You are currently viewing টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের জলপাই আচার খাওয়ার উপকারিতা ও রেসিপি 
জলপাই আচার

টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের জলপাই আচার খাওয়ার উপকারিতা ও রেসিপি 

বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি মৌসুমি ফল জলপাই। কাঁচা বা পাকা যেকোনো অবস্থাতেই খেতে বেশ মজাদার। জলপাই ডালের সঙ্গে টক হিসেবে রান্না করা হয়।  শুধু তাই নয় জলপাই থেকে তেল তৈরি করা হয়। যাকে আমরা অলিভ অয়েল বলে থাকি।

যেহেতু বছরের একটি সময় অর্থাৎ  শীতকালে এই ফলটির দেখা মেলে। সেহেতু জলপাইয়ের আচার তৈরি করে খুব সহজেই বছর জুরে সংরক্ষণ করা যায়। এই আচার খেতে এতোই মজাদার যে  এমনি খেয়েও শেষ করা যাবে। এছাড়াও খিচুড়ি ও গরম ভাতের সাথে বেশ জমে উঠে। কেউ চাইলে যেকোনো খাবারের সাথেই পরিবেশন করতে পারবেন।

জলপাই আচার

আচারপ্রেমীদের জন্য জলপাই আচার অন্যতম। জলপাইয়ের সিজনে প্রায় প্রতিটি ঘরেই মুখোরচক টক ঝাল মিষ্টি জলপাইয়ের আচার তৈরি করতে দেখা যায়। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। চলুন আজকে আমরা জলপাইয়ের ৩টি ভিন্নি স্বাদের আচারের রেসিপি জেনে আসি। 

জলপাইয়ের টক ঝাল মিষ্টি আচার

জলপাইয়ের টক ঝাল মিষ্টি আচার

উপকরণ

  • জলপাই ১ কেজি
  • চিনি বা গুড় দেড় কাপ 
  • শুকনো মরিচ  ২/৩ টি
  • সরিষার তেল ১ কাপ
  • পাঁচফোড়ন ১ চা চামচ
  • লবন ১ চা চামচ
  • তেজপাতা ২ টি
  • ভিনেগার ১/৪ কাপ 
  • রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ

মসলা তৈরির জন্য

  • পাঁচফোড়ন ১ টেবিল চামচ
  • ধনিয়া  ১ চা চামচ
  • জিরা ১ চা চামচ
  • শুকনো মরিচ ৩টি
  • এলাচ ২ টি (অপশনাল)

প্রণালী

প্রথমে জলপাইগুলো ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। চুলায় একটি পাত্রে পানি গরম করতে দিতে হবে। পানি ফুঠে উঠলে আগে থেকে পরিষ্কার করে ধুয়ে রাখা জলপাইগুলো দিয়ে দিতে হবে। সিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত জ্বাল দিতে হবে। প্রায় ১৫-২০ মিনিট জ্বাল দেওয়ার হলে ভালোভাবে সিদ্ধ হয়ে যাবে। এবার অন্য একটি পাত্রে জলপাইগুলো তুলে নিয়ে ঠান্ডা হতে দিতে হবে।  ঠান্ডা হলে সিদ্ধ করে নেওয়া জয়পাইগুলো হাত দিয়ে চটকিয়ে বা ম্যাস করে নিতে হবে।

চুলায় একটি ফ্রাইপ্যান বসিয়ে এরমধ্যে মসলা তৈরির জন্য উপরকণ গুলো দিয়ে মাঝারি আঁচে ভেজে বা টেলে নিতে হবে। মসলা থেকে সুন্দর একটি ঘ্রাণ বের হলে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে। এরপরে শীলপাটায় বা ব্লেন্ডারে গুড়ো করে নিতে হবে।

বরই আচার তৈরির নিয়ম, উপকরণ, উপকারিতা এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি

চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে এরমধ্যে সরিষার তেল দিতে হবে। তেল দেওয়া পরে তেলপাতা ও শুকনো মরিচ ও পাঁচফোড়ন দিয়ে একটু গরম করে নিতে হবে। এরমধ্যে রসুন বাটা দিয়ে নেড়ে ম্যাস করা জলপাই দিয়ে একটু ভেজে নিতে হবে। তারপরে চিনি বা গুড় দিবে হবে। চিনি দেওয়া ফলে পানি বের হয়। ভালোভাবে জ্বাল দেওয়ার ফলে পানি শুকিয়ে ঘন হয়ে আসবে। লবন, ভিনেগার ও আচারের জন্য মসলা দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। আবারও জ্বাল দিয়ে আচার হয়ে আসলে চুলা থেকে পরিষ্কার একটি পাত্রে রাখতে হবে।

জলপাইয়ের টক ঝাল আচার

উপকরণ

  • জলপাই হাফ কেজি
  • শুকনো লাল মরিচের ‍গুড়ো ২ টেবিল চামচ
  • পাঁচফোড়ন ১ টেবিল চামচ
  • শুকনো লাল মরিচ আস্ত ৩/৪ টি
  • হলুদ গুলো সামান্য
  • ধনিয়া ও শুকনো মরিচ টেলে নিয়ে গুড়ো করা ৩ টেবিল চামচ
  • লবন স্বাদ অনুযায়ী
  • সরিষার তেল  পরিমাণমতো

প্রণালী

জলপাইয়ের বোটা ফেলে ভালো করে ধুয়ে চাকু দিয়ে চারিপাশে দাগ কেটে নিতে হবে। তারপরে লবন ও হলুদ মাখিয়ে দুই দিনের জন্য রোদে দিতে হবে। 

দুই দিন পরে সারিষার তেল, শুকনো মরিচসহ গরম করে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপরে জলপাইসহ অন্য সকল উপকরণ ভালো করে মাখিয়ে একটি পরিষ্কার শুকনো কাচের বোয়ামে ভরতে হবে।  খুব সহজেই তৈরি হয়ে গেলো জলপাইয়ের টক ঝাল আচার ।

জলপাই ঝাল আচার

জলপাই ঝাল আচার

উপকরণ

  • জলপাই ১ কেজি
  • বোম্বে মরিচ ১০/১২টি
  • রসুন ১ কাপ
  • সরিষা বাটা ২ টেবিল চামচ
  • সরিষার তেল ১ কাপ
  • লবন ও চিনি স্বাদ অনুযায়ী
  • পাঁচফোড়ন ২ টেবিল চামচ
  • সিরকা ২ টেবিল চামচ
  • আদা ও রসুন বাটা ১ চা চামচ
  • হলুদ মরিচ ধরে ১ চা চামচ
  • কালোজিরা ১ চা চামচ

প্রণালী

জলপাই সিদ্ধ করে চটকে নিতে হবে। এরপরে হলুদ, মরিচ, ধনে, সরিষা বাটা, লবণ, চিনি সিরচা, আদা ও রসুন বাটা সবগুলো উপকরণ মাখিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে।

চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে সরিষার তেল দিয়ে কিছুটা গরম করে কালোজিরা ফোড়ন দিতে হবে। সেই সাথে  রসুন ও বোম্বাই মরিচ ভেজে নিতে হবে। এরমধ্যে মসলা পেস্ট দিয়ে হালকা করে নেড়ে চকটিয়ে রাখা জলপাই দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। জলপাই থেকে তেল ছেড়ে দিয়ে চুলা থেকে কড়াইটি নামিয়ে একটি পাত্রে উঠিয়ে নিতে হবে।

গোটা জলপাইয়ের আচার

উপকরণ

  • জলপাই ১ কেজি
  • সরিষার তেল ১ কাপ
  • চিনি হাফ কাপ
  • পাঁচফোড়ন ১ চা চামচ
  • ভিনেগার ২ টেবিল চামচ
  • শুকনো লাল মরিচ ৪টি
  • তেজপাতা ২টি
  • সরিষা বাটা ১ চা চামচ
  • রসুন ও আদা বাদা ১ চা চামচ 
  • মরিচের গুড়ো ১ চা চামচ
  • হলুদের গুড়ো ১/২ চা চামচ
  • বীট লবন (অপশনাল) 

প্রণালী

আস্ত করেই জলপাই আচার তৈরি করার ক্ষেত্রে জলপাইগুলো ভালো করে ধুয়ে একটি ছুড়ি দিয়ে জলপাইয়ের গায়ে দাগ কেটে নিতে হবে।

কড়াইয়ে সরিষার তেল দিয়ে তেজপাতা, শুকনো মরিচ, আস্ত গরম মসলা ও কয়েকটা রসুনের কোয়া দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিতে হবে। এরমধ্যে পাঁচফোড়ন , আদা ও রসুন বাটা দিয়ে নেড়ে সরিষার বাটা , হলুদ ও মরিচের গুড়ো দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। তারমধ্যে আস্ত কাচা জলপাই দিয়ে চিনি ব্যবহার করতে হবে। কিছুক্ষণ পরে একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। 

তারপরে আবারও একটি নেড়ে নিতে হবে। পুরো রান্নায় চুলার লো ও মিডিয়াম আচে রাখতে হবে। আচার হওয়ার শেষ মুহূর্তে গুড়ো করা পাঁচফোড়ন, বিটলবন ও ভিনেগার দিয়ে নিতে হবে। এভাবেই জলপাইগুলো সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে।

জলপাই আচার খাওয়ার উপকারিতা 

জলপাই এর পুষ্টিগুণ অনেক রয়েছে যেমন প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ে খাদ্যশক্তি ৭০ কিলোক্যালরি, ৫৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৯.৭ শর্করা ইত্যাদি। এই আচারের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকে অবগত নয়। আজকে জলপাই আচারের বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে

জলপাইয়ে রয়েছে ভিটামিন সি, এ, ই এবং এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। তাই এই আচার খাওয়ার ফলে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

হজমশক্তি বাড়াতে

জলপাই একটি ফাইবার ও আশঁযুক্ত ফল। তাই এই আচার খেলে হজম সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং খাবারের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। 

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে

জলপাইয়ে আচার খেলে রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে আমাদের হার্ট সুস্থ্য থাকে। ও হৃদরোগের  ঝুঁকি কমায়। 

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে

জলপাই এ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। জলপাইয়ের আচার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবেন। 

হাড়ের ক্ষয়রোধ

বয়সের কারণে অনেকের হাড়ের ক্ষয় সমস্যাটি দেখা যায়। যেহেতু জলপাইয়ে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে এবং মনো স্যাচুরেটেড চর্বি প্রদাহরিরোধী তাই এটি হাড়ের ক্ষয়রোধ  রোধ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই জলপাইয়ের আচারটি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।

ত্বক, চুলের সমস্যা দূর করতে

জলপাই আচারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান। তাই নিয়মিত খাওয়ার ফলে চুল পড়া রোধ ও ত্বকের যত্নে বেশ কার্যকরী। 

রুচি বাড়াতে

জলপাই আচার সাধারত টক হয়ে থাকে। যাদের রুচি কম, কিছু খেতে পারেন না। তারা এই আচার খেতে পারেন। এতে খাবারের প্রতি রুচি বাড়বে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে

এই আচারে উপস্থিত পটাশিয়াম রক্তের শর্কারার মাত্রা কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

রক্ত সঞ্চালন করতে

জলপাই আচারে থাকা আয়রন শরীরের রক্তের পরিমান বাড়ায় ও রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। 

জলপাই ঝাল আচার

জলপাইয়ের আচরের পরিবেশন

খিচুড়ির সাথে

ধোঁয়া ওঠা গরম খিচুড়ির সাথে জলপাইয়ের আচার থাকলে আর যেনো কিছু লাগেই না। খিচুড়ির সাথে আচার খাওয়া বেশ জনপ্রিয় এবং আমাদের সকলের অনেক পছন্দ। 

ভাতের সাথে

জলপাইয়ের আচারটি খিচুড়ির পাশাপাশি গরম ভাতের সাথেও পরিবেশন করা যায়।

রুটি বা পরোটার সাথে

খিচুড়ি ও গরম ভাত ছাড়াও রুটি বা পরোটার সাথেও জলপাইয়ের আচারটি 

স্ন্যাকস হিসেবে

জলপাইয়ের আচারটি এতোটাই মজাদার যে স্ন্যাকস হিসেবে যখন তখন খাওয়া যেতে পারে। সাথে অন্য কিছুর প্রয়োজন হয়না। 

উপরিউক্ত আলোচনায় জলপাই আচার কি, কীভাবে বানাবেন এবং এর বিভিন্ন রেসিপি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনি জলপাই আচার খাওয়ার উপকারিতা, জলপাইয়ের টক ঝাল আচার বানানোর রেসিপি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। 

Bornali Akter Borno

Bornali Akter Borno is a passionate food enthusiast and entrepreneur. From an early age, her love for culinary exploration led her to experiment with flavors and ingredients, ultimately inspiring her to work with Binni Food, an e-commerce brand dedicated to offering premium quality Organic Food and delectable treats to food enthusiasts in Bangladesh. Bornali's relentless pursuit of flavor and commitment to excellence have earned her recognition in the culinary world. Her journey is a testament to the power of passion and perseverance, showcasing how dedication to one's craft can lead to entrepreneurial success and culinary innovation.