সুস্থ থাকতে হলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রয়োজন। এবং স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে উপকার পেতে সঠিক পদ্ধতি মেনেই খাবার গ্রহন করা উচিত। সারাদিন সুস্থ থাকতে সকালের নাস্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালের ভারী ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। এতে সারাদিন কাজ করার জন্য শক্তি পাওয়া যায়।
কর্মব্যস্ততায় অনেকেই সকালের খাবার খেতে পারেন না। আবার অনেকে সকালের নাস্তায় তেমন গুরুত্ব দেন না। তবে সকালে ঠিকমতো খাবার না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে পরে। মস্তিষ্ক কাজ করে না এবং সারাদিনের কাজের পরে ক্লান্তি চলে আসে। তাই সকালে আমরা কি নাস্তা করছি তা খেয়াল রাখা উচিত। চলুন জেনে নেই, সুস্থ থাকতে সকালে যেসকল খাবার খাওয়া উচিত।
সকালের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা
খাবার আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। কাজ করার শক্তি জোগাড়। তাই সকালের শুরুটা যেনো স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে শুরু করা যায় এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা জরুরী। সকালের জন্য পুষ্টিকর খাবারের তালিকা একনজনে দেখে নেওয়া যাক-
ডিম
ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। এছাড়াও ভিটামিন, আয়রণ, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিউপাদান রয়েছে। এতে থাকা ভিটামিন ই আমাদের কোষে ফ্রি র্যাডেকেল ধ্বংস করে দেয়। নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এমনকি চোখের জন্য বেশ উপকারী। চোখের ছানি পড়া দূর করে। তাই সকালের নাস্তায় অবশ্যই ডিম রাখা উচিত। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন দুইটি ডিম খাওয়াই যথেষ্ট।
তাজা ফল
সকালের নাস্তায় তাজা ফল রাখা উচিত। ফলের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার রয়েছে। যা শরীরের ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। শরীরের শক্তি উৎপন্ন হয়। অনেকের ধারণা খালি পেটে কখনই ফল খাওয়া ঠিক না । এতে অ্যাসিডিটি বাড়ে। এই ধারণাটি সঠিক নয়। ফলে থাকা সম্পূর্ণ ভিটামিন পেতে তাজা ফল খাওয়া উচিত।
চিয়া সিড
চিয়াসিডকে বলা হয় সুপারফুড। অর্থাৎ দেহের সকল প্রয়োজনীয় পুষ্টিউপাদান বিদ্যমান থাকায় এতে সুপারফুডের তালিকায় রাখা হয়েছে। এতে দুধের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭গুন বেশি ভিটামিন সি, পালংশাকের চেয়ে ৩গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিমের চেয়ে ৩গুণ বেশি প্রোটিন, স্যামন মাছের চেয়ে ৮গুণ বেশি ওমেগা-৩ রয়েছে।
সুস্থ থাকার জন্য খাবারের তালিকা – সুস্থতার অর্গানিক সমাধান
সকালে খালি পেটে চিয়াসিড খেলে পাওয়া যাবে নানার উপকারীতা। শরীরের টক্সিক পদার্থ বের করেতে সাহায্য করে। ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী। পাশাপাশি ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে।
কাঠ বাদাম ও কাজু বাদাম
ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর কাঠ ও কাজু বাদাম পানিতে ভিজালে এর পুষ্টিগুণ বেড়ে যায়। আগের দিন রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। এতে ভিটামিন ই, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এটি হজমশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
কিসমিস
কিসমিস একটি ড্রাই ফ্রুট্স। এটি এমনি কাচা খাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন পদের রান্নার মধ্যে ব্যবহার করা হয়। এটি রাতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। ভেজানো কিসমিসে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও অন্যান্য উপাদান যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
ওটস
সকালের নাস্তায় ওটস হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। অনেকেই দুধের সাথে মিশিয়ে ওটস খেয়ে থাকেন। এটি স্মুদি হিসেবেও খাওয়া যায়। শরীরের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি জোগাতে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত পরিমানে খাওয়া যাবেনা। এতে হজমের সমস্যা বাড়াতে পারে।
লেবু ও মধু
সকালে খালি পেটে লেবু ও মধুর পানি খেলে পাকস্থলীতে থাকা টক্সিক বের হয়ে যায়। ফলে বিপাকক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। ত্বক পরিষ্কার হয় ফলে ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ঠান্ডা কাশির সময় এই পানীয় পান করলে দারুন কাজ করে। তবে যাদের লেবুতে গ্যাসের সমস্যা আছে, তারা চাইলে শুধু মধু পানিতে মিলিয়ে খেতে পারেন।
দই
দেহের জন্য বেশ কার্যকরী একটি খাবার দই। সকালে দই খেলে শরীরে অনেক এনার্জি পাওয়া যায়। এবং সহজে ক্লান্তি ভাব আসেনা। তাই সকালের খাবারের সাথে দই রাখা যেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর চর্বি
বিভিন্ন প্রকার বাদাম ও বীজে স্বাস্থ্যকর চর্বি রয়েছে। সকালের নাস্তায় একমুঠো বাদাম ও বীজ খাওয়া স্বাস্থ্যকর। এটি হজমে উন্নতি করে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অবদান রয়েছে। তবে এগুলো পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে বা গ্যাসের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শাকসবজি
আমরা সকলেই জানি শাকসবজি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় শাকসবজি রাখা উচিত। এটি শরীর ভিটামিন, খনিজ সরবরাহ করে থাকে। সকালের নাস্তায় শাক খাওয়া ভালো।
শস্য
সকালে ভাত, লাল আটা, লাল চাল,ওটমিল, গম , ভুট্টা ইত্যাদি শস্য দিয়ে তৈরিকৃত খাবার খাওয়া উচিত। এসকল খাদ্যে শর্করা থাকে যা শরীরের শক্তি উৎপাদন করতে সাহায্য করে।
সুস্থ থাকতে যেসকল খাবার সকালে খাওয়া যাবেনা
অনেকেই সকালের নাস্তায় যেনো তেনো করে খাবার খেয়ে থাকেন। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা যায়। পুরোদিনটাই পেটের অস্তস্তি ও ক্লাতিতে কেটে যায়। তাই পুরোদিন উপভোগ করতে সকালে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। এবং কিছু খাবার রয়েছে সেগুলো যতটা সম্ভব পরিহার করা জরুরী।
বেকারি আইটেম
বেকারি আইটেম যেমন কেক, পেস্ট্রে, বিস্কুট, পাউরুটি আমাদের অনেক পছন্দের খাবার। এই আইটেমগুলো বিকালের নাস্তায় রাখা উত্তম। সকালে এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এতে থাকা ইস্ট সকালে খেলে পাকস্থলীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ঝাল মশলাযুক্ত খাবার
সকালে খালি পেটে ঝাল ও মশলাদার খাবার খেলে অ্যাসিডিক বিক্রিয়া হয়ে পেটে জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই কখনোই খালি পেটে ঝালযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়।
চকলেট ও কোমল পানীয়
চকলেট বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রায় সকলের বেশ পছন্দ। তবে খালি পেটে খাওয়া একদমই উচিত নয়। বিশেজ্ঞদের মতে, উচ্চ শর্করাযুক্ত যেকোনো খাবার ও কোমল পানীয় খালি পেটে খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত। কারণ এতে অ্যাসিড ক্ষারের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
সাইট্রাসসমৃদ্ধ ফল
ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তবে সাইট্রাসসমৃদ্ধ ফল সকালে খালি পেটে কখনোই খাওয়া যাবে না। যেমন কমলা, আনারস, লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি। এতে মেটাবলিজম ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখে দেয়।
উপসংহার
সকালের নাস্তা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। যা সারা দিনের শক্তি যোগানোর পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। আমাদের সকলের উচিত সকালের নাস্তা পুষ্টিকর খাবার দিয়ে শুরু করা। খাবারের পাশাপাশি ব্যয়াম করাটাও একান্ত প্রয়োজন। আশা করছি সকালের নাস্তা নিয়ে আর কোনো অবহেলা নয়। সকালের নাস্তাটা শুরু হোক স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে।
সকালের নাস্তার আদর্শ সময় সকাল ৭ টাকা থেকে ৯টা পর্যন্ত। সকালে স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি নির্দিষ্টসময় মেনে খাবার গ্রহন করা উচিত। এবং প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।