“পদ্মার ইলিশ এবং পাবনার ঘি”, জামাইয়ের পাতে দিলে আর লাগে কি? কখনো কি শুনেছেন প্রাচীন বাংলার এই প্রচলিত প্রবাদ? প্রবাদ টি শুনে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমাদের গ্রাম বাংলায় ঠিক কতটা সুখ্যাতি রয়েছে এই ঘি এবং ইলিশের। শুধু তাই না ঘি এমন একটি পরিশুদ্ধ খাবার যেটি শুধু বাঙালি না বরং সারা বিশ্বের কাছে আজ পৃথিবীর অন্যতম বিশুদ্ধ খাবার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। আমাদের আজকের লেখায় আমরা ঘি কত প্রকার ও কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ঘি কত প্রকার
দুধের চূড়ান্ত এবং সর্বোচ্চ বিশুদ্ধতম রূপ হলো এই ঘি। ঘি দেখতে বেশ সাধারণ হলেও এটি একটি সুপারফুড। ঘি তে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ভাইরাল, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ভিটামিন যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশী উপকারী। ধোয়া উঠা গরম ভাতের সাথে এক চামচ ঘি এটা তো বাঙালিদের সবচেয়ে পছন্দের খাবার।
ঘি খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা, অপকারিতা, পুষ্টি উপাদান ও রূপচর্চা
আমরা যারা ঘি খেয়ে থাকি তারা নিশ্চয় খেয়াল করেছেন সব ঘি কিন্তু এক না। কোনো ঘি এর দানা বেশী, কোনোটা আবার দানা বিহীন একবারে তরল। আবার কিছু ঘি একদম সাদা, কিছু বা আবার হলদে বর্ণের। কখনো কি ভেবেছেন ঘি এর এসব তারতম্য ঠিক কি কারণে হয়ে থাকে?
মূলত ঘি এর সকল পার্থক্য হয়ে থাকে ঘি এর প্রকারভেদ এর উপর। ঘি তৈরি করা হয় তরল দুধ থেকে। আর এই তৈরি পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে ঘি দুই প্রকার।
- সরের ঘি বা গাওয়া ঘি।
- ক্রিমের ঘি।
গাওয়া ঘি কি ?
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে স্বরের ঘি নাকি গাওয়া ঘি কোনটা বেশি ভালো! মূলত স্বরের ঘি এবং গাওয়া ঘি একই। গাওয়া ঘি হলো সবচেয়ে বিশুদ্ধ, এবং পুরোপুরি ভেজাল মুক্ত ঘি। এই পদ্ধতিতে সরাসরি গরুর দুধ সংগ্রহ করে সেই দুধ চুলোয় জ্বাল দিয়ে সর সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই সর পুনরায় চুলোয় জ্বালিয়ে তৈরি করা হয় খাটি গাওয়া ঘি।
আপনি যদি সঠিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ঘি খেতে চান তাহলে খাটি গাওয়া ঘি হবে আপনার জন্য বেষ্ট অপশন। কড়া জ্বালে এই ঘি তৈরি করা হয় জন্য এই গাওয়া ঘি গুলো বেশ দানাদার হয়ে থাকে, এবং এটার ঘ্রাণ এবং স্বাদ কয়েক গুন বৃদ্ধি পায়।
ক্রিমের ঘি কি?
ক্রিমের ঘি তৈরির জন্য কাচা দুধ থেকে মেশিনের সাহায্য দুধ থেকে ক্রিম আলাদা করে নেওয়া হয়। এরপর সেই ক্রিম কে জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় ক্রিমের ঘি। ক্রিমের ঘি তৈরি পদ্ধতি খুব সহজ এবং বেশ কম সময়েই এই ঘি তৈরি করা সম্ভব হয়। তবে ক্রিমের ঘি এর চেয়ে গাওয়া ঘি এর স্বাদ তুলনামূলক কিছুটা বেশি।
গাওয়া ঘি নাকি ক্রিমের ঘি?
আমরা অনেকেই মনে করি যে স্বরের ঘি এবং গাওয়া ঘি এর মাঝে হয়ত বিশাল পার্থক্য আছে। আসলে বিষয় টি তেমন না! এই ঘি দুটোর মাঝে প্রধান পার্থক্য হলো এটি তৈরির পদ্ধতি। ঘি দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসেসে তৈরি করা হয়। তৈরি পদ্ধতির ভিন্ন তার কারণে ঘি এর ঘ্রাণ এবং স্বাদের কিছুটা তারতম্য থাকে। তবে ঘি এর কালার টা নির্ভর করে জ্বালের উপরে। ঘি যতো জ্বালে তৈরি করা যায় এটির কালার ততো গাঢ় হয় এবং মোটা দানা ও তৈরি হয়। ঘ্রাণের দিক থেকে ক্রিমের ঘি এর ঘ্রাণ টা একটু বেশী।
ঘি কিভাবে বানায়? ঘি বানাতে কোন দুধ ও কত লিটার লাগে?
গাওয়া ঘি এর ঘ্রাণ হালকা হয়। তবে স্বরের ঘি তৈরি করতে যেহেতু স্বর গুলো জমতে বেশ সময় লাগে এবং অনেক সময় নিতে এই স্বর গুলোকে জ্বাল দিয়ে ঘি তৈরি করা হয় তাই এটি কিছুটা সময় সাপেক্ষ পদ্ধতি। অন্যদিকে মেশিনের সাহায্য দ্রুত ক্রিম থেকে ঘি তৈরি করা যায়। তাই ক্রিমের ঘি এর চেয়ে স্বরের ঘি বা গাওয়া ঘি এর দামটা তুলনামূলক বেশী।
সাদা ঘি নাকি হলুদ ঘি, কোন রঙের ঘি বেশি স্বাস্থ্যকর?
ঘি এর কালার বা রং নির্ভর করে এটি জ্বালের উপর। তবে বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ ঘি দুইটি কালারে পাওয়া যায়।
- সাদা ঘি- মোষের দুধ থেকে তৈরি হয়।
- হলুদ ঘি- দেশি গরুর দুধ থেকে তৈরি হয়।
সাদা ঘি এর উপকারিতা
সাদা ঘি বা মহিষের দুধের তৈরি ঘি তে চর্বি এর পরিমাণ কম।মহিষের দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। সাদা ঘি শরীর এর ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হাড় কে শক্তিশালী করে এবং হৃদপিন্ডের পেশির কার্যকলাপ সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
হলুদ ঘি এর উপকারিতা
গরুর দুধ থেকে তৈরি হওয়া হলুদ ঘি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। গরুর দুধে রয়েছে এ২ প্রোটিন যা মহিষের দুধে নেই। তাই মহিষের দুধের তুলনায় গরুর দুধে প্রটিনের মাত্রা বেশী।এছাড়াও গরুর দুধে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ উপাদান ও ভিটামিন যা হৃৎপিণ্ড কে ভালো রাখতে এবং কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও গরুর দুধে রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিফাংগাল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের হজমে সহায়তা করে।
উপরিউক্ত আলোচনায় ঘি কত প্রকার ও কী কী সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি লেখাটি পড়ে ঘি সম্পর্কে আপনার ধারণা আরও পরিষ্কার হয়েছে।