যাদের স্কিন অনেক শুষ্ক তারা চাইলে ঘি এর সাথে পানি মিশিয়ে এটি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার জন্য রোজ রাতে ঠোটে ব্যবহার করতে পারেন ঘি। ঘি আপনার ঠোঁটের কালো দাগ দূর করবে, সেই সাথে ঠোঁট কে সফট করতে সাহায্য করবে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য, অথবা স্কিনকে টানটান রাখতে সপ্তাহে একদিন ১ চা চামচ ঘি, এক চা চামচ বেসন এবং এক চিমটি কস্তুরি হলুদ ব্যবহার করতে পারেন।
যারা শুষ্ক চুলের সমস্যায় ভুগছেন, যা চুলের আগা ফেটে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন তারা চাইলে ঘি, পাকা কলা, মেথি একসাথে মিক্সড করে ব্লেন্ড করে মাথায় ব্যবহার করতে পারবেন। নিয়মিত ঘি খেলে এবং সপ্তাহে একদিন ঘি দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করলে এটি বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করবে।
ঘি এর উপকারিতা
সরাসরি দুধ থেকে দুধের ননি বা দুধের ক্রিম সংগ্রহ করে সেইটা জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় ঘি। ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে আসলে বলে শেষ করা কঠিন। তবে সাধারণ কিছু উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক চলুন-
- ঘি একটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- ঘি তে চর্বি রয়েছে, যা আমাদের লিভার কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- ঘি আমাদের শরীরের সপ্ত ধাতু ভালো রাখতে সাহায্য করে। সপ্ত ধাতু বলতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক ৭ টি উপাদান কে বুঝানো হয়।
- ঘি তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিউটারিক অ্যাসিড যা আমাদের হজমে সাহায্য করে থাকে।
- ঘি চোখের জ্যাতি বাড়াতে সাহায্য করে।
- ঘি ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে।
- আয়ুর্বেদ অনুযায়ী ঘি তে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- গর্ভকালীন সময়ে চিকিৎসক এর পরামর্শে নিয়মিত ঘি খেলে এটি মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য এর জন্য বেশ উপকারী।
- ঘি হার্টের সমস্যার জন্য বেশ উপকারী।
- ঘি ডায়াবেটিস, এবং ক্যান্সার বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- শীতকালে ঘি খেলে এটি আমাদের সর্দি কাশি কমাতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত ঘি খেলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
শিশুর সুস্থতায় ঘি
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য ঘি অতি প্রয়োজনীয় ও স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে বাচ্চারা কি ঘি খেতে পারবে? হ্যাঁ অবশ্যই খেতে পারবে। আপনার শিশুর বয়স ৬ মাস পেরিয়ে গেলেই তাকে মায়ের দুধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে দিতে হবে। যেমন সবজি, ডিম, সলিড মাংস ইত্যাদি। আপনার বাচ্চার বয়স যদি ৭ মাস হয়ে থাকে তাহলে তার রোজকার খাবারের সাথে দৈনিক ৩-৪ ফোটা ঘি মিশিয়ে দিতে পারেন।
আর বাচ্চার বয়স ১ বছর বা তা তার বেশী হলে হাফ চা চামচ থেকে শুরু করে ১ চা চামচ অবধি ঘি তাকে খাওয়াতে পারবেন। অনেকেই ভাবতে পারেন, ঘি বাদে অন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালেই হবে কিনা। আসলে বিষয় টি হলো ছোট বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো যেন মায়েদের কাছে এক বিশাল যুদ্ধ জয়ের প্রাপ্তি।
বাচ্চা খেতে চায় না এটা সব মায়েদের পরিচিত কথা। ঘি কিন্তু বাচ্চাকে আলাদা করে খাওয়াতে হয় না, যেকোনো খাবারের সাথে মিশিয়েই বাচ্চাকে খাওয়াতে পারবেন। এতে করে শিশুর ডাবল পুষ্টির নিশ্চয়তা থাকবে। অন্যদিকে ঘি-তে থাকা ভিটামিন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড আপনার বাচ্চার –
- ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
- শিশুর ব্রেইন বিকাশে সাহায্য করবে।
- প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলের জোগান দিবে।
- হজম শক্র বৃদ্ধি করবে।
- শিশুর ঠান্ডা, কাশি জনিত সমস্যার সমাধার করবে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
শিশু বা ছোট বাচ্চাদের যেভাবে ঘি খাওয়াবেন
ঘি বাচ্চাদের জন্য অনেক উপকারী হলেও আপনার সন্তান কে অধিক পরিমাণে ঘি ভুলেও খাওয়াবেন না। মনে রাখবেন, পরিমিত খাবারেই সুস্থ জীবন। লেবু বেশী চিপলে যেমন সেটির স্বাদ তিতে মনে হয় ঠিক তেমনি বাচ্চাকে অধিক পরিমাণে ঘি খাওয়ালে সেটি আপনার বাচ্চার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তাই বয়স ও বাচ্চার শারীরিক অবস্থা বুঝেই বাচ্চাকে ঘি সহ সকল খাবার খাওয়াবেন। আপনার বাচ্চা যখন হামাগুড়ি দেওয়া শুরু করবে তখন থেকেই তার শরীরের এক্সট্রা এনার্জি লাভের জন্য নিয়মিত তাকে ৩ থেকে ৪ ফোটা ঘি খাওয়ান। তবে বাচ্চা যদি স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকে তাহলে আরও ১-২ ফোটা ঘি এক্সট্রা খাওয়াতে পারবেন।
ছোট বাচ্চাদের ঘি সহ অন্যান্য খাবার খাওয়ানোর সময় আগে অল্প পরিমাণে খাওয়াবেন এবং দেখবেন খাবার টি বাচ্চার সুট করছে কিনা বা সে খাবার টি হজম করতে পারছে কিনা। যদি ঘি খাওয়ার পর বাচ্চার মাঝে অস্বস্তি বুঝতে পারেন তাহলে ঘি খাওয়ানো বাদ দিবেন। আর হ্যাঁ আপনার সোনামনির জন্য অবশ্যই খাটি ঘি বেছে নিবেন।
বর্তমান বাজারে কম দামে বনস্পতি রিফাইন্ড করা ভেজাল ঘি পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই নিজের সন্তানের সুস্থতায় আপনাকে অবশ্যই যাচাই- বাছাই করেই ঘি কিনতে হবে।