You are currently viewing খাঁটি ঘি চেনার উপায়, দাম ও স্বাস্থ্য উপকারিতা  
খাঁটি ঘি চেনার উপায়

খাঁটি ঘি চেনার উপায়, দাম ও স্বাস্থ্য উপকারিতা  

ঘি খাওয়ার রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। ঘি আমাদের শরীরে সুপারফুডের ন্যায় কাজ করে। ঘি এর অসাধারন ঘ্রান এবং স্বাদের জন্য এটি ছোট বড় সকলের কাছেই বেশ পছন্দের একটি খাবার। দিন যতো বাড়ছে ততোই স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের কাছে বাড়ছে ঘি এর কদর। একসময় শূধু রাজাবাদশা দের খাবারে ঘি ব্যবহার করা হলেও এখন ঘি বাঙ্গালিদের কাছে বেশ সহজলভ্য এবং পছন্দনীয়।

দিন যতো বাড়ছে, ততোই ঘি এর চাহিদা বাড়ছে। আর ঠিক এটার ই সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ি নকল ঘি তৈরি করছেন। বাজারে অহরহ ঘি পাওয়া যাচ্ছে তবে এসব নকল ঘি এর মাঝে খাঁটি ঘি না চিনলে আপনার কষ্টে উপার্জিত টাকা এবং স্বাস্থ্য দুইটাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই আজকের এই লেখার মাধ্যমে আমরা জানবো, কীভাবে আপনি খাঁটি ও নকল ঘি খুব সহজে চিনতে পারবেন এবং খাটি ঘি কোথায় পাবেন এবং খাটি ঘি এর উপকারিতা গুলো কি কি। 

খাঁটি ঘি চেনার উপায় 

অনেকেই বলে থাকে ল্যাব টেষ্ট করা ছাড়া খাঁটি ঘি চেনা যায় না। তবে এটি পুরোপুরি সঠিক না। ল্যাব টেষ্ট ছাড়াও কিছু বিশেষ পদ্ধতি অনুসরন করে আপনি খুব সহজে বাসায় বসে খাটি ঘি যাছাই করতে পারবেন। 

হাতের তালুতে নিয়ে পরীক্ষা

ঘি যাছাই করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো হাতের তালুতে ঘি পরীক্ষা করা। এই পদ্ধতিতে আপনি প্রথমে হাতের তালুতে ১ চা চামচ ঘি নিবেন, এবার আপনার শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় যদি এই ঘি গলতে শূরু করে তাহলে বুঝে নিবেন এটি খাঁটি ঘি।  

খাঁটি ঘি চেনার উপায়

ঘ্রান 

ঘি এর নিজস্ব ঘ্রান থাকে। বিশেষ করে গাওয়া ঘি মিষ্টি ঘ্রান ও স্বাদ যুক্ত হয়। ঘি কেনার সময় অবশ্যই এটির ঘ্রাণ টা যাছাই করে নিবেন। ঘি থেকে যদি ডালডা, পামওয়েল কিংবা অন্য কোনো আর্টিফিশিয়াল গন্ধ পান তাহলে বুঝে নিবেন সেটি নকল ঘি। 

ঘি এর কালার বা রং 

ঘি সাধারনত দুইটি কালারের হয়ে থাকে। হলুদ এবং সাদা। মুলত গরুর দুধের তৈরি ঘি হলুদ এবং মোষের দুধের তৈরি ঘি সাদা বর্নের হয়ে থাকে। অনেক সময় জালের উপরেও ঘি এর কালার নির্ভর করে। তবে সাধারনত খাটি ঘি গাঢ়বাদামী বর্নের হয়ে থাকে। 

তাপের মাধ্যমে  পরীক্ষা 

একটি কড়াইয়ে ১ চা চামচ ঘি নিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। তাৎক্ষনিক সময়ের মাঝে যদি ঘি গলতে শুরু করে এবং গাঢ় বাদামী বর্ণ ধারন করে তাহলে বুঝে নিবেন এটি খাটি ঘি। অন্যদিকে ঘি গলতে যদি অনেক বেশী সময় লাগে এবং এটি ফ্যাকাশে হলদে বর্ণ ধারন করে তাহলে এটি অবশ্যই নকল ঘি। 

ফ্রিজে রেখে পরীক্ষা 

ফ্রিজে রেখে খুব সহজেই খাঁটি ঘি চেনা যাবে। এই জন্য প্রথমে একটি কাচের স্বচ্ছ বাটিতে ঘি গলিয়ে নিবেন। এরপর ঘি ফ্রিজে রাখবেন। এবার ঘি জমে গেলে এটির দিকে লক্ষ্য করুন। যদি ঘি একটি লেয়ারে জমে থাকে তাহলে এটি খাটি ঘি। তবে ঘি এর মাঝে যদি দুই বা ততোধিক লেয়ার দেখতে পান তাহলে এটি অবশ্যই ভেজাল মিশ্রিত ঘি। 

চিনির সাহায্য টেষ্ট 

একটি কাচের স্বচ্ছ বোতলে ঘি রাখতে হবে। এবার সেই ঘি এর মাঝে সামান্য চিনি বা  হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হবে। যদি বোতলের নিচের অংশে লাল রঙের কোন আস্তরন দেখতে পান তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি আসল ঘি না। 

গরম পানিতে রেখে পরীক্ষা 

একটি পাত্রে ঘি রেখে এটি গরম পানির মাঝে রাখুন। কিছুক্ষনের মাঝেই যদি ঘি গলতে শুরু করে তাহলে এটি খাটি ঘি।   

খাঁটি ঘি চেনার উপায়

ল্যাব টেষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষা 

ল্যাব টেষ্টের মাধ্যমে খুব সহজে আসল অথবা নকল ঘি শনাক্ত করা যায়। বাংলাদেশের যেকোন সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে অথবা BSTI থেকেও আপনি ঘি এর ল্যাব টেষ্ট করতে পারবেন।  

আয়োডিনের মাধ্যমে টেষ্ট 

একটি পাত্রে ঘি গলিয়ে নিন। এরপর এই ঘি এর মাঝে ২ ফোটা আয়োডিন সলিউশন দিন। কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন। আয়োডিন রং যদি পরবর্তিন হয়ে যায় বিশেষ করে এটি যদি বেগুনি বর্ণ ধারন করে তাহলে বুঝে নিবেন এটি নকল ঘি। 

স্বচ্ছতা  

খাটি ঘি পরিষ্কার এবং মসৃণ হয়ে থাকে। খাটি ঘি এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তাপমাত্রা পেলেই এটি গলে যাবে আবার ফ্রিজে রাখলেই খুব সহযে জমে যাবে। ঘি গলিত অবস্থায় যদি এটির মাঝে অমৈধ্য পদার্থ পাওয়া যায় বুঝবেন এটি ভেজাল মিশ্রিত। খাটি ঘি স্বচ্ছ হয়ে থাকে।   

সাদা কাগজ অথবা প্লেটের সাহায্য ঘি পরিক্ষা  

একটি সাদা কাগজ অথবা প্লেটে সামান্য পরিমানে ঘি নিন। এবার সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড  বিপরীতে ঘি এর রং পর্যবেক্ষন করুন। যদি ঘি এর কালার সোনালি রং বোঝা যায় তাহলে এটি খাটি ঘি। অন্যদিকে ভেজাল ঘি এর কালার ফ্যাকাশে হলুদ।  

আদ্রতা 

খাটি ঘি তে খুবই সামান্য পরিমানে আদ্রতা থাকে। খাটি ঘি তে যখন তাপ প্রয়োগ করা হয় , তখন এটি বুদবুদ সৃষ্টি করে না বা কোনো রকম বাষ্প তৈরি হয় না। তবে নকল ঘি তে আদ্রতার পরিমান বেশি থাকে। যদি ঘি গলানোর সময় আপনি এতে বুদবুদ অথবা বাষ্পের উপস্থিতি টের পান তাহলে বুঝে নিবেন সেই ঘি তে ভেজাল মিশ্রন রয়েছে। 

খাটি ঘি কীভাবে চিনবেন আশা করছি এটা সম্পর্কে বেশ ভালো একটা ধারনা পেয়েছেন। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক খাটি ঘি এর উপকারিতা, এটির দাম ও খাটি ঘি কোথায় পাবেন এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য- 

ঘি সংরক্ষণের উপায় জানুন, আপনার ঘি ভালো রাখুন!

খাটি ঘি কী?

কোনো রকম ভেজাল মিশ্রন ছাড়া শুধু খাটি দুধ দিয়ে ঘি তৈরি করা হলে, তাকে খাটি ঘি বলা হয়। খাটি ঘি এর স্বাদ এবং ঘ্রান দুটোই অতুলনীয়। অনেকেই শুধু মাত্র ঘ্রান এর কারনে ১ চামচ ঘি দিয়েই অনায়াসে এক প্লেট গরম খিচুরি কিংবা ভাত তৃপ্তি সহকারে খেয়ে ফেলতে পারেন। বাজারে সাধারনত দুই ধরনের ঘি পাওয়া যায়। গাওয়া ঘি এবং ক্রিমের ঘি। তবে সকল ঘি এর মাঝে গুনে মানে সেরা হলো গাওয়া ঘি। যারা একবার খাটি গাওয়া ঘি খেয়েছেন একমাত্র তারাই জানেন কতটা মজাদার ঘি এটি। 

খাঁটি ঘি চেনার উপায়

খাটি গাওয়া ঘি এর দাম 

ঘি এর ধরন, কোয়ালিটি, পরিমান এবং এলাকা ভেদে ঘি এর দাম ও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ঘি এর মাঝে সবচেয়ে দামী এবং সুস্বাদু ঘি হলো গাওয়া ঘি। কোয়ালিটি ভেদে গাওয়া ঘি এর দাম সাধারনত কেজি প্রতি ১০০০ – ২০০০ টাকা। এছাড়াও তুলনামুলক কম সময়ে এবং সহজে তৈরি করা যায় এমন একটি ঘি হলো ক্রিমের ঘি। গাওয়া ঘি এর চেয়ে ক্রিমের ঘি এর দাম তুলনামুলক কিছুটা কম। কেজি প্রতি ক্রিমের ঘি এর দাম আনুমানিক ৭০০ টাকা-১৪০০ টাকা। 

খাটি ঘি খাওয়ার উপকারিতা

খাটি ঘি খাওয়ার রয়েছে বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা। কারন ঘি তে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন কে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, এন্টিওক্সিডেন্ট, বাটাইরিক এসিড, ব্রেইন টনিক সহ শরীরের জন্য উপকারি এমন অনেক উপাদান।

  • ঘি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত ঘি খেলে এটি আপনার হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে আপনি যদি কোষ্ট্যকাঠিন্য এর সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে নিয়মিত ১ চা চামচ ঘি খাওয়ার অভ্যাস করুন। 
  • ঘি আমাদের শরীরের জয়েন্টের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।
  • ঘি তে থাকা ব্রেইন টনিক আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • শীতকালে ঘি খেলে এটি আমাদের সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
  • ঘি তে রয়েছে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার যা আমাদের ত্বক ও চুল সুন্দর রাখে। 
  • ঘি শরীরের কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে।   

খাটি ঘি কোথায় পাওয়া যায়

বাজারে এখন বিভিন্ন ব্যান্ড এর সুন্দর মোড়কজাতকৃত ঘি পাওয়া যায়। তবে হাতের নাগালে পাওয়া সব ঘি কিন্তু খাটি না। খাটি ঘি কিভাবে চিনবেন সেটা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানিয়েছি। তবে বাংলাদেশের কিছু প্রাচিন প্রতিষ্ঠান আছে যারা দীর্ঘদিন যাবত সুনামের সহিত গ্রাহকদের নিকট তাদের তৈরি ঘি সরবরাহ করছেন। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান হলো: ফার্ম ফ্রেশ, আড়ং, মিল্ক ভিটা ইত্যাদি। এছাড়াও বর্তমানে অনেকে হোম মেইড ঘি নিয়ে কাজ করছেন। বিভিন্ন ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে এখন আপনি ঘরে বসেই খাটি ঘি অর্ডার করতে পারবেন। এরকম একটি পেইজ হলো “বিন্নি ফুড”। 

উপরিউক্ত আলোচনায় খাঁটি ঘি চেনার উপায়, দাম ও স্বাস্থ্য উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি ঘি চেনার ক্ষেত্রে এখন আর আপনার কোন সমস্যা হবে না।