You are currently viewing আমসত্ব কি? আমসত্বর খাওয়ার উপকারিতা ও কিভাবে বানায়?

আমসত্ব কি? আমসত্বর খাওয়ার উপকারিতা ও কিভাবে বানায়?

আম আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় ফল। আম থেকে তৈরি হওয়া নানান পদের খাবার পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে ব্যাপক পরিমাণে পরিচিত। বিশেষ করে কোনো ঘরোয়া অনুষ্ঠান বা পারিবারিক খাবার টেবিলে আমের তৈরি বিভিন্ন আচার শোভা বৃদ্ধি করে। আমাদের আজকের আলোচনায় আমরা আমসত্ত্ব কি, কীভাবে তৈরি করে এবং এর উপকারী দিক গুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করবো। 

আমসত্ত্ব কি?

আমসত্ত্ব হলো আম থেকে তৈরি এক বিশেষ প্রকার খাবার। একে আমের আচার গোত্রে বিবেচনা করা হলেও এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আমরা জানি আম আমাদের দেশের মৌসুমি ফলের মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় একটি ফল। আমে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের দেহের বিভিন্ন প্রকারের উপকারে লাগে। যেহেতু সারা বছর আম পাওয়া যায় না সেহেতু একে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয়। যাতে সিজন না থাকলেও আমের স্বাদ পাওয়া যায়।

সেই ধারাবাহিকতায় আম শুঁটকি করে রাখার পাশাপাশি আচার তৈরি করে তা বছর কা বছর সংরক্ষণ করা যায়। তো আমসত্ত্ব হলো একটি আমের তৈরি আচার। সাধারণত আমের খোসা এবং আঁটি ফেলে দিলে যে নরম অংশ পাওয়া যায় তা বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করে রোদে শুকিয়ে তারপর সাইজ মত কেটে তা প্ল্যাস্টিক বা কাচের জারে রেখে দেওয়া হয়। মোটকথা আমের রস বা নরম অংশ ভালো করে মশলা দিয়ে রান্না করে তা রোদে শুকিয়ে আমসত্ত্ব তৈরি করা হয়। 

আমসত্বর খাওয়ার উপকারিতা

আমসত্বর খাওয়ার উপকারিতা

আমসত্ত্ব অনেক সুস্বাদু এবং মুখরোচক খাবার। প্রতিবছর আমের সিজনে আমাদের দেশের প্রায় বাসাতে কাঁচা ও পাকা আমের আমসত্ত্ব তৈরি করা হয়। নিচে আমসত্ত্ব খাওয়ার উপকারিতা বর্ণনা করা হলো। 

ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায় 

ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি করে। বিশেষ করে রক্তে যদি এই ধরনের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে তাহলে তা বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। আমরা যদি নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করি তাহলে এই ধরনের কোলেস্টেরল উৎপাদন হ্রাস পায়। তবে বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ খাদ্য স্বাস্থ্যকর উপায়ে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হয় না।

এই কারণে রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমানোর জন্য আমাদের বিভিন্ন ঔষধের প্রয়োজন পরে। আপনি চাইলে খুব সহজেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে এই অতিরিক্ত অর্থ অপচয় কমাতে পারবেন। বিশেষ করে আমসত্ত্ব রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে দ্রুত কাজ করে। অভাবনীয় গতিতে রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে চাইলে কাঁচা আমের আমসত্ত্ব খেতে পারেন। কারণ এতে আছে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের পুষ্টিগুণ যা বিভিন্ন মসলার সংমিশ্রণে আরও বৃদ্ধি পায়। 

ভিটামিন সি সরবরাহ করে 

আমরা জানি টক জাতীয় সকল ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। সে দিক বিবেচনা করলে কাঁচা আমে পাকা আমের থেকে বেশি ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান।স্কার্ভি, রক্তের লাল উপাদান, হাড় শক্তিশালী করা সহ নানাবিধ কাজ করে থাকে ভিটামিন সি। আমের তৈরি আমসত্ত্বতে এই উপকারী উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে। আর্টিফিশিয়াল ভিটামিন সি থেকে প্রকৃতি থেকে পাওয়া এই উপাদান শরীরের জন্য বেশি কার্যকর। তাছার কাঁচা আমের সাথে যখন অন্যান্য মশলা মিশ্রিত করা হয় তখন তা অন্যান্য উপাদানের সাথে ভিটামিন সি এর মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ আমসত্ত্ব প্রকৃতি থেকে পাওয়া ভিটামিন সি এর অনেক কার্যকরী মাধ্যম। 

ত্বক উজ্জ্বল ও রক্ষা করে 

ত্বক উজ্জ্বল থাকার জন্য লোমকূপের ময়লা অনেক বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত আমসত্ত্ব খেলে তা ত্বকে থাকা এই লোমকূপ পরিষ্কার রাখে এতে ত্বকে কোন প্রকার ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে না। অন্যদিকে ত্বকের বিভিন্ন স্পট ও কালো দাগ দূর করার জন্য আমের মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপকারী উপাদান কাজ করে। যে কারণে নিয়মিত আমসত্ত্ব খেলে তা ত্বকের উজ্জ্বল হওয়ার প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে এবং কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। 

কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস দূর করে 

কোষ্ঠকাঠিন্য শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকারক দিক। কারণ এতে পেটে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে করে। তাছাড়া ছোট ছোট সমস্যা থেকে এক সময় অনেক বড় ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। যাইহোক, আমসত্ত্ব হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও খাবার সহজেই পাচন হতে সহায়তা করে। অন্য দিকে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে যা পুরো দেহের সকল ধরনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে পাইলেস মত কষ্টের রোগ থেকে মুক্তি দেয়। বিশেষ করে আমসত্ত্বে থাকা বিভিন্ন উপাদান যেমন ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের বিরুদ্ধে অনেক ভালো কাজ করে। 

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে 

হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য প্রায় সকল ধরনের টক জাতীয় খাবার প্রযোজ্য। কারণ এই ধরনের খাবারে প্রয়োজন অনুসারে অ্যাসিড, ফাইবার আয়রন সহ হজমে সহায়তা করে এমন উপাদান থাকে। বিশেষ করে কাঁচা আম দিয়ে তৈরি আমসত্ত্ব নিয়মিত খেলে তা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এতে খাবারের অরুচি দূর হওয়ার পাশাপাশি আসিডিটির সমস্যা দূর হয়। প্রতিদিন অন্যান্য খাবারের সাথে যদি আমসত্ত্ব গ্রহণ করা যায় তবে তা শরীরের মেটাবোলিজম বৃদ্ধি করে শরীরের পুষ্টিগুণ বজায় রাখে। 

সর্দি কাশি দূর করে

সর্দি কাশি মানুষের জীবনের একটি বিরক্তিকর সমস্যা। তাছাড়া খুব সাধারণ কারণেই আমাদের এই রোগে আক্রমণ করে। বিশেষ করে দেহের যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাহলে হালকা ঠান্ডা অথবা আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের এই সমস্যা দেখা দেয়। তবে আমসত্ত্ব সর্দি কাশি দূর করতে অনেক ভালো কাজ করে। কারণ এতে থাকা পুষ্টি উপাদান দেহের মধ্যে সর্দি কাশির ভাইরাস দমন করে এবং সংক্রমণ রোধ করে। 

শিশুদের সৃতি শক্তি বাড়ায় 

শিশু বয়সে যদি সঠিক পন্থায় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা যায় তাহলে উক্ত শিশু অনেক বুদ্ধিমান হয়। কারণ শিশু বয়সে মস্তিষ্ককে যেমন ইচ্ছা তেমন ভাবেই তৈরি করে নেওয়া যায়। শিশুদের সৃতি শক্তি বাড়ানোর জন্য যে যে খাবার খাওয়ানো হয় তাদের সাথে স্বল্প পরিমাণ আমসত্ত্ব দেওয়া যেতে পারে। কারণ আমসত্ত্ব শিশুর সৃতি শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। 

দেহে ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি করে 

দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকা অনেক জরুরি। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্যালসিয়াম অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। কারণ এটি শিশুর দেহের হাড় সুগঠিত করার পাশাপাশি মায়ের দেহের ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে। এই কারণে গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি টক খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় 

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমসত্ত্ব অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। কারণ আমের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের উপকারী অ্যাসিড, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, খনিজ শ ইত্যাদি উপকারী উপাদান। এগুলো দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কাজ করে। 

ওজন কমায় 

অতিরিক্ত ওজন আমাদের শরীরে নানান রকম রোগের বাসা বাঁধতে সহায়তা করে। আমের মধ্যে থাকা উপাদান দেহের অতিরিক্ত চর্বি বার্ন করে তা দেহ থেকে বের করে দেয়। এর সাথে আমের মধ্যে খুব স্বল্প পরিমাণ ক্যালোরি থাকে যা দেহে অতিরিক্ত চর্বি জমানো কমায়। অন্যদিকে রক্তে শর্করা কমিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। 

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে 

আমসত্ত্ব আমাদের শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে ও পরিমাণ মত ভিটামিন এ সরবরাহ করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন এ আমাদের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করার পাশাপাশি চোখ ভালো রাখে। 

ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে 

শিরা-উপশিরায় থাকা চর্বি ও রক্তে থাকা শর্করা কমিয়ে আমসত্ত্ব রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। এতে কোনো ধরনের বাঁধা ছাড়াই রক্ত হৃদপিণ্ডে চলাচল করে যা ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে।  

আমসত্ত্ব কীভাবে বানায় ?

নিচে কীভাবে আমসত্ত্ব বানায় তা বর্ণনা করা হলো। 

  • প্রথমে পরিমাণ মত কাঁচা বা পাকা আম নিতে হবে। 
  • সেগুলো থেকে আঁটি ও চামড়া ফেলে দিতে হবে। 
  • তারপর আমের রস তৈরি করে নিতে হবে। 
  • রস তৈরি করার সময় খেয়াল রাখবেন কোন প্রকার পানি যেন উক্ত মিশ্রণে যোগ না হয়। 
  • এরপর উক্ত আমের রসের পেস্টের সাথে চিনি ও লবণ মিশিয়ে জ্বাল দিতে হবে। 
  • ঘন ঘন নেড়ে থকথকে জেলির মত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 
  • এখানে আপনি চাইলে আপনার ইচ্ছামতো ঝাল, মশলা, তেল ইত্যাদি যোগ করতে পারবেন। 
  • জেলির মত হয়ে গেলে তখন তা হাদ দিয়ে বাসের চালার মধ্যে লেপটে নিতে হবে। 
  • তারপর সেই চালাগুলো রোদে শুকাতে হবে। 
  • যখন সেগুলো শুকিয়ে যাবে তখন সাইজ মত কেটে কেটে সংরক্ষণ করা যাবে। 

উপরিউক্ত লেখায় আমসত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আশা করি লেখাটি পড়ে আমসত্ত্ব কি, কীভাবে তৈরি করে ও এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আমসত্ত্ব সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে বা ভালো মানের আমসত্ত্ব অর্ডার এইখানে থেকে করতে পারেন।