সরিষা হলো বাংলাদেশের অণ্যতম পরিচিত একটি শস্যদানা। আজ আমাদের আলোচনার বিষয় সরিষা হলেও আলোচনায় কিন্তু সরিষার ফুল এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এর রূপে মুগ্ধ হয়নি এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। প্রতি বছর নভেম্বর, ডিসেম্বর জুড়ে সোস্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ডে থাকে এই সরিষা ফুলের সাথে সকল বয়সী মানুষের নানান ক্যামেরাবন্দি ছবি ও ভিডিও।
তবে সরিষার ফুল নিয়ে যে শুধু মানুষেরই উত্তেজনা বা আনন্দ তা কিন্তু নয় এটি পশু – পাখি, কীটপতঙ্গ সহ উপভোগ করে। বলা হয়ে থাকে মৌমাছিরা সর্ষে ফুলের মাঝে তাদের যৌবন ফিরে পায় আর। যাইহোক এতো এতো ট্রেন্ড এর মাঝে আমিও নাহয় ২ লাইন যোগ করি এরপর সরিষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি!
“হলুদের রূপসী তুমি, দূর-দূরান্ত জুড়ে-
মুগ্ধকর সৌন্দর্য্য তোমার, দেখি দুচোখ ভরে।
শীতের রানি তুমি কী অপরূপ শোভা-
তোমা মাঝে প্রাণের উচ্ছাস আর পাই কোথা?”
সরিষা কী
সরিষার ইংরেজি নাম Mustard. ব্রাসিকা বা ক্রুসিফেরি গোত্রের একটি দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। এটি একটি তেল ফসল। এর ডিম্বক বক্রমুখী। সরিষার দানা মশলা হিসেবেও ব্যাবহৃত হয়। এছাড়াও আরোও নানা রেসিপিতে এই দানা ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। সরিষা শাক আবার বাংলাদেশে জনপ্রিয়। সরিষা বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর উৎপত্তিস্থল এশিয়া। ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন রবি শস্য হিসেবে সরিষার চাষ হয়ে থাকে। সরিষা গাছের দৈর্ঘ্য ১ মিটার এর মতো হয়ে থাকে তবে, রাই সরিষা নামক জাত এর গাছ ২ মিটার পর্যন্ত উচু হতে পারে।
সরিষার বিস্তার/ পরাগায়ন পদ্ধতি
সরিষা ফুলে স্ব-পরাগায়ন ঘটে থাকে। স্বপরাগায়ন এর ফলে পরাগরেণুর অপচয় কম হয়, পরাগায়নের জন্য বাহক এর উপর নির্ভর করতে হয়না এবং পরাগায়ন নিশ্চিত হয়। এর ফলে নতুন যে উদ্ভিদ উৎপন্ন হয় তাতে বৈশিষ্ট্যের কোনো পরিবর্তন আসে না এবং কোনো একটি প্রজাতির চরিত্রগত বিশুদ্ধতা বজায় থাকে। তব এতে জিনগত বৈচিত্র্য কম থাকে। এই বিচার থেকে জন্ম নেওয়া নতুন গাছের অভিযোজন ক্ষমতা কমে যায় এবং অচিরেই প্রজাতির বিলুপ্ত ঘটে।
চাষ পদ্ধতি
সরিষা বীজ সাধারনণত ছিটিয়েই বপন করা হয়ে থাকে তবে, লাইন করে বুনলে পরিচর্যা করতে সুবিধা হয় এবং ফলনও ভালো হয়। যেমন সেচ দেওয়া, সার দেওয়া, বড় আগাছা হলে সেটি উপরে ফেলা ইত্যাদি সময়ে সুবিধা পাওয়া যায়।উপযুক্ত সময়ে সরিষা বপন করলে ভালো ফলনের পাশাপাশি রোগ বালাই এবং আবহাওয়া জনিত সমস্যা থেকে সরিষা রক্ষা করা যায়।
অঞ্চল ভেদে মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য কার্তিক মাস অবধি সরিষা বীজ বপনের সময় থাকে। এটাই উপযুক্ত সময়। বপনের কিছুদিন পরেই নিড়ানী দিয়ে ক্ষেতের আগাছা এবং ঘন সরিষা থাকলে সেগুলো ছাটাই করে ফেলতে হবে। মূলত সরিষা ক্ষেতে ২ বার নিড়ানী দিলেই হয়। বপনের ১৫-২০ দিনের পর একবার এবং ফুল আসার সময় দ্বিতীয়বার নিড়ানী দিলেই হবে। অনেকসময় দেখা যায় সময়ের অভাবে বা অবহেলার কারণে নিড়ানী সঠিকভাবে সঠিক সময়ে দেওয়া হয় না এতে ফলন কম হয় আর আগাছার পরিমাণ ও বেড়ে যায়। নিড়ানী দেওয়ার পরবর্তী কাজ হলো সেচ প্রদান করা।
বপনের ২৫ থেকে ২৫-৩০ দিনের মাঝে প্রথম সেচের ব্যাবস্থা করা ভালো আর পরবর্তী সেচ ৫০-৫৫ দিনের মাঝে দ্বিতীয় সেচের ব্যাবস্থা করা। সরিষা অনেকেই এসব পরিচর্যা ছাড়াই আবাদের চেষ্টা করে থাকে যার কারণে ফলন খুবই কম পায়। আর সরিষা চাষের মাটি, জাত এবং অন্যান্য সকল বিষয় বিবেচনা করে সার ব্যাবহার করতে হবে, এক্ষেত্রে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যাবহার এর থেকে জৈব সার ব্যাবহার উত্তম।
বাংলাদেশে সরিষা চাষ
সরিষা একটি তেল জাতীয় ফসল। তর্কসাপেক্ষে সরিষা তেল বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্য তেল। সিনিয়র তথ্য অফিসার মোঃ কামরুল ইসলাম ভূইয়ার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৩ সালে সরিষা চাষ হয় ৮ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। পুর্বের হিসাব করলে দেখা যায় ২০২৩ সালে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সরিষা চাষ করা হয়। বিভিন্ন জাতের সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪% তেল থাকে। দেশে বর্তমানে সরিষার তেল উৎপাদনের বাৎসরিক পরিমাণ প্রায় ৭ লক্ষ টন ( ২০২৩)। সরিষার থেকে প্রাপ্ত খৈল এ ৪০% আমিষ থাকে।
সরিষার প্রকারভেদ
বাংলাদেশে ৩ প্রকারের সরিষা চাষ করা হয়ে থাকে-
- মাঘী সরিষা
- রাই সরিষা বা বারি সরিষা
- ধলি সরিষা বা শ্বেতী সরিষা
দেশে এইসব সরিষা ছাড়াও বেশ কিছু উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এগুলো ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে। চলুন এবারে এই প্রধান ৩ প্রকারের সরিষার জাত সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
কোল্ড প্রেসড সরিষার তেল কি, ব্যবহারবিধি ও উপকারিতা
মাঘী সরিষা
মাঘী সরিষা লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। এর থেকে প্রাপ্ত তেল কালচে সোনালী রঙের হয়ে থাকে। মাঘী সরিষার তেল খাবারের রঙ ও স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে। অন্যান্য জাত এর তুলনায় মাঘী সরিষার তেল বেশি উন্নত এবং পুষ্টিগুণ বেশি।
রাই সরিষা বা বারি সরিষা
আমরা সবসময় যে কালচে বর্ণের ছোট দানার সরিষা দেখতে পাই সেটিই আসলে বারি সরিষা। এই সরিষা থেকে পাওয়া তেল সোনালী রঙের হয়ে থাকে, দেখতে চকচকে, বেশির ভাগ সময়ে এই জাতের তেলই ব্যাবহার করা হয়ে থাকে, এর দাম অনেক কম।
ধলি বা শ্বেতী সরিষা
এই সরিষার রঙ হালকা হলুদ কালারের হয়ে থাকে। এর থেকে প্রাপ্ত তেল ঘন/গাঢ় সোনালী বর্নের হয়। এর ঝাজের সাথে এক্সট্রা একটা ঘ্রাণ থাকে বলেই এই তেল অনেকে পছন্দ করে থাকে আবার অনেকে করেন না।
তেল উৎপাদনে এসকল জাত ছাড়াও অন্যান্য যে জাতগুলো রয়েছে সেগুলো তেল উৎপাদনে বেশ ভুমিকা রাখছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলো, বারি সরিষা- ৯, বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭, বিনা সরিষা-৪, বিনা-৯, বিনা-১০ এগুলো বাদে আরো নতুন কিছু জাত উদ্ভাবন হচ্ছে এবং পরীক্ষাকৃত ভাবে চাষ করা হচ্ছে।
সরিষা চাষের অঞ্চল
সরিষা চাষের জন্যে উত্তম মাটি দেশের উত্তর বা মধ্যাঞ্চলে হলেও সুনামগঞ্জের হাওড় অঞ্চলেও সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটেছে। হাওড় অঞ্চলে প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর মাটিতে সরিষা আবাদ হয়েছিলো ২০২৩ সালে। এছাড়াও হাওড় বেষ্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়ও আবাদ বেড়েছে সরিষার।তবে এসব ছাপিয়ে দেশের মধ্যাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলে প্রতিবছরই সরিষা উৎপাদনের রেকর্ড হয়। গত কয়েকবছর সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া জেলায় সরিষা আবাদ এর হার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
আর উত্তরের জেলা যেমন নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রামে প্রতিবছরই প্রচুর পরিমানে সরিষা আবাদ হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের মাটি এবং আবহাওয়া সরিষা চাষে উতকৃষ্ট। এসকল অঞ্চল ছাড়াও কুমিল্লা, জয়পুরহাট, মানিকগঞ্জ সহ সারাদেশেই সরিষা চাষের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। সরকারী ভাবে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সেটি পূরণের জন্যে অনাবাদি চরাঞ্চল, উপকূলের লবণাক্ত, হাওড় ও পাহাড়ি অঞ্চলকে তেল জাতীয় ফসল তথা সরিষা আবাদের আওতায় আনা হচ্ছে।
সরিষা চাষে বিশ্ব
শীর্ষ সরিষা উৎপাদনকারী দেশ গুলোর দিকে চোখ বুলালে আমরা দেখতে পাই-
১। ভারত
২। পাকিস্তান
৩। কানাডা
৪। নেপাল
৫। ইউক্রেন
৬। রাশিয়া
৭। চীন
৮। চেক রিপাব্লিক
৯। ফ্রান্স
১০। জার্মানি
বাংলাদেশ এ তালিকায় নেই তবে শীর্ষ ৫০ দেশের মধ্যে রয়েছে। এ তেল জতীয় ফসলের চাহিদা সারাবিশ্বে।
সরিষার রেসিপি
সরিষা তেল জাতীয় একটি ফসল তবে এটি নানাভাবে খাওয়া যায় বা ব্যাবহার করা যায় যেমন-
অনেকেই আছেন যারা কিনা রান্নার স্বাদ বাড়াতে সরিষা ব্যাবহার করে থাকেন। এটি অনেক পূরনো পদ্ধতি। তবে সরিষা যেকোনো খাবারের স্বাদ বাড়াতে পটু আপনি আপনার রান্নায় এটি ব্যবহার করেই নাহয় দেখুন একবার।
সরিষা ভর্তা
কাঁচা সরিষার সাথে পরিমাণ মতো কাঁচা লংকা সাথে পরিমান মতো লবণ পাটায় বেটে নিতে হবে বা ব্লেন্ডার এ ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তবে শিল পাটায় বেটে নেওয়াই উত্তম। এই ভর্তা শীতের সকালে/ বিকালে চিতই পিঠার সাথে আহা সে কি স্বাদ। শীতের সন্ধ্যেয় চিতই পিঠার সাথে সরষে ভর্তা ছাড়া যেন জমেই না।
সরষে ইলিশ
ইলিশ মাছ খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। ইলিশের পাতুরি, ভুনা, মালাইকারী সকলেই বেশ পছন্দ করে থাকেন। আপনারা চাইলেই একবার এই সরষে ইলিশ ট্রাই করতে পারেন। সরষে বেটে অন্যান্য মাছ ভুনার মতোই অন্যান্য উপাদান দিয়ে মাছ কষিয়ে নেওয়ার সময় সরিষা বাটা যোগ করতে হবে এবং ভুনা করে পরিবেশন করতে হবে।
কাসুন্দি
সর্ষের তেল দিয়ে বা সর্ষের তেল ছাড়াই শুকনো ও গুড়ো সর্ষে দিয়ে তৈরি করা যেকোনো আচারকেই কাসুন্দি বলা হয়। এই কাসুন্দি বিভিন্ন ধরণের খাবারে ব্যাবহার করা হলেও বর্তমানে বেশি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে বিভিন্ন ধরণের কাঁচা ফল মাখায়। বিশেষ করে পেয়ারা, আনারস, আমড়া, জলপাই, কাঁচা আম ইত্যাদির সাথে মাখিয়ে টক, ঝাল, মিষ্টি স্বাদ করা হয় আর খেতেও বেশ মজার হয়ে থাকে। এসব ছাড়াও সরিষার শাক ভাজি খাওয়া অনেকেই আবার সরিষা ফুলের বড়া তৈরি করে থাকেন। আরো বেশ কিছু রেসিপি রয়েছে সরিষার।
সরিষা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা সরিষা খাওয়ার উপায় গুলো জেনেছি এবারে সরিষা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
- অকাল বার্ধক্য রোধ করে: বয়সের আগেই অনেকের চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে। এই অকাল বার্ধক্য রোধে সরিষায় থাকা বিভিন্ন উপাদান কার্যকরী। এতে থাকা ভিটামিন এ, সি এবং কে আমাদের ত্বকের অকাল বার্ধক্য রোধ করে সাথে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতাও বজায় রাখে।
- ত্বক আদ্র রাখে: ত্বক ভালো রাখার জন্যে ভেতর থেকে আদ্র থাকা জরুরী। এই কাজে সাহায্য করে সরিষা। নিয়মিত সরিষা খেলে তা ত্বকের ভেতরের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ত্বকে ব্রণের সমস্যা হলে তা সারাতেও এটি কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: সরিষাতে থাকা কিছু উপাদান ক্যান্সার এর মতো মরণঘাতি রোগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। এতে আছে গ্লুকোসিনোলেটস এবং মাইরোসিনোজের মতো যৌগ। এই দুই উপাদান শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। যার ফলে নিয়মিত সরিষার তেল বা সরিষা দেওয়া খাবার খেলে এই অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হয়।
- মাথা ব্যাথা সারাতে সাহায্য করে: মাথা ব্যাথা উপশমে কার্যকরী ভূমিকা রাখে সরিষা। কারণ সরিষায় থাকে ম্যাগনেশিয়াম, এই উপাদান মাথা ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত সরিষা খেলে তা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকেও প্রশমিত রাখে। সেই সঙ্গে এটি শরীরের অন্যান্য ব্যাথা কমাতেও সাহায্য করে।
- হজমে সাহায্য করে: সরিষায় থাকা অনেকগুলো উপকারী উপাদান হজমে সাহায্য করে। হজম ক্রিয়ার জন্যে বেশ ভালো এই সরিষা। কেউ বদ হজমে ভুগে থাকলে নিয়মিত সরিষা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। আবার নিয়মিত সরিষা খেলে তা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য এর মতো সমস্যা হতেও মুক্তি দেয়। এটি দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে। আমাদের উচিত নিয়মিত সরিষা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
সরিষা আমাদের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখে। এর থেকে তেল, মধু এবং খৈল পাওয়া যায় যা আমাদের প্রতিদিনের নানা কাজে ব্যাবহৃত হচ্ছে। আমাদের সরিষার ফলন আরো বাড়ানো উচিত! সরিষার উৎপাদন বাড়াতে আমাদের সরকারের নেওয়া উদ্যোগ সফল হোক। আশা করছি আজকের এই ব্লগ থেকে আপনারা সরিষা সম্পর্কে সকল বিস্তারিত তথ্য জেনেছেন!!