে বেশ উপকারীতা। যেমন ওজন কমাতে, দাঁতের জন্য, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য। তবে চিনি ছাড়া আমের জুস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
উপকরণ
- কাচা আম ১টি
চিনি ৫-৬ চা চামচ - গোল মরিচ ১ চামচ
- বিটলবন ১ চামচ
- কাচা মরিচ ২টি
- লবন স্বাদমতো
- পানি ৫০০ মিলিলিটার
প্রণালী
কাচা আমগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। এরপরে গ্রেটার দিয়ে গ্রেট করে নিতে হবে। ব্লেন্ডারে সবগুলো উপকরণ দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। পরিবেশনের সময় বরফ কুচি দিতে হবে।
বেলের শরবত
সুপরিচিত দেশীয় একটি ফল হলো বেল। এটি রমজানের ইফতারে পরিবেশন করে থাকি।
এই শরবত তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগান দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেলের শরবত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ও পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ১০০ গ্রাম বেলে ১৪০ গ্রাম ক্যালরি থাকে যা শরীরের শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
একটি বড় সাইজের পাকা বেল নিতে হবে। তারপরে বেল ফাটিয়ে এরমধ্যে থাকা শাশ বের করে বাটিতে নিতে হবে। শাশের মধ্যে থাকা বীজ যতটা সম্ভব বেছে ফেলে দিতে হবে। তারপরে অল্প পরিমাণে পানি নিয়ে চটকিয়ে নিতে হবে। এবার বেলের ক্বাধ একটি ছাকনিতে ছেকে নিতে হবে।
উপকরণ
- বেলের ক্বাথ ২০০ গ্রাম
- চিনি ৫০ গ্রাম
- লবন সামান্য পরিমাণে
- দুধ ৩০০ মিলিগ্রাম
প্রণালী
দুধের মধ্যে সবগুলো উপকরণ দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। চিনি গলে গেলে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলেই পরিবেশনের উপযুক্ত হয়ে যাবে। চিনির পরিমাণটি নির্ভর করতে বেল কতটা মিষ্টি। কারণ সব বেলের মিষ্টি একরকম হয়না।
প্রণালী
একটি গ্লাসে সামান্য পরিমানে বেলের ক্বাথ ও ঠান্ডা পানি দিয়ে মিশিয়ে এই শরবত পান করা যাবে। চাইলে একটু গুড় ও বিটলবন ব্যবহার করা যাবে।
গরমে ফলের শরবত খাওয়ার উপকারিতা
- মস্তিষ্কের প্রধান খাদ্য হলো গ্লুকোজ। ফলের শরবত আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ফলে বিদ্যমান পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। এমনি এটি স্নায়বিক দুর্বলতা দূর করে থাকে।
- গরমে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। আর এই ফলের রস পানিশূন্যতা দূর করে শরীরের প্রতিটি কোষকে কর্মক্ষম রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ফলের শরবত
- আয়রন, ভিটামিন, জিংক, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স উপাদান বিদ্যমান থাকে যা আমাদের ত্বক ও চুলকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে।
উপরোক্ত আলোচনায় ফলের শরবতের উপকারীতা ও গরমের ক্লান্ত ভাব দূর করে শরীরে প্রশান্তি আনতে বেশ কিছু ফলের সহজ শরবতের রেসিপি দেওয়া হয়েছে। আপনার পছন্দের ফল দিয়ে বাসায় তৈরি করে নিতে পারবেন প্রাণ জুরানো শরবত। যা আপনার ক্লান্তি ভাব দূর করে শরীরে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে।