সুপারফুড ঘি তার অভাবনীয় পুষ্টি গুনের কারনে পৃথিবীব্যাপি সমাদৃত। নিয়মিত ঘি খেলে তা শরীরের অপুষ্টি দূর করে ও শরীরে শক্তি যোগায়। অন্যদিকে এটি খাবারের রং সুন্দর করার পাশাপাশি স্বাদ বৃদ্ধি করে। নিচে ঘি এর পুষ্টি উপাদান, প্রয়োজনীয়তা ও ঘি খাওয়ার সতর্কতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ঘি খেলে কি ওজন বাড়ে?
ঘি তে যেহেতু ফ্যাট বা চর্বি রয়েছে তাই অনেকেই ভাবেন ঘি খেলে হয়তো ওজন বাড়বে। তবে এটি পুরোপুরি ভুল ধারণা। আমাদের দেহের জন্য ফ্যাট ক্ষতিকর হলেও ঘি তে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। ঘি-তে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও ঘি আমাদের হজমে সাহায্য করে এবং এতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝড়াতে সাহায্য করে। দৈনিক পরিমিত পরিমাণে ঘি খেলে এটি আমাদের ওজন বাড়াতে না বরং শরীর কে সুস্থ ও ফিট রাখতে সাহায্য করবে।
ঘি খেলেই এসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা?
এসিডিটি যেন এক জটিল অসুখ। সহজলভ্য ফার্স্ট ফুডের এই সময়ে এসে এসিডিটি সমস্যা তে ভুগছেন না এমন মানুষের সংখ্যা বেশ কম। গ্যাসের সমস্যাই আক্রান্ত অনেকেই নিশ্চই শুনে এসেছেন ঘি খেলে গ্যাস বেড়ে যায়? এটা শুনে অনেকে নিশ্চই ঘি খাওয়া টাও বাদ দিয়েছেন। কিন্তু সত্যিই কি ঘি খেলে এসিডিটি বেড়ে যায়? ডক্টর এবং সাইন্স কি বলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ঘি তে রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি, বিউটারিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের হজমে সাহায্য করে এবং শরীর কে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ঘি আমাদের স্টমাক অ্যাসিড এর ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে যার ফলে বদ হজম এবং গ্যাসের সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।তবে ঘি খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে। অনেকেই আছেন যাদের দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারেন না। তাদের ক্ষেত্রে দৈনিক ১ চা চামচের বেশি ঘি না খাওয়া টাই উত্তম।
ঘি খেলেই হৃদ্রোগ?
আমরা অনেকেই জানি যে ফ্যাট বা চর্বি আমাদের হার্ট এর জন্য ক্ষতিকর।বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট । ঘি কিন্তু এই স্যাচুরেটেড ফ্যাট এই ভরপুর। তাহলে কি ঘি খেলে আপনার হৃদরোগের মাত্রা বেড়ে যাবে? একদম ই না। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ফ্রান্সের মানুষ সবচেয়ে বেশি ঘি খেয়ে থাকে। অথচ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার এই ফ্রান্সেই সবচেয়ে কম।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA) সুপারিশ করে যে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য বজায় রাখার জন্য সারাদিনে যত ক্যালরি খাওয়া হয় তার মাঝে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আসা উচিত ফ্যাট থেকে। তাহলে এটি আমাদের উপকারে আসবে। যেহেতু এক চা চামচ ঘি তে রয়েছে প্রায় ১৫ গ্রাম ফ্যাট। এর মাঝে ৯ গ্রাম হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ৪৫ মিলিগ্রাম হলো কোলেস্টেরল। যা দৈনিক চাহিদার মাত্র ১৫ শতাংশ। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই এই ঘি রাখা উচিত।
ঘি কিভাবে তৈরি করে এবং ঘি খাওয়ার নিয়ম
শীতকালে কেন ঘি খাবেন?
যদিও ঘি খাওয়ার বিশেষ কোনো নিয়ম ঋতু নেই। তবে শীতকালে ঘি খাওয়ার উপকারিতা সর্বাধিক। বাহিরে যখন কুয়াশা ভেজা আবহাওয়া, ঠিক তখনি গরম ভাত কিংবা খিচুড়ির সাথে এক চামচ ঘি! আহা, এ যেন কি এক চমৎকার স্বাদ। শুধু স্বাদের জন্যই না শীতকালে ঘি খেলে পাবেন নানাবিধ উপকার। চিকিৎসক দের মতে শীতকালে ঘি খেলে এটি আপনার সর্দি- কাশি ও ঠান্ডার সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে।
সেই সাথে শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে এবং শরীর কে উষ্ণ রাখতেও শীতকালে ঘি এর জুরি মেলা ভার। এছাড়াও শীতকালে আমাদের অনেকের ত্বক অনেক শুষ্ক ও খসখসে মনে হয় সেক্ষেত্রে স্কিন কে ময়েশ্চারাইজ করার জন্য ঘি খেতে পারেন এবং রাতে ঘুমানোর আগে ঘি আলতো হাতে স্কিনে ম্যাসাজ করতে পারেন।
গরমে ঘি খাওয়া যাবে?
সাধারণত ঘি বেশী খাওয়া হয় শীতকালে। এই কারণে অনেকেই ভেবে থাকেন গরমে বোধহয় ঘি টা খাওয়া ঠিক হবে নহ। কিন্তু ঘি আমাদের শরীরের জন্য এতোটাই উপকারী যে আপনি যে কোনো সময়ে এই ঘি খেতে পারবেন। এমনকি বৈশাখের প্রখর রোদের সময়েও আপনি নিশ্চিন্তে ঘি খেতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞ দের মতে ঘি শরীরে প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করে । এছাড়াও ঘি আমাদের জন্য প্রটিনের সেরা উৎস। তুলনামূলক ভাবে শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে আমাদের শরীর অধিক ঘেমে যাবার ফলে ক্যালরি লস হয় বেশী। তাই গ্রীষ্মকালেও নিজের শরীর কে চাঙ্গা রাখতে ঘি খাওয়া উচিত। ঘি গরমে আমাদের পানি শূন্যতার হাত থেকে রক্ষা করবে। এক্ষেত্রে ডাল, ভাত কিংবা রুটি দিয়ে ঘি খাওয়া যেতে পারে।
ঘি খাওয়ার সতর্কতা
ঘি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী হলেও ঘি খাওয়ার আগে কিছু সতর্কতা আপনার জানা উচিত।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গর্ভবতী নারীদের ঘি না খাওয়ার উত্তম।
- বাজারের ঘিয়ে প্রচুর পরিমাণে সাধারণ বনস্পতি (ডালডা) ও পাম তেল থাকে। তাই বাজার থেকে ঘি কেনার সময় সতর্ক থাকবেন।
- অতিরিক্ত ঘি খেলে বাড়তে পারে ওজন। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘি খেতে হবে।
- অতিরিক্ত ঘি খাওয়ার ফলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
- ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু ব্যক্তি অর্থাৎ যারা দুধের তৈরি কোনো খাবার খেতে পারেন না। তাদের ঘি না খাওয়াই উত্তম।
- যারা সারাদিনে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন এবং তেমন কোনো কায়িক পরিশ্রম করেন না, তাদের অধিক পরিমাণে ঘি না খাওয়াই উত্তম।
উপরিউক্ত আলোচনায় ঘি এর পুষ্টি উপাদান, প্রয়োজনীয়তা ও ঘি খাওয়ার সতর্কতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।