যেকোনো আড্ডায় ধোঁয়া ওঠা গরম কাপে চুমুক দিয়ে কফি খাওয়াটার ব্যাপাটা বেশ মজাদার। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের কফির সাথেই পরিচিত আমরা। মূলত স্বাদের বৈচিত্র্য আনতে কফির তৈরিতে কিছু উপকরণ ব্যবহার করা হয়। যা বিভিন্ন নামে পরিচিত পেয়ে থাকে। কফি যে শুধু গরম হয় এমনটি নয়। যারা একটু ঠান্ডা খেতে পছন্দ করেন তাদের কোল্ড কফির বেশ প্রিয়।
শীত কিংবা গরম যাদের কফি খুব পছন্দের তাদের কফি ছাড়া যেনো দিন যায়না। তারা এটি প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রেখেছেন। শুধু তাই নয় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়েও আমরা কফি খেতে থাকি। এখন তো রাস্তার পাশে বিভিন্ন কফিশপ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু বাহিরে গিয়ে কফি খাওয়ার যাদের সময় হয়না তারা চাইলে বাসায় তৈরি করে নিতে পারেন। আজকের আর্টিকেলে কফি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন স্বাদের কফি রেসিপি ও স্বাস্থ্যউপকারীতা সম্পর্কে জানবো।
কফি রেসিপি
যাদের রোজ রোজ একই স্বাদের কফি খেতে ভালো লাগেনা। তারা চাইলে বাসায় খুব সহজেই তৈরি করে ফেলতে পারবেন। চলুন মজাদার স্বাদের কফির রেসিপি জেনে নেওয়া যাক-
ডালগোনা কফি
ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া ডালগোনা কফি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো আমাদের সকলের কাছে। খুব সহজে অল্প উপকরণেই তৈরি করা যায়। অনেকে তো মজা করে বলেই ফেলে ডালগোনা কফিতে ডাল নেই কেনো?
উপকরণ
- ১ টেবিল চামচ ইন্সট্যান্ট কফি
- ২ টেবিল চামচ চিনি
- ২ টেবিল চামচ গরম পানি
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি মিক্সিং বোলে উপকরণগুলো দিয়ে এবার একটা হ্যান্ডউয়িসের সাহায্যেও বিট করতে হবে । এছাড়াও ইলেক্ট্রিক হ্যান্ড মিক্সচার দিয়ে ভালোভাবে বিট করতে হবে। বিট করার পরে কফি ফমে পরিণত হয়ে গিয়েছে। কফির কালার লাইট এবং থক থকে হয়ে গেলে বিট করা বন্ধ করতে হবে।
এবার সার্ভিং জারে ৩টি আইস কিউব ও ফ্রিজে থাকা ঠান্ডা লিকুয়িড গরুর দুধ দিতে হবে। তারপরে ২/৩ চা চামচ বিট করা কফির মিশ্রণটি দিতে হবে। ১ কাপ গ্লাসে খুব বেশি কফি ব্যবহার করা যাবেনা।
ক্যাপাচিনো কফি রেসিপি
১ম পদ্ধতি
- ১ টেবিল চামচ ইন্সট্যান্ট কফি
- ২ টেবিল চামচ চিনি
- ১ টেবিল চামচ নরমাল পানি
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি গ্লাসে উপকরণগুলো দিয়ে ইলেক্ট্রিক বিটার দিয়ে লো থেকে মিডিয়াম স্প্রিডে বিট করতে হবে। তারপরে সুন্দর একটা ফোম তৈরি হয়ে যাবে। এবার একটি কাপে ২ টেবিল চামচ পরিমাণ কফি ফোম নিতে হবে। ১ কাপ দুধ গরম করে কাটা চামচ বা হ্যান্ডউয়িসের সাহায্যে দুধ ফেটিয়ে নিতে হবে। যাতে দুধের মধ্যে ফেনা তৈরি হয়। তারপরে দুধ কফির মধ্যে একপাশ দিয়ে ঢাকতে হবে। এরপরে কফির ফোমটি উপরে উঠে আসলে একটা চামচ দিয়ে আলতো করে নেড়ে দিতে হবে। তারপরে কফি সিরাপ দিয়ে ডিজাইন করে পরিবেশন করা যাবে।
২য় পদ্ধতি
- ১ চা চামচ কফি
- ২ চা চামচ চিনি
- আধা টেবিল চামচ পানি
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি কাপে উপকরণগুলো দিয়ে চামচের সাহায্যে ভালোকরে ফেটিয়ে নিতে হবে। এই পদ্ধতিতে সময় ১০ মিনিটের মতো লাগতে পারে। কফির মধ্যে ফোমিং তৈরি হয়ে গেলে দুধের মধ্যে একটু ফেনা তৈরি করে কফির মধ্যে দিতে হবে। ব্যস হয়ে গেলো সহজ দুইটি উপায়ে ক্যাপেচিনো কফি।
মোকা ফ্রাপে কফি রেসিপি
উপকরণ
- ১৫০ মিলি দুধ
- ৩০ গ্রাম ডার্ক চকলেট
- ১ কাপ বরফ
- মোকা পাউডার ১ কাপ (৩০ গ্রাম)
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি ব্লেন্ডারে সবগুলো উপকরণ দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। যে গ্লাসে পরিবেশন করা হবে সেটাতে চকলেট সিরাপ দিয়ে একটু ডেকোরেশন করতে হবে। এবার ব্লেন্ড করা কফি গ্লাসে দিতে হবে। এরসাথে হুইপিড ক্রিম ও চকলেট চিপসও ওয়েফার রোল ও মেল্ড করা চকলেট দিয়ে সাজিয়ে নিতে হবে।
কোল্ড কফি রেসিপি
উপকরণ
- ৩ চা চামচ কফি
- সামান্য পরিমাণে গরম
- ২ গ্লাস ঠান্ডা তরল দুধ
- কনডেন্স মিল্ক স্বাদমতো
- ২ টেবিল চামচ গুড়ো দুধ
- পরিমাণমতো দুধের বরফ
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি বাটিতে কফি ও গরম পানি দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপরে একটি ব্লেন্ডার জারে দুধ নিতে হবে। আগে থেকে জ্বাল দিয়ে ঘন করে নেওয়া দুধ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপরে কফির মিশ্রণটি ও কনডেন্স মিল্ক দিতে হবে। চাইলে চিনি বা চিনির সিরাও ব্যবহার করা যাবে। এরপরে গুড়ো দুধ ও দুধের বরফ ভালোভাবে বেল্ড করে নিতে হবে। চাইলে পানির বরফ দেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে দুধের ঘনত্ব পাতলা হয়ে যায়। তাই দুধ জ্বাল করে ডিপ ফ্রিজে রেখে বরফ করে ব্যবহার করলে বেশি ভালো হয়। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ভেনিলা আইসক্রিম দিতে হবে। ১/২ মিনিট থেমে থেমে ২/৩ বার ব্লেন্ড করে নিলেই হবে।
হট মকা ক্যারামেল কফি
উপকরণ
- ক্যারামেল সস
- ১ চামচ মকা পাউডার
- ক্যারামেল সস
- হাফ চামচ চিনি
- ১ কাপ দুধ
প্রস্তুতপ্রণালী
একটি কাপে সামান্য পরিমানে ক্যারামেল সস দিতে হবে। তারপরে মকা পাউডার, দুধ ও চিনি দিতে হবে। চুলায় একটু গরম করে নিতে হবে। তারপরে কাপের মধ্যে দিতে হবে।
কফি খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা
কফি স্বাদের জন্য কম বেশি সকলেই পছন্দ করে থাকি। তবে এটি পরিমাণমতো খেলেও কিছু স্বাস্থ্যউপকারিতা রয়েছে। আজকে আমরা এই উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
ওজন কমাতে
শরীরের ওজন কমাতে কফি দারুণ সাহায্য করে। তাই যারা ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে কফি খেতে পারেন। এটি শরীরের চর্বি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ক্লান্তি কমাতে
কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন একটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উদ্দীপক যা ক্লান্তি কমিয়ে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। আমরা অনেক সময় কাজ বেশি কাজ করার ফলে অনেক ক্লান্তি অনুভব করে থাকি। কফি এই ক্লান্তি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
হার্ট ভালো রাখতে
নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে কফি খেলে হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন কফি পান করার ফলে হৃ্দ রোগের ঝুঁকি ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্যে করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে
উচ্চ মাত্রায় ক্যাফেইন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে। যাদের অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ রয়েছে তারা পরিমিত পরিামণে পান করতে পারেন।
ওটস খাওয়ার উপকারিতা এবং ওটমিলে তৈরি কিছু মজাদার রেসিপি
বিষন্নতা কমাতে
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত কফি পান করার ফলে হতাশা ঝুকি কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিসের জন্য
সাধারণত টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে কফি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ কফি ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং ট্রিগোনেলিন সমৃদ্ধ, উভয়ই রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সহায়ক।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে
যারা নিয়মিত ক্যাফেইন পান করে তাদের পার্কিনসন রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
কফি খাওয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কফি যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো তেমনি অতিরিক্ত মাত্রায় কফি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে খারাপ প্রভাব পরতে পারে। চলুন কফি খাওয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জেনে নেই।
অনিদ্রা
কফিতে থাকা ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্ককে জাগ্রত রাখে। ফলে অতিরিক্ত কফি খেতে ঘুম সহজেই আসতে চায় না। মূলত নিদ্রাহীনতার সমস্যা বেড়ে যায়।
মেজাজ খিটখিটে হওয়া
ক্যাফেইন শরীরের অ্যাড্রেনালিন নামক একধরনের হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। প্রচুর পরিমানে কফি পান করার ফলে উদ্বেগ ও বিরক্তির কারণ হতে পারে।
রক্তচাপ বেড়ে যায়
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের অতিরিক্ত মাত্রায় কফি পান করা উচিত নয়। কারণ অতিরিক্ত কফি পান করার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই
হজমে সমস্যা ও বুকে জ্বালাপোড়া
অনেকের অতিরিক্ত কফি পান করলে অ্যাসিডিটি দেখা দেয় অর্থাৎ বুকে জ্বালাপোড়া হয় এবং হজমের সমস্যা তৈরি হয়।
উপরোক্ত আলোচনায় নানান স্বাদের কফির রেসিপি, স্বাস্থ্যউপকারিতা ও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যাদের কফি খুব পছন্দের তারা চাইলে বিভিন্ন স্টাইলে কফি তৈরি করে পান করতে পারেন। অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কফি খেতে পছন্দ করেন। তারা আজকের আর্টিকেলে থাকা কফির রেসিপি অনুসরণ করে সহজেই বাসায় বানিয়ে ফেলতে পারেন।