বাংলাদেশকে ষড়ঋতুর দেশ বলা হয়। এই ছয়টি ঋতুর মধ্যে গ্রীষ্মকাল অন্যতম। প্রচন্ড গরম ও রোদের তীব্র প্রখর হতে নিজেদের সুস্থ রাখতে হলে প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা। সুস্থ থাকার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। ফলে সহজেই কোনো রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাধতে পারবে না।
গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বাড়তেই থাকে। এমনকি তাপমাত্রা এমন এক অবস্থানে পৌঁছে যায়, ফলে আবহাওয়ার অফিস থেকে হিট অ্যালার্ট জারি করে থাকেন। তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে অনেকে অসুস্থ হয়ে পরেন। অনেকে খাবারের রুচি হারিয়ে ফেলেন। তাই গমরকে প্রতিরোধ করতে হলে একটি খাদ্যতালিকা গঠন করা জরুরী। আজকের আর্টিকেলে আমরা গ্রীষ্মকালের খাদ্য তালিকা কীরুপ হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
খাদ্যতালিকা
গ্রীষ্মকালীন সময়ে আমাদের খাবারের তালিকায় অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। অত্যাধিক গরমে নিজেদের সুস্থ ও সজিব রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই অবহেলা না করে গরমে খাবারের তালিকা সম্পর্কে সতর্ক হওয়া জরুরী। শরীরকে ভিতর থেকে ঠান্ডা ও প্রানবন্ত রাখতে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা জেনে নেওয়া যাক-
ডাবের পানি
গরমে খুবই জনপ্রিয় হলো ডাবের পানি। এটি গরমের জন্য বেশ উপযুক্ত। এটি শরীরকে ঠান্ডা ও আদ্র রাখতে দারুন কার্যকরী। এছাড়াও পাকস্থলীর এসিডের লেভেলকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
দই
শরীরকে ঠান্ডা রাখতে ও হজমপ্রক্রিয়া উন্নতি করতে দই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দইকে প্রোবায়োটিক বলা হয়। এতে থাকা ভিটামিন বি ও ভালো ব্যাকটেরিয়া শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সমস্যান করতে সহায়ক। তাই গরমে সময়ে প্রতিদিনের খাবারের পাতে দই রাখা যেতে পারে। যা ফ্রিজের ঠান্ডা পানির বিকল্প হিসেবেও কাজ করবে।
রসালো ফলমূল
গ্রীষ্মকালীন সময়ে তীব্র গরমে উপেক্ষা করে আমরা বিভিন্ন ফলের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে থাকি। এই সময়ে অনেক সুস্বাদু ও রসালো ফল পাওয়া যায়। এই ফলগুলো খেতে যেমন মজাদার তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের জোগান দেয়। আমাদেরকে কর্মক্ষম থাকতে বেশ উপকারী। এমনকি পানির ঘাটতি পূরনে সহায়ক।
শাকসবজি
গ্রীষ্মকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সবজির দেখা মেলে। এই সময়ে প্রধাণত মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, শসা, টমেটো, পটল, করলা, চিচিংগা ইত্যাদি। এসকল সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়অম, আয়রন, মিনারেল, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমাতে বাড়াতে সাহায্য করে। ও শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগান দিতে সহায়ক। এজন্য নিয়মিত খাবারের তালিকায় সবজি রাখতে হবে।
তরমুজ
গরমের কান্তি ভাব দূর করতে তরমুজের জুড়ি নেই। এতে রয়েছে প্রায় ৯০শতাংশ পানি এছাড়াও ভিটামিন এ, বি ও সি, শর্করা, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ত্বক উজ্জ্বল, নমর ও মসৃণ রাখতে সহায়ক। যেহেতু ক্যালরি খুবই কম তাই যারা ওজন কমাতে চান তাদের ডায়েট চার্টে যোগ করতে পারেন। এছাড়াও এটি হজমের সমস্যা দূর করে থাকে।
শশা
কম ক্যালরি সম্পন্ন একটি উপকারী খাবার হলো শশা। সাধারণত সালাদ, স্মুদি বা অন্যান্য ডিশ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এটি গরমে নিজেদের হাইড্রেটেড রাখতে বেশ সহায়ক। কারণ এতে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই গ্রীষ্মের খাদ্যতালিকায় শশা রাখা যেতে পারে।
গ্রীষ্মকালীন খাবারের তালিকায় যেসকল খাবার যুক্ত করা উচিত নয়।
গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে সুস্থ রাখতে খাবারের তালিকায় থেকে কয়েকধরনের খাবার বাদ দেওয়া জরুরী। অর্থাৎ যেসকল খাবার আছে সহজে হজম হতে চায় না, সেগুলো খাবার মোটেও গরমের সময় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। এতে শরীরের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায় এবং অস্বস্তি অনুভব হতে থাকে। মূলত চর্বি, উচ্চ প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার হজম হতে বেশ সময় নেয় ও গরমের সময়ে শরীরকে আরও গরম করে তোলে। চলুন গ্রীষ্মকালীন সময়ে যেসকল খাবার গ্রহণ করা থেকে এড়িয়ে চলা প্রয়োজন তা বিস্তারিত জেনে নেওয়া-
তাপপ্রবাহে সুস্থ থাকতে খেতে পারেন ৫/১০ খাবার
অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার
রান্নার স্বাদকে আরও সুস্বাদু করতে বিভিন্ন ধরনের মসলা ব্যবহার করা হয়। তবে গ্রীষ্মকালীন সময়ে যেহেতু গরমের প্রভাব থাকে তাই অতিরিক্ত মসলা রান্নায় ব্যবহার করা উচিত নয়। যতটুকু সম্ভব কম মসলা ব্যবহার করে খাবার তৈরি করতে হবে। এতে হজমের সমস্যা তৈরি হবেনা।
ফাস্টফুড
ফাস্টফুড যেমন বার্গার, পির্জা, সিংগারা, কাবাব ইত্যাদি খাবারের প্রতি আমাদের একধনের আবেগ রয়েছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের খুইব পছন্দ। সাধারণত এই ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়া একদমই উচিত না। এবং গরমের সময়ে একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে।
অরিতিরক্ত চা কফি
চা কফি ছাড়া যেনো অনেকের দিন কাটেই না। হোক গ্রীষ্ম বা শীত। তবে গরমের সময়ে চা কফিজাতীয় পানীয় আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। শরীরকে পানিশূণ্য করে দেয়। তাই গ্রীষ্মে যতটা সম্ভব অতিরিক্ত চা কফি পান করা থেকে বিরত থাকা উত্তম।
সস
বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতে সসের কোনো তুলনা হয়না। সিংগারা, নুডলস কিংবা ফ্রাইডরাইস তৈরিতে ব্যবহার করা হয় হরেক পদের সস। এই সসে অরিমাত্রায় লবন যুক্ত করা হয়।ও প্রচুর ক্যালরি থাকে। গ্রীষ্মে এসকল খাবার নিয়মিত খেলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পরে।
কোমল পানীয়
গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে আমরা কোমল পানীয় খেয়ে থাকি। যা শরীরে সাময়ীক ভাবে কিছুটা ঠান্ডা অনুভীত করলেও পানিশূন্য করে ফেলে। এবং আমাদের তৃষ্ণা বেড়ে যায়।
প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার
উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মুরগি, খাসির মাংস, গরুর মাংস গ্রীষ্মে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় না করাই উত্তম। এই ধরনের খাবার আমাদের শরীরের তাপ বাড়িয়ে শরীর গরম করে দেয়। এবং অরিতিক্ত ঘাম ধরতে থাকে। এমনি হজম সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই প্রতিদিন না খেয়ে সপ্তাহে দুই তিন বার খাওয়া যেতে পারে।
ডিম
ডিম অন্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে প্রচুর প্রোটিন ও ভিটামিন রয়েছে। পুষ্টিসমৃদ্ধ উপকারী খাবার হওয়ায় অনেকে অতিরিক্ত ডিম খেয়ে থাকেন। ফলে অনেকের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। সাধারণত গরমে একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ১ টি করে ডিম খেতে পারেন। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডিম খাওয়া যাবে না।
তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার
শরীরের প্রয়োজনীয় তেল ও চর্বির ঘাটতি পূরণে রান্নায় ব্যবহৃত তরকারিতে তেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অনেকে রান্নার স্বাদ বাড়াতে তেল বেশি ব্যবহার করে থাকেন। অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করে রান্নার করা উচিত নয়। এতে হার্টের সমস্যা হতে পারেন। গরমেও তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
গ্রীষ্মে সুস্থ থাকতে প্রয়োজনীয় টিপসসমূহ
- হাইড্রেটেড থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
- প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খান। যেগুলো সাধারণত কম ক্যালরি ও চর্বিযুক্ত হবে। যাতে ভিটামিন, খনিজও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি।
- প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে বের না হবেন না। এবং ছায়াযুক্ত জায়গায় চলাচল করবেন। সঙ্গে ছাতা রাখবেন।
- গ্রীষ্মে অবশ্যই পাতলা, সুতি ও হালকা রঙ্গের পোশাক পরিধান করার চেষ্টা করবেন। সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা পোশাকগুলো গ্রীষ্মকালের জন্য বেশ আরামদায়ক ও উপযুক্ত।
- অবশ্যই নিয়মিত গোসল করতে হবে। এবং নিজেকে পরিষ্কার রাখতে হবে। না হলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন র্যাশ, ফুসকড়ি, চুলকানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
- ঘামের কারণে পোশাক ভিজে গেলে তা পাল্টিয়ে ফেলতে হবে। এবং শুকনো কাপড় পরিধান করতে হবে।
- বাহিরের খাবার খাওয়ার আগে সচেতন থাকতে হবে। গরমে খাবার সামান্য এদিক ওদিক হলেই আমাদের হজমের গোলযোগ দেখা যায়।
- সূর্যের আরো থেকে চোখকে সুরক্ষা রাখতে সানগ্লাস ব্যবহার করতে পাারেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, গ্রীষ্মকালে সুস্থ থাকলে হলে খাবার গ্রহনে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। প্রতিদিন খাবারের তালিকায় ফল ও সবজি রাখাতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত তেল চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা খাবার পরিহার করতে হবে।