You are currently viewing জেনে নিন সস্তা ও নকল ঘি চেনার উপায় এবং সতর্কতা  
নকল ঘি চেনার উপায়

জেনে নিন সস্তা ও নকল ঘি চেনার উপায় এবং সতর্কতা  

ঘি কে বলা হয় বাঙালি বাড়ির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙ্গালিয়ানায় ঘি থাকবে না এটা হতেই পারে না। একটা সময় ঘি ছিলো প্রাচীন রাজা বাদশাহ দের খাবার। তবে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। ঘি এখন আমাদের প্রায় সকলের হাতের নাগালে পৌছে গিয়েছে। ঘি এর নানাবিধ উপকারিতা জানার পর থেকে দিন দিন ক্রমশই এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

ঠিক এই কারনেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ি এটির সুযোগ নিয়ে নকল ঘি তৈরি করছে যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। তাই আমাদের সকল কে সচেতন থাকতে হবে এবং নকল ঘি চেনার উপায় জানতে হবে। আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনারা কীভাবে  নকল ঘি চিনবেন এবং নকল ঘি কীভাবে আমাদের শরীরের ক্ষতি করে থাকে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। 

নকল ঘি চেনার ১২ টি উপায়  

বাজারে গেলে হাতের নাগালেই এখন বিভিন্ন ব্যান্ড এর ঘি পাওয়া যায়। এমনকি দোকানিদের কাছে আপনি হোম মেইড ঘি ও পাবেন। তবে মনে প্রশ্ন থেকেই যায়, এই ঘি কতটুকু খাটি। ঘি সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারনা না থাকার কারনে আমরা অনেকেই এসব অসাধু ব্যবসায়ীর নকল ঘি এর জালে জরিয়ে পরি এবং নিজ হাতে নিজের স্বাস্থ্য কে ক্ষতির মুখে ফেলি। তবে কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরন করেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কেনা ঘি টি আসল নাকি নকল! চলুন জেনে নেওয়া যাক- 

বিশেষ গন্ধ 

ঘি এর একটি নির্দিষ্ট সুঘ্রান রয়েছে। বিশেষ করে খাটি গাওয়া ঘি এর গন্ধ এবং স্বাদের জন্যই এটি সকলের এতো পছন্দ। ঘি কেনার সময় ঘি এর উপরিভাগের কৌটা বা ঢাকনা খুলে এর গন্ধ যাচাই করে নিন। আসল ঘি থেকে সুন্দর মিষ্টি ঘ্রান পাবেন। তবে নকল বা ভেজাল মিশ্রিত ঘি এর মাঝে আপনি ডালডা এবং আর্টিফিশিয়াল গন্ধ পাবেন।  

স্বাদ  

ঘি এর স্বাদ নির্ভর করে এটির তৈরি পদ্ধতির উপর। ঘি সাধারনত নিরপেক্ষ্য স্বাদের হয়ে থাকে। এটি খুব বেশী মিষ্টি স্বাদের না আবার একেবারে নোনতা ও না। তবে বাজার থেকে কিনে আনা ঘি তে যদি আপনি অতিরিক্ত মিষ্টি স্বাদ অনুভব করেন তাহলে বুঝে নিবেন সেটি ভেজাল মিশ্রিত ঘি। সাধারনত ঘি তে চিনি বা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড মেশানো হলে সেটি খেতে তুলনামুলক বেশী মিষ্টি মনে হয়। 

রং বা কালার  

খাটি ঘি সাধারনত দুইটি কালারের হয়ে থাকে।

  • হলুদ ঘি- এটি গরুর দুধের তৈরি ঘি।
  • সাদা ঘি- মহিষের দুধের তৈরি ঘি। 

খাঁটি গাওয়া ঘিয়ে রং সাধারণত সোনালি বা গোল্ডেন ইয়েলো হয়ে থাকে। তবে আর্টিফিসিয়াল ঘিয়ে কিন্তু এই বিষয় থাকে না। আসল ঘি দেখা মাত্রই লোভোনীয় এর ভাব আসে। 

ঘনত্ব 

আসল ঘি চেনার একটি প্রধান উপায় হলো ঘিয়ের ঘনত্ব। যার মাধ্যমে খুব সহজেই আসল ঘি সম্পর্কে জানা যায়। ঘি হল খুবই মসৃণ ও ক্রিমি জাতীয় খাবার। যা ঘরের তাপমাত্রায় খুব তারাতারি গলে যাবে আবার ফ্রিজে রাখলে চট করে জমে যাবে। চামচে নিলে গলে যাবে এবং এর মধ্যে কোন চিটচিটে ভাব থাকবে না। কিন্তু নকল ঘিয়ে চিটচিটে ভাব থাকবে হাতে নিলে আঠালো ভাব অনুভব হবে। এতেই বুঝা যাবে ঘি টা নকল। 

পরিস্কার বা স্বচ্ছতা   

ঘি দেখতে মূলত ক্লিয়ার বা স্বচ্ছ। খাটি ঘি তে কোনো রকমের ময়লা থাকে না। এটি একদম পরিষ্কার হয়ে থাকে। যদি ঘি এর মাঝে কোনো নোংড়া আবরন দেখতে পান বুঝবেন এটি অস্বাস্থ্যকত পরিবেশে তৈরি হওয়া নকল ঘি । 

বার্ণ টেস্ট  

আসল ঘি চেনার আরো এক বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে যা হয়তো অনেকে অজানা এইটা হল বার্ণ টেস্ট বা আগুনের সাহায্যে পরীক্ষা করা। চুলায় গরম প্যানে বা কড়ায়ে ১ চামচ ঘি দিয়ে দিলে সাথে সাথে তেলের মতোই গলে যাবে অর্থাৎ আগুনের সংস্পর্শে আসলেই ঘি গলে যাবে আর এটি না হলে বুঝতে হবে যে ঘি আসল না। 

ফ্রিজে রেখে পরিক্ষা 

একটি কাচের জারে ঘি নিন। এরপর এটি গরম পানিতে রেখে ঘি গুলোকে পুরোপুরি গলিয়ে নিন। এবার কাচের জার টি ঘি সহ ফ্রিজে রেখে দিন। কিছুক্ষন পর দেখবেন ঘি জমে গিয়েছে। এক্ষেত্রে যদি ঘি এক লেয়ার জমে তাহলে এটি খাটি। তবে যদি ঘি দুই লেয়ারে জমে তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি নকল ঘি। ঘি এর সাথে নারিকেল তেল মেশালে সাধারনত এরকম দুইটি লেয়ার হয়ে থাকে। 

লবনের সাহায্যে টেষ্ট 

কি ভাবছেন? লবনের মাধ্যমেও আবার ঘি যাচাই করা যায়? হ্যা আপনি খুব সহজে ঘরে থাকা লবন দিয়েই ঘি টেষ্ট করতে পারবেন।  প্রথমে ঘি গুলোকে আগুনের তাপের সাহায্য গলিয়ে নিতে হবে। এরপর এতে সামান্য লবন দিতে হবে। ঘি তে লবন দেওয়ার কারনে যদি লবণ বা ঘি এর কালার পরিবর্তন হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে এই ঘি তে ভেজাল মিশ্রন রয়েছে। 

পাম টেষ্ট

পাম টেষ্ট হলো ঘি পরীক্ষা করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। প্রথমে হাতের তালুতে ১ চা চামচ ঘি নিন। আপনার শরিরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা তেই যদি কিছুক্ষনের মধ্য ঘি গলতে শূরু করে তাহলে বুঝে নিবেন সেটি খাটি ঘি। তবে যদি ঘি না গলে এবং শক্ত জমাট বাধা অবস্থাতেই থাকে তাহলে সেই ঘি তে অবশ্যই নকল। 

বোতল এবং চিনির সাহায্যে টেষ্ট 

প্রথমে ঘি গলিয়ে একটি স্বচ্ছ বোতলে রাখতে হবে। এবার ঘি এর মাঝে কিছুটা চিনি বা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। বোতলের নিচের অংশে যদি লাল রঙের কোনো আস্তরণ দেখতে পান তাহলে বুঝে নিবেন এটি নকল ঘি।  

ঘি সংরক্ষণের উপায় জানুন, আপনার ঘি ভালো রাখুন!

গরম পানির মাধ্যমে পরিক্ষা 

ঘি জমাট বাধা অবস্থাতে একটি পাত্রে ঘি নিয়ে এটি গরম পানির মাঝে রাখবেন। কিছুক্ষনের মাঝেই ঘি গলে গিয়ে যদি তেলের আকার ধারন করে তাহলে এটি খাটি ঘি। আর যদি ঘি জমাট বাধা অবস্থাতেই থাকে তাহলে এটি নকল ঘি।

ঘি এর ঘ্রানের তীর্ব্রতা বা স্থায়িত্ব 

হাতের তালুতে ১ চা চামচ ঘি নিয়ে এটি কিছুক্ষন আঙ্গুলের সাথে নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষন পরেই যদি ঘি এর ঘ্রান পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বুঝে নিবেন এটি নকল ঘি। অথবা হাতে ঘি নিয়ে মেশানোর পরেও যদি সাধারন পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পরে ঘি এর ঘ্রান চলে যায় তাহলে বুঝে নিবেন সেটি নকল ঘি। কারন খাটি ঘি এর ঘ্রান এতো দ্রুত বিলিন হয়ে যায় না।  

নকল ঘি খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুকি 

খাটি ঘি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি হলেও নকল ঘি আপনাকে মারাত্নক স্বাস্থ্যঝুকি তে ফেলতে পারে। বর্তমানে অনেক নামি দামি কম্পানি তাদের নিজস্ব ফ্যাক্টরি তে ঘি তৈরি করছে। তবুও ডালডা, রিফাইন্ড তেল, নারিকেল তেল মিশ্রিত ভেজাল ঘি এর মাত্রা বাজারে বেড়েই চলেছে। 

  • ভেজাল মিশ্রিত ঘি খেলে এসিডিটি সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
  • হৃদরোগের আশংকা থাকে।
  • খাটি ঘি আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, তবে ভেজাল ঘি খেলে আমাদের হজম শক্তির সক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • আমরা অনেকেই রুপচর্চার কাজে ঘি ব্যবহার করে থাকি। তবে নকল ঘি আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য ক্ষতিকর। 
  • ভেজাল ঘি শরিরে অতিরিক্ত মেদের সৃষ্টি করে।

বর্তমানে বাজারের বিভিন্ন নামি দামি ব্যান্ড এর ঘি রয়েছে। তবে খাটি ঘি এর বিকল্প কিছু নেই। নিজের স্বাস্থ্য বিবেচনায়, বাজার থেকে ঘি কেনার সময় অবশ্যই যাছাই বাছাই করে, তবেই ঘি কিনবেন। মনে রাখবেন খাটি খাবারে সুস্থ্য জীবন।