You are currently viewing ঠান্ডা লাগলে কি খাওয়া উচিত এবং কোন খাবারগুলো খাওয়া নিষেধ? 
ঠান্ডা লাগলে কি খাওয়া উচিত

ঠান্ডা লাগলে কি খাওয়া উচিত এবং কোন খাবারগুলো খাওয়া নিষেধ? 

শীতকাল বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রায়শই দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে আমরা সহজেই ঠান্ডা-জনিত অসুস্থতায় ভুগতে পারি। এই সময়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যথাযথ পুষ্টি আমাদের শরীরকে ঠান্ডার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে ঠান্ডা লাগলে কি খাওয়া উচিত এবং কোন খাবারগুলো খাওয়া নিষেধ। আর যেকারণে আমরা সামান্য ঠাণ্ডা থেকে ডেকে আনি মারাত্মক কিছু রোগব্যাধি।

এই আর্টিকেলে, আমরা আলোচনা করব সেই সব খাবার সম্পর্কে যা ঠান্ডা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে, শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এছাড়াও জানবো কোন খাবারগুলো ঠাণ্ডা লাগলে খাওয়া উচিৎ নয়।

ঠাণ্ডা লাগলে কি খাওয়া উচিৎ?

ঠাণ্ডা লাগলে কি খাওয়া উচিৎ?

ঠাণ্ডা লাগলে সঠিক খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, আরাম পাওয়া এবং দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব। নিচে ঠাণ্ডা লাগার সময় কোন খাবার খাওয়া উচিত এবং কীভাবে এগুলো কাজ করে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলোঃ

মুরগির স্যুপ

মুরগির স্যুপকে অনেক সময় “গ্র্যান্ডমাদার’স রেমেডি” বলা হয় কারণ এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঠাণ্ডা লাগার সময় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মুরগির স্যুপে প্রোটিন, মিনারেল এবং ভিটামিন রয়েছে যা শরীরকে শক্তি দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্যুপের গরম ভাপ শ্বাসনালীর কফ নরম করে এবং সাইনাস খোলার মাধ্যমে শ্বাস নিতে সাহায্য করে। এছাড়া, মুরগির স্যুপের সোডিয়াম শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে, যা ঠাণ্ডার সময় খুবই প্রয়োজনীয়।

রসুন

রসুনের অ্যালিসিন নামক একটি সক্রিয় উপাদান রয়েছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ঠাণ্ডা লাগার সময় রসুন খাওয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায়। আপনি কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন, অথবা রান্নার সময় ব্যবহার করতে পারেন। রসুনের চা বানিয়ে মধু দিয়ে পান করলে গলা ব্যথা ও কাশিতে উপশম পাওয়া যায়।

আদা চা

আদায় জিনজেরল নামক একটি যৌগ রয়েছে যা অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণের জন্য পরিচিত। ঠাণ্ডা লাগার সময় আদা চা খাওয়া গলা ব্যথা কমাতে, কাশি প্রশমিত করতে এবং সর্দি নাক থেকে বের হতে সাহায্য করে। আদা চায়ে গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে এটি আরও কার্যকরী হয়ে ওঠে। এটি শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং ঠাণ্ডার উপসর্গগুলো থেকে রেহাই দেয়।

মধু

মধুতে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণ রয়েছে যা ঠাণ্ডাজনিত কাশি এবং গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। মধু সরাসরি খেতে পারেন বা গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন। বিশেষ করে রাতে মধু খেলে কাশি কমে এবং ঘুম ভালো হয়। এছাড়া, মধু শরীরের এনার্জি লেভেল বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।

সাইট্রাস ফল

লেবু, কমলা, মাল্টা এবং গ্রেপফ্রুটের মতো সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি শরীরের শ্বেত রক্ত কণিকা (white blood cells) উৎপাদনকে বাড়িয়ে তোলে, যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ঠাণ্ডা লাগার সময় এই ফলগুলো খেলে সর্দি, কাশি এবং গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া, সাইট্রাস ফল শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং ফ্লু-এর উপসর্গ কমায়।

দই

দইয়ে প্রোবায়োটিক বা ভালো ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ঠাণ্ডা লাগার সময় দই খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। প্রোবায়োটিক শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে এবং ঠাণ্ডাজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।

তুলসী পাতা

তুলসী পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি-ভাইরাল, এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে। ঠাণ্ডা লাগার সময় তুলসী পাতা চা খেলে সাইনাসের সর্দি কমে, কাশি প্রশমিত হয় এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার থাকে। তুলসী পাতা চা দিনে ২-৩ বার পান করা ঠাণ্ডা সারাতে কার্যকর। এছাড়া, তুলসী পাতা সর্দি এবং কাশি কমাতে গলা পরিষ্কার রাখে।

সবুজ শাক-সবজি

ঠাণ্ডা লাগার সময় সবুজ শাক-সবজি যেমন পালং শাক, ব্রকলি, এবং কলা শাক খাওয়া উচিত। এই সবজিগুলো ভিটামিন এ, সি এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সবুজ শাক-সবজি শরীরের টক্সিন দূর করে এবং ঠাণ্ডাজনিত ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। এছাড়া, এগুলো শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি দেয় এবং দ্রুত সেরে উঠতে সহায়ক।

রঙিন শাকসবজি ও ফলের যত গুণ- রঙিন ফলের সাথে রঙিন জীবন!

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন ডি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিম, মাশরুম, এবং ফ্যাটি ফিশের মতো ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেলে ঠাণ্ডা লাগার সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। এছাড়া, ভিটামিন ডি হাড় এবং দাঁতের সুস্থতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, যা ঠাণ্ডা সময়ে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।

প্রচুর পানি পান

ঠাণ্ডা লাগার সময় শরীরকে হাইড্রেট রাখা খুবই জরুরি। প্রচুর পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং গলা শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। গরম পানির সাথে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ঠাণ্ডা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া, চা, ফলের রস এবং স্যুপের মতো তরল পদার্থ পান করলেও হাইড্রেশন বজায় থাকে।

ঠাণ্ডা লাগলে কী খাওয়া উচিৎ নয়?

ঠাণ্ডা লাগলে কী খাওয়া উচিৎ নয়?

ঠাণ্ডা লাগার সময় কিছু খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এই খাবারগুলো ঠাণ্ডার উপসর্গ বাড়িয়ে তুলতে পারে বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। নিচে এমন কিছু খাবারের বর্ণনা দেওয়া হলো যেগুলো ঠাণ্ডা লাগার সময় খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

দুগ্ধজাত খাবার

দুধ, পনির, এবং দই ঠাণ্ডার সময় শ্লেষ্মা উৎপাদন বাড়িয়ে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি করতে পারে। যদিও সবাই একইভাবে প্রতিক্রিয়া করে না, অনেকের ক্ষেত্রে গলা ব্যথা এবং কফের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

মিষ্টি খাবার

চিনি এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার শরীরের শ্বেত রক্ত কণিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হ্রাস করে। এটি ঠাণ্ডার উপসর্গ বাড়াতে এবং সুস্থ হতে বেশি সময় নিতে পারে।

ফ্রাইড এবং তৈলাক্ত খাবার

ফ্রাইড এবং তৈলাক্ত খাবার হজমে অসুবিধা সৃষ্টি করে এবং শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে। ঠাণ্ডার সময় এই ধরনের খাবার খেলে গলা ব্যথা এবং কাশির সমস্যা বেড়ে যায়।

ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয়

ক্যাফেইন শরীরকে ডিহাইড্রেট করে, যা ঠাণ্ডার সময় আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে।

অ্যালকোহল

অ্যালকোহল শরীরকে ডিহাইড্রেট করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যা ঠাণ্ডা লাগার সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলতে পারে। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং ঠাণ্ডার উপসর্গ বাড়ায়।

ঠান্ডা এবং আইসক্রিম জাতীয় খাবার

ঠান্ডা খাবার যেমন আইসক্রিম গলা ব্যথা এবং শ্বাসনালীর প্রদাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি সাইনাস ব্লকেজ এবং নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যাও বাড়িয়ে তোলে।

অতিরিক্ত মশলাদার খাবার

মশলাদার খাবার গলা জ্বালা এবং অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা ঠাণ্ডার সময় আরও অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। এটি গলার প্রদাহ বাড়িয়ে এবং কাশির সমস্যা বাড়াতে পারে।

প্রক্রিয়াজাত খাবার

প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ এবং কৃত্রিম উপাদান থাকে, যা শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এসব খাবার পুষ্টিগুণে কম এবং শরীরের শক্তি কমায়, যা ঠাণ্ডার সময় দ্রুত সেরে উঠতে বাধা দেয়।

উপসংহার

ঠান্ডা আবহাওয়ায় বা শীতকালে সঠিক খাদ্য নির্বাচন আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উষ্ণ, পুষ্টিকর সুপ, গরম পানীয়, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, প্রোটিনযুক্ত খাবার, এবং মসলাদার খাবার আমাদের শরীরকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 

তবে, শুধুমাত্র খাবার পরিবর্তন করে ঠান্ডা থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়া যায় না। এর সাথে পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম, উষ্ণ পোশাক পরিধান এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার মতো স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলিও অনুসরণ করা প্রয়োজন। তবে আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সর্বাধিক ভালো।

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.